সোমবার ১০ নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৫ কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মরুর বুকে মোহনীয় রূপ

তুহিন আহমদ পায়েল :   |   সোমবার, ০৭ জানুয়ারি ২০১৯   |   প্রিন্ট   |   1288 বার পঠিত

মরুর বুকে মোহনীয় রূপ

সুযোগ খুঁজছিলাম ওমান নামের দেশটিকে একটু দেখে আসার। সুযোগ পেতেই ২০১২ সালে ওমান উড়াল দেই। ঢাকা থেকে আমিরাত এয়ারলাইন্সে দুবাই হয়ে ওমান যাই। আমাদের টিকেট ছিল ঢাকা-দুবাই-ওমান। এটিই ছিল আমার বাইরে দেশে যাওয়ার প্রথম অভিজ্ঞতা। ঢাকা বিমানবন্দর পৌঁছার পর নিয়ম মতো প্রথমে লাগেজ স্ক্যানিং করা হয়। লাইনে দাঁড়িয়ে বোর্ডিং পাস সংগ্রহ করি। এরপর ইমিগ্রেশন লাইন। দীর্ঘলাইন, অনেকটা সময় দাঁড়িয়ে থাকার পর অবশেষে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন হয়। আমার সঙ্গে পরিচিত এক আত্মীয়ও ছিলেন। রাত পৌনে ১১টার দিকে বিমানে ওঠার ডাক পেলাম।

বিমানে আকাশ থেকে আমাদের প্রিয় শহর ঢাকাকে অনেক সুন্দর দেখাচ্ছিল। সব কিছুই কেমন যেন ছোট মনে হচ্ছিল! বিমান ছাড়ার ৪০ মিনিটের মধ্যেই সবাইকে রাতের খাবার দেয়া হলো। অবসর বিনোদনের বিমানে ইন-ফ্লাইট এন্টারটেইনমেন্টের বেশ ভালো ব্যবস্থা আছে। ইচ্ছে হলে ইংরেজি, বাংলা, হিন্দি বা আরবি সিনেমা দেখা যায়। ও পথে না গিয়ে আমি কিছুটা সময় বই পড়ে আর কিছুটা সময় ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিলাম। দীর্ঘ ৫ ঘন্টা উড়ানের পর স্থানীয় সময় ভোর সাড়ে পাঁচটায় দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছি। এখানে আমাদের ১৩ ঘণ্টা ট্রানজিকশন বিরতি। রেস্তোরাঁ ‘সাবওয়ে’-তে হালকা খাবার খেয়ে কিছুক্ষণ শপে কেনাকাটা আর ঘোরাঘুরি করে সময় কাটালাম। পরবর্তী কানেক্টিং দুবাই-ওমান ফ্লাইট সন্ধ্যা ৭টায়। এ সুযোগে ঘুরে ঘুরে পুরো বিমানবন্দর ভালো করে দেখে নিলাম।

অনেক সাধারণ যাত্রী এখানে-সেখানে বসে ইন্টারনেটে কাজ সেরে নিচ্ছে। সুযোগে আমিও বেশ কয়েকটি মেইল আর এসএমএস করে চেয়ারে গা এলিয়ে খানিকক্ষণ ঝিমুনি দিয়ে নিলাম। দুবাই বিমানবন্দরে আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে, তাদের কর্মের প্রতি দায়িত্বশীলতা। যে কোনো প্রয়োজনে এখানে সাহায্যের জন্য কর্তৃপক্ষ রয়েছে। মেডিক্যাল থেকে শুরু করে যে কোন সহযোগিতা মুহূর্তের মধ্যেই পাওয়া যায়।

ওমানের ফ্লাইট সন্ধ্যা ৭টায়। এখানেও ঢাকার মতো ইমিগ্রেশন করতে হলো। সব কিছু সম্পন্ন হওয়ার পর বিমান ছেড়ে দিল। বিমানে যাত্রী সংখ্যা কম ছিল। আমিও তাই একটা ভালো জায়গা দেখে বসে পড়লাম। বিমান যখন দুবাইয়ের আকাশসীমা পেরিয়ে ওমানের প্রবেশ করল, তখন নিজের কাছে সবকিছু নতুন লাগছিল। বিমানের জানালা দিয়ে নিচে সবকিছু দেখছিলাম। ওমানে মাস্কট বিমানবন্দরে পৌঁছায়। বিমান থেকে নেমে বাসে ইমিগ্রেশন পর্যন্ত আসতে হলো। স্বল্প সময়েই ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করে লাগেজ নিয়ে বিমানবন্দর থেকে বের হলাম। ওমান প্রবাসী এক বাংলাদেশি ভাইয়ের কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে আমাদের আত্মীয়কে ফোন করি। তিনি আমাদের কি কবে তার বাসায় পৌঁছতে হবে তা বাতলে দেন।

