শুক্রবার ১৩ জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩০ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাতে ঘুমের আগে বই পড়ার ৩ কারণ

এনা :   |   বুধবার, ১৪ মে ২০২৫   |   প্রিন্ট   |   33 বার পঠিত

রাতে ঘুমের আগে বই পড়ার ৩ কারণ

রাত হল বিশ্রামের সময়। সারাদিনের ক্লান্তি ঝেড়ে শান্তিতে ঘুমাতে পারলে পরদিনের কাজকর্ম অনেক সহজ হয়ে যায়।
তবে আধুনিক জীবনের ব্যস্ততা ও প্রযুক্তির প্রতি অতিরিক্ত নির্ভরতাই ঘুমের বড় শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অনেকেই রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ‘ফোন স্ক্রলে’ ডুবে থাকেন। ফেইসবুক, ইউটিউব বা নেটফ্লিক্স দেখে সময় কেটে যায়।

অথচ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অভ্যাস না রেখে যদি ঘুমানোর আগে হাতে তুলে নেওয়া হয় বই তাহলে শরীর ও মনের জন্য হতে পারে উপকারী।

বিভিন্ন গবেষণা, ঘুম ও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞদের মতে, বই পড়া শুধু ভালো ঘুমেই সাহায্য করে না, বরং মানসিক চাপ কমানো থেকে শুরু করে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

দ্রুত ঘুমিয়ে পড়তে সাহায্য করে
ঘুম আসতে সাধারণত একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ১০ থেকে ২০ মিনিট সময় লাগে। এই সময়টিকে বলা হয় ‘স্লিপ লেইটেনসি’ বা কত তাড়াতড়ি ঘুমিয়ে পড়া হচ্ছে।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক ‘স্লিপ কাউন্সিল’ এবং ‘হ্যাপি বেডস’ প্রতিষ্ঠানের ঘুম বিশেষজ্ঞ ড. ক্যাথরিন হল রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “রাতে একটি বই পড়া মস্তিষ্ককে বুঝিয়ে দেয় যে এখন বিশ্রামের সময়।”
‘র‌্যান্ডমাইজড কন্ট্রোলড ট্রায়াল অফ বেডটাইম রিডিং ইন অ্যাডাল্টস’ শীর্ষক গবেষণায় দেখা যায়, যারা ঘুমের আগে বই পড়েন, তাদের মধ্যে ৪২ শতাংশ ব্যক্তির ঘুমের মান উন্নত হয়, যেখানে যারা বই পড়েন না, তাদের মধ্যে মাত্র ২৮ শতাংশ এই উন্নতির কথা বলেন।

তবে এখানে একটি সতর্কবার্তা আছে। ই-রিডার বা মোবাইল দিয়ে পড়া নয়, হাতে ধরা আসল কাগজের বই পড়তে হবে। কারণ, বৈদ্যুতিক যন্ত্র থেকে নির্গত ‘নীল আলো’ মেলাটোনিন হরমোনের নিঃসরণ কমিয়ে দেয়, যা ঘুমের জন্য অত্যন্ত জরুরি।

‘হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল’ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশন’য়ের একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, এই নীল আলো সার্কেডিয়ান রিদম, মানে শরীরের প্রাকৃতিক ঘড়িকে বিশৃঙ্খল করে দেয়।

মানসিক চাপ কমায় ও চিন্তার জট খুলে দেয়

ঘুম আসছে না? চিন্তার ভারে মাথা ভারী? এমন অবস্থায় কিছু পৃষ্ঠা বই পড়া হতে পারে চমৎকার ওষুধ।
যুক্তরাজ্যের ‘ইউনিভার্সিটি অব সাসেক্স’য়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, মাত্র ছয় পৃষ্ঠা বই পড়লেই ৬৮ শতাংশ পর্যন্ত মানসিক চাপ কমানো যায়।

