বুধবার ২৪ মে, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১০ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম
শিরোনাম

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা সাজেক ভ্যালি

তুহিন আহমদ পায়েল :   শনিবার, ০২ অক্টোবর ২০২১ 12993
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা সাজেক ভ্যালি

অপরুপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা সাজেক ভ্যালি। অনেকদিন ধরেই শুনে এসেছি একটি স্বপ্নের রাজ্য। যেখানে মেঘ এসে পায়ের কাছে ধরা দেয়। সবসময় সাজেক আচ্ছাদিত থাকে শুভ্র কুয়াশার চাঁদরে। সাজেক মেঘের রাজ্য অপার্থিব সৌন্দর্য্যে। আমার দেখা সাজেক আজীবন মনে থাকবে। যোগাযোগে অভূতপূর্ব উন্নতি হওয়ায় ভ্রমণ প্রিয়সিদের কাছে এখন জনপ্রিয় গন্তব্যের নাম সাজেক।

সাজেকে বর্ষার সময় পাহাড়ের আসে লাবণ্যতা। আর সময়ে সময়ে রুপ বদলানো সাজেকের রোমান্টিক আবহাওয়ায় বিমোহিত করে সবাইকে। এছাড়াও আকাশ এখানে দিগন্তের নীল ছুঁয়ে পাহাড়ে হেলান দিয়ে ঘুমায়। এই প্রথম ৪০জনের একটি গ্রুফে ভ্রমনের সুযোগ হয়। ৮/১০ জনের অনেক ট্যুার দিয়েছি অনেক কিন্তু এ একসাথে অনেকের সাথে আনন্দ উভভোগকরা এই প্রথম। আনন্দ উপভোগ করার সুযোগ করে দেয় ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভাসির্টি। ১৬ই ফেব্রুয়ারী ২০২০ রাতে বাসে করে রওয়ানা দেই সাজেক এর উদ্দেশ্যে। খাগড়াছড়ি যখন পৌঁছাই তখন ভোর ৬.০০টা। সকালের নান্তা শেষে সবাই জিপ (চান্দের) গাড়ির করে রওয়ানা দেই সাজেকের দিকে। নিরাপত্তা চেকপোষ্টে যেতে দেখা গেলো পর্যটকদের মিলন মেলা।

সকাল দশটা ত্রিশ মিনিটে নিরাপত্তা চেকপোষ্ট কিয়ারেন্স পাওয়ার পর সারি সারি গাড়ি ছুটতে থাকলো সাজেকের দিকে। আদিবাসী শিশুরা হাত নাড়িয়ে অভিবাদন জানাচ্ছে। দেখা হলো কাসালং, মাসালং, মাইনি সহ উপত্যকার ভাঁজে ছোট ছোট অনেক নদীর। আঁকা—বাঁকা পাহাড়ি পথে সারি সারি জিপ গাড়ি ছুটে চলার দৃশ্য এবং ঢেউ খেলানো অসংখ্য উঁচু—নিচু সবুজ পাহাড়। উঁচু নিচু পাহাড়ি পথে রোলার কোষ্টারের অনুভূতি ছিল বেশ উপভোগ্য। বাতাসে দোল খাওয়া গুল্মলতায় মনকেও দুলিয়ে তুলে ।

টাইগার টিলা আর্মি চেকপোষ্ট ও মাচালং বাজারে বিরতি দিয়ে বেলা দুটায় আমরা পৌছে গেলাম সাজেক। রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় হলেও যোগাযোগ সহজ খাগড়াছড়ির দীঘিনালা হয়ে। বাঘাইহাট থেকে সাজেকের পথটি বেশ রোমাঞ্চকর। সাজেকের প্রথমে রুইলুইপাড়া। যেখানে হোটেল ও রিসোর্টগুলো আর শেষ মাথায় কংলাকপাড়া।

হোটেলে চেকইন করে দুপুরের খাবার তারাতারি শেষ করতে হল। বিকেল বেলায় সাজেকের সর্বোচ্চ চূড়া কংলাকে যেতে হবে। খাবার শেষে হোটেলে বিশ্রাম নিয়ে ছুটে চলা কংলাক পাহাড়ের চুড়ায়। যাবার পথে ক্যামেরার কিক থামতে চাচ্ছেনা স্মৃতিগুলো ক্যামেরার ফ্যামেবন্দী করে রাখছে সবাই। দুই পাহাড়ের মধ্যে ৩০/৪০ মিনিট হাটার দুরত্বের কিছুটা পাকা ও কিছুটা মেঠপথ। এখানে লুসাই, পাংকুয়া ও ত্রিপুরাদের বসবাস। প্রকৃতির মত সুন্দর পাহাড়ের সহজ সরল আদিবাসী মানুষের সংগ্রামী জীবন থেকে হয়তো অনেক কিছু শেখার আছে। কংলাক পাড়া থেকে ভারতের লুসাই পাহাড় দেখা যায়। সাজেকের পূর্বে ভারতের মিজোরাম ও উত্তরে ত্রিপুরা রাজ্য।

কংলাকের চূড়ায় না উঠলে সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ বৃথা। কংলাক পাহাড় থেকে নামতে নামতে চারিদিকে ঘোর অন্ধকার। এসে দেখি, রুইলুই পাড়ার রাতের সাজেক সেজেছে মায়াবী এক অপ্সরায়। আপনার কাছে মনে হতে পারে দেশের ভেতর অন্য কোনো এক দেশ। সাজেকে বিদ্যুতের কোনো ব্যাবস্থা নেই, (তবে সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ১১ টা পর্যন্ত জেনারেটরের মাধ্যমে রিসোর্ট গুলোয় বিদ্যুত সাপ্লাই দেয়া হয়) তখন আপনি আপনার প্রয়োজনীয় ইলেকট্রিক জিনিষ গুলো চার্জ করে নিতে পারবেন।

