তুহিন আহমদ পায়েল : | শনিবার, ২১ জুলাই ২০১৮ | প্রিন্ট | 1509 বার পঠিত
ব্যাংকক একজন উদ্যমী পর্যটকের জন্য সত্যিকারেরই একটি স্বর্গ। এটি অধিকাংশ মানুষের জন্য একটি স্বপ্নের গন্তব্যস্থান। এখানে আপনি থাইল্যান্ডের রাজধানী হিসেবে যা যা আশা করেন, সব কিছু উপভোগ করতে পারবেন! উজ্জ্বল মন্দির, ভাসমান বাজার, চমৎকার স্থান এবং আরো অনেক অনেক কিছু। এসব দর্শনীয় স্থানগুলো পর্যটকদের অবশ্যই দেখা উচিত। কিন্তু সময়স্বল্পতা এবং অর্থের সীমাবদ্ধতার কারণে অধিকাংশই এসব দেখার সুযোগ করে উঠতে পারেন না। ব্যাংককে ভ্রমণের সময় অবশ্যই পরিদর্শন করতে পারেন ব্যাংকক জাতীয় জাদুঘর।
এটি দক্ষিনপূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম জাদুঘর। এর সংগ্রহশালাটি বিশাল। সৌভাগ্যক্রমে, জাদুঘরের প্রতিটি প্রদর্শন থাই এবং ইংরেজি লেবেল করা রয়েছে। যখন জাদুঘরটি দেখতে যাবেন, একটু সময় নিয়ে যাবেন। কারণ এর সংগ্রহ এতো বিশাল যে, কখন আপনার সময় শেষ হয়ে যাবে তা টেরই পাবেন না!
প্রবেশ মুখ থেকে ২০০ বাথ দিয়ে টিকেট সংগ্রহ করি। টিকেটের সাথে একটি মিউজিয়াম ম্যাপ দেয়া হয় ঘুরো দেখার জন্য। ব্যাগ নিয়ে ভেতরে প্রবেশ নিষেধ, তাই ব্যাগ জমা রাখতে বলা হলো। বললাম ব্যাগে আমার প্রয়োজনীয় অনেক কিছু আছে। বললো কোন সমস্যা নেই, ব্যাগ লক করা থাকবে। তাই কাউন্টারে ব্যাগ জমা রেখে লকের চাবি ধরিয়ে দিলো। আমি শুধু ক্যামেরাটি নিয়ে গেলাম। শুরু হল মিউজিয়াম দেখা। মিউজিয়ামে ১৪টি স্তরে ভাগ করা রয়েছে। প্রতিটি ভাগে অনেকগুলো গ্যালারি রয়েছে। আমি ১ নম্বর থেকে শুরু করলাম।

ব্যাংকক ন্যাশনাল মিউজিয়াম রাজা রামা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৫২ সালে রাজা রামা রাজত্বকালে প্রাসাদে রাজপরিবারের ব্যক্তিগত জিনিস সংগ্রহের জন্য মিউজিয়াম স্থাপন করেন। যা পরবর্তীকালে একটি জাতীয় জাদুঘর হয়। ১৮৭৪ সালে রাজা রামা রাজকীয় সংগ্রহ এবং সাধারণ আগ্রহের অন্যান্য বস্তু প্রদর্শন করার জন্য গ্র্যান্ড প্যালেসের ভেতরে কনকর্ডিয়া প্যাভিলিয়নের প্রথম জন জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করার জন্য রাজা মেমেনি রাজা-মহারাজকে নির্দেশ দেন। ফাইন আর্টস ডিপার্টমেন্টটি সে দিনটিকে থাইল্যান্ডের প্রথম ন্যাশনাল মিউজিয়ামের জন্ম হিসাবে চিহ্নিত করেছে। ১৮৮৭ সালে রাজা রামা ভান্ডার কনফারেন্স থেকে সামনে প্রাসাদে জাদুঘর স্থানান্তর করার আদেশ দেন এবং এটি ‘ওয়াং না মিউজিয়াম’ বা ফ্রন্ট প্যালেস জাদুঘর নামে অভিহিত হয়। ১৯২৬ সালে এটি ‘ব্যাংকক জাদুঘর’ এবং এটি পরবর্তীকালে ‘ব্যাংকক ন্যাশনাল মিউজিয়ামে’ উন্নীত হয়।
প্রথমে আমি থাই ইতিহাসের গ্যালারি দেখি। পাশেই প্রাসাদের মূল অভ্যর্থনা হল। যার নাম Phra Thinung Phutthaisawan। একটু একটু করে দেখে সামনের দিকে যাচ্ছি, যাতে সন্ধ্যা হবার আগেই সবকিছু দেখতে পারি। একটির পর একটি গ্যালারি দেখতে থাকি আর ছবি তুলি।

গ্যালারি ১-এ রয়েছে রাজা রামার ব্যবহৃত জিনিস। উল্লেখযোগ্য জিনিস হলো বুদ্ধিজাবন চ্যাপেল, রাজকীয় রথ, অস্ত্র, কামান, থাই প্যাভিলিয়ন এতিহ্যবাহী জিনিস, বুদ্ধিসাজন চ্যাপেলের ওয়াল পেইন্টিং, ঐতিহ্যবাহী পোশাক, খন, মাস্ক ইত্যাদি।
‘লাল ঘর’ একটি প্যাভিলিয়ন রয়েছে। ১৮ শতকের শেষের দিকে মূলত গ্র্যান্ড প্যালেসের অভ্যন্তরে এটি নির্মিত হয়েছিল।
