টানা বৃষ্টি আর ট্রাফিক জ্যাম উপেক্ষা করে একে একে এসে উপস্থিত হতে থাকেন আহনাফ তাহমিদুর রহমান, অদ্বিতীয় নাগ, মাধব বৈদ্যান শঙ্করণ ও রাফসান রহমান রায়ান। আলোজ্বলা একেকটা মুখ। তাদের আলোয় গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে সমকাল কার্যালয় যেন ঝলমল করে উঠল। কারণ, তারা সবাই যে হাঙ্গেরিতে অনুষ্ঠেয় ৩০তম আন্তর্জাতিক জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে (আইবিও) টিম বাংলাদেশের সদস্য। সঙ্গে ছিলেন দলনেতা এবং বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের (বিডিবিও) সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া ও সহকারী কোচ সামিউল আলম রাজিব। তারা একই সঙ্গে আইবিওর জুরি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করবেন। ১৪ থেকে ২১ জুলাই হাঙ্গেরিতে অনুষ্ঠেয় আন্তর্জাতিক জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণকারী দল নিয়ে গতকাল সমকাল কার্যালয়ে বসে এ অনুপ্রেরণা সম্মিলন। প্রতিযোগীদের প্রেরণা এবং শুভাশিস জানাতেই এই আয়োজন। প্রতিযোগীদের মধ্যে ছিল আন্তর্জাতিক এ আসরে ভালো কিছু করার প্রত্যয়। গতবারের প্রাপ্তি ছিল ব্রোঞ্জ জয়। এবার লক্ষ্য আরও প্রসারিত। বিশ্বজয়ের লক্ষ্য নিয়েই আগামীকাল শনিবার হাঙ্গেরির পথে পাড়ি জমাবে টিম বাংলাদেশ।
সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফির সভাপতিত্বে আয়োজনে অংশ নেন বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া, টাইমস মিডিয়া লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) এস এম শাহাব উদ্দিন, বিডিবিওর সাধারণ সম্পাদক ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তী, সমকালের সহযোগী সম্পাদক সবুজ ইউনুস, বার্তা সম্পাদক মশিউর রহমান টিপু, ফিচার সম্পাদক মাহবুব আজীজ, প্রধান প্রতিবেদক লোটন একরাম, অনলাইন বার্তা সম্পাদক গৌতম বি. মণ্ডল, সহকারী সম্পাদক ইমতিয়ার শামীম, সুমন্ত আসলাম, যুগ্ম বার্তা সম্পাদক রমাপ্রসাদ বাবু, সিনিয়র সহসম্পাদক হাসান জাকির প্রমুখ। পরিচালনা করেন সমকালের সহকারী সম্পাদক ও সুহৃদ সমাবেশের প্রধান সিরাজুল ইসলাম আবেদ।
এ বছর মার্চে অনুষ্ঠিত বিডিবিও-সমকাল বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান উৎসবের আঞ্চলিক ও জাতীয় উৎসবে অংশ নেওয়া প্রায় ১০ হাজার প্রতিযোগীর মধ্য থেকে সেরা ২৪ জনকে নিয়ে সাভারে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজিতে অনুষ্ঠিত হয় আবাসিক বায়োক্যাম্প। ক্যাম্প শেষে বাছাই পাঁচজনকে নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের কোচ অধ্যাপক রাখহরির তত্ত্বাবধানে প্রায় দুই মাস চলে উচ্চতর ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ। আর তাদের মধ্য থেকে চারজন নিয়ে তৈরি হয় ৩০তম আন্তর্জাতিক জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড টিম বাংলাদেশ।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন। এশিয়ার অন্য দেশের তুলনায় আমরা এখন অনেক এগিয়ে। এই তরুণ শিক্ষার্থীদের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ মেধাবী হিসেবে বিশ্বের বুকে আত্মপ্রকাশ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়। গত বছর ব্রোঞ্জ পদক পেলেও এবার তার চেয়ে ভালো ফলের আশা করেন প্রতিযোগীরা।
