সোমবার ১৩ মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৩০ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম
শিরোনাম

বাংলাদেশের সম্পত্তি নিয়ে বিপাকে অনেক প্রবাসী

এনা :   শুক্রবার, ২২ মার্চ ২০২৪ 12709
বাংলাদেশের সম্পত্তি নিয়ে বিপাকে অনেক প্রবাসী

পরিবার ও নিজের উন্নত ভবিষ্যতের স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ থেকে অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন। একসময় এ দেশে এসে হাড়ভাঙা খাটুনির পর এখানে কোনো সম্পত্তি না করে অর্জিত সব অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন। সেখানে বড় বড় ইমারত তৈরি করেছেন, বাড়ি কিনেছেন, অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছেন। দোকানপাট, জমিজমা ও প্লট কিনেছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের সম্পত্তিতে বিনিয়োগ করেছেন। বয়স যখন তারুণ্য ছিল, তখন সেগুলো সানন্দে করেছেন।

কিন্তু এখন সেই আনন্দ অনেকটাই কমে এসেছে। কারণ তাদের বেশির ভাগ চিন্তা করেছিলেন তারা একসময় দেশে গিয়ে থাকবেন অথবা এমনও চিন্তা করেছেন তাদের সন্তানেরা দেশে যাবেন ও সেখানে থাকবেন এবং সকল সহায়-সম্পদ দেখাশোনা করবেন। সেখান থেকে যে অর্থ আসবে, তা দিয়ে বুড়ো বয়সে স্বাচ্ছন্দ্যে চলতে পারবেন। কিন্তু সেটি অনেকেরই বেলায় হচ্ছে না। যারা এখান থেকে অর্থ উপার্জন করে দেশে সম্পত্তি করেছেন, তাদের বেশির ভাগের সন্তানেরা বাংলাদেশে যেতে তেমন আগ্রহী নয়। দেশের সম্পত্তির মালিকানা নেওয়া ও দেখাশোনা করতেও তারা নারাজ। তারা সোজাসাপ্টা বাবা-মাকে বলে দিচ্ছেন, তারা দেশের সম্পত্তি নিতে যাবেন না। তারা চাইলে বিক্রি করে দিতে পারেন কিংবা কাউকে দিয়ে দিতে পারেন। কেউ কেউ আবার বলে থাকেন বিক্রি করে অর্থ নিয়ে আসার জন্য।

এ অবস্থায় অনেক পরিবারই দেশের জমিজমা, বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রি করে দিচ্ছেন। দেশের সবকিছু বিক্রি করে এখানে অর্থ এনে সম্পত্তি করার পরিকল্পনা করছেন। কিন্তু সে আশায়ও গুড়ে বালি। কারণ অর্থের উৎস জানার বিষয়ে যেকোনো সময় এখানে অনুসন্ধান শুরু হতে পারে। কারণ কেউ যখন পুরো অর্থ পেইড করে এখানে একটি বাড়ির মালিক হচ্ছেন, তখন প্রশ্ন আসবে তিনি ওই অর্থ কোথায় পেয়েছেন। তিনি যদি দাবি করেন এই অর্থ আয় করেছেন, তাহলে প্রশ্ন উঠবে তিনি এই আয়ের কর দিয়েছেন কি না। আয়কর দিলে তিনি কত দিনে এই অর্থ আয় করেছেন। এই অর্থ আয় করার পর তিনি কোনো ব্যাংক হিসাবে রেখেছেন কি না, না রাখলে এত অর্থ কোথায় ছিল। আর যদি বলেন তার ব্যাংক হিসাবে ছিল, সেই ব্যাংক হিসাবেরও সব তথ্য চাওয়া হতে পারে। এ ছাড়া কেউ যদি বলেন, তিনি দেশ থেকে অর্থ এনেছেন, সে ক্ষেত্রেও প্রশ্ন আসবে তিনি এই অর্থ আনার জন্য ঘোষণা দিয়েছেন কি না। আর ঘোষণা দিয়ে না আনলে অবৈধ পথে আনার কারণে সমস্যায় পড়তে পারেন। ইনভেস্টমেন্ট করে যারা এখানে ব্যবসা করেন এবং উপার্জিত অর্থ দিয়ে বাড়ি করেন, তাদের কথা আলাদা। কিন্তু দেশ থেকে যারা বৈধপথ ছাড়া অন্য কোনো কৌশলে অর্থ আনাচ্ছেন কিংবা আনার চেষ্টা করছেন, তারা যেকোনো সময়ে সমস্যায় পড়তে পারেন। যদিও অনেকেই দেশ থেকে অবৈধভাবে অর্থ আনছেন, কিন্তু কে কখন বিপদে পড়বেন, সেটি কেউ বলতে পারে না। এখানে অপরাধ করে পার পাওয়ার সুযোগ নেই।

