ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সংগঠন ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে (১২ মার্চ) আয়োজিত মিলনমেলা শুরু হয় সকাল ৮টায়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে প্রাক্তনদের ভিড়। সকাল ১০টা থেকে শুরু হয় মিলনমেলার আনুষ্ঠানিকতা। প্রথমে ব্যাচভিত্তিক, বিভাগভিত্তিক ও সালভিত্তিকভাবে শিক্ষার্থীরা আড্ডা দেওয়া শুরু করলেও সেই আড্ডা ভেঙে যায় জনসমুদ্রের মুখে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে যায় নবীন-প্রবীণের ব্যবধান।
সকাল ১১টায় প্রকাশিত গ্রন্থগুলোর মোড়ক উন্মোচন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০০ শিল্পীর ১০০ ছবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্রপ্রদর্শনী উদ্বোধন হয়। দুপুর সাড়ে ১২টায় ‘বাংলাদেশের পদযাত্রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন অতিথিরা। তারপর বিকেল ৩টা ৩০ মিনিটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০০ গুণীজনকে মরণোত্তর সম্মাননা প্রদান করা হয়। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শেষ হয় অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানগুলোর ফাঁকে ফাঁকে চলেছে গ্রুপ করে করে বন্ধুদের জমজমাট আড্ডা, গল্প আর গান। বিদেশে থাকা বন্ধুরাও ভিডিও কলে যুক্ত হন বিভিন্ন গ্রুপের সঙ্গে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র, জাতীয় ক্রীড়াবিদ, লেখক, সাংবাদিক, মাহে-মনি আটর্স এন্ড স্পোর্টস মিউজিয়ামের ফাউন্ডার ও চেয়ারম্যান সাঈদ-উর-রব
দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে আছেন ‘জাতির বাতিঘর’ হিসেবে পরিচিত শতবর্ষী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ৩৩ লাখ গ্র্যাজুয়েট। জ্ঞানের আলো ছড়ানো সেই গ্র্যাজুয়েটদের একটি অংশ শতবর্ষ উদযাপন করতে এক হয়েছিলেন প্রাণের ক্যাম্পাসে। অন্তত তিন প্রজন্মের প্রাক্তন শিক্ষার্থী হাজির হয়েছিলেন এই মিলনমেলায়। তাদের কেউ এসেছিলেন লাঠিতে ভর করে, অনেকে আসেন দুরন্ত বেগে মোটরসাইকেল হাঁকিয়ে। সবার বুকে প্রাণপ্রিয় বিদ্যাপীঠের জন্য গভীর ভালোবাসা। বয়োবৃদ্ধ অনেকেই পরম মমতায় ছুঁয়ে দেখছিলেন প্রিয় ক্যাম্পাসের ইট-কাঠ। অনেকে কয়েক দশক পর সহপাঠী, সতীর্থদের কাছে পেয়ে বুকে জড়িয়ে ধরেছেন আবেগে।
ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের এই আয়োজনে অ্যালামনাই ও অতিথি মিলে অন্তত ১২ হাজার মানুষ অংশ নেন। অনেক অ্যালামনাই ১৫টি দেশ থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। সবার অংশগ্রহণে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় মিলনমেলায় পরিণত হয় এ অনুষ্ঠান।
মিলনমেলা ঘিরে ক্যাম্পাস ছিল উৎসবমুখর। কার্জন হলের আদলে তৈরি করা হয় মূল ফটক। অনুষ্ঠান চত্বরে লাগানো হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার ছবি। সঙ্গে ছিল খ্যাতিমান শিল্পীদের চিত্রকর্ম। পুরো অনুষ্ঠান একসঙ্গে উপভোগ করার সুবিধা দিতে বসে এলইডি স্ট্ক্রিন। স্থাপন করা হয়েছিল ছোট ছোট তাঁবু, যেখানে অংশগ্রহণকারীরা দিনভর স্মৃতিচারণ করেছেন, দিয়েছেন আড্ডা।
‘বাংলাদেশের পথযাত্রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই’ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে সকাল ১০টায় শুরু হয় অনুষ্ঠান। ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ. কে. আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণতম শিক্ষার্থী ও দেশের প্রথম অর্থসচিব মতিউল ইসলাম।
শুরুতেই জাতীয় পতাকা, বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা ও অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের পতাকা উত্তোলন করা হয়। ওড়ানো হয় রঙিন বেলুন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস, ঐতিহ্য তুলে ধরে শত শিল্পী লাইভ অর্কেস্ট্রা, সংগীত এবং নৃত্য পরিবেশন করেন। পরে একে একে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ পাঠ শেষে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের কার্যনির্বাহী সদস্য মুনিরা খান উপস্থাপন করেন শোক প্রস্তাব।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ডুয়ার সাবেক সভাপতি রকীবউদ্দীন আহমদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ ও উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল। বক্তব্য দেন অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব রঞ্জন কর্মকার, সিনিয়র সহসভাপতি মোল্লা মোহাম্মদ আবু কাওছার, সহসভাপতি গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ, শতবর্ষ উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজ ও সদস্য সচিব আশরাফুল আলম মুকুল।