লাল ঘর অন্য পুরানো প্রাসাদ বিল্ডিংয়ের ও অন্য প্রাসাদগুলির মধ্যে অনেক সুন্দর একটি প্যাভিলিয়ন । এটি মুরাল নকশা মত সূক্ষ্ম, ঐতিহ্যগত থাই-শৈলীর ছাদ দ্বারা নির্মিত। এছাড়া উত্তর দিকে আধুনিক একটি প্যাভিলিয়ন রয়েছে। এতে রয়েছে বিপুল বিস্তৃত আনুষ্ঠানিক রথগুলি। এই রথ রাজকীয় কাজে বিশেষভাবে ব্যবহৃত হতো। কিভাবে ব্যবহৃত হতো তার বিস্তারিত লেখা আছে প্রতিটি রথের সাথে। আগ্রহী কেউ পুরো ইতিহাস জানতে চাইলে ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসে ভিডিও দেখতে পারেন। সন্ধ্যা হয়ে গেছে, তাই হোটেল এ ফিরতে হবে। মিউজিয়াম থেকে বের হয়ে ট্যাক্সির জন্য দাঁড়ালাম। কিন্তু ট্যাক্সিওয়ালা ভাড়া অনেক চায়, তাই ভাবলাম ট্যাক্সিতে না গিয়ে টুকটুকে যাই। ৩০০ বাথ দিয়ে ঠিক করলাম টুকটুক যাত্রা হলো আমার হোটেল সুকুমভিট নানা ছই-৪।

ব্যাংকক শহরের রাস্তাঘাট ছিমছাম, পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন। অনেক রাস্তা-ফাইওভার থাকার পরও প্রচুর ট্র্যাফিক জ্যাম। কিন্তু তা শুধু কিছু সময়ের জন্য। পৃথিবীর সব বড় শহরেই জ্যাম থাকে। এটা তারই চিত্র। ঢাকার রাস্তায় ফাইওভার কম। এখানেতো চওড়া রাস্তা, ফাইওভারেরও অভাব নেই। তারপরও জ্যাম কেনো? এসব ভাবনার মধ্যেই গাড়ি সামনে চলছিলো। হোটেল আসতে আসতে বেশ রাত হয়ে গেছে। পরের দিন সকালে ট্যুর ছিলো পাতায়া।

পাতায়া : সকালে ঘুম থেকে উঠে হোটেল নিচে বুফেটে নাস্তা করে রওনা হলাম পাতায়ার উদ্দেশ্যে। ব্যাংকক বাস টার্মিনাল থেকে টিকেট করে বাসে উঠলাম। মসৃণ রাস্তায় চলতে লাগলো বাস। ব্যাংকক থেকে ২ ঘন্টা এর একটু বেশি সময় লাগবে পাতায়া যেতে। ব্যাংকক থেকে পাতায়ার দূরত্ব ১৪৯ কিলোমিটার। দীর্ঘ ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে গতিতে ছুটে চলে বাস। ১০টার দিকে পাতায়া নেমে সরাসরি চলে যাই পাতায়া সমুদ্র সৈকতে। যেখানে আমার মতো হাজার হাজার পর্যটক বিচে সূর্য স্নান করছে। নিরাপত্তায় কোন অভাব নেই, যে কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটকরা এসে এখানে ভিড় করছে।
থাইল্যান্ডের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নামকরা পাতায়া সমুদ্র সৈকত। এ সৈকতের বালু সাদা নরম। সামনে বিস্তীর্ণ নীল জলরাশি। তাতে চরে বেড়ানো রং-বেরঙের ছোট ছোট নৌকা আর পেছনে সবুজের চাদর বিছানো পাহাড় এক অন্যরকম অনুভূতির সৃষ্টি করে মনে।
থাইল্যান্ডের সমুদ্রশহর পাতায়ার প্রবাল দ্বীপের প্রতিটি পরতে এমন সৌন্দর্য রয়েছে। পাতায়া সী বিচ বড় না হলেও সুন্দর করে সাজানো। এখানে দুটো বিচ রয়েছে। পাতায়া বিচ আর চমথিয়ান বিচ। এ দুটি সী বিচে পর্যটকদের আর্কষিত করার সবরকম ব্যবস্থা করেছে থাই সরকার। সৈকতের সবকিছুই অত্যন্ত গোছানো। সৈকতের ধারে অসংখ্য রেস্তোরাঁ-বার, আর রেস্টুরেন্টগুলি খোলা থাকে ২৪ ঘণ্টা। এছাড়া বিচ রোড থেকে স্পিডবোটে পৌঁছে যাওয়া যায় সমুদ্রের গভীরে এক প্ল্যাটফর্মে।
সমুদ্রতীরের ছিমছাম এ শহরটি যেনো বিনোদনপ্রেমীদেও কাছে এক স্বর্গরাজ্য। ডিস্কো, পাব, গোগো কাবগুলো সমুদ্রতীরজুড়ে সাজানো। আমাদের কক্সবাজারের মতো বিশাল ঢেউ না থাকলেও বড়ই মোহনীয়। মনে হয় তীর দিয়ে শুধু হেঁটে বেড়াই। সমুদ্রের ওপরে আছে বিশাল বিশাল নৌযান। সেগুলোর একেকটি যেনো ছোট্ট একেকটি শহর!