এদিকে দেশ থেকে অর্থ আনার ক্ষেত্রে কিছু নতুন উপায়ও অবলম্বন করা হচ্ছে। দেশ থেকে অর্থ এনে এখানে সেটি গিফট চেকের নামে বৈধ করা হচ্ছে। গিফট চেকের নিয়ম হচ্ছে কোনো প্রকৃত বন্ধু কিংবা আত্মীয়স্বজন, পরিবারের কোনো সদস্য গিফট চেক দিতে পারেন। এতে কোনো সমস্যা নেই। একজন মানুষ সারা জীবনে কত টাকার গিফট দিতে পারবেন, তাও বলা আছে। কেউ নির্ধারিত অঙ্কের বেশি অর্থ গিফট চেক দিলে তাকে আইআরএসের কাছে রিপোর্ট করতে হবে।

এখানে অনেকেই দেশ থেকে অর্থ এনে সেটি বৈধ করার জন্য বিভিন্ন জনকে ক্যাশ অর্থ পেমেন্ট করে গিফট চেক নিচ্ছেন বলে শোনা যাচ্ছে। দেশের সম্পত্তি বিক্রি করার আগেই পরিকল্পনা করছেন কীভাবে এখানে অর্থ আনবেন। এই অর্থ আনার উপায় হিসেবে অনেকেই অবৈধ পথে দেশের সম্পত্তি বিক্রির অর্থ আনছেন। কেউবা ব্যবসায় ইনভেস্ট করার নামে আনছেন। এ জন্য বিভিন্ন ধরনের সিন্ডিকেট রয়েছে, যারা এ ব্যাপারে সহায়তা করছে। আরেকটি শ্রেণি দেশের সম্পক্তি এখানে বসে বিক্রি করছেন। দেশে গিয়ে রেজিস্ট্রি করে আসছেন আর পেমেন্ট নিচ্ছেন এখানে। কেবল সরকারি হিসাবে সম্পত্তির যে মূল্য যে এলাকার জন্য লেখা আছে, সেগুলো উল্লেখ করে ধরছেন ও দলিল করছেন। কয়েকজনের কাছ থেকে জানা গেছে, তারা দেশের সম্পত্তি বিক্রি করার চেষ্টা করছেন কিন্তু এখানে পেমেন্ট নিতে পারছেন না বলে বিক্রি করতে সময় নিচ্ছেন। দেশে কেউ কিনতে চাইলে তার কাছে বিক্রি করছেন না। বিক্রি করার জন্য প্রবাসী বায়ার খুঁজছেন।

দেশের সম্পত্তি বিক্রি করতে চান, এমন এক প্রবাসী বলেন, আমরা এখানে অর্থ উপার্জন করে সম্পত্তি করিনি, দেশেই করেছি। দেশে অনেকগুলো বাসা আছে। দেশ থেকে এসেছি অনেক আগেই। এখন থেকে এখানেই থাকব। এখন দেশের সম্পত্তি কী করব, সন্তানেরা সেখানে যাবে না। এখানে থাকার জন্য বাড়ি দরকার। তাই দেশের সম্পত্তি বিক্রি করে এখানে বাড়ি কিনব। দেশের সম্পত্তি বিক্রি করার জন্য বায়ার খুঁজছি।

আরেকজন বলেন, পৈতৃক সূত্রে দেশে বাড়ি পেয়েছি। অত বড় বাড়ি সেখানে গিয়ে আমার পক্ষে দেখাশোনা করা সম্ভব নয়। সম্পত্তির একটি অংশ ভাইয়েরা দেখে। আমার অংশ আমি বিক্রি করে দেব। দেশে বায়ার খুঁজছি। দেশে বায়ার আছে। কিন্তু এখানে পেমেন্ট দরকার। সময় লাগলেও এখানেই পেমেন্ট নিতে চাই। তাই অপেক্ষা করছি।

আরেকজন অভিভাবক বলেন, অনেক কষ্ট করে এখানে অর্থ উপার্জন করে একসময় দেশে পাঠিয়ে সম্পত্তি করেছি। এখন সন্তানেরা বলছে তারা দেশে যাবে না। এখন কী করতে পারি? বিক্রি করা ছাড়া কিছু করার নেই। কারণ আমাদেরও বয়স হয়েছে, দেশে গিয়ে একা একা সন্তানকে ছাড়া থাকা সম্ভব হবে না।

এ ধরনের অনেকেই বিভিন্ন উপায়ে দেশের সম্পত্তি বিক্রি করে দিচ্ছেন। যারা এখানে মূল্য নেবেন বলে পরিকল্পনা করে বসে আছেন, তারা বিক্রি করতে না পারলে আর কোনো উপায় করতে পারছেন না।

Facebook Comments Box

Comments

comments

Posted ৭:৪০ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ২২ মার্চ ২০২৪

America News Agency (ANA) |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

 

President/Editor-in-chief :

Sayeed-Ur-Rabb

 

Corporate Headquarter :

 44-70 21st.# 3O1, LIC. New York-11101. USA, Phone : +6463215067.

Dhaka Office :

70/B, Green Road, 1st Floor, Panthapath, Dhaka-1205, Phone : + 88-02-9665090.

E-mail : americanewsagency@gmail.com

Copyright © 2019-2024Inc. America News Agency (ANA), All rights reserved.ESTD-1997