বুধবার ১৫ মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম
শিরোনাম

বাঙালি পরিবারে বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা

মাদকে তরুণীদের ভয়ঙ্কর আসক্তি!

এনা অনলাইন :   বৃহস্পতিবার, ১৪ জুলাই ২০২২ 12910
মাদকে তরুণীদের ভয়ঙ্কর আসক্তি!

প্রবাসে উঠতি বয়সের সন্তানদের নিয়ে উদ্বিগ্ন বাবা-মায়েরা। এতদিন উৎকণ্ঠা ছিল উঠতি বয়সের ছেলেকে নিয়ে। কিন্তু নতুন করে উৎকণ্ঠার প্রহর গুনতে হচ্ছে তরুণী সন্তানের জন্য। এসব তরুণী বিশাল মাদক নেটওয়ার্কে জড়িয়ে পড়ে ডেকে আনছে সর্বনাশ। বিষয়টি প্রশাসনের নজরে এসেছে। কিন্তু কোনোভাবেই ভাঙা যাচ্ছে না এই নেটওয়ার্ক। বরং প্রবাসী মাদকে ভয়ঙ্কর আসক্তি বাড়ছে তরুণীদের।

বৈশ্বিক মহামারী করোনার আঘাতের পর প্রবাসে তরুণীদের মাদকে আসক্তি বেড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এর কারণ হিসাবে চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনায় মানসিক রোগের বিস্তার ঘটেছে ব্যাপক হারে। এটি যেমন তরুণদের মানসিকতার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে, তেমনি তরুণীদের আরো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে তরুণীরা চিকিৎসকের শরণাপণ্ন না হয়ে প্রথমে এনার্জি ড্রিংকস এবং অ্যালকোহলিক বেভারেজে আসক্ত হয়েছে। পরে আরো নানান ধরনের খারাপ নেশায় পা বাড়িয়েছে। অনেকে গা ভাসিয়েছেন ইয়াবার মত ভয়ঙ্কর নেশায়। কেউ আরো ভয়ঙ্কর নেশা ক্রিস্টাল মেথ সেবন করছেন। নিউইয়র্কের বিভিন্ন এলাকায় ইয়াবা ও ক্রিস্টাল মেথ এখন অনেকটাই সহজলভ্য।

ভয়ঙ্কর ইয়াবা ও ক্রিস্টাল মেথের উৎপাদনস্থল মায়ানমার। দেশটি থেকে বিভিন্ন রুট হয়ে এসব ভয়ঙ্কর মাদক ঢুকছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস, এস্টোরিয়া, জ্যামাইকা, ব্রুকলিন ও ব্রঙ্কসের কয়েকটি এলাকায় ইয়াবা ও ক্রিস্টার মেথ বিভিন্ন সাংকেতিক নামে বিক্রি হচ্ছে। স্কুল ও কলেজের তরুণ-তরুণীরা এসব মাদক সংগ্রহ করে সেবন করছে। তবে ইদানিং বেশকিছু বাংলাদেশি তরুণী মাদক সেবন ব্যবসায়ে জড়িয়ে পড়েছে বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া খবরে জানা গেছে। তরুণীদের আসক্তির হার ক্রমেই বাড়ছে বলে অভিভাবকেরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন তাদের সন্তানদের নিয়ে।

চলতি মাসে নিউইয়র্কে দুই তরুণীর মধ্যে সহিংস মারামারির ঘটনার পর প্রকাশ্যে এসেছে তরুণীদের মাদক সেবন ও বেচাকেনার ঘটনা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে মারামারির ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তারা মাদক সেবনের ভয়ঙ্কর স্বীকারোক্তি তুলে ধরেছেন।

নামের প্রথম অক্ষর ‘জে’ ও ‘এন’ দিয়ে শুরু ওই দুই তরুণী স্কুল জীবন থেকেই মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। প্রেমের পরিণয়ে বিয়ে করে সংসারীও হয়েছিলেন। কিন্তু মাদক তাদের সংসারের সুখ কেড়ে নিয়েছে। স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে তারা বেছে নিয়েছেন উচ্ছৃঙ্খল জীবন। একের পর এক ছেলে বন্ধুকে নিয়ে গড়ে তোলেন মাদকের আখড়া। প্রায়ই তারা পার্টি ডেকে মাদক সেবন করতেন। অতিসম্প্রতি তাদের নেটওয়ার্কে ছেদ পড়েছে। ছেলে বন্ধু ও মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ‘জে’ ও ‘এন’ জড়িয়ে পড়েন বিবাদে। এই বিবাদ এতটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করে যে দুজন সহিংস মারামারিতে লিপ্ত হন প্রকাশ্যে। এন-এর হামলায় ক্ষতবিক্ষত হয়েছেন জে। এরপর থানা-পুলিশ হয়েছে। মামলা গড়িয়েছে আদালতে। তাদের মারামারির ঘটনা বাংলাদেশি কমিউনিটিতে টক অব দ্য সিটিতে পরিণত হয়েছে।

