আফগানিস্তান বরাবরই গরিব দেশ। সেখানকার ৭০ শতাংশ মানুষের দৈনিক আয় দুই ডলারের কম। অর্থনীতিবিদদের ধারণা, আগামী দিনে দেশটি আরও দরিদ্র হতে চলেছে। সেই দারিদ্রের মোকাবিলা করতে হবে তালেবান শাসকদের। তারা ইতিমধ্যেই বুঝতে পারছেন, দারিদ্রের বিরুদ্ধে লড়াই করা মার্কিন বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর চেয়ে বেশি কঠিন । ১৫ আগস্ট তালেবান কাবুল দখল করার পরেই দেশের ব্যাংকগুলো অচল হয়ে পড়েছিল। এটিএম বুথেও টাকা ছিল না। হাওলা চ্যানেলও এখন বন্ধ।
এই পরিস্থিতি সামাল দিতেই সরকার গঠনের আগে হাজি ইদ্রিস নামে এক ব্যক্তিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্তা নিয়োগ করতে হয়েছে। তাদের ধারণা, চলতি অর্থবছরে যুদ্ধবিধ্বস্ত ওই দেশের জিডিপি কমবে ২০ শতাংশ। হাজি ইদ্রিস এতদিন তালেবানের অর্থনীতির দায়িত্বে ছিলেন। তালেবানের আশা, আগামী দিনে সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তিনি আফগানিস্তানের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে পারবেন। একজন তালেবান কর্মকর্তা জানাচ্ছেন , ইদ্রিস পূর্বতন তালেবান নেতা মোল্লা আখতার মনসুরের সাথে আর্থিক বিষয় নিয়ে কাজ করেছেন। ইদ্রিসের কোনো আনুষ্ঠানিক আর্থিক প্রশিক্ষণ নেই, কিন্তু তিনি তালেবানদের অর্থনৈতিক কমিশনের প্রধান ছিলেন।
এক বর্ষীয়ান তালেবান নেতা জানাচ্ছেন, এমন অনেক মানুষ আছেন যারা বিশ্বের কাছে অজানা ছিলেন, কিন্তু তারা গুরুত্বপূর্ণ পদ সামলেছেন এবং তাদের অবদান অনস্বীকার্য । হাজি ইদ্রিস তাদের মধ্যে একজন। তালেবান কাবুলে ক্ষমতা দখলের পরে আফগানিস্তানে বিদেশি সহায়তা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় নতুন উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে হবে হাজি ইদ্রিসকে। এই মুহূর্তে দেশে ব্যাংকগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। লোকেরা ব্যাংকের সামনে সারিবদ্ধ অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকছেন, কিন্তু রোজই বন্ধ থাকছে ব্যাংক । বিশেষ করে কাবুলে ব্যাংকে কারো প্রবেশাধিকার নেই বলে জানাচ্ছেন স্থানীয় এক ইমাম। কিছু লোককে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে বেতন দেওয়া হয়নি।
সরকারি চাকরিজীবী এবং শিক্ষকরা তাদের বেতন পাননি। সঞ্চয় থেকেই কোনোমতে সংসার চালাচ্ছেন আফগানরা। মার্কিন ডলারের তীব্র ঘাটতির কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে । অর্থনীতির পতনের কারণে দেশে আটা, তেল এবং চালের মতো অত্যাবশ্যকীয় জিনিসের দাম কয়েক দিনের মধ্যে ১০-২০ শতাংশ বেড়েছে। তালেবানদের হাত থেকে নিরাপত্তার জন্য শহর ছেড়ে পালিয়ে আসা আফগানদের ব্যাপক চাহিদার মধ্যে দেশে পেট্রলের দাম প্রতি টন ৯০০ ডলারে উঠেছে। রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, নতুন আফগান সরকারের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে ইরান সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে সম্মত হয়েছে। তেহরান তার প্রতিবেশীর কাছে জ্বালানি রপ্তানি পুনরায় শুরু করেছে, যা নিরাপত্তার কারণে আগস্ট থেকে বন্ধ ছিল।
তালেবানরা দাম বাড়ার জন্য ইরান এবং অন্যান্য প্রতিবেশী দেশ থেকে জ্বালানি আমদানির উপর শুল্ক কমিয়েছে বলে জানা গেছে। আফগানরা বিদেশে বসবাসরত তাদের প্রিয়জনদের কাছ থেকে নগদ স্থানান্তরের উপর নির্ভর করে, কিন্তু বর্তমান সংকটে সেই রাস্তাও বন্ধ হয়ে গেছে। গত বছর, আফগানিস্তানে রেমিটেন্স এসেছিলো প্রায় ৭৯০ মিলিয়ন ডলার- যা দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের প্রায় ৪ শতাংশ বলে বিশ্বব্যাংকের অনুমান। আফগানিস্তান তালেবানদের নিয়ন্ত্রণে থাকার কারণে দেশে সাহায্য পৌঁছে দেওয়া আরো জটিল হয়ে উঠেছে।
স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক রবার্ট ক্রু বলেন, “আপনি যদি কোনো রাষ্ট্রীয় হাসপাতালে একজন সাহায্য কর্মী হন, তাহলে আপনি এমন একটি শাসন ব্যবস্থার সেবা করছেন যার বৈধতা ভারসাম্যহীন।” আফগান সরকারের বাজেটের একটি বড় অংশ আন্তর্জাতিক সাহায্য থেকে আসে, যা ছাড়া দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়বে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী মাইকেল ম্যাককিনলে বলেন, দেশের অর্থনীতিকে পুনরোজ্জীবিত করতে বাইরের সাহায্যের প্রয়োজন হবে তালেবানদের। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২৪ আগস্ট বলেছিল, আফগানিস্তানের উন্নয়নের জন্য আরো ৫০ মিলিয়ন বেশি অর্থ সাহায্য দেবে তারা। তবে সেই অর্থ যাতে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছায় তা নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন।
সূত্র : ফ্রন্টলাইন
Posted ৬:৪৩ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ২৭ আগস্ট ২০২১
America News Agency (ANA) | ANA