পাতায়া থেকে সমুদ্রের দিকে তাকালেই দেখা যায় অসংখ্য কোরাল দ্বীপ। সেগুলোও দৃষ্টিনন্দনভাবে সাজানো। সবুজের সমারোহের চারপাশে নীলজল। পাতায়া থেকে লাইট জাহাজযোগে যেতে পারেন আপনিও। চারদিকে অসীম জলরাশির মধ্য দিয়ে ছুটে চলার রোমান্সই আলাদা। আমিও একটু ঘুরে আসার চেষ্টা করলাম।

প্যাকেজ গেলে ৫০০-৬০০ বাথ (স্পিডবোট, দুপুরের খাবার, ২ঘন্টা বিচে ঘুরা)। আমি প্যাকেজ না নিয়ে অন্যভাবে গেলাম। ওয়াকিং স্ট্রিট যেখানে শেষ, সেখান ফেরি ঘাট আছে। এখান থেকেই জাহাজ কোরাল দ্বীপে যায়, ভাড়া মাত্র ৩০ বাথ! প্রতি দু’ঘন্টা পরপর ছাড়ে, আবার কোরাল থেকেও দু’ঘন্টা পরপর পাতায়া ফিরে আসে। আপনি চাইলে যতোণ খুশি কোরালে কাটাতে পারবেন, শুধু ফেরার সময়সূচিটা আগে থেকে জেনে নেবেন। এভাবে গেলে আপনার খরচ হবে অনেক কম। দুপুরের খাবার আপনি আপনার মতোই করে নিবেন, প্রচুর খাবার হোটেল আছে ওখানে। চাইলে বাইকেও ঘুরতে পারবেন। জাহাজ নিরাপদ বেশি, জাহাজে সময় নেয় ৪০ মিনিট, স্পিটবোটে ৩০মিনিট নেয়। কোরালে ঘুরাঘুরি শেষে চলে আসি পাতায়া। পাতায়া বিচে অনেকক্ষণ হাঁটাহাঁটি করলাম। তখন বিকেল হয়ে এসেছে। একটু খিদেও লাগছে। খাবারের একটু সমস্যা হতে পারে, চারিদিকে এতো পোকামাকড় ফ্রাই চোখে পরবে যে রুচি নাও আসতে পারে। বিচ রোডে একটি ইন্ডিয়ান দোকান থেকে খাবার খেলাম, দাম একটু বেশিই মনে হলো। এখানে প্রতি কদমে কদমে ম্যাসাজের দোকান, বিভিন্ন ধরনের ম্যাসাজের চার্ট নিয়ে থাই মেয়েরা দোকানের সামনে আপনাকে অফার করবে।

এছাড়া পাতায়ায় নুচ বোটানিক্যাল গার্ডেনও ভ্রমণের জন্য অন্যরকম সুন্দর একটি স্থান। পাতায়ায় রয়েছে মনস্টার অ্যাকুয়ারিয়াম। যা পরিবার-পরিজন নিয়ে দিন কাটানোর জন্য অন্যতম আদর্শ স্থান। এটি ছয়টি অঞ্চলে বিভক্ত। যেগুলোতে আপনার এবং পরিবারের জন্য প্রচুর পরিমাণে বিস্মিত হওয়ার উপাদান রয়েছে। আপনি এখানে বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক প্রাণী, যেমন হাঙ্গর ও গভীর সমুদ্রের অন্যান্য মাছের চলাচল দেখার পাশাপাশি তাদের সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারবেন। এমনকি চাইলে তাদের খাওয়াতেও পারবেন এবং তাদের মধ্যে বিচরণ করতে পারবেন কোনো রকম শরীর না ভিজিয়েই! অ্যকুয়ারিয়ামের গ্লাসের টানেলের ভেতর আপনি কোনো ঝামেলা বা ভয় ছাড়াই নিখুঁতভাবে আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন। পাঁচ একর জায়গার উপর স্থাপিত পাতায়ার মনস্টার অ্যাকুয়ারিয়াম থাইল্যান্ডের সবচেয়ে এক্সকুসিভ স্থান, যেখানে বিশালভাবে উপভোগ করা যায় সমুদ্রের প্রাণিদের ভিন্ন জীবন। তবে দিনের পাতায়া আর রাতের পাতায়ার মধ্যে আকাশপাতাল তফাৎ। সারাদিন ঘুরাফেরা শেষে ফিরতে হবে ব্যাংকক, তাই বেশি দেরি করলাম না। পাতায়া বাস টার্মিনাল থেকে ১১৫ বাথ দিয়ে ব্যাংককের টিকেট করে এক্কামাই বাস টার্মিনালে এসে নামি। তাই রাতে কোন চিন্তা ছিল না। বাস টার্মিনাল থেকে সুকুমভিট বেশি দূরে না, যেখানে আমার হোটেল। তারপরও বেশ রাত হয়ে যায় আসতে আমার। মনে রাখবেন, বেশি রাত বাইওে থাকলে হোটেলকে বিষয়টি আগেই বলে রাখতে হবে।
সেদিনের মতো ঘোরাফেলা শেষ। কিন্তু কি যেনো একটা বাকি রয়ে গেছে! আর তা না দেখে দেশে ফিরে এলে হয়তো ভালো লাগতো না। আর তা হলো ব্যাংককের ফোটিং মার্কেটে (পানিতে ভাসমান) বাজার। রাতে চিন্তা করে রাখি যেনো সকাল সকাল উঠে যেতে পারি। এই ভেবে একটা লম্বা একটা ঘুম দেই। সকাল হয়। প্রতিদিনের মতো নাস্তা করতে হোটেলে যাই। বুফে নাস্তা, তাই পছন্দ মতো খাবার খেতে নেই কোনো মানা!