মুস্তাফিজ শফি বলেন, আমাদের স্বপ্ন অনেক বড়, প্রত্যাশা অনেক বেশি। আমরা বিজ্ঞানের সঙ্গে থাকতে চাই। বিজ্ঞানের উন্নয়নে কাজ করে যেতে চাই। অনেক দূরে যাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে আমরা বিডিবিওর সঙ্গে যুক্ত হয়েছি। আমাদের মূল লক্ষ্য বিজ্ঞানমনস্ক একটা জাতি বিনির্মাণ। তোমাদের বাড়তি চাপ নেওয়ার দরকার নেই। বিশ্ব অঙ্গনে লাল-সবুজের পতাকা তোমরা বহন করছ- এটাই বড় কথা। আমরা তোমাদের সঙ্গে আছি, বাংলাদেশ তোমাদের সঙ্গে আছে। আমাদের প্রত্যাশা, তোমরা দেশের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে। বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করবে।
অধ্যাপক ড. মো. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীদের মেধার কমতি নেই। কয়েক ধাপের পরীক্ষার মাধ্যমে অসাধারণ প্রতিভাসম্পন্ন প্রতিযোগীদের তুলে আনতে সক্ষম হই। সব সীমাবদ্ধতা পেরিয়ে নতুন করে ২০১৮ সাল থেকে সমকাল ও বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড যৌথভাবে বিজ্ঞানের এ শাখাকে এগিয়ে নিতে কাজ শুরু করেছে। আমাদের প্রত্যাশা, আমাদের শিক্ষার্থীরা তাদের যোগ্যতা দিয়ে বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশকে গৌরবের সঙ্গে তুলে ধরবে। আন্তর্জাতিক আসরে সাফল্যের পাশাপাশি বাংলাদেশেও সাধারণ শিক্ষার্থীদের জীববিজ্ঞানে আগ্রহী ও অংশগ্রহণের মাধ্যমে এ ক্ষেত্রে দেশের বহুমাত্রিক চাহিদা পূরণে সক্ষম হবো।
মেজর জেনারেল (অব.) এস এম শাহাব উদ্দিন বলেন, তোমরা ভাগ্যবান। বিশ্বদরবারে দেশকে উপস্থাপনের সুযোগ পেয়েছ। সর্বক্ষেত্রে আমরা প্রমাণ রেখেছি, আমরা পারি। তোমরাও পারবে। আমার প্রত্যাশা, তোমরা দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনবে। তোমাদের জন্য শুভকামনা।
ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তী বলেন, সমকাল ও বিডিবিওর লক্ষ্য অভিন্ন, আমরা একটা বিজ্ঞানমুখী সমাজ চাই। এ শতককে বলা হয় জীববিজ্ঞানের শতক। খাদ্য, স্বাস্থ্য, পরিবেশ বিপর্যয়সহ নানা সমস্যার সমাধান জীববিজ্ঞান থেকেই আসবে। বাংলাদেশ বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাবে। আন্তর্জাতিক এ প্রতিযোগিতায় ভালো করার প্রস্তুতি আমাদের আছে।
সবুজ ইউনুস বলেন, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছ তোমরা। তোমাদের সাফল্য কামনা করছি। তোমাদের বিজয়ধারা অব্যাহত থাক। দেশের জন্য গৌরব নিয়ে ফিরে এসো।
মশিউর রহমান টিপু বলেন, অনেক মেধা ও শ্রমের যোগফল তোমাদের আজকের এই প্রাপ্তি। মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়। তোমরা যে স্বপ্ন নিয়ে যাচ্ছ, তা সফল হোক। এই প্রতিযোগিতা থেকে পদক নিয়ে ফিরবে এবং এ ক্ষেত্রে দেশের জন্য কাজ করবে, এটাই প্রত্যাশা করি।
মাহবুব আজীজ বলেন, তোমরা আমাদের তারকা। আমরা শুধু সিনেমার নায়ক-নায়িকাদের ছবি ছাপাতে চাই না। বিশ্বদরবারে তোমাদের নায়ক হিসেবে দেখতে চাই।
লোটন একরাম বলেন, বাংলাদেশ প্রতিটি সেক্টরে এগিয়ে যাচ্ছে। তোমাদের মধ্যে সেই স্বপ্ন থাকবে, যে স্বপ্ন তোমাকে ঘুমাতে দেবে না। তোমরা বাংলাদেশের তারকা হয়ে ফিরে আসবে। বিশ্বের বুকে দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে।
সুমন্ত আসলাম বলেন, মেধাবীদের চেহারা ভিন্ন হয়। তোমাদের চেহারা জ্বলজ্বল করছে। তোমরা বড় হও, আমাদেরও বড় করো। বিশ্বমঞ্চে তোমরা দেশকে তুলে ধর। এগিয়ে যাও।
ইমতিয়ার শামীম বলেন, বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করে তোমরা দেশে ফিরে আসবে। তোমাদের অর্জিত জ্ঞান এ দেশের জীববিজ্ঞানের উন্নয়নে কাজে লাগবে। জীববিজ্ঞানের আগ্রহ বাড়লে প্রতিটি প্রাণীর জীবনসংগ্রাম সম্পর্কে জানতে পারবে।
সূত্র: সমকাল
Posted ৯:০৪ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১১ জুলাই ২০১৯
America News Agency (ANA) | Payel