যা সংগীত শোনা, চা খাওয়া বা হাঁটার চেয়েও কার্যকর।
এই গবেষণা চালিয়েছিলেন নিউরোসাইকোলজিস্ট ড. ডেভিড লুইস।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘নেচার্স রাইজ’ নামক হোলিস্টিক স্বাস্থ্য সংস্থার চিকিৎসক ডা, সনি শেরপা বলেন, “বই পড়া হল এমন এক মানসিক বিশ্রামের উপায়, যা চিন্তার অস্থিরতা দূর করে মস্তিষ্ককে শান্ত করে তোলে। এটা কর্টিসল হরমোন কমিয়ে দেয়, আর বাড়িয়ে দেয় সেরোটোনিন ও ডোপামিন, যা ঘুমের চক্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।”

এই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘুমাতে যাওয়ার আগে যদি মস্তিষ্ক অকারণ দুশ্চিন্তায় ডুবে না থাকে, তাহলে ঘুমও ভালো হয়, আর পরদিন মনও থাকে সতেজ।

মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ায় ও স্মৃতি শক্তি ধরে রাখে

বই পড়া মানেই শুধু বিনোদন নয়। এটি হল মস্তিষ্কের ব্যায়াম। নিয়মিত বই পড়া সজাগ রাখে, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে এবং বার্ধক্যজনিত মানসিক অবনতি প্রতিরোধে সাহায্য করে।

ডা. সনি শেরপার মতে, “পড়ার মাধ্যমে আমাদের মস্তিষ্কের বিভিন্ন অঞ্চল একসঙ্গে কাজ করে। দৃশ্য, শব্দ এবং আবেগগত প্রতিক্রিয়াগুলো মিলে যায় একটি মাত্র অভিজ্ঞতায়। যা নিউরনের মধ্যে সংযোগ বাড়ায়। এই সংযোগ ভবিষ্যতে তথ্য মনে রাখতে সহায়তা করে।”

যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অন এইজিং’ থেকে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যারা নিয়মিত বই পড়েন, তাদের আলৎঝাইমার’স রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম।

ঘুম এবং মানসিক স্বাস্থ্য একে অপরের সাথে গভীরভাবে জড়িত। ঘুম ভালো হলে মন ভালো থাকে, আবার মন ভালো থাকলে ঘুমও হয় গভীর ও প্রশান্তিময়। ফলে ঘুমানোর আগে বই পড়া শরীর এবং মস্তিষ্ক- দুই দিকেই উপকার করে।

যে কারণে মোবাইল বা টিভির বদলে বই বেছে নিতে বলা হয়

ঘুমানোর আগে কী করেন? অনেকেই হয়ত বলেন, ‘ফোন দেখি’, ‘সিরিজ দেখি’। তবে গবেষণা বলছে, এই অভ্যাসগুলো ঘুমকে দূরে ঠেলে দেয়।

ডা. ক্যাথরিন হল বলেন, “মোবাইল বা টিভির স্ক্রিন থেকে আসা নীল আলো শরীরকে বলে দেয়, ‘এখনও দিন’। এর ফলে মেলাটোনিন কমে যায়, ঘুম দেরিতে আসে, এমনকি দুঃস্বপ্ন বা ‘ইনসমনিয়া’র মতো সমস্যাও তৈরি হতে পারে।”

বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত দুই ঘণ্টা আগে ‘স্ক্রিন’ বন্ধ করে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
যেমন, যদি রাত ১০টায় ঘুমাতে চান, তবে রাত ৮টা থেকে ফোন বা টিভি বন্ধ করে একটি পছন্দের বই হাতে নিন।

Facebook Comments Box

Comments

comments

Posted ৪:৫৬ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১৪ মে ২০২৫

America News Agency (ANA) |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

শারদীয় ভূষণ
(1590 বার পঠিত)
[abm_bangladesh_map]
Editor-in-chief :
Sayeed-Ur-Rabb
Corporate Headquarter :

44-70 21st.# 3O1, LIC. New York-11101. USA,

06463215067

americanewsagency@gmail.com

Copyright © 2019-2025Inc. America News Agency (ANA), All rights reserved.ESTD-1997