ফ্লোটিং মার্কেট : নাস্তা করে রুমে গিয়ে প্রস্তুতি নিয়ে হোটেল লবিতে নামি। লবিতে ট্যুর প্লানের ব্যবস্থা আছে। আমি ফোটিং মার্কেটে (ভাসমান মার্কেট) যেতে চাই শুনে বললো, আজ হবে না, একদিন আগে বলতে হয়। কারণ তারা গ্রুপ ট্যুর করে থাকে। চিন্তা করলাম, আমিতো কালই চলে যাবো, তাহলে একাই যাই না কেনো। আমি তাদেরকে পরে জানাবো বলে বের হয়ে যাই। সামনে গিয়ে একটি ট্যাক্সিকে জিজ্ঞাসা করি, যাবে কিনা। ড্রাইভার আমাকে পরামর্শ দেন, ট্যাক্সি না নিয়ে প্রাইভেট গাড়ি নিয়ে যেতে। কারণ এটি ব্যাংককের বাইরে, শহর থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে। ট্যাক্সি ড্রাইভার আমাকে একটি প্রাইভেট কার করে দেয়। সারাদিনের ভাড়া, ফ্লাইওভার টোলসহ, ৮০০ বাথ। আমি তাতেই রাজি হয়ে গেলাম। গাড়ি চলতে শুরু করলো দামনেন সাদুক ফোটিং মার্কেটের উদ্দেশ্যে। এটি মায়ানমার (বার্মা) সীমান্তবর্তী ব্যাংককের পশ্চিমে দামনেন সাদুক জেলায় অবস্থিত। একা, তাই আমি কিছুটা ভয়ও পাচ্ছিলাম। তারপরও মনে সাহস নিয়ে দেখতে চলে যাই। পথের দু’পাশে সুরম্য অট্টালিকা, ফাইওভার, বাগান সব মিলিয়ে দেখতে খুব ভালো লাগছিলো। মনে হচ্ছে, নতুন দেশ নতুন সব কিছু! পথ চলতে চলতে উপভোগ করতে লাগলাম চারপাশের দৃশ্য।
হাইওয়েতে সেদিন অনেক জ্যাম, তাই যেতে সময় লাগছিলো। সকাল ১১টার দিকে পৌঁছালাম দামোয়েন সাদুক ফোটিং মার্কেট। দেখি আমার মতো অনেক বিদেশি পর্যটক আসছে এটি দেখতে। ফোটিং মার্কেটে যেতে নৌকায় চড়তে হয়। এখানে অনেক নৌকা ভাড়ায় পাওয়া যায়। ভাড়া রেট করা, ১ ঘন্টার জন্য ২০০০ বাথ, ২ ঘন্টার জন্য ৩০০০ বাথ। আমি দরাদরি করে ২ ঘন্টার জন্য একটি নৌকা ঠিক করি ২৫০০ বাথ দিয়ে। নৌকায় উঠতেই ওরা আমার একটি ছবি তোলে। কিন্তু কেনো তুলেছিলো, তা আসার সময় বুঝতে পারি। নৌকা চলতে শুরু করে। চারপাশে গাছগাছালি, মাঝপথ লেক দিয়ে যাচ্ছি। পুরো মার্কেটটিই পানির উপর! দুদিকে নারকেল গাছসহ নানা ফুলের সম্ভার। তার মাঝখান দিয়ে আমি চললাম। এখানে সব থাই মেয়েরা দোকানদার। নৌকার মধ্যে জিনিস বিক্রি করছে। ছোট ছোট নৌকা, মাঝে মাঝে বড় নৌকাও আছে। যাবার সময় হাতের দু’পাশে অনেক দোকান। কিছু কেনার জন্য মাঝি প্রতিটি দোকানের সামনে দাঁড়াবে। এখানে খাবার থেকে শুরু করে সব কিছুই মেলে।
সদ্য তৈরি খাবার থেকে হস্তশিল্প সব কিছুরই অঢেল আয়োজন রয়েছে এখানে। শাক-সবজি, ফলমূল, ঘর সাজানোর জন্য নানা রকমের ছবি, ফুলদানি, মূর্তি, নকল ফুলও পাওয়া যায় ভাসমান এ বাজারে। তবে শুধু পানিতেই নয়, তীরেও আছে স্যুভেনির, পেইন্টিং, টি-শার্ট, ঘড়ি, গয়না, বাঁশি, কাঠের খেলনা ও নানা ধরনের পোশাকের দোকান। আর্টের দোকান দেখে কিছু কিনতে ইচ্ছে হলো, ভাবলাম, এসেছি যখন, তখন অন্তত একটি আর্ট নিয়ে যাই। পছন্দ হলো একটি আর্ট, কিন্তু দাম অনেক, ২১০০ বাথ। আমি ভেবেছিলাম দাম অনেক কম হবে, কিন্তু এতো বেশি হবে যে জানতাম না! তাই দামাদামি করতে লাগলাম। শেষ পর্যন্ত ১৩০০ বাথে কিনে নিলাম।

কোন জিনিস পছন্দ হলে ওরাই নৌকটিকে ছাতার বাটের মত একটা জিনিস দিয়ে টেনে নিয়ে থামাচ্ছে। আমি আর কোন কিছু না কিনে শুধু দেখে দেখে চলে আসি। যাবার পথে কয়েকটি জায়গা আছে, সেখানে চাইলে কিছু খেতে পারেন। তারই মধ্যে একটি হলো নারিকেলের বাগান। আমিও নামলাম। প্রথমেই আমি গ্রিন কোকোনাট আইসস্ক্রীম খেলাম। ডাবের ভেতরের পানিটাকে বরফ করা হয়েছে। ভেতরে শাঁস সমেত আইসক্রিম। দারুন মজাদার!
