নগরের কোলাহল ছাপিয়ে পূজার বাদ্য বেজে ওঠার অপেক্ষা আর মাত্র কয়েক দিনের। মণ্ডপ তৈরি ও প্রতিমা গড়ার কাজ চলছে জোরেশোরে। আয়োজন শুরু হয়ে গেছে পোশাক-আশাক নিয়েও। শঙ্খধ্বনি ও ঢাকের আওয়াজে মুখরিত দুর্গাপূজার এ আনন্দ আয়োজনে নিজেকেও সাজানো চাই বর্ণিল পোশাকে। ষষ্ঠীর শাড়িটা কেমন হতে পারে। দশমীর দিন তো ঐতিহ্যবাহী পোশাকে নিজেকে সাজাতে হবেই। যেহেতু পূজা চলে বেশ কয়েক দিন ধরে, তাই একটি পোশাক তো আর নেওয়া যায় না! চাই বেশ কয়েকটি বর্ণিল পোশাক। আবার দুর্গাকে বরণ করার জন্য চাই সনাতনী সাজ, কিন্তু ফ্যাশনে আধুনিকতার মিশেল না থাকলে স্বাচ্ছন্দ্যে উৎসবটা উপভোগ করা যাবে না। এজন্য প্রয়োজন রুচি, সময় ও অনুষ্ঠানের ধরন বুঝে পোশাক নির্বাচন করা। উৎসবে বর্ণিল পোশাক পূজা মানেই রঙের ছড়াছড়ি। বর্ণিলতার সেই ছোঁয়া থাকা চাই পোশাক জুড়েও।
সাদা মেঘের ভেলা আর কাশফুলের সি্নগ্ধতা এখন প্রকৃতিজুড়ে। ঠিক এমন সময়ই শুভ্র প্রকৃতির মাঝে সিঁদুর রাঙা আমেজ নিয়ে আসছে শারদীয় দুর্গাপূজা। পূজা আর শরৎ মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় উৎসবের বর্ণিল পোশাক আর সাজসজ্জায়। কাশফুলের শুভ্রতা দেখা যায় পূজার শাড়িতে। সাদা গরদের এই শাড়ির লাল পাড় ধারণ করে শক্তির প্রতীক। আর সাদা যে শান্তির বার্তা পিঠে করে স্বর্গ হয়ে পৃথিবী ঘুরে বেড়ায়। সেই আদিকাল থেকেই সাদা আর লালের সঙ্গে সখ্য গড়ে পূজায় সেজে আসছে মানুষ। লাল পেড়ে সাদা শাড়ির সঙ্গে আলতা রাঙানো পা ও সিঁদুরের রক্তিম ছোঁয়া পূর্ণ করে সনাতনী সাজকে। কপালে বড় একটি সিঁদুরের টিপ আর শাঁখা-পলার উপস্থিতি সেই সাজের জৌলুসকে বাড়িয়ে দেয় আরও কয়েকগুণ। তবে এ সাজ কেবল বিবাহিত নারীদের জন্যই। একটু কম বয়সীরা শাড়ির পাশাপাশি বেছে নিতে পারেন সালোয়ার-কামিজ কিংবা জিন্স-ফতুয়া ও কুর্তাকে। লাল-সাদার পাশাপাশি বিভিন্ন উজ্জ্বল রঙ উঠে আসতে পারে পূজার পোশাকে। কেননা দুর্গাকে সাদরে বরণ করতে ঐতিহ্য আর সনাতনী সাজের পালে আজ লেগেছে নতুন হাওয়া। যে হাওয়াটা আধুনিকতার মলাটে মোড়ানো। তাই ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিকতার স্বাচ্ছন্দ্য মেলবন্ধনে দেখা যায় গতানুগতিক রঙের পাশাপাশি সবুজ, নীল আর বেগুনিসহ অনেক রঙ এসে ধরা দিয়েছে এই উৎসবে। শাড়ির পাশাপাশি এখন সালোয়ার-কামিজ, জিন্স ফতুয়া, টপস এবং কুর্তায় দেখা যায় এসব রঙ। ফেব্রিক হিসেবে এখনকার পোশাকে প্রাধান্য পেয়েছে ভয়েল, সুতি, অ্যান্ডি সিল্ক, হাফ সিল্ক এবং মসলিন। আর এসবে ব্যবহার করা হয়েছে এমব্রয়ডারি, স্ক্রিন প্রিন্ট, অ্যাপলিকের কাজসহ সিকোয়েন্স ও মেটালের কম্বিনেশন। আর শিশুদের পোশাকে দেবী দুর্গাকে দেখা যাবে নান্দনিক রূপে। এ বিষয়ে ফ্যাশন ডিজাইনার বিপ্লব সাহা বলেন, ‘পূজার মূল আনন্দই হচ্ছে দল বেঁধে বন্ধুদের সঙ্গে কিংবা সপরিবারে মন্দিরে মন্দিরে ঘুরে বেড়ানো। আর দেবী দর্শনসহ পূজার অনুষ্ঠানগুলো আনন্দঘন করে তোলা। আর এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে স্বাচ্ছন্দ্যময় পোশাক। দুর্গাপূজার এবারের আয়োজনে রয়েছে বৈচিত্র্য, পোশাকে এসেছে দুর্গাদেবীর ত্রিশূল মন্ত্র দিয়ে সাজানো বিভিন্ন নকশার তৈরি শাড়ি, পাঞ্জাবি, সালোয়ার-কামিজ, সিঙ্গেল কামিজ, ফতুয়া, টি-শার্ট, উত্তরীয়। রঙের ক্ষেত্রে প্রাধান্য পেয়েছে সব ধরনের উজ্জ্বল রঙ যেমন_ লাল, কমলা, ম্যাজেন্টা, নীল, হলুদ, বেগুনি, সবুজ ইত্যাদি। এ ছাড়া ভ্যালু অ্যাডিশনে থাকছে ব্লক, স্প্রে, টাই-ডাই, অ্যাপলিক, মেশিন এমব্রয়ডারি, কারচুপি, আড়ি ইত্যাদি।