‘জে’ ও ‘এন’-এর বিরোধের ঘটনায় বিব্রত তাদের পরিবার। একজনের পরিবারের একজন দায়িত্বশীল সদস্য জানিয়েছেন, ঘটনাটি যে কতটা কুৎসিত তা বোঝাতে পারবো না। এলাকায় তারা মুখ দেখাতে পারছেন না। সবাই জেনে গেছে যে কী নিয়ে জে এবং এন-এর বিরোধ।

এস্টোরিয়া এলাকার বেশ কয়েকজন বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এতদিন শুনেছি তরুণরা মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ছে। এখন দেখছি তরুণীরাও কম যায় না। অনেক তরুণী বিলাসী জীবনের জন্য ধনাঢ্য ছেলেবন্ধুকে বেছে নেয়। কিন্তু এখন অবস্থা পাল্টে গেছে। এখন অনেক তরুণী মাদকসেবনকে বিলাসী জীবন মনে করে। মাদকের অর্থ সংগ্রহের জন্য অনেকে মাদক ব্যবসা করছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমানে মাদক সেবনের দ্বারা ধ্বংসস্তুপে পরিণত হচ্ছে শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, পারিবারিক, নৈতিক মূল্যবোধ। একটি জাতির সামাজিক, মানবিক মূল্যবোধ ধ্বংসের অন্যতম এই হাতিয়ার মাদকের বিরুদ্ধে যথাসময়ে সঠিক পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন না করলে প্রবাসে তরুণ সমাজ অচিরেই ধ্বংস হয়ে যাবে। প্রবাসে আমাদের নতুন প্রজন্ম যেমন ভালো স্কুল ও কলেজে পড়ছে, ভালো চাকরি করছে, তেমনি মাদকের কারণে বদনামও জোগাচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিউইয়র্কের একজন বাংলাদেশি নারী চিকিৎসক জানান, মাদকের নেশা এমনই এক নেশা, যে নেশার কাছে সমাজ-সংসার সব তুচ্ছ হয়ে যায়। মাদক সেবন করাই তাদের প্রধান লক্ষ্য হয়ে উঠেছে। সর্বনাশা মাদকের ছোবলে বহু সংসার ছারখার হয়ে যাচ্ছে। তিনি জানান, তার চেম্বারে একাধিক তরুণী আসছেন যারা মাদকাসক্ত। তারা এ থেকে বেরিয়ে আসতে চান। কিন্তু তাদের ফিরে আসাটা কঠিন হয়ে পড়েছে। মাদক তাদের জীবনকে প্রায় তছনছ করে ফেলেছে। আর তাদের এ অবস্থা দেখে পরিবারের সদস্যরা চোখের জল ফেলছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন চিকিৎসক জানান, নেশার জগতে এতদিন সর্বনাশা নাম ছিল ইয়াবা। কিন্তু মাদক কারবারীরা আবিষ্কার করেছে আরো ভয়ানক মাদক। যার নাম ক্রিস্টাল মেথ বা আইস। বাংলাদেশে যা নতুন। ইয়াবার চেয়েও ভয়ংকর নতুন এই মাদকের প্রবেশ ঘটেছে নিউইয়র্কেও। তরল এই মাদক মানবদেহের জন্য ইয়াবার চেয়ে ৫০ গুণ বেশি ক্ষতিকর। এর দামও বেশি, মৃত্যুর ঝুঁকিও বেশি। আফ্রিকার কোনো কোনো দেশ থেকে আসছে আইস মাদক। কাঁচের একটি লম্বা ফানেলের নিচে তরল এই মাদক রেখে আগুনের তাপ দিলে বের হয় ধোঁয়া। আর এই ধোঁয়ায় বুঁদ বিভিন্ন দেশের তরুণ তরুণীরা।

একটি সূত্র জানায়, স্নায়ু রোগের ওষুধ তৈরির উপাদান এমফিটামিন থেকে এই নেশার উৎপত্তি। এই নেশার মৃত্যু ঝুঁকিও বেশি। মাদকের এই ভয়াল থাবা থেকে প্রবাসের তরুণ সমাজকে রক্ষা করতে সবাইকে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশি কমিউনিটির দায়িত্বশীলরা হাঁটছেন উল্টোপথে, মনে করছেন অনেকে।

Facebook Comments Box

Comments

comments

Posted ৯:১৮ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৪ জুলাই ২০২২

America News Agency (ANA) |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

 

President/Editor-in-chief :

Sayeed-Ur-Rabb

 

Corporate Headquarter :

 44-70 21st.# 3O1, LIC. New York-11101. USA, Phone : +6463215067.

Dhaka Office :

70/B, Green Road, 1st Floor, Panthapath, Dhaka-1205, Phone : + 88-02-9665090.

E-mail : americanewsagency@gmail.com

Copyright © 2019-2024Inc. America News Agency (ANA), All rights reserved.ESTD-1997