যা হোক, দু’পাশের মনোরম দৃশ্য দেখতে দেখতে এগিয়ে চললাম। খুব গভীর পানির উপর দিয়ে আমাদের নৌকা চলছিল। পানিতে অনেক কুমির ছানা, ছোট-বড় নানা রকমের সাপ ও নাম না জানা নানা রকমের ফুল দেখতে দেখতে এগিয়ে চললাম। সে এক দারুণ অনুভূতি, মনপ্রাণ ভরে গেলো। অদ্ভূত একটা আনন্দ উপভোগ করলাম এ ফোটিং মার্কেট জার্নিতে। ২ঘন্টা পর আমার ফোটিং মার্কেট দেখা শেষ হলো। পাড়ে উঠেই দেখলাম থাই ফটোগ্রাফার, যে যাবার সময় আমার ছবি তুলেছে, তা একটি ফ্রেম করে রেখেছে। ল্যামিনেট করা আর একটি কাঁচের প্লেটে এ ছবি করে রেখেছে। কিন্তু এটি এমনি দেবে না। তাই এটি নিতে হলো ৩০০ বাথের বিনিময়ে। ট্যুরিজম বিজনেসটা কি করে পজেটিভ ওয়েতে চালাতে হয়, এটা একটা শিনীয় বিষয়। সব শেষ করে আবার গাড়িতে রওয়ানা দিলাম ব্যাংককে, হোটেলের উদ্দেশ্যে। হাইওয়েতে একটি জিনিস দেখলাম। আমার গাড়ি যখন পেট্রোল নিতে একটি পেট্রোল পাম্পে ঢুকলো, তেল নেয়া শেষে তারা গাড়িতে চারটি খাবার জন্য পানির বোতল দিলো। গাড়িতে যাত্রী আমি শুধু। ড্রাইভারের কাছে জানতে চাইলাম, যাত্রী আমি একা, কিন্তু পানি দিলো চারটা? ড্রাইভার বললো, সে যদি একাও থাকতো, তাহলেও ৪টি দেবে, কারণ সিট অনুযায়ী ফ্রি পানির বোতল দেয় হাইওয়েতে। যা হোক, আসার পথে কোন বড় জ্যাম পাইনি। তাই তাড়াতাড়ি ফিরলাম হোটেলে। একটু বিশ্রাম নিয়ে ফের বের হলাম, এবার উদ্দেশ্য ওয়াট অরুণ দেখা।
ওয়াট অরুণ টেম্পল ও নাইট ক্রজ : ওয়াট অরুণ (Wat Arun) বৌদ্ধদের মন্দির। এ মন্দিরের নামকরণ নাকি হিন্দু দেবতা অরুণের নামে করা হয়েছে। ছাও প্রায়া (Chao Praya) নদীর পশ্চিম তীরে এ মন্দির। এটি নাকি ১৭শ’ শতক থেকেই ছিলো, পরবর্তীতে দ্বিতীয় রামা এসে এতে কিছু সংস্কার কাজ করেন। আবার কিছু নতুন মন্দিরও তৈরি করেন। মন্দিরের মূল বিষয় হলো একটি বিশাল উঁচু টাওয়ার, যাকে নাকি প্রাং (চৎধহম) বলে। ২১৯ ফিট থেকে ২৮২ ফিটের মাঝামাঝি কিছু হবে। মাঝখানের টাওয়ার আবার চারদিকে চারটে ছোট ছোট টাওয়ার দিয়ে ঘেরা। মাঝেটির মাথার ওপর ত্রিশূলের মতো কি সব রাখা।
মন্দিরের দেয়ালে সাদার ওপর রং-বেরঙের পোর্সেলিনের নিখুঁত কাজ! তবে দূর থেকে দেখতে যতো ভালো লাগে, কাছে গেলে তারচেয়েও আরো বেশি ভালো লাগে। দূর থেকে কেবল মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতেই ইচ্ছে করে।
অসংখ্য সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে ওপরে উঠতে হয়। মৃদুল আর খুশবু সবগুলায় সিঁড়ি। এতোদূর এসেছি, না দেখে যাই! বেশিরভাগ টাওয়ারেই বুদ্ধের জীবনের কাহিনী মূর্ত হয়ে রয়েছে। একটায় দেখলাম বুদ্ধের নির্বাণ লাভ করছেন সে গল্প।
ও হ্যাঁ, একটা কথা তো বলাই হয়নি। এ বৌদ্ধ মন্দিরে ঢুকতে হলে উপযুক্ত পোশাক পড়তে হবে; শর্ট প্যান্ট, শর্ট টিশার্ট, শর্ট জিন্স (মেয়ে), শর্ট টপস এগুলো পড়ে ঢুকতে দেয়া হয় না। দেখেশুনে নদীপথে যখন ফিরে আসছি, সূর্যদেব ঢলে পড়েছে জলে। এক জায়গা ফেলে চলে আসি, আর কি নো পড়ে থাকে পিছনে। আর কখনোই হয়তো এখানে আসা হবে না ভাবতেই বুকের ভেতরাটা যেনো কেমন কওে ওঠে।

সন্ধ্যা হয়ে গেছে। এরপর আমি নাইট ক্রুজে দু’ঘন্টা ঘুরলাম। পুরো ব্যাংকক সিটিটা দেখলাম রাতের আলোয়। রাত্রির আলোতে গগণচুম্বী অট্টালিকা, নদীর উপর আলো সব মিলিয়ে এক মায়াবী-রহস্যময়ী হয়ে উঠেছিলো যেনো এই ব্যংকক শহর! এ নদী মূলত ব্যাংকককে ভাগ করেছে এবং নদীর দু’কূল ঘেঁষেই আধুনিক ব্যাংককের দৃষ্টিনন্দন সব বড় বড় ইমারত।
যদি ব্যাংককের ম্যাপের দিকে তাকান, দেখবেন একটি নদী ছাও ফ্যারায়া বা দি রিভার অব কিংস। যাকে বলা হয় রাজাদের নদী। আমার প্রমোদতরী রিভার স্টার প্রিন্সেস যাত্রা শুরু করে সন্ধ্যা ৭.২০মিনিটে। হাতে যথেষ্ট সময়। চাও ফারায়া নদীর বুক চিড়ে নাইট ক্রজটা চলছে। স্বাভাবিকভাবেই আমার ক্যামেরায় কিক কিক চলছেই। রাতের আলোয় ব্যাংককের ওয়াট অরুণ টেম্পেলও দারুণ। দু’তলা সুন্দর জাহাজের ডেকে পরিপাটি সাজানো-গোছানো টেবিল চেয়ার, বুফে খাবারের ডিশ আর বাহারি পানপাত্র। সূর্য তখন আড়াল হলেও আঁধার গ্রাস করতে পারছে না ঝলমলে দ্যা রিভার অব কিংকে। এ নদীর দু’তীর ঘেঁসা আধুনিক দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা, হোটেল-মোটেল আর অসংখ্য রেস্টুরেন্ট। রিভার স্টার ডেকে তখন সঙ্গীত-নৃত্য, থাই মেয়েদের শিল্পপ্রদর্শন চলছে। টেবিলে টেবিলে থরে থরে সাজানো হরেক পদের খাবার। সব যেনো ঝলমলে ছাও ফ্যারায়ার বর্ণিল রূপে। রাত সাড়ে ৯টায় নির্ধারিত সময়ে শেষ হয় আমার রিভার ক্রজ ডিনার। এ নাইট ক্রজ ট্যুর একটু দাম বেশি। খরচ ১০০০ বাথ। তবে এটা বলতে পারি, এক বিচিত্র সুন্দর অভিজ্ঞতা হলো আমার। এজন্য আগে থেকেই ই-মেইল পাঠিয়ে যোগাযোগ করে রেখেছিলাম। নদীর দু’তীরে ঝলমলে আলোর মাঝে, নদীর প্রাণ জুড়ানো হাওয়ায় কোথা দিয়ে যে দু’ঘন্টা কেটে গেলো, বুঝতেই পারলাম না!
