
মুহাম্মদ শামসুল হক | রবিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২১ | প্রিন্ট | 367 বার পঠিত
প্রকৃত প্রস্তাবে মাহে রমজানের প্রতিটি মুহূর্তই বিশ্ব মুসলিম, বিশেষত রোজাদারদের জন্য সমান মহিমান্বিত, গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যমণ্ডিত। তা সত্ত্বেও ফজিলতের দৃষ্টিকোণ থেকে পবিত্র রমজান মাসকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম অংশ রহমতের, দ্বিতীয় অংশ মাগফিরাতের এবং শেষ অংশ জাহান্নামের আগুন থেকে পরিত্রাণ লাভের। আর পবিত্র রমজানের চাঁদ ওঠার সাথে সাথেই রহমতের অংশের শুভসূচনা ঘটে। সেই হিসাবে ১৩ এপ্রিল মঙ্গলবার থেকে রোজাদারদের জীবনে পবিত্র রমজানের রহমতের অধ্যায়ের সূচিত হয়েছে এবং ২০ এপ্রিল মঙ্গলবার পর্যন্ত রহমতের আটটি গুরুত্বপূর্ণ দিবস নিদেনপক্ষে এক বছরের জন্য বিদায় নিয়ে গেছে। রহমতের অধ্যায়ের শেষ হওয়ার সাথে সাথেই শুরু হবে মাগফিরাতের অধ্যায়। রহমতের অধ্যায়ের ইবাদত-বন্দেগির চুলচেরা বিশ্লেষণের ভিত্তিতেই প্রত্যেক রোজাদারের মাগফিরাতের অধ্যায়ের জন্য শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা উচিত।
বিশ্ব মুসলিম তথা রোজাদাররা পবিত্র রমজানের রহমতের অধ্যায় থেকে আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশা করছেন, বিশেষ করে মহামারি করোনা থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর রহমত কামনা করছেন। কারণ বিশ্বজুড়ে সর্বগ্রাসী করোনার তাÐব আদৌ প্রশমিত হয়নি। প্রতিদিনই বিশ্বের সর্বত্র করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা এবং নিহতের তালিকা দীর্ঘায়িত হচ্ছে। অন্যদিকে এখনো ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত এবং ক্ষমতার লড়াইয়ের উদ্ধত ফণা গোটা বিশ্বকে গ্রাস করতে উদ্যত। ব্যক্তিগত জীবনে হিংসা, বিদ্বেষ ও প্রতিহিংসার অনল আজও জ্বলছে দাউদাউ করে। পরচর্চা এবং প্রতিপক্ষের প্রতি বিষোদ্গারের মাত্রা বিন্দুমাত্র হ্রাস পায়নি। পরমতসহিষ্ণুতার পরিবর্তে প্রতিপক্ষের ওপর হামলা এবং তাদের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা বেড়েছে। ধৈর্য অনুশীলনের পরিবর্তে সামান্য কারণেই অনেক রোজাদার তেলে বেগুনে চটে যাচ্ছেন এবং নিরতিশয় লঙ্কাকাণ্ড বাধিয়ে দিচ্ছেন। তার পরও আমরা সাওম পালনের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি, আল্লাহর সন্তুষ্টি ও তাকওয়া অর্জনের প্রত্যাশা করছি।
বিশ্ব মুসলিমের শাশ্বত জীবন বিধান পবিত্র কোরআনে আল্লাহর রহমতের অসংখ্য অলৌকিক কাণ্ড সংঘটিত হওয়ার বিবরণ রয়েছে। খোদাদ্রোহী নমরুদের প্রজ্জ্বলিত অগ্নিকুÐে আল্লাহর রহমতে হজরত ইবরাহিম (আ.) ফুলের বিছানা লাভ করেছিলেন। আগুনের লেলিহান শিখা হজরত ইবরাহিমের (আ.) একটি লোমও স্পর্শ করেনি। আল্লাহর অপরিসীম রহমতে ফেরাউনের সুরম্য প্রাসাদেই তার স্ত্রীর অপত্য স্নেহ-মমতায় লালিত-পালিত হয়েছিলেন শিশু মুসা (আ.)