সোমবার ১২ মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৯ বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দক্ষিণাঞ্চলে ১৮ ফেরির সবই মেয়াদোত্তীর্ণ

অনলাইন ডেস্ক :   |   সোমবার, ১৩ মার্চ ২০১৭   |   প্রিন্ট   |   692 বার পঠিত

দক্ষিণাঞ্চলে ১৮ ফেরির সবই মেয়াদোত্তীর্ণ

দক্ষিণাঞ্চলে সড়ক ও জনপথ বিভাগের ১৮টি ফেরির সবগুলোই মেয়াদোত্তীর্ণ। নতুন ইঞ্জিন ক্রয় না করায় পুরানো মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিন জোড়াতালি দিয়ে কোনোরকমে টিকিয়ে রাখা হচ্ছে ফেরি সার্ভিস। এসব ইঞ্জিন প্রায়ই বিকল হওয়ায় দুর্ভোগে পড়ছেন যাত্রীরা।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নদীবেষ্টিত দক্ষিণাঞ্চলের যে ১৮টি ফেরিঘাটে বর্তমানে ফেরি চলাচল করছে সে সব ফেরির ইঞ্জিনের মেয়াদ কোনোটার এক দশক কোনোটার দেড়যুগ পার হয়েছে। সড়কপথে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হওয়ায় আরও কয়েকটি ঘাটে ফেরির চাহিদা থাকলেও যোগান দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
সওজ বরিশাল সার্কেলের তথ্যানুযায়ী, বরিশাল জেলায় লক্ষ্মীপাশা, গোমা, নেহালগঞ্জ, বেলতলা, মীরগঞ্জ ও বানারীপাড়ায় ছয়টি ফেরি রয়েছে। পিরোজপুর জেলার চরখালী, বেকুটিয়া ও আমড়াঝুড়িতে ফেরি চলাচল করছে তিনটি। পটুয়াখালী জেলার লেবুখালী, বগা, গলাচিপা, পায়রাকুঞ্জ ও নলুয়াবাহেরচর মিলিয়ে ফেরি রয়েছে পাঁচটি। বরগুনা জেলার আমতলী ও বড়ইতলীতে দুইটি ফেরি চলছে। আর ঝালকাঠী জেলার ষাটপাকিয়া ও আমুয়াতে রয়েছে দুইটি ফেরি। এর মধ্যে লেবুখালী, চরখালী, আমতলী ও বেকুটিয়া ব্যস্ততম ফেরিঘাট। এ ঘাটগুলো দিয়ে ২৪ ঘণ্টাই যানবাহন পারাপার হয়ে থাকে। এ ঘাটগুলোতে ৩১৫ অশ্বশক্তির ইউটি টাইপ-১ ফেরি রয়েছে। অপরগুলোয় ২০০ অশ্বশক্তির ইউটি টাইপ-২ ফেরি চলাচল করছে।
ফেরি রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলীর দেয়া তথ্যমতে, ইংল্যান্ডে নির্মিত ফেরির ইঞ্জিন বেশিরভাগই ১৯৮০ থেকে ’৮২ সালের মধ্যে আনা হয়েছিল। সাড়ে তিন দশক পার হওয়াতে ইঞ্জিনের সিলিন্ডার, পিস্টনে সমস্যা বেশি দেখা দিয়েছে। ২৫ বছর পার হলেই ইঞ্জিনের অশ্বশক্তি কমে আসে। এজন্য কখনও কখনও স্রোতের বিপরীতে ফেরিগুলো চলতে হিমশিম খায়। কখনো সামান্য পথ পাড়ি দিতে দীর্ঘ সময় ব্যয় হয়ে যায়। এতে বাড়তি চাপ পড়ায় ইঞ্জিনে বিস্ফোরণ ঘটে ফেরি বিকল হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। বেলতলার ফেরিটি বহুবার মাঝপথে যানবাহন ও যাত্রী নিয়ে কীর্তনখোলার স্রোতে ঘুরপাক খেতে দেখা গেছে। ইঞ্জিনের নাজুক পরিস্থিতির কারণে সূর্য ডুবলেই ফেরিটি বন্ধ করেন ইজারাদার। ইজারাদার খবির হোসেন জানান, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে প্রায়ই ফেরি চলাচল বন্ধ রাখতে হয়।
চরখালি, বেকুটিয়া, আমড়াঝুড়ি তিন গুরুত্বপূর্ণ ঘাটের দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলী তরিকুল ইসলাম জানান, গুরুত্বপূর্ণ ঘাটগুলোর জন্য বাড়তি ইঞ্জিন মেরামত করে রাখেন তারা। নতুন ইঞ্জিন পাওয়া যাচ্ছে না বলে পুরানো ইঞ্জিন ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা খরচ করে যন্ত্রাংশ লাগিয়ে চলাচলের উপযোগী করা হয়। যা আবার দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যেই বিকল হয়ে যায়। তিনি জানান, খরচ বাঁচাতে ইজারাদারদের সময়মতো ইঞ্জিনের মবিল পরিবর্তন না করার কারণেও ইঞ্জিন বিকল হচ্ছে। তবে এ তিনটি ঘাটে ফেরি বিকল হওয়ার সাথে সাথে তারা মেরামত করে মওজুদ রাখা ইঞ্জিন যুক্ত করে যানবাহন পারাপার সচল রাখার চেষ্টা করেন।