সুকুমভিত নানা ছই-৪ : আমি সুকুমভিট নানা ছই-৪ হোটেল বস নানা হোটেল এ ছিলাম। দেখতে অনেক সুন্দর। সুইমিং পুল, বুফেট সকালের নাস্তা, ট্যুর কাউন্টার সব কিছুই হাতের নাগালে। মোটামুটি ব্যাংকক এলে সবাই এই সুকুমভিট এলাকায়ই থাকে। মেইন রোডটি দিয়ে সুকুমভিট মূলত দু’ভাগে ভাগ করা। এখানে রোডগুলোকে মনে হয় ‘ঝড়র’ বলে, মেইন রোডের একপাশে জোড়া সংখ্যার রোড মানে Soi-২,৪,৬,৮,১০ এ রকম এবং অন্যপাশে বিজোড় রোড মানে Soi- ১,৩,৫,৭,৯ এরকম। সব হোটেলই ভালো। লোকেশন ভালো, ফেসিলিটি সবই আছে। আপনি তাই পছন্দমতো হোটেল রুম নিতে পারেন। ভাড়া কম-বেশি আছে। Soi-৩ এ সবধরনের হালাল ফুড পাওয়া যায়। খুবই সুস্বাদু, দাম একটু বেশি, তবে খেতে খুব ভালো লাগবে। ব্যাংকক শহরে বোধহয় রাত্রি নামলো অন্তত আমার জন্য। আসলে ব্যাংকক শহওে কখনোই রাত নামে না! এরমধ্যে সময় করে অনেক শপিং মল ঘুরাঘুরি করে হোটেলে ফিরে আসি। কারণ কালই যে আমার নতুন গন্তব্য নতুন দেশ সফর।
কেনাকাটা : ব্যাংকক ঘুরতে যাওয়া মানেই অনেকেই কাছে মনে হয় কম দামে কেনাকাটা করার বিশাল সুযোগ! ব্যাংকক নারী ও পুরুষের গার্মেন্টস শপিংয়ের জন্য সবচেয়ে ভালো এবং ওয়ার্ল্ডের বেস্ট একটি জায়গা। মোটামুটি কম দামে মেয়েদের ব্যবহারের জন্য যাবতীয় অনেক জিনিস পাওয়া যায়। বলতে গেলে কসমেটিকস আইটেম এবং ব্যাগ, জুতা, স্যান্ডেল, ঘড়ির অনেক ভাল কালেকশান ও সমাহার অতুলনীয়। ছেলে বা মেয়ে, যাদের পোশাকের প্রতি একটা ভাল টান আছে, তাদের উভয়ের জন্য গার্মেন্টস আইটেমও আছে উল্লেখ করার মতো।
ব্র্যান্ডেড পোশাকের এর জন্য সেন্ট্রাল, এমবিকে, ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টর ভালো। সস্তায় গার্মেন্টস কেনার জন্য প্রাতুনাম বা বাইনক টাওয়ার ভালো। ওখান থেকে কেডস কিনতে পারেন খুবই সস্তা। সিলম এবং সুকুমভিটে আছে অনেক মার্কেট, তবে দাম অনেক বেশি। না কেনাই ভালো, যদি দামাদামি করতে না পারেন।
ইলেকট্রনিক্স আইটেম যদি দেখেশুনে কিনতে পারেন, তাহলে সেটা দীর্ঘদিন নিশ্চিন্তে ব্যবহার করা যাবে। ব্যাংকক নগরীর জায়গায় জায়গায় রয়েছে অনেকগুলা নাইট মার্কেট, যেগুলো ২৪ ঘণ্টাই খোলা থাকে। রয়েছে অসংখ্য সুপার সপ, সুপার মল। সুকুমভিত জায়গায় টার্মিনাল ২১, রবিনসন্স, টেসকো লোটাস, সিয়াম প্যারাগন, দ্য মল ইত্যাদি এই ধরনের অনেকগুলো ছোট-বড় শপিং মল আছে।

চাটুচাক উইকেন্ড মার্কেট : সব মার্কেটের মার্কেট হিসাবে পরিচিত চাটুচাক উইকেন্ড মার্কেট (Chatuchak Weekend Market). এ মার্কেটের বৈচিত্র্য অবাক হবার মতো। সম্ভবত এখানে শপিং আপনার অনেক আনন্দজনক হবে। চাতুচাক হলো সাপ্তাহিক ছুটির মার্কেট। প্রায় ৯ হাজারের উপর দোকান আছে এ জায়গায়! জুতা থেকে শুরু করে নেইলকাটার, পেইন্টিং, পোশাক, গেঞ্জি, শোপিচ থেকে শুরু করে উকুলেলে, সবই মেলে এখানে। একটু দরাদরি করে নিতে পারলে স্বল্পদামে মিলে যেতে পাওে মহার্ঘ্য অনেক কিছুই!