। আবার আল্লাহর রহমতেই অতলস্পর্শী নীলনদে অলৌকিকভাবে নির্মিত হয়েছিল সুপ্রশস্ত রাস্তা। সেই পথ ধরে হজরত মুসা (আ.) তাঁর অনুসারীদের নিয়ে নিরাপদে ভিন দেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন। আর পেছন থেকে মুসাকে (আ.) ধাওয়া করতে গিয়ে ঐতিহাসিক নীলনদে সসৈন্যে সলিলসমাধি রচিত হয়েছিল খোদা দাবিদার ফেরাউনের। আবরাহা বাদশাহ বিশাল হস্তীবাহিনী নিয়ে পবিত্র কাবাগৃহ ধূলিসাৎ করে দেওয়ার জন্য অভিযান চালিয়েছিল ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে। আবরাহার বিশাল বাহিনীকে মোকাবিলা করার বিন্দুমাত্র শক্তি-সামর্থ্য ছিল না কাবাগৃহের তৎকালীন তত্ত্বাবধায়কের। তিনি কাবাগৃহের চাবি গৃহের অভ্যন্তরে ছুড়ে ফেলে বলেছিলেন, কাবা আল্লাহর ঘর হলে তিনিই তা অলৌকিকভাবে রক্ষা করবেন। আল্লাহর অপরিসীম রহমতে একশ্রেণির ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পাখির নিক্ষিপ্ত প্রস্তরের আঘাতে আবরাহা এবং তার বিশাল বাহিনী নাস্তানাবুদ হয়ে গিয়েছিল। আল্লাহর অপরিসীম রহমতের এ ধরনের বহু অলৌকিক ঘটনার বিবরণ রয়েছে পবিত্র কোরআনে।
মাগফিরাত : সাওম পালনের অন্যতম উদ্দেশ্য আত্মশুদ্ধি। আত্মশুদ্ধির অপরিহার্য শর্ত হচ্ছে যাবতীয় পাপ ও অন্যায় থেকে মুক্তিলাভ। মূলত সৃষ্ট জীব হিসেবে মানুষের চারিত্রিক দৃঢ়তার চরম অভাব রয়েছে। তাই ইন্দ্রিয় এবং ষড়্্রিপুর তাড়নায় আমরা অনায়াসে নানা পাপাচারে জড়িয়ে পড়ি। শয়তানের প্ররোচনা এবং ইন্দ্রিয়ের তাড়নার বিরুদ্ধে লড়াই করার মতো চারিত্রিক দৃঢ়তার অভাবে বিশ্বজুড়ে অনাসৃষ্টির ঝড় বইছে। আর পাপ-পঙ্কিলতার সাগরে বিশ্ববাসী হাবুডুবু খাচ্ছে। যাহোক, রোজাদারদের যাবতীয় অপরাধ মুক্তির সুবর্ণ সুযোগ দান করে পবিত্র রমজানের মাগফিরাতের অধ্যায়। আমরা নিজেদের যাবতীয় অপরাধের জন্য অনুশোচনাগ্রস্ত চিত্তে ও তওবাসহকারে আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করলে আমরা বিশ্ববিধাতার কাছ থেকে ক্ষমালাভ প্রত্যাশা করতে পারি। কারণ কাফির, আল্লাহর সাথে অংশীদারকারী এবং বান্দার হক আত্মসাৎকারী ছাড়া মহান বিশ্বপ্রতিপালক বান্দার অন্যান্য অপরাধ ক্ষমা করার প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন পবিত্র কোরআনে।
স্মর্তব্য, ইবাদত-বন্দেগির বিনিময়ে পরকালীন মুক্তি এবং জান্নাত লাভ কোনোক্রমেই সম্ভব নয়, বরং আল্লাহর রহমতই আমাদের পরিত্রাণ লাভের মোক্ষম বাহন। তাই রোজাদার হিসেবে আমাদের করণীয় হবে : যাবতীয় কুপ্রবৃত্তি পরিহারপূর্বক একাগ্রচিত্তে ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে আল্লাহর অশেষ রহমত লাভের চেষ্টা করা। বিশ্ব নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর উম্মত হিসেবে আমরা আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত লাভের প্রত্যাশার পাশাপাশি পবিত্র রমজানের বাদবাকি সময় ইবাদত-বন্দেগিতে কাটাতে সচেষ্ট হব। এ কাজে আমরা মহান বিশ্বপ্রতিপালকের কৃপা ভিক্ষা করছি।
লেখক : সহযোগী সম্পাদক, ঠিকানা, নিউইয়র্ক।
Posted ১:৫৬ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২১
America News Agency (ANA) | ANA