বুধবার ১৭ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৪ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম
শিরোনাম

পূজার পাতে দেবলীনার রান্না

প্রথম আলো নিউজ :   মঙ্গলবার, ০৪ অক্টোবর ২০১৬ 942
পূজার পাতে দেবলীনার রান্না

পূজার দিনগুলোতে শৈশবেই ফিরে যেতে চান। ফিরতে চান যশোরের সেই সময়টায়। যখন নতুন পোশাক, হইহুল্লোড়, দলবেঁধে পূজা দেখা—এসবই তাঁর কাছে ছিল পূজার আনন্দ। এখন পূজায় মিল আছে একটাই, সেটা খাবারে। পূজার দিনে লুচি, লাবড়া, আলুর দম আর নাড়ুর স্বাদ এখনো একই রকম সংগীতশিল্পী দেবলীনা সুরের কাছে। কাছের মানুষদের কাছে দেবলিনা পরিচিত দোলা নামে। ব্যস্ততার জন্য নিজে রান্নাবান্না কম করেন এখন। তবে পূজা এলে দেবলীনা যে করেই হোক কয়েকটা পদ নিজ হাতে করার চেষ্টা করেন।

স্বামী সুমন সাহার সঙ্গে দেবলীনা এখন থাকেন ঢাকার গ্রিন রোডে। পূজার সময়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গাইতে হয়। ব্যস্ততা নিয়েই তাই পার হয়ে যায় পূজার দিনগুলো। দেবলীনার ভাষায়, ‘অথচ ছোটবেলায় ঠাকুর দেখার জন্যই আকুল হয়ে থাকতাম। ষষ্ঠীর দিনে কোন প্রহরে পূজা শুরু হবে ক্ষণ গুনতাম। অনেক পোশাক উপহার পেতাম। বেলায় বেলায় পাল্টে যেত পোশাক।’ খানিকটা আফসোস দেবলিনার কণ্ঠে। পরক্ষণেই ঝলমলে চোখ; মুখে খেলে যাওয়া হাসির ঝিলিক। কাঁসার বাটিতে নারকেলের নাড়ু সাজাতে সাজাতে আবার স্মৃতিতে ডুব দেন এই শিল্পী, বলেন, ‘জানেন? ছোটবেলা থেকেই পূজার সময় মায়ের সঙ্গে নাড়ু বানাতাম। বাসায় অনেক লোক আসতেন, তাঁদের নাড়ু আর লুচির থালা দিয়ে আপ্যায়ন চলত দিন থেকে রাত পর্যন্ত। ঢাকায় আসার পর থেকে সেই হইচই খুব মিস করি। আর মিস করি বড়দের প্রণাম করে আড়ং খরচের জন্য পাওয়া টাকা।’

অষ্টমীর দিনে যেভাবে অতিথি আপ্যায়ন করেন দেবলীনা, সেভাবেই নিজের বাসায় গত ২৯ সেপ্টেম্বর পাত পাড়লেন নকশার পাঠকদের জন্য। ছবি তোলার জন্য সাজলেনও অষ্টমীর আভিজাত্যে। বললেন, একটা নতুন গান গেয়েছেন, যেটি পূজার সময়েই বিভিন্ন চ্যানেলে দেখানো হবে । এ ছাড়া পূজার কয়েকটি দিন এবার ব্যস্ত থাকবেন বিভিন্ন টিভি চ্যানেল থেকে মণ্ডপে। তবে এরই ফাঁকে স্বামী সুমন সাহাকে সঙ্গে নিয়ে এবারও যাবেন ঢাকার আশপাশে পূজা দেখতে। পূজার সময়ে দেবলীনার পছন্দের খাবার লুচি ছাড়াও নিরামিষ খিচুড়ি, ছোলার ডাল ও নানা ধরনের চাটনি। নকশার পাঠকদের জন্য সেগুলোর কয়েকটি রেসিপি দিয়েছেন দেবলীনা। নিজে রান্নাবান্না করলেও তাঁর কাছে মায়ের রান্নাই সেরা। আর পূজার দিনে তো কথাই নেই।

লুচি

উপকরণ: ময়দা ৫০০ গ্রাম, লবণ সামান্য, তেল ১ টেবিল চামচ (মাখানোর জন্য), চিনি ১ চা-চামচ, পানি ও ভাজার জন্য তেল পরিমাণমতো।

প্রণালি: ময়দার সঙ্গে পানি, লবণ ও চিনি মিশিয়ে মাখাতে হবে। একবার মেখে কিছুক্ষণ রেখে আবার মাখুন। এভাবে কয়েক দফায় মাখালে খামিটা নরম হবে। লুচি ভাজাও ভালো হবে। খামি হয়ে গেলে ছোট ছোট করে কেটে নিয়ে গোল করে বেলে নিন। কড়াইতে তেল গরম করে ডুবোতেলে ভেজে ফুলে উঠলে তুলে নিন।