এশিয়াটিক দ্য রিভারফন্ট : এশিয়াটিক সফলভাবে শহরের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় শপিং অভিজ্ঞতার দুটিকে একত্রিত করেছে একটি রাতের বাজার এবং একটি শপিং মল। এই আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বন্দরে ১৫০০ বুটিকস এবং ৪০ টি রেস্টুরেন্ট আছে।
সিয়াম স্কোয়ার : ব্যাংককের শপিং প্রাণকেন্দ্র হলো সিয়াম স্কোয়ার। অনেক বড় মল যেমন, সিয়াম প্যারাগণ এবং সিয়াম সেন্টার সরাসরি বিটিএস এবং সেন্ট্রাল ওয়ার্ল্ডের সাথে সংযুক্ত। এলিভেটেড ওয়াকওয়ে দিয়ে মাত্র পাঁচ মিনিটে পৌঁছে যাওয়া যায় বিটিএস এবং সেন্ট্রাল ওয়ার্ল্ড।
খাও সান এবং পাটপং : অনেক জায়গায় রাত মানেই হলো মার্কেট বন্ধ করার সময়। কিন্তু ব্যাংককে সেটা না। সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে খাও সান মার্কেটের পশরা বসে। পাটপং মার্কেটও অনেকটা এমনই।
পেনটিপ প্লাজা : কেউ যদি আমার মতো টেকলোজি ফ্রিক হয়ে থাকেন, তার জন্য সবচেয়ে ভালো হলো পেনটিপ প্লাজা। উপর থেকে নিচ সব ফোরেই মোবাইল, ল্যাপটপ, নোটবুক, কম্পিউটারের বিশাল সমাহার। তাই কোন গ্যাজেট কিনতে চাইলে চলে যেতে পারেন এ মার্কেটে।

প্লাতুনাম : প্ল্যাতুনাম লোকাল মার্কেটগুলোর মধ্যে খুবই পরিচিত। তার কারণ হচ্ছেÑ এখানে আপনি হোলসেলে দামাদামি করে জিনিসপত্র কিনতে পারবেন। তাছাড়া এ মার্কেটে আপনি সব ধরনের কাপড় পাবেন। প্লাতুনাম এলাকায় বাইওক টাওয়ারের নিচে রয়েছে বিশাল ফুটপাত মার্কেট, ভিক্টরি মনুমেন্ট মার্কেট, ব্যাংকক ফার্মার্স মার্কেট, চায়না টাউন, কাওসান রোড শপিং, শ্যামপেং লেন মার্কেট, লিটল ইন্ডিয়াসহ অনেকগুলা ছোট ছোট মার্কেট। এ মার্কেটগুলোতে দরদাম করে সস্তায় কেনাকাটা করা যায়। অনেকে আবার মনে করেন, এমবিকে শপিং মল মানে সস্তায় জিনিস, আসলে তা না। তবে দরদাম করে নিতে পারলে সস্তা। একটু কম দামে শপিং করতে চাইলে তাদের জন্য রয়েছে টাওয়ান্না টাওয়ার।
প্রচুর ফল পাওয়া যায় থাইল্যান্ডে। এছাড়া থাই ফুড ও খুব মজার মাছের প্রণালি ও রেসিপিগুলো চেখে না দেখলে পরে হয়তো পস্তাতে হতে পারে।।
থাইল্যান্ড যখন শ্যামদেশ : থাইল্যান্ড দণি-পূর্ব এশিয়ার একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। এটিই একমাত্র রাষ্ট্র যেটি একমাত্র যুদ্ধের সময় ছাড়া আর কখনো কোনো ইউরোপীয় বা বিদেশি শক্তির নিয়ন্ত্রণে ছিল না। ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত দেশটির নাম ছিল শ্যামদেশ। তারপর এর নাম পরিবর্তন হলেও ১৯৪০ সাল পর্যন্ত শ্যামদেশ নামেই ডাকা হতো। ১৯৪৯ সালে দ্বিতীয়বারের মতো থাইল্যান্ড নাম রাখা হয়। থাইল্যান্ডে ১৭৮২ সাল থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত পরম রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত ছিল। ১৯৩২ সালে বিদ্রোহীরা একটি অভ্যূত্থান ঘটায় এবং দেশে সাংবিধানিক রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে। তখন থেকে আজ পর্যন্ত থাইল্যান্ড বহু সামরিক ও বেসামরিক সরকারের অধীনে শাসিত হয়েছে।
থাইল্যান্ডের মধ্যভাগে রয়েছে বিস্তীর্ণ উর্বর সমভূমি। এ সমভূমির মধ্য দিয়ে দেশের প্রধান নদী চাও ফ্রায়া এবং এর শাখানদী ও উপনদীগুলো প্রবাহিত হয়েছে। এ অঞ্চলে ধান ও অন্যান্য ফসলের আবাদ হয়। মধ্যভাগের সমভূমির পশ্চিম, উত্তর ও পূর্ব দিক ঘিরে রেখেছে পাহাড় ও মালভূমি। পশ্চিমের পর্বতশ্রেণি দণি দিকে মালয় উপদ্বীপে প্রসারিত হয়েছে। জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ থাই জাতির মানুষ। এরা প্রায় সবাই তেরাভাদা বৌদ্ধধর্ম পালন করে। থাইল্যান্ডে বসবাসকারী অন্যান্য জাতির মধ্যে আছে চীনা, মালয় ও আদিবাসী পাহাড়ি জাতি, যেমন মং ও কারেন। থাইল্যান্ডের পরিশীলিত ধ্রুপদী সংগীত ও নৃত্য এবং লোকশিল্প বিখ্যাত। এটা কৃষিপ্রধান দেশ হলেও ১৯৮০ সাল থেকে অর্থনীতির দ্রুত উন্নতি ঘটছে। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এর সংস্কৃতিতে ভারত, চীন এবং অন্যান্য দণি-পূর্ব এশীয় প্রতিবেশী সংস্কৃতির প্রভাব পড়েছে। প্রথম থাই রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করা হয় বৌদ্ধ সুখোথাই সাম্রাজ্যকে, যার সূচনা ১২৩৮ সালে। ১৪৩১ সালে সিয়ামিজ সৈন্য অ্যাংকর লুণ্ঠনের পর অ্যাংকরের অনেক হিন্দু প্রথা ও আচার-অনুষ্ঠান সিয়ামের সংস্কৃতির অংশ হয়ে যায়। ১৭৬৭ সালে বর্মীদের হাতে আয়ুত্থাইয়ার পতনের পর কিছুকাল রাজা তাকসিনের অধীনে থোনবুরি থাইল্যান্ডের রাজধানী ছিল। ১৭৮২ সালে রাজা প্রথম রাম চাকরি সাম্রাজ্যের রাজধানী হিসেবে ব্যাংকককে বেছে নেন। ১৬০০ সাল থেকে থাইল্যান্ডে ইউরোপীয় শক্তিগুলোর আগমন ঘটতে থাকে। তবে তাদের প্রচুর চাপ সত্ত্বেও থাইল্যান্ড দণি-পূর্ব এশিয়ার একমাত্র দেশ, যা কোনো ইউরোপীয় শক্তির উপনিবেশে পরিণত হয়নি। ১৯৩২ সালে একটি রক্তপাতহীন অভ্যূত্থানের পর নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে থাইল্যান্ড জাপানের প নেয়, তবে যুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রে পরিণত হয়। ১৯৮০ সালে তাদের গণতন্ত্রে উত্তরণ ঘটে। থাইল্যান্ডের ৫,১৪,০০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা, যা মূল দণি-পূর্ব এশিয়ার মধ্যভাগে পড়েছে। এর এই ভৌগোলিক অবস্থান জাতি, সমাজ এবং সংস্কৃতিকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করেছে। থাইল্যান্ড মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুর যাওয়ার একমাত্র পথ নিয়ন্ত্রণ করে। একমাত্র রাজধানী ব্যাংককের গভর্নর জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন, বাকি ৭৫টি প্রদেশের গভর্নর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নিযুক্ত হন।
বিদায় ব্যাংকক: দারুণ আনন্দময় ছিলো আমার ৫ দিনের ব্যাংকক ভ্রমণ। থাইল্যান্ডের মানুষগুলোকে খুবই ভালো লেগেছে। তারা খুবই ভদ্র ও বন্ধুবৎসল। সর্বশেষ আমাকে মালেশিয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিতে হবে। আমার ফাইট ছিল সকাল ১১.৪০ মিনিটেঅ ডং মং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কুয়ালালামপুর আন্তজার্তিক বিমানবন্দর, মালয়েশিয়া। তাই আমি সকাল ৭টার দিকে বিমানবন্দর রওনা দেই। আগেই হোটেলে গাড়ির জন্য বলে রেখেছিলাম। প্রতিটি বিমানবন্দর শহর থেকে অনেক বাইরে। মনে করছিলাম অনেক সময় লাগবে কিন্তু হাইওয়েতে কোন জ্যাম না থাকায় ৩০ মিনিটেই পৌঁছে গেলাম বিমানবন্দরে। আমাদের দেশের মতো সিকিউরিটি এতো না। হাজার হাজার বিদেশি পর্যটক বিমানবন্দরের ভেতরে। সবাই দেশে ফেরার পথে বা অন্য দেশে যাবে ঘুরতে। আমি ইনফরমেশন কেন্দ্র থেকে মালিন্দ্র এয়ারওয়েজের কাউন্টার কোথায় জেনে নির্দিষ্ট কাউন্টারে গিয়ে চেকইনের জন্য দাঁড়ালাম। ১ ঘন্টা আগে চলে এসেছি, তাই কাউন্টার খোলেনি। হাতে সময় থাকায় আমি হেঁটে এয়ারপোর্টের চারপাশটা একটু দেখে নেই। অনেকের ফ্লাইট লেট, তাই বসে অপেক্ষা করছে। দেখতে দেখতে সময় পার হয়ে যায়। কাউন্টারে আসতে কথা হয় ইন্দিনেশিয়ায় এক পর্যটকের সাথে। তিনিও আমার মতো মালয়েশিয়া যাবেন। কথা বললাম ১০/১৫ মিনিটি। এরই মধ্যে কাউন্টার খোলা হয়। প্রথম লাইনে আমরা ২জন ছিলাম, তাই আমাদের বোর্ডিং পাস পেতে সময় লাগেনি। তারপর ইমিগ্রেশন করে ভেতরে ঢুকি। অনেক সুন্দর ও পরিপাটি বিমানবন্দরটি। মনে হয় সারাদিন অলস বসে সময় কাটানো যায়। ভেতরে প্রতিটি গেইট, কাউন্টারের সামনে রয়েছে ফুডের দোকান। বাচ্চাদের খেলাধুলার ব্যবস্থাও রয়েছে ভেতরে। বিমানে উঠার জন্য গেইটের সামনে চেয়াওে বসে অপেক্ষা করছি। তখন এক বাংলাদেশি দেখি মোবাইলে বাংলা গান শুনছে। আমি এগিয়ে গিয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করি বাংলাদেশি নাকি? তখন তার সাথে পরিচয় এবং কথা হয়। তিনি কাতার প্রবাসী, কিন্তু ঘুরতে এসেছেন থাইল্যান্ড। একটু পর ঘোষণা দেয়া হলো বিমানে ওঠার জন্য। বিমানে উঠলাম। এবার আমার গন্তব্য মালয়েশিয়া। ##
Posted ১১:৩৫ অপরাহ্ণ | শনিবার, ২১ জুলাই ২০১৮
America News Agency (ANA) | Payel