আনন্দের এ মুহূর্তগুলোকে স্বাচ্ছন্দ্যে উপভোগ করার জন্য পোশাক নির্বাচন করতে হবে বুঝে শুনে। ষষ্ঠীর দিন থেকেই মূলত উৎসব শুরু হয়। নানা কাজে কেটে যায় শুরুর দিনটা। এদিন তাই খুব জমকালো পোশাক এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। সাদা কিংবা যে কোনো হালকা রঙের পোশাক বেছে নিন ষষ্ঠীর দিন। সপ্তমীর দিন থেকে একটু একটু করে পোশাকের চাকচিক্য বাড়াতে পারেন। সকালে পূজার অঞ্জলি দিতে যাওয়ার সময় অবশ্য সাদামাটা সুতি শাড়ি বেছে নিলেই ভালো। দিনের বেলার সব অনুষ্ঠানেই সাধারণ পোশাকে আরামদায়ক থাকার চেষ্টা করুন। এ সময় পোশাকের রঙ হওয়া চাই হালকা ও মিষ্টি ধরনের। বিকেল বা সন্ধ্যার দিকে সাজতে পারেন। রাতের বেলা আত্মীয়-স্বজনের বাসায় ঘুরতে যাওয়া হয়। লাল কিংবা মেরুনের মতো গাঢ় রঙের সিল্ক, টিস্যু বা কাতানের শাড়ি বেছে নিতে পারেন এ সময়। ব্লাউজের ঢঙে বৈচিত্র্য নিয়ে আসা যায় নানাভাবে।
ফুলহাতা ব্লাউজের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ঠাকুর পরিবারের ঐতিহ্য। ফুলহাতা ব্লাউজ পরে ঠাকুরবাড়ির আদলে সাজতে পারেন। গলাবন্ধ ব্লাউজও বেশ লাগবে পূজায়। লাল ব্লাউজের গলায় কিংবা হাতে সাদা কুচি দিয়ে পূজার আমেজ নিয়ে আসা যায়। যে কোনো শাড়ির সঙ্গেই সুন্দর মানিয়ে যাবে ব্লাউজটি। আরও খানিকটা ভিন্নতা আনতে ফুলহাতার পাড়ে একটি মোটা লেইস কিংবা কয়েকটি চিকন লেইস বসিয়ে নিন। ঘটি হাতার ব্লাউজ ও সুতি শাড়ির সঙ্গে দারুণ মানানসই। টিনএজাররা ঘোরাঘুরির সুবিধার্থে কামিজ কিংবা কুর্তা-ফতুয়া পরতে পারেন। দশমীর দিন সাজা চাই একেবারে মনের মতো করে। এদিন সিঁদুর খেলা হয়। তাই লাল বা গাঢ় রঙের পোশাক বেছে নেওয়াই ভালো। দশমীর দিন তাঁত বা জামদানি শাড়ির ঐতিহ্যে সাজাতে পারেন নিজেকে। অনেকে এদিন একেবারে সনাতনী কায়দায় সাজতে চান; তারা এক প্যাঁচে অঙ্গে জড়িয়ে নিন ঐতিহ্যবাহী গরদের শাড়িটি। পাশাপাশি টিকলি, নথের মতো ঐতিহ্যবাহী গহনাও থাকতে পারে সাজে। ছেলেদের পোশাকে পূজা ছেলেদের পূজার পোশাক মানেই ধুতি-পাঞ্জাবি। এক সময় কেবল সাদা রঙের ধুতির প্রচলন ছিল। কিন্তু এখন সাদার পাশাপাশি মেরুন, ঘিয়া, সোনালি, সবুজ কিংবা লাল রঙের ধুতিও পরছেন সবাই। যারা মধ্যবয়স্ক তারা অবশ্য সাদা রঙের ধুতি বেছে নিলেই ভালো করবেন। তরুণরা বাহারি রঙের ধুতি পরতে পারেন। সকালে অঞ্জলি দিয়ে যাওয়ার সময় সুতির পায়জামা-পাঞ্জাবি কিংবা ট্রাউজার-ফতুয়ায় স্বস্তিবোধ করেন অনেকে। বিকেলে বন্ধুদের আড্ডায় টি-শার্ট, হাফ শার্ট আরামদায়ক হবে। ধুতি অথবা পায়জামার সঙ্গে হালফ্যাশনের শর্ট পাঞ্জাবি গায়ে চাপিয়েও ঘুরতে বেরিয়ে পড়তে পারেন। সন্ধ্যার অনুষ্ঠানে ধুতি-পাঞ্জাবির সঙ্গে উত্তরীয় জড়িয়ে নিলে পূজার আভিজাত্য ও গাম্ভীর্য ফুটে উঠবে বেশ। পূজার দিনগুলোতে মনের মতো সেজে ওঠার প্রস্তুতি শুরু করে দিন এখন থেকেই। তবে যেভাবেই সাজুন না কেন, তাতে উৎসবের আমেজ ও স্বাচ্ছন্দ্য থাকা জরুরি।
Posted ১:৩৩ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৪ অক্টোবর ২০১৬
America News Agency (ANA) | Payel