শীর্ষ ১০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ঢাবিকে দেখার প্রত্যাশা: প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্মৃতিচারণ করে মো. মতিউল ইসলাম বলেন, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাকে অর্থসচিবের দায়িত্ব দিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে স্বাধীনতার মাসে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের একটি বিশেষ তাৎপর্য আছে। আমি মনে করি, দেশকে আমি যা দিয়েছি, তার চাইতে দেশ আমাকে অনেক বেশি দিয়েছে। সবচেয়ে বড় সম্মান আপনারা আজ আমাকে দিলেন ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের এই ঐতিহাসিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি করে।
অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব রঞ্জন কর্মকার বলেন, ‘শ্রম দিয়ে, মেধা দিয়ে, রক্ত দিয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাইরা বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে গেছেন, আগামীতেও যাবেন।’
সন্ধ্যায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই মিলনমেলা শেষ হয়।
বঙ্গবন্ধুসহ শত গুণীজনকে মরণোত্তর সম্মাননা : বিকেলে একই স্থানে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের নিয়ে আয়োজিত শতবর্ষের মিলনমেলায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ শত গুণীজনকে ১৬ ক্যাটাগরিতে মরণোত্তর সম্মাননা দেয় ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন।
সম্মাননা প্রাপ্তরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের সূচনা পর্বে ব্যক্তিত্ব ক্যাটাগরিতে স্যার ফিলিপ জোসেফ হার্টগ, সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী, নবাব খাজা সলিমুল্লাহ এবং শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক; রাজনৈতিক ক্যাটাগরিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ এবং মো. জিল্লুর রহমান; উপাচার্য ক্যাটাগরিতে এ. এফ. রহমান, রমেশচন্দ্র মজুমদার, আবু সাঈদ চৌধুরী, মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী এবং সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন; বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা ক্যাটাগরিতে খান বাহাদুর নাজির উদ্দিন আহমেদ এবং মুহাম্মদ সিদ্দিক খান।
ভাষা আন্দোলন ক্যাটাগরিতে মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, আ ন ম গাজীউল হক, আবদুল মতিন এবং কাজী গোলাম মাহবুব; আন্দোলনে শহীদ ক্যাটাগরিতে আবুল বরকত, আমানুল্লাহ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান এবং ড. শামসুজ্জোহা; শহীদ শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী ক্যাটাগরিতে অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য, মুহম্মদ আনোয়ার পাশা, আবুল খায়ের, মো. আব্দুল মুক্তাদির, আতাউর রহমান খান খাদিম, আ. ন. ম ফয়জুল মহী, আবু নয়ীম মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, মোহাম্মদ সাদত আলী, এ. এন. এম মুনিরুজ্জামান, গিয়াসউদ্দিন আহমদ, গোবিন্দচন্দ্র দেব, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, সন্তোষচন্দ্র ভট্টাচার্য, সিরাজুল হক খান, এস. এম. এ. রাশীদুল হাসান, শরাফত আলী, ফজলুর রহমান খান, ডা. মোহাম্মদ মুর্তজা, মোহাম্মদ সাদেক এবং মধুসূদন দে; শিক্ষাবিদ ক্যাটাগরিতে সত্যেন্দ্রনাথ বসু, আনি মহামেদ হবিবুল্লাহ, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, কাজী মোতাহার হোসেন, আব্দুর রাজ্জাক, নীলিমা ইব্রাহীম, আহমদ শরীফ, প্রিন্সিপাল মোহাম্মদ আবুল কাশেম, সরদার ফজলুল করিম, এ কে নাজমুল করিম, এ এফ সালাহউদ্দিন আহমেদ, খান সারোয়ার মোর্শেদ, মমতাজুর রহমান তরফদার, আজিজুর রহমান মল্লিক, মুহম্মদ আবদুল হাই, মো. রফিকুল ইসলাম, আবুল হুসেন, আনিসুজ্জামান এবং আবদুল করিম; নারী ক্যাটাগরিতে লীলা নাগ, ফজিলাতুন্নেছা এবং করুণাকণা গুপ্তা।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্যাটাগরিতে মোকাররম হোসেন খন্দকার, আবদুল্লাহ আল মুতি শরফুদ্দীন, এ.এম হারুন-অর-রশীদ এবং দ্বিজেন শর্মা; সাহিত্য ক্যাটাগরিতে পল্লীকবি জসীম উদদীন, শামসুর রাহমান, হাসান হাফিজুর রহমান, আলাউদ্দিন আল আজাদ, শওকত আলী, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, সৈয়দ শামসুল হক, বুদ্ধদেব বসু, নলিনীকান্ত ভট্টশালী এবং মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান; সংস্কৃতি ক্যাটাগরিতে জহির রায়হান, আলমগীর কবির, তারেক মাসুদ, আবদুল্লাহ আল মামুন, সেলিম আল দীন, ওয়াহিদুল হক এবং মোবারক হোসেন খান; ক্রীড়া ক্যাটাগরিতে কাজী আবদুল আলীম।
শিল্পকলা ক্যাটাগরিতে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, কামরুল হাসান, কাইয়ুম চৌধুরী, মোহাম্মদ কিবরিয়া, সফিউদ্দিন আহমেদ এবং মুর্তজা বশীর, সাংবাদিকতা ক্যাটাগরিতে আতাউস সামাদ, সৈয়দ মোহাম্মদ আলী, শহীদুল্লা কায়সার এবং গিয়াস কামাল চৌধুরী; কূটনৈতিক ক্যাটাগরিতে এম. হোসেন আলী এবং শাহ এ. এস. এম. কিবরিয়া।
নির্বাচক প্যানেলে ছিলেন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী, আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী, অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, আবু মো. দেলোয়ার হোসেন।
Posted ১২:৩৫ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ১৩ মার্চ ২০২২
America News Agency (ANA) | ANA