লাবড়া

উপকরণ: বেগুন ২টি, মিষ্টি কুমড়া অর্ধেক, পটল ৫-৬টি, আলু ৪-৫টি, চিচিস ২টি, আদাবাটা ১ চা-চামচ, জিরাবাটা আধা চা-চামচ, হলুদ ১ চা-চামচ, মরিচের গুঁড়া ১ চা-চামচ, গরম মশলার গুঁড়া ১ চা-চামচ, পাঁচফোড়ন ১ চা-চামচ, কাঁচা মরিচ ৫-৬টি, তেল ১ কাপ, শুকনা মরিচ ৫টি, তেজপাতা ২-৩টি, লবণ স্বাদমতো, চিনি ১ টেবিল চামচ এবং ঘি ১ চা-চামচ।

প্রণালি: সবজিগুলো একটু বড় আকারে কেটে কড়াইতে তেল দিয়ে একটু গরম হয়ে এলে তাতে তেজপাতা, শুকনা মরিচ, পাঁচফোড়ন দিয়ে কিছুক্ষণ রেখে এক এক করে জিরাবাটা, আদাবাটা, হলুদ, শুকনা মরিচের গুঁড়া আর লবণ দিয়ে একটু নেড়েচেড়ে তাতে সবজি দিতে হবে। সবজি ভালোভাবে নাড়াতে হবে, যাতে মশলা ভালোভাবে মিশে যেতে পারে। সবজি মশলায় মেখে হালকা সেদ্ধ-ভাব এলে তাতে দেড় কাপ পানি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। ৫-৭ মিনিট পর সবজির জল শুকিয়ে এলে গরম মশলার গুঁড়া, কাঁচা মরিচ, চিনি ও ঘি দিয়ে আরও কিছুক্ষণ নেড়ে চুলা বন্ধ করে দিতে হবে। একটু ঠান্ডা হলে অন্য একটি পাত্রে ঢেলে পরিবেশন করতে হবে লাবড়া বা পাঁচমিশালি সবজি।

ছোলার ডাল

উপকরণ: ছোলার ডাল ধুয়ে সেদ্ধ করা ৫০ গ্রাম, আদাবাটা ১ টেবিল চামচ, জিরা ১ চা-চামচ, শুকনা মরিচ ৮টি, তেজপাতা ৪টি, কাঁচা মরিচ কয়েকটি, লবণ স্বাদমতো, হলুদ আধা চা-চামচ, চিনি ১ চা-চামচ, ঘি ১ টেবিল চামচ, তেল আধা কাপ এবং গরম মশলার গুঁড়া আধা চামচ।

প্রণালি: ডাল সেদ্ধ করার সময় লবণ ও হলুদ দিয়ে দিতে হবে। এবার কড়াইতে আধা কাপ তেল দিতে হবে। তেল গরম হয়ে এলে তাতে তেজপাতা ও শুকনা মরিচ ভেজে নিতে হবে। এরপর জিরার সম্ভার দিতে হবে। এবার আদাবাটা দিয়ে একটু নেড়ে সেদ্ধ ডাল ও চিনি দিন। ৮-১০ মিনিট ডাল ফুটিয়ে তাতে কাঁচা মরিচ, গরম মশলার গুঁড়া ও ঘি দিয়ে একটি পাত্রে নামিয়ে পরিবেশন করুন।

আলুর দম

উপকরণ: জিরা আধা চা-চামচ, তেজপাতা ২-৩টি, শুকনা মরিচ ৫-৬টি, আদাবাটা ১ টেবিল চামচ, টমেটোবাটা বা টমেটো সস ২ টেবিল চামচ, কাজুবাদাম ১০-১২টি, কিশমিশ ১০-১২টি, হলুদ গুঁড়া আধা চা-চামচ, লবণ দেড় চা-চামচ, তেল আধা কাপ, ঘি ১ টেবিল চামচ, আলু আগে থেকে সেদ্ধ করা ৫০০ গ্রাম, চিনি ১ টেবিল চামচ ও গরম মশলার গুঁড়া ১ চা-চামচ।


প্রণালি: কড়াইতে প্রথমে তেল দিতে হবে। তেল একটু গরম হয়ে এলে তাতে তেজপাতা, জিরা, শুকনা মরিচ দিতে হবে। একটু নেড়েচেড়ে তাতে আদাবাটা, টমেটোর সস, হলুদ ও লবণ দিয়ে সেদ্ধ আলু এবং একে একে চিনি, কাজুবাদাম, কিশমিশ, কাঁচা মরিচ, গরম মশলার গুঁড়া ও ঘি দিয়ে অল্প আঁচে ২-৩ মিনিট ভাপে রেখে অন্য পাত্রে ঢেলে পরিবেশন করতে হবে।

