বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ কাঠামো ব্যবস্থা বা সংক্ষেপে টিফা নামে একটি চুক্তি সই করেছে বাংলাদেশ। এর ফলে উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
বুধবার এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে এ চুক্তি সই হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে দেশটির বাণিজ্য, পর্যটন ও বিনিয়োগমন্ত্রী ডান তেহান চুক্তিতে সই করেন। এটি একটি কৌশলগত চুক্তি। এর মাধ্যমে দুই পক্ষ পণ্য ও সেবা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সৃষ্টি এবং উৎসাহিত করার কাজ করবে। উভয়পক্ষ আলোচনার মাধ্যমে দুই দেশে ব্যবসা বিনিয়োগ বাড়ানো এবং বাণিজ্য সম্পর্কিত সমস্যা দূর করার উদ্যোগ নেবে। যাতে দীর্ঘমেয়াদে সম্পর্ক সুসংহত এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বহুমুখীকরণ হয়।
বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পথে রয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৬ সালে বাংলাদেশ এলডিসির তালিকা থেকে বের হবে। তখন বিশ্ববাণিজ্যে বাংলাদেশ এলডিসি হিসেবে যেসব শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা পেয়ে আসছে, তা আর থাকবে না। তখন যাতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশ পিছিয়ে না পড়ে, সে জন্য বিভিন্ন প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম করছে সরকার। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে টিফা স্বাক্ষর এ উদ্যোগের অংশ।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক উৎসাহিত করা এ চুক্তির লক্ষ্য। এর মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে বেসরকারি খাতের সম্পৃক্ততা বাড়বে। চুক্তির আওতায় দুই দেশ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ে একটি ‘জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ’ তৈরি করবে। যেখানে অস্ট্রেলিয়ার ডিপার্টমেন্ট অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড ট্রেড এবং ঢাকায় অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনের প্রতিনিধি থাকবেন। একইভাবে বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং ক্যানবেরায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রতিনিধি থাকবেন। জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ অন্যান্য সরকারি সংস্থাকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সহযোগিতা করবে। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট বেসরকারি খাতের সঙ্গে প্রয়োজনীয় পরামর্শ করবে। চুক্তির ছয় মাসের মধ্যে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ একবার মিলিত হবে এবং বছরে কমপক্ষে একবার সভা করবে। এ গ্রুপ দ্বিপক্ষীয় সহায়তা বিশেষ করে খাতভিত্তিক ব্যবসা বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সহায়তার বিষয়ে দায়বদ্ধ থাকবে। চুক্তির আওতায় বস্ত্র, তৈরি পোশাক, কৃষি, কৃষি ব্যবসা, মৎস্য, খাদ্য, বেভারেজ, জ্বালানি, খনিজসম্পদ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সেবা, দক্ষতা উন্নয়ন এবং শিক্ষাসেবাসহ অন্যান্য খাতে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর চেষ্টা থাকবে।
চুক্তি সই অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, টিফা সইয়ের ফলে বাংলাদেশে অস্ট্রেলিয়ার বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বাড়বে। বাংলাদেশ বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করছে। বিনিয়োগের পদ্ধতিগত সেবা সহজ করা হয়েছে। বাংলাদেশ প্রায় ১৭ কোটি মানুষের বাজার। অস্ট্রেলিয়ার বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে লাভবান হবেন।
অস্ট্রেলিয়ার ট্রেড, ট্যুরিজম অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট মিনিস্টার ডান তেহান বলেন, টিফা স্বাক্ষরের মাধ্যমে উভয় দেশের বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বাড়বে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের পাশাপাশি আইসিটি, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং প্লাস্টিক, শিক্ষাসহ বেশকিছু সম্ভাবনাময় খাত রয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৩ সাল থেকে বাংলাদেশকে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা দিচ্ছে অস্ট্রেলিয়া। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়ার বাজারে ৮০ কোটি ৪৬ লাখ মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করা হয়েছে ৫৯ কোটি ৬৭ লাখ ডলারের পণ্য।
চুক্তি সইয়ের সময় বাংলাদেশের সচিবালয় প্রান্তে ঢাকায় নিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার জেরেমাই ব্রুয়ার, বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ, অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) মো. হাফিজুর রহমান, অস্ট্রেলিয়ার ডেপুটি হাইকমিশনার নার্দিয়া সিম্পসন এবং অস্ট্রেলিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোহাম্মদ শফিউর রহমান অনলাইনে যুক্ত ছিলেন।
Posted ১০:১০ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১
America News Agency (ANA) | ANA