oman-visa-featured-963x400

ওমানের রাজধানী ও প্রধান শহর- মাস্কট। খাঁজকাটা জাফরি দিয়ে জ্যামিতিক আলো পড়ছে পিচঢালা রাস্তায়। রাত নামলেই শহরের প্রতিটি সাদা গম্বুজ রঙিন আলোর প্রসাধনে সাজিয়ে ফেলে নিজেদের। তখন কে বলবে, রোদে রুক্ষ মরুবায়ুতে সারা দিনমান জ্বলেপুড়ে ছারখার হয়েছে ওরা! শহরটায় কি একটাও রঙিন বাড়ি নেই? রং নেই মানুষের পোশাকেও! প্রথম যখন আরবের এ দক্ষিণ-পূর্বপ্রান্তীয় দেশ ওমানে পা রাখি, প্রশ্নগুলো তোলপাড় করত আমাকে। শেষে রঙের খোঁজ পেলাম নীল সাগরে, ধূসর-হলুদ মরুভ‚মিতে, আসমানি আকাশে আর টিয়ার ঝাঁকে! বড়ই রূপসী এ দেশ। তবে আমাদের প্রিয় বাংলার মতো লাবণ্যময়ী নয়। কেমন যেন রুক্ষ ও উগ্র। ওমানের আয়তন তিন লাখ নয় হাজার ৫০০ বর্গকিলোমিটার প্রায়। আয়তন বড় হলেও দেশটির জনসংখ্যা একেবারেই কম। আসলে জনবসতি হওয়ার মতো জায়গাইতো কম, মোট স্থলভাগের মাত্র ৩ শতাংশ!

বাকিটা জুড়ে রয়েছে পাথুরে উপত্যকা, তীক্ষ্ণ পাহাড়, বালিয়াড়ি। আরব সাগর ও গালফ অব ওমান দিয়ে ঘেরা দেশটির তিন দিক। সুপ্রাচীনকাল থেকেই সমুদ্রপথে বিভিন্ন জাতির আনাগোনা। মাটির তলার তামা, তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের ভাণ্ডার বরাবরই আকৃষ্ট করেছে বহির্বিশ্বকে। সুমেরীয় সভ্যতার প্রাচীন ফলকে ওমানের তামার খনির উল্লেখ আছে। আজো ওমান-গর্ভে অফুরান তেলভাণ্ডার। তাই শূন্য দশমিক ১১৪ ‘ব্যয়সা’য় (বাংলাদেশি প্রায় ২৫ টাকা) এক কাপ চা না মিললেও এক লিটার তেল মেলে। শুধু আমাদের মতো তৃতীয় দুনিয়ার মানুষই নয়, আর্থিক মন্দা টেনে এনেছে ইউরোপীয়দেরও।

Oman 1 (1)

তাই তো ওমানের রাজধানী মাস্কট তার বুকে স্থান দিয়েছে পৃথিবীর সব কোণের মানুষকেই। ‘হাইপার’ মলে কাঁচকলার পাশে স্থান পেয়েছে অনেক সৌন্দর্য। সবার থেকে সামান্য দূরত্ব বজায় রাখে স্থানীয় রমণীক‚ল। কালো ‘আবায়াব’ (বোরকা) ঢেকে দেয় এদের বহিরাঙ্গের অস্তিত্ব। মাস্কটে প্রচুর বাঙালি-বাংলাদেশির বাস। সবার দেখা মেলে ছুটির দিনে। প্রতি বছর বেশ ঘা করে দুটি দুর্গাপূজা হয় এখানে। গান, বাজনা, জলসা, ভোজ তো রয়েছেই। যদিও প্রতিটি অনুষ্ঠানেই ঘোষণা হয় ইংরেজিতে। প্রতি শুক্রবার সবাই হাঁটতে যায় সমুদ্রের ধারে। বেশ লাগে। সপ্তাহের ক্লান্তি শেষে সাগরের নোনা হাওয়া, এক কাপ কফি, আজানের মিষ্টি সুর। এমনি সন্ধ্যায় একজন আরেকজন বাঙালির সঙ্গে আলাপ।

মাস্কট অর্থনৈতিক উন্নতি এবং বহু সাংস্কৃতিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধন করেছে। লোকজনও অত্যন্ত বিনয়ী ও অতিথিপরায়ণ। তাদের অর্থনীতিতে বাংলাদেশের মানুষের অনেক অবদান রয়েছে। বলে রাখি, এখানে সব ট্যাক্সিচালকই ওমানি এবং বেশ ধনী। আর প্রত্যেকে তাদের গাড়ি ও বাসায় সুলতানের ছবি ঢাঙিয়ে রাখেন।

Facebook Comments Box

Comments

comments

Posted ৫:৪৪ অপরাহ্ণ | সোমবার, ০৭ জানুয়ারি ২০১৯

America News Agency (ANA) |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

Dhaka University Centennial & New Beginnings
(13377 বার পঠিত)
স্বামী তুমি কার?
(12815 বার পঠিত)
দল বেঁধে সৈকতে
(1379 বার পঠিত)
[abm_bangladesh_map]
Editor-in-chief :
Sayeed-Ur-Rabb
Corporate Headquarter :

44-70 21st.# 3O1, LIC. New York-11101. USA,

06463215067

americanewsagency@gmail.com

Copyright © 2019-2025Inc. America News Agency (ANA), All rights reserved.ESTD-1997