আমের চাটনি
উপকরণ: কাঁচা আম (মাঝারি) ৪টি, জলপাই ১০টি, আপেল ১টি, কিশমিশ ২৫ গ্রাম, আলু বোখারা ২৫ গ্রাম, খেজুর ২৫ গ্রাম, তেল ৪ টেবিল চামচ, ১টি শুকনা মরিচের কুঁচি, পাঁচফোড়ন পরিমাণমতো, হলুদ আধা চা-চামচ, আদাবাটা ১ চা-চামচ, চিনি ২৫০ গ্রাম, লবণ স্বাদমতো এবং জিরা ও গরম মশলার গুঁড়া আধা চা-চামচ করে।

প্রণালি: আম চার ফালি করে কেটে লবণ ও হলুদ দিয়ে মেখে রাখুন। এবার খেজুর, কিশমিশ ও জলপাই সেদ্ধ করে ঘুটে নিন। কড়াইতে তেল দিয়ে পাঁচফোড়ন ও শুকনা মরিচ কুঁচি দিয়ে নাড়ুন। এবার আম ঢেলে দিয়ে নাড়ুন। আদাবাটা দিয়ে নাড়ুন। এবার ঘুটে রাখা জলপাই ও খেজুরের মিশ্রণটি ঢেলে দিন। সঙ্গে দিন লবণ, হলুদ ও চিনি। নেড়ে মিশিয়ে চাটনি হয়ে এলে নামিয়ে একটা কাচের পাত্রে রাখুন। এবার জিরা ও গরম মশলার গুঁড়া এর ওপরে ছড়িয়ে দিন। বয়ামে ভরে ফ্রিজেও রাখতে পারেন।

নারকেলের গুড়ের নাড়ু

উপকরণ: নারকেল ২টি, গুড় ৩০০ গ্রাম, কপূ‌র্র একচিমটি (নাড়ুকে দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য ব্যবহার করা হয়)।

প্রণালি: গুড় ও নারকেল কড়াইয়ে দিয়ে নাড়তে হবে। নাড়তে নাড়তে একসময় মিশ্রণটি মাখা মাখা হয়ে এলে তাতে একচিমটি কপূ‌র্র দিতে হবে। একপর্যায়ে মিশ্রণটির নারকেল থেকে যখন তেল বের হবে, তখন বুঝতে হবে সেটি নাড়ু বানানোর জন্য উপযুক্ত। এরপর মিশ্রণটি বেটে গোলাকৃতি বানিয়ে পরিবেশন করতে হবে। বাটার ব্যবস্থা না থাকলে হাতে গোলা বানিয়েও তৈরি করা যায় গুড়ের নাড়ু।

নারকেলের চিনির নাড়
উপকরণ: নারকেল চারটি কোড়ানো, চিনি ৩০০ গ্রাম, দুধ ১ কেজি ও বড় এলাচ ২টি।
প্রণালি: নারকেল কোড়ানোর সময় যেন কালো অংশ উঠে না আসে। কড়াইয়ে দুধ দিয়ে জ্বাল দিতে হবে। ফুটে উঠলে এলাচ ও চিনি দিতে হবে এবং সাবধানে নাড়তে হবে। দুধ একটু ঘন হয়ে এলে কোড়ানো নারকেল ঢেলে দিতে হবে। ক্রমাগত নাড়াতে হবে, যেন কড়াইয়ের গায়ে লেগে না যায়। ধীরে ধীরে নারকেল ও দুধের মিশ্রণ ভালোভাবে মিশে গেলে এবং নারকেল থেকে তেল বের হতে থাকলে নামিয়ে হালকা বেটে গোলাকৃতির নাড়ু বানাতে হবে। নাড়ু বেটে নিলে নাড়ুর ওপরের অংশটুকু বেশ মসৃণ হয়। হালকা গরম অবস্থাতেই নাড়ু বানাতে হবে। ঠান্ডা করে বানাতে গেলে গোল আকার দেওয়া কষ্টকর হয়ে ওঠে।

Facebook Comments Box

Comments

comments

Posted ১:১৫ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৪ অক্টোবর ২০১৬

America News Agency (ANA) |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

 

President/Editor-in-chief :

Sayeed-Ur-Rabb

 

Corporate Headquarter :

 44-70 21st.# 3O1, LIC. New York-11101. USA, Phone : +6463215067.

Dhaka Office :

70/B, Green Road, 1st Floor, Panthapath, Dhaka-1205, Phone : + 88-02-9665090.

E-mail : americanewsagency@gmail.com

Copyright © 2019-2024Inc. America News Agency (ANA), All rights reserved.ESTD-1997