বরিশাল ফেরি বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী শামসুল হক বলেন, কেবল ইঞ্জিন নয়, ফেরির কাঠামোও জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। ৩১৫ অশ্বশক্তির ইউটি টাইপ-১ ফেরির ধারণক্ষমতা ১১০ টন, যা ১২টি গাড়ি বহনে সক্ষম। আর ২০০ অশ্বশক্তির ইউটি টাইপ-২ ফেরির ধারণক্ষমতা ৭০ টন। এ ফেরিগুলো মাত্র ৬টি গাড়ি পারাপারে সক্ষম। কিন্তু বর্তমানে পাথর বা রডবাহী ট্রাকের ওজন হয় প্রায় ৪০ টন। অতিরিক্ত মাল বহন করতে গিয়েই ফেরিগুলো কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। গুরুত্ব বিবেচনা করে চরখালীঘাটে নতুন ফেরি দেওয়া হয়েছে জানিয়ে শামসুল হক বলেন, স্বরুপকাঠি, শ্রীরামকাঠী, বেতাগী ও কাঁঠালিয়া উপজেলার মাঝখানে একটি ফেরি এবং মেহেন্দিগঞ্জ আর হিজলা উপজেলায় একটি করে নতুন ফেরির চাহিদা রয়েছে। এজন্য মন্ত্রণালয়ে নতুন ফেরির জন্য প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এক বছরের মধ্যে নতুন ফেরি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ব্যস্ততম ঘাটগুলোয় সময়োপযোগী ৩শ’ টন ধারণক্ষমতার ফেরি সরবরাহ করা উচিত বলে মনে করেন এই প্রকৌশলী।
ফেরি বিকল হয়ে দুর্ভোগে পড়া পিরোজপুর থেকে আসা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানিয়া তাবাসুম জানায়, বেকুটিয়ার ফেরি বিকল হওয়ায় তারা পাঁচ ঘণ্টা আটকে ছিলেন। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় যতক্ষণে ফেরি সচল না হয় ততক্ষণ তাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে। কেউ কেউ আবার চরখালী ফেরিঘাট ঘুরে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে গন্তব্যে পৌঁছেছেন। কুয়াকাটাগামী যাত্রীবাহী বাসের চালক মজির রহমান জানান, বরিশাল থেকে সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটা যেতে এখন শুধু লেবুখালীতে ফেরি রয়েছে। এ ফেরিটি প্রায়ই বিকল হওয়ায় যাত্রীরা বাস থেকে নেমে ট্রলারে নদী পার হয়ে ওপাড়ে ওঠেন। পাথরঘাটার মাছ ব্যবসায়ী বশির মিয়া জানান, বরগুনা, পাথরঘাটার মাছ ব্যবসায়ীরা সড়কপথে চরখালীর ফেরি পার হয়ে খুলনা বা অন্যত্র মাছের চালান পাঠিয়ে থাকেন। ফেরি বিকল হলে তাদের অপেক্ষা করা ছাড়া কিছু করার থাকে না। এতে গন্তব্যে পৌঁছতে বিলম্ব হওয়ায় মাছের কাঙ্ক্ষিত বাজারদর পাওয়া যায় না।

Facebook Comments Box

Comments

comments

Posted ১২:৫৯ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১৩ মার্চ ২০১৭

America News Agency (ANA) |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

[abm_bangladesh_map]
Editor-in-chief :
Sayeed-Ur-Rabb
Corporate Headquarter :

44-70 21st.# 3O1, LIC. New York-11101. USA,

06463215067

americanewsagency@gmail.com

Copyright © 2019-2025Inc. America News Agency (ANA), All rights reserved.ESTD-1997