শুক্রবার ১৯ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম
শিরোনাম

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

অনিয়ম ঢাকতে জমা দিচ্ছে না নিরীক্ষা প্রতিবেদন

এনা অনলাইন :   শনিবার, ১৩ এপ্রিল ২০১৯ 931
অনিয়ম ঢাকতে জমা দিচ্ছে না নিরীক্ষা প্রতিবেদন

বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রতি বছরই শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনে (ইউজিসি) জমা দেয়ার বিধান রয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে। কিন্তু অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ই এ আইন মেনে চলছে না। শুধু তা-ই নয়, প্রতিষ্ঠার পর থেকে একবারও নিরীক্ষা প্রতিবেদন জমা দেয়নি এমন বিশ্ববিদ্যালয়ও রয়েছে বেশ কয়েকটি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফি ও বেতন বাবদ আয় করা অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি সদস্যরাও এসব অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত। আর এসব অনিয়ম ঢাকতেই আয়-ব্যয়ের নিরীক্ষা প্রতিবেদন ইউজিসিতে জমা দিচ্ছে না বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আয়-ব্যয়ের হিসাবের একটি হালনাগাদ প্রতিবেদন তৈরি করেছে ইউজিসি। ওই প্রতিবেদনে বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক নিরীক্ষা প্রতিবেদন জমা দেয়ার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে দেখা যায়, স্বনামধন্য অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েরই হালনাগাদ নিরীক্ষা প্রতিবেদন নেই, যার মধ্যে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নামও রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির ১৯৯৩-২০১০ সালের নিরীক্ষা প্রতিবেদন জমা দেয়া হলেও ২০১০-২০১৫ সালের প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়নি।

ভর্তি বাণিজ্য, সাধারণ তহবিল থেকে নামে-বেনামে সিটিং অ্যালাউন্সের নামে মোটা অংকের আর্থিক সুবিধা গ্রহণ এবং পরিবার নিয়ে বিদেশ ভ্রমণের অভিযোগ রয়েছে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি সদস্যদের বিরুদ্ধে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়টির জমি কেনাসহ বেশকিছু বিষয়ে অভিযোগ রয়েছে কয়েকজন ট্রাস্টি সদস্যের বিরুদ্ধে। এসব অনিয়ম ঢাকতেই বিশ্ববিদ্যালয়টি সব অর্থবছরে নিরীক্ষা প্রতিবেদন জমা দেয় না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক আতিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সবকিছুই নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে চলছে। গুণগত মানের শিক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে সবার আস্থা অর্জনে সমর্থ হয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে সব ধরনের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালিত হয় স্বচ্ছতার ভিত্তিতে।

দেশে বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা পুরনো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি (আইইউবিএটি)। প্রায় দুই যুগ ধরে আয়-ব্যয়ের হিসাবের কোনো নিরীক্ষিত প্রতিবেদন ইউজিসিতে জমা দিচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয়টিও।

ইউজিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১০৩। এর মধ্যে কার্যক্রম পরিচালনা করছে ৯৫টি। কার্যক্রমে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে হিসাব হালনাগাদ রয়েছে মাত্র ২৪টির।

বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে নিরীক্ষা প্রতিবেদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে ১১টির। শিক্ষা মন্ত্রণালয় মনোনীত অডিট ফার্ম দ্বারা আংশিক নিরীক্ষা করা হয়েছে ৪১টির। আর প্রতিষ্ঠার পর থেকে কোনো নিরীক্ষাই হয়নি এমন বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে নয়টি। শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেছে কিন্তু এখনো প্রতিবেদন জমা দেয়ার সময় হয়নি আটটি বিশ্ববিদ্যালয়ের।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি শিক্ষাবর্ষের আয়-ব্যয়ের নিরীক্ষা প্রতিবেদন জমা দেয়ার বিষয়ে আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০-এর ৪৫ ধারার ১ উপধারায় হিসাবরক্ষণ ও নিরীক্ষা বিষয়ে বলা হয়েছে, প্রত্যেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতি আর্থিক বছরে আয়-ব্যয়ের হিসাব কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত ফরমে প্রস্তুত ও সংরক্ষণ করবে। উপধারা ২-এ বলা হয়েছে, উল্লিখিত হিসাব প্রতি অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের তালিকাভুক্ত বহির্নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠানগুলোর (সিএ ফার্ম) মধ্যে সরকার কর্তৃক মনোনীত একটি ফার্ম দ্বারা নিরীক্ষা করতে হবে এবং পরবর্তী আর্থিক বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে তা শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও কমিশনে জমা দিতে হবে।

ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান এ বিষয়ে বণিক বার্তাকে বলেন, প্রতিটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে হিসাব সংরক্ষণ ও তা সরকারের কাছে জমা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। অথচ অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ই এ নির্দেশনা মানছে না। শুধু এ নির্দেশনা নয়; বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে আইন অমান্য করার এক ধরনের প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা গুণগত উচ্চশিক্ষা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। কেননা আর্থিক কার্যক্রমের স্বচ্ছতা নিশ্চিতে নিরীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি ও সংরক্ষণ খুবই জরুরি। যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত নিরীক্ষা হয় না বা নিরীক্ষা প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয় না তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এমনকি নামে-বেনামে বিভিন্ন খাত দেখিয়ে অ্যালাউন্স নেয়ার অভিযোগ রয়েছে খোদ উচ্চপদস্থদের বিরুদ্ধে।

গত কয়েক বছর ধরে হিসাব জমা দিলেও ১৯৯৩ থেকে ২০১১—এ ১৮ বছরের প্রতিবেদন এখনো কমিশনে জমা দেয়নি চট্টগ্রামের ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (ইউএসটিসি)। দেশের প্রথম দিককার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা কার্যক্রম বাবদ প্রতি বছর প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয় হয়। সে হিসাবে প্রতিষ্ঠানটি ১৮ বছরে কয়েকশ কোটি টাকা ব্যয়ের হিসাবের কোনো নিরীক্ষা প্রতিবেদন জমা দেয়নি ইউজিসিতে।

নানা আর্থিক অনিয়মে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ রয়েছে চট্টগ্রামের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে। কয়েক বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ৭৫টি আসনের ৪৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির অভিযোগ প্রমাণিত হলে ইউজিসি তাদের ১০ কোটি টাকা জরিমানা করে।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে কখনো নিরীক্ষাই হয়নি সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের। ইউজিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯৯৮ থেকে ২০১৬—এ ১৮ বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাবের কোনো নিরীক্ষাই করেনি বিশ্ববিদ্যালয়টি। ২০০৬ সালের পর থেকে কোনো নিরীক্ষা প্রতিবেদন জমা দেয়নি নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়। স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় তিন বছরের (২০১৩-১৬), এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ ১৩ বছরের (১৯৯৬-২০০১ ও ২০০৮-১৬), দ্য পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ তিন বছরের (১৯৯৬-৯৯), ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এক বছরের, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি চার বছরের, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি দুই বছরের, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ চার বছরের, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি চার বছরের, অতীশ দীপঙ্কর ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ছয় বছরের, জেডএইচ শিকদার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় চার বছরের প্রতিবেদন এখনো জমা দেয়নি। রাজধানীর বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ২০০৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত কোনো নিরীক্ষা প্রতিবেদন জমা দেয়নি। পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি তিন বছরের ও টাইমস ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ তিন বছরের হালনাগাদ হিসাব জমা দেয়নি।

এদিকে আইনে নিরীক্ষা প্রতিবেদন জমা না দিলে শাস্তির বিধান থাকলেও তা প্রয়োগ হচ্ছে না। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ৪৯ ধারা অনুযায়ী, ৪৫ (২) লঙ্ঘন করলে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড অথবা ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। যদিও বছরের পর বছর অডিট রিপোর্ট জমা না দিলেও এ বিষয়ে কোনো ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, শুধু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নয়; সব ধরনের প্রতিষ্ঠানেই আর্থিক স্বচ্ছতা থাকা খুবই জরুরি। এ বিষয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনীহা থাকার কথা না। বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার জন্য আয়-ব্যয়ে নিরীক্ষা বাধ্যতামূলক। সব প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদন জমা দেয়ার সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে আইনে। যারা এ আইন মানবে না, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।–সূত্র :  বণিকবার্তা

Facebook Comments Box

Comments

comments

Posted ৬:২৭ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১৩ এপ্রিল ২০১৯

America News Agency (ANA) |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

 

President/Editor-in-chief :

Sayeed-Ur-Rabb

 

Corporate Headquarter :

 44-70 21st.# 3O1, LIC. New York-11101. USA, Phone : +6463215067.

Dhaka Office :

70/B, Green Road, 1st Floor, Panthapath, Dhaka-1205, Phone : + 88-02-9665090.

E-mail : americanewsagency@gmail.com

Copyright © 2019-2024Inc. America News Agency (ANA), All rights reserved.ESTD-1997