সমতল ভূমি থেকে অনেক উঁচুতে অবস্থিত সাজেক। এ পাহাড়ের চূড়া থেকে মিজোরামের লুসাই পাহাড়ের অপূর্ব দৃশ্য দেখে বিস্ময়ে বিমূঢ় হয় সবাই। নাগরিক জীবনের সব ক্লান্তির অবসানে চলে যায় সাজেক ভ্যালিতে এমন চোখ জুড়ানো মনরোম দৃশ্য দেখে।
সাজেকের এই প্রাকৃতিক রূপের সাথে পাংখোয়া ও লুসাই আদিবাসীদের বৈচিত্রময় জীবন যাত্রা দেখে আরও বিস্মিত করে পর্যটকদের। উঁচু মাচার ঘরে গাছের গুড়ি কেঁটে বানানো সিড়ি, ঘরের ছাউনী বাঁশের পাতার। ঘরের সামনে ফুলের বাগান, মাঝে মাঝেই ক্যাকটাস ও অর্কিড শোভা পাচ্ছে রুইলুই গ্রামটি।

রাতের মায়াবী সাজেক অন্যরুপ সৃষ্টি করে। এখানে প্রতিটি সন্ধ্যা নামে উৎসবের আমেজ নিয়ে। কটেজ গুলোর সামনে থেকে নাচ, গানের আওয়াজ পাওয়া যায়। আমরাও নাচ, গানের দিক থেকে কম ছিলামনা। মেঘ উড়না উড়িয়ে উড়ন্ত নৃত্য করি সবাই। পাহাড়ি ও বাঙালি উভয় ধরনের খাবার পাওয়া যায় সাজেকে। সাজেকে খাবারের কথা রেস্তোরাঁয় আগেই বলে রাখা ভালো, তা না হলে খাবার পাওয়া কঠিন কিংবা সময় বেশি লাগে। এ ছাড়া সন্ধ্যা হলেই রাস্তার দুই পাশে খাবারের অসংখ্য দোকান চোখে পড়বে। রাতের খাবারে ভাতের সাথে ব্যাম্বু চিকেনের স্বাদ এখনও লেগে রয়েছে। পরে সবাই মিলে আবার ব্যাম্বু চা পানের সাথে সাথে গল্প আর আড্ডায় কেটে যায় অনেক সময়।

খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে সাজেকের অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে ভুলবেন না। ভোরে ঘুম থেকে উঠে যাত্রা হেলিপ্যাড। যেখান থেকে সূর্যাস্ত-সূর্যদয় দেখা যায়। কুয়াশায় ঢাকা আকাশ পরিস্কার হতেই আমরা ছুটলাম হেলিপ্যাডের দিকে। আমার যাবার আগে আমাদের গ্রুপের অনেক চলে যায়। ততক্ষনে সূয্যের আলোয় আলোকিত সাজেকের আকাশ। পাহাড়ের ভাঁজে তুলোর মতো সাদা মেঘ। সঙ্গে ঝলমলে রোধ। চারিদিকের সব কিছু ঝকঝকে। হেলিপ্যাড থেকে আসার পথে নাস্তা খেয়ে সকালের সাজেকের বিভিন্ন স্থান ঘুরতে থাকি। এক পর্যায়ে জুলন্ত সেলফি ব্রিজে গিয়ে কয়েকজন ক্যমেরাবন্দি হই।

সাড়ে নয়টায় হোটেলে চেক আউট করে সেনাবাহিনীর স্কট সকাল ১০টার ধরব তখন গাড়ির যান্ত্রিক ত্রুটি। আমাদের দীর্ঘক্ষন অপেক্ষার পর রওয়ানা দিতে হলো। খাগড়াছড়ি পৌছাই তখন ঘড়ির কাটায় দুপুর ২.৩০টা।

প্রকৃতিপ্রেমীরা সাজেক ভ্যালিতে বসে নিজেকে উজাড় করে দিয়ে প্রকৃতির খুব কাছাকাছি থেকে সময় কাটায়। তাদের হৃদয় ও মন ছুঁয়ে যায় নৈসর্গিক এ স্থানটির রূপ-লাবণ্যে। মেঘাচ্ছন্ন দিনে সাজেক আরো বেশি দৃষ্টিনন্দন ও অপরূপ হয়ে ওঠে। সাজেকের সৌন্দর্য ভ্রমণপিপাসু যে কাউকেই মুগ্ধ করবে অনায়াসে।

যাদুর শহরে ফেরার প্রহর গুনছি, তখন ভাবতে থাকি অনেক মধুর স্মৃতি নিয়ে ফিরছি মেঘের রাজ্য থেকে। ভ্রমন মানুষের মনকে উৎফুল্ল ও আনন্দদায়ক করার ভ্রমন একটি উপায়।

Facebook Comments Box

Comments

comments

Posted ৮:৪৮ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০২ অক্টোবর ২০২১

America News Agency (ANA) |

আর্কাইভ

 

President/Editor-in-chief :

Sayeed-Ur-Rabb

 

Corporate Headquarter :

 44-70 21st.# 3O1, LIC. New York-11101. USA, Phone : +6463215067.

Dhaka Office :

70/B, Green Road, 1st Floor, Panthapath, Dhaka-1205, Phone : + 88-02-9665090.

E-mail : americanewsagency@gmail.com

Copyright © 2019-2023Inc. America News Agency (ANA), All rights reserved.ESTD-1997