আজ বন্ধু দিবস। দুরন্ত আবেগ ও দুর্দান্ত এক সম্পর্কের নাম বন্ধুত্ব। জীবনের নানা বাঁকে, নানা পর্যায়ে বেশির ভাগ সময়ই একান্ত ভরসার মানুষটি হয়ে ওঠেন কোনো বন্ধু। আর তরুণ বয়সে বন্ধুর ভূমিকা নিয়ে তো কথা বলাই বাহুল্য! তবু, অন্য সব সম্পর্কের মতো, বন্ধুত্বেও রয়েছে ঘাত-প্রতিঘাত; রয়েছে বন্ধুর মুখোশে থাকা শত্রুর ছোবলের আশঙ্কা! তাই বন্ধুত্ব গড়া-ভাঙার খেলাও চলতে থাকে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে। বন্ধু দিবস ঘিরে এ আয়োজনের প্রচ্ছদ রচনাটি লিখেছেন আশিক মুস্তাফা
হাওয়ার গতি যে দিকেই হোক না কেন, পৃথিবীর সব উইন্ডমিলই কাউন্টার ক্লকওয়াইজ ঘোরে। বন্ধুত্বও তেমনি একটা সম্পর্ক। নিজস্ব গতিতে একদিকেই ঘোরে। রক্তের সম্পর্ক এখানে বড় নয়, মনের বন্ধন বড়। এ যেন আত্মার সঙ্গে আত্মা জুড়ে দেওয়া। পবিত্র এক আবেগী বন্ধনে নিজেদের জড়িয়ে নেওয়া। শুধু রক্ত-মাংসে গড়া মানুষ নয়, এই গণ্ডির বাইরেও যেতে পারেন। আপনার বন্ধু হতে পারে টবের একটি গোলাপ গাছও। তার মায়ায় একবার নিজেকে জড়িয়ে দেখুন, গোলাপ কাঁটার খোঁচা কতটা মধুর হয়ে উঠছে! আর দেখবেন, পৃথিবীর অন্যসব গোলাপ গাছ অপ্রিয় হয়ে উঠছে আপনার চোখে!
মানুষের কানে আপনার প্রিয় গোলাপ গাছের ভাষা না পেঁৗছালেও মনের কানে ঠিকই সব শুনতে পারবেন। তবে মনে রাখবেন, শুধু গোলাপের বন্ধুত্বে নয়; রক্ত-মাংসে গড়া মানুষের বন্ধুত্বেও যদি কখনও হিংসা, লোভ বা পরশ্রীকাতরতা ঢুকে পড়ে তবে কাঁটা ঘায়ে লবণ ছিটানো অবস্থার মতো হতে পারে!
উদার মনের মিলিয়ন মাইল
আপনি চাইলেই প্রিয় বন্ধুর সব দোষ অবলীলায় ক্ষমা করে দিতে পারেন। তা না হলে বন্ধু! আপনার প্রিয় বন্ধুটি অন্যের কাঁধে হাত রেখে ঘুরলেও ঠিকই আপনার কল্যাণের কথা ভাবে। চলতি পথে আপনার পা ফসকানো কখনোই মেনে নিতে পারে না। তারাদের রাজ্যে যেমন প্রসারিত জায়গা পড়ে থাকে, তেমনি আপনার বন্ধুটির উদার মনের মিলিয়ন মাইল পড়ে থাকে কেবল আপনারই নিশ্চিন্তে হেঁটে চলার জন্য।
পৃথিবীর অগুনিত সম্পর্কের চেয়ে শুদ্ধ এবং পবিত্র এ বন্ধনে যতদিন স্বার্থ নামের কালো দানব ছোঁ মারতে পারবে না; ততদিন অবলীলায় মহাকাশ যানের চেয়েও দ্রুত গতিতে এগোতে থাকবে পবিত্র এ সম্পর্ক।
ভাষার গায়ে চোখ
বন্ধুত্বের ভাষার ওপর থেকে চোখ সরিয়ে বাস্তব ভাষার গায়ে চোখ রাখুন। দেখবেন প্রতিনিয়ত পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে হারিয়ে যাচ্ছে একেকটি ভাষা। হারিয়ে যাওয়া ভাষার কাতারে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ভাষার নাম হাওয়াইয়ান ভাষা। যে ভাষায় এখন টিকে আছে মাত্র ১২টি অক্ষর। কিন্তু তাতে কিচ্ছু যায় আসে না হাওয়াইয়ানদের। তারা দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছে ভাষার কাজ। মাত্র ১২টি অক্ষরেই সে ভাষাভাষী বন্ধুরা মনের একান্ত গহিন আবেগগুলো অন্যের কাছে পেঁৗছে দিচ্ছে অবলীলায়।
বলি, শুধু হাওয়াইয়ানরা নয়; পৃথিবীর সব বন্ধুই একে অন্যের চোখে চোখ রাখলে বুঝতে পারেন মনের ভাষা। মনের আয়নায় ওঠে আসে সম্পর্কের খেরোখাতা। তাই এই বন্ধনটায় ছায়া ফেলতে দেবেন না হিংসা, লোভ, ঘৃণা আর পরশ্রীকাতরতাদের। এসব দুমড়ে-মুচড়ে ডাস্টবিনে ফেলে, মন খারাপের দিনকে ছুটি দিয়ে গেয়ে উঠুন বন্ধুত্বের গান। ‘তুমি আমার পাশে বন্ধু হে…।’
ইতিহাসের বাঁকে
ইতিহাস জানতে যারা আগ্রহী, তাদের বলি, শহরে হাঁটতে গিয়ে নিশ্চয়ই আপনার চোখে পড়েছে হলমার্ক কার্ডস প্রতিষ্ঠানটি? এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা জয়সি হল। শুধু ব্যবসার কথা মাথায় রেখেই ১৯১৯ সালে তিনি এ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেন। ব্যবসায়ী জয়সি চেয়েছিলেন এ দিনে এক বন্ধু আরেক বন্ধুকে তার প্রতিষ্ঠানের কার্ড দিয়ে শুভেচ্ছা জানাক। শুরুতে তাই হয়েছিল। ১৯১৯ সালের পর দিবসটি বিশ্বব্যাপী সাড়া ফেলে। পরবর্তীকালে গুরুত্বের কারণে ১৯৩৫ সালে বন্ধু দিবসটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়।
মূলত একই বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একজন সাধারণ নাগরিক গুলিতে খুন হলে তার বন্ধু এর প্রতিবাদস্বরূপ আত্মহত্যা করেন। এই আত্মত্যাগী বন্ধুর কথা মাথায় রেখে মার্কিন কংগ্রেসে বন্ধু দিবসের স্বীকৃতিতে আইন পাস হয়। তারপর থেকেই রুটিন করে আগস্টের প্রথম রোববার বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে এই প্রিয় দিবস।
হাতের স্পর্শ
দিবস আসলে উপলক্ষ মাত্র। নিজের ফেলে আসা ছোট্টমোট্ট জীবনটার দিকে তাকালে চোখ ঠিকই ঝাপসা হয়ে আসবে আপনার। রাজ্যের বন্ধু ধরা দেবে না হৃদয়ের একান্ত গহিন গোপন গহ্বরে; বরং দেখবেন গুটিকয় বন্ধু এখনও আপনাকে ‘আয়…’ বলে ডাকছে। ডাকবে তারা আমৃত্যু। বলি, যদি কখনও কোনো বন্ধুকে সময়ের ফারাকে ভুলে যান, অন্তত এই দিনটায় তাকে স্মরণ করুন। প্রকৃত বন্ধু না হোক, একদিনের জন্য কেউ আপনাকে আপন করে কখনও বুকে টেনে বন্ধুত্বের সম্মান দিলে- তাকেও স্মরণ করুