শুক্রবার ২৯ মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম
শিরোনাম

সাড়ে ৪ মাসে ৯ বার ট্রেন দূর্ঘটনা কবলিত

সিলেট-আখাউড়া রেলপথে বেড়েছে ট্রেন দূর্ঘটনা

সেলিম আহমেদ, মৌলভীবাজার (সিলেট)   শনিবার, ১৭ মার্চ ২০১৮ 978
সিলেট-আখাউড়া রেলপথে বেড়েছে ট্রেন দূর্ঘটনা

সিলেট-আখাউড়া রেলপথে উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে ট্রেন দূর্ঘটনা। ১৭৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এ রেল লাইনের অধিকাংশ ক্লিপ চুরি হয়ে যাওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে রেলপথটি। বিগত সাড়ে ৪ মাসে শুধুমাত্র মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল থেকে সিলেট অংশে ৯ বার দূর্ঘটনা কবলিত হয়েছে বিভিন্ন ট্রেন। এরমধ্যে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত দূঘর্টনা কবলিত ৩ বার। ঘন ঘন দূর্ঘটনার কারনে আতকিংত হয়ে পড়েছেন যাত্রীরা। মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিন, জরাজীর্ণ বগি, সিডিউল বিপর্যয়, ইঞ্জিন লাইচ্যুত হওয়াসহ নানা কারণে যাত্রীসেবায় পিছিয়ে পড়ছে রাষ্ট্রীয় এ প্রতিষ্ঠান।

রেলওয়ের তথ্য মতে, সিলেটের সঙ্গে ঢাকা ও চট্টগ্রামের রেল যোগাযোগ শুরু হয় ব্রিটিশ আমলে। যাত্রীদের নিরাপদ ও আরামদায়ক ভ্রমণের কথা চিন্তা করে ১৯৮৭ সালে আন্তঃনগর ট্রেন চালু করা হয়। ঢাকা-সিলেট রুটে প্রতিদিন কালনী, জয়ন্তিকা, পারাবত, উপবন এক্সপ্রেস নামের ৪ টি আন্তঃনগর ট্রেন ও সুরমা মেইল নামের একটি লোকাল ট্রেন চলাচল করে। সিলেট-চট্টগ্রাম রুটে পাহাড়িকা, উদয়ন এক্সপ্রেস নামের ২ টি আন্তঃনগর ও জালালাবাদ এক্সপ্রেস নামের একটি লোকাল ট্রেন চলাচল করে। সিলেট-আখাউড়া রুটে ডেমো ও কুশিয়ারা নামের দুটি লোকাল ট্রেন চলাচলা করে।

রেল সূত্র আরও জানায়, পূর্বাঞ্চলীয় জোনের আওতাভুক্ত রেলের গুরুত্বপূর্ণ এ দুটি রুটে চলাচলকারী ট্রেনের ইঞ্জিনগুলো প্রায় অর্ধশতাব্দীর পুরনো। পুরনো ইঞ্জিন দিয়ে ট্রেন চলাচলের কারণে প্রায়ই ঘটছে ইঞ্জিন বিকলের ঘটনা। নিয়ম অনুযায়ী ট্রেন গন্তব্যে আসার পর ইঞ্জিন তিন/চার ঘণ্টা বিশ্রামে রাখার কথা। কিন্তু ইঞ্জিনের সংকট থাকায় গন্তব্যে পৌঁছার পর অন্য ট্রেনের সঙ্গে জুড়ে দিতে হচ্ছে। ফলে ইঞ্জিনে বাড়তি চাপ পড়ছে এবং প্রায়ই তা বিকল হয়ে পড়ছে। তাই সময়মতো ট্রেন স্টেশন ছাড়তে কিংবা গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে না।

সূত্রে জানা গেছে, গত ৮ মার্চ সিলেট থেকে ছেড়ে আস ঢাকাগামী পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেন বিকেল ৩-৪০ মিনিটে মাইজগাঁও রেল ষ্টেশনে পৌঁছার পর ইঞ্জিনের বাফারের হুকের সেন্টার পিনে ফাটল দেখা দেয়। পরে ট্রেন চালক যাত্রীবাহী বগীগুলো মাইজগাঁও স্টেশনে ফেলে রেখে শুধুমাত্র ইঞ্জিন নিয়ে কুলাউড়া রেলওয়ে জংশনের লোকশেডে পৌঁছান। পরে লোকোসেডের প্রকৌশলীরা হুকের সেন্টার পিনের ফাটল মেরামত করে দিলে চালক ইঞ্জিন নিয়ে পুনরায় মাইজগাঁও স্টেশনে পৌঁছে যাত্রীবাহী বগীগুলো নিয়ে ২ ঘন্টা পর ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যান। ওইদিন রাতে সিলেট থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী আন্তঃনগর উপবন ট্রেন রাত সাড়ে ১১ টায় কুলাউড়ার লংলা স্টেশন অতিক্রমকালে চলন্ত অবস্থায় উক্ত ১ম শ্রেনীর এক বগীর চাকার স্প্রিীং ভেঙ্গে যায়। পরে চালক ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনটি পরবর্তী শমসেরনগর ষ্টেশনে নিয়ে যান। সেখানে বিকল বগী রখে অপর বগীগুলো নিয়ে প্রায় ৩ ঘন্টা পর ট্রেনটি ঢাকা অভিমুখে যাত্রা করে।
২৩ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত ১টার দিকে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার সাতগাঁও এলাকায় সিলেট থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী উপবন এক্সপ্রেসের ১১টি বগি নিয়ে লাইনচ্যুত হয়। এতে সিলেট-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে প্রায় ১৫ ঘণ্টা। অর্থ প্রতিমন্ত্রীসহ ট্রেনের হাজারও যাত্রী সামান্যের জন্য মারাত্মক দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যান।
২৩ জানুয়ারি ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী আন্তঃনগর উপবন এক্সপ্রেস মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের পাহাড়ি এলাকায় ইঞ্জিনের দুর্বলতার কারণে ভোর রাতে দু’দফা আটকা পড়ে। প্রায় তিন ঘণ্টা পর বিকল্প ইঞ্জিন আসলে ট্রেনটি সচল হয়। এতে পাহাড়ি এলাকায় যাত্রীরা চরম ভীতি ও দুর্ভোগের শিকার হন। ১ ফেব্রুয়ারি সিলেট থেকে ছেড়ে আসা একটি মালবাহী ট্রেন বিকাল পৌনে ছয়টায় ফেঞ্চুগঞ্জ কুশিয়ারা রেলওয়ে ব্রীজের উত্তর পাড়ে একটি বগী লাইনচ্যুত হলে সিলেটের সাথে ট্রেন যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়ে। কুলাউড়া থেকে রিলিফ ট্রেন এসে লাইনচ্যুত বগীগুলো উদ্ধার করলে সাড়ে ৩ ঘন্টা পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর দুপুর সাড়ে ১২ টায় সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের নিকটবর্তী শিববাড়ি বাজার এলাকায় লাইনচ্যুত হয় চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা লোকাল ট্রেন জালালাবাদ এক্সপ্রেস। সিলেট থেকে উদ্ধারকারী ট্রেন গিয়ে লাইনচ্যুত ট্রেনটি উদ্ধার করলে প্রায় ৩ ঘন্টা পর ট্রেন চলাচলা স্বাভাবিক হয়।
৫ ডিসেম্বর সকাল ১১ টায় দিকে মোগলাবাজার স্টেশনের ২ নং প্লাটফর্মে ফের লাইনচ্যুত হয় সিলেটগামী জালালাবাদ এক্সপ্রেস। প্রায় ৪ ঘন্টা পর ট্রেনটি উদ্ধার করা হলে চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এর আগে গত ৩০ নভেম্বর কুলাউড়া উপজেলার ভাটেরা ইউনিয়নের ভাটেরা রেলস্টেশনের আউটার সিগন্যালের কাছে পুন:রায় লাইনচ্যুত হয় জালালাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেন । টানা ৪ ঘণ্টা পর কুলাউড়া স্টেশন থেকে রিলিফ ট্রেন এসে ট্রেনটি উদ্ধার করলে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
১২ নভেম্বর বিকেল ৩ টায় সিলেট থেকে ঢাকাগামী আন্ত:নগর পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেন সিলেটের মোগলাবাজার ট্রেশনে প্রবেশের পূর্ব মূহুর্তে ইঞ্জিনের সাথে বগিকে যুক্ত রাখা পাইপ (হুইস পাইপ) খুলে যায়। এতে ইঞ্জিন থেকে বগি আলাদা হয়ে পড়ে। সাথাসাথেই থেমে যায় ট্রেন। ইঞ্জিন প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে চলে যাওয়ার পর চালক বিষয়টি বুঝতে পারেন। পরে বগির সাথে আবার ইঞ্জিন সংযুক্ত করে ট্রেনটি নির্দিষ্ট গন্তব্যের উদ্যেশে ছেড়ে যায় আন্তঃনগর পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনটি।

এদিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, সিলেট-আখাউড়ায় রেলপথ থেকে অব্যাহতভাবে চুরি হচ্ছে ক্লিপ-হুক। রেল লাইনের সাথে সংযুক্ত ক্লিপ-হুক চুররির ফলে দুর্বল হয়ে পড়ছে রেল লাইন। সেকশনের রেলসেতু ও কালভার্টসমূহের উপর জীনশীর্ণ কাঠের স্লিপারের সাথে পেরেক দিয়ে বাঁশের ফালি স্থাপন করা হয়েছে। চুরি যাওয়া এসব যন্ত্রাংশ দ্রুত লাগানোর নিয়ম থাকলেও বছরের পর বছর তা লাগানো হচ্ছে না। রেলসেতু ও কালভার্টসমূহের ৩০-৪০ বছরের পুরনো কাঠের স্লিপারের অধিকাংশ বিনষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে ছিটকে গেছে রেলপথের পাথর।
ট্রেন যাত্রী সৈয়দ আশফাক তানভীর, তপন কুমার দাস, মাহফুজ শাকিল জানান, সম্প্রতিকালে সিলেট-আখাউড়া রেল রোডে ঘন ঘন বেড়েছে ট্রেন দুর্ঘটনা। ট্রেন ভ্রমন একসময় নিরাপদ মনে হলেও এখন আর যাত্রীদের কাছে নিরাপদ মনে হয় না। আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করি। তাই রেল বিভাগের কাছে আমাদের দাবী শিগগির লাইন মেরামত ও মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিন, জরাজীর্ণ বগিগুলো বদলি করে নতুন ইঞ্জিন ও বাগি সংযুক্ত করা হোক।

কুলাউড়া লোকশেডের সিনিয়র সহকারী ইঞ্জিনিয়ার দুলাল চদ্র দাস বলেন, সিডিউল অনুযায়ী ট্রেনের ইঞ্জিন মেরামত করা হয় এবং প্রতি ৮ বছর পরপর প্রায় ৯০ ভাগ যন্ত্রাংশ বদলি করা হয়। কোন যন্ত্রাংশের জন্য ইঞ্জিনে সমস্যা হলে আমরা বিকল্প ইঞ্জিন দিয়ে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখা চেষ্ঠা করি। তিনি আরও বলেন, পরপর অনেকগুলো স্পিং ও ক্লিপ ছুটে গেলে ট্রেন দুর্ঘটনার সম্ভাবনা তাকে।

সিলেটের উর্ধ্বতন সহকারী প্রকৌশলী (পথ) এরফানুর রহমান জানান, রেল লাইনের ক্লিপগুলো চুরি হয়েছে মূলত বিভিন্ন সময়ে। আবার তা মেরামতও করা হচ্ছে সময় সময়। লোকবল সংকটের কারণে বিভিন্ন স্টেশন বন্ধ হয়ে যাওয়া আবার অনেক স্টেশনে পর্যপ্ত পরিমান জনবল না থাকার কারণে তারা রেল লাইন তদারকি করতে পারছে না এটাই রেলওয়ের ক্লিপ চুরির অন্যতম কারণ। তবে লাইনের কারনে খুব একটা দূর্ঘটনা হচ্ছে না। চালকের অসতর্কতা, ইঞ্জিনে সমস্যাসহ নানা কারনে মাঝে মাঝে দূর্ঘটনা হয়।

#

Facebook Comments Box

Comments

comments

Posted ৫:২৭ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১৭ মার্চ ২০১৮

America News Agency (ANA) |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

 

President/Editor-in-chief :

Sayeed-Ur-Rabb

 

Corporate Headquarter :

 44-70 21st.# 3O1, LIC. New York-11101. USA, Phone : +6463215067.

Dhaka Office :

70/B, Green Road, 1st Floor, Panthapath, Dhaka-1205, Phone : + 88-02-9665090.

E-mail : americanewsagency@gmail.com

Copyright © 2019-2024Inc. America News Agency (ANA), All rights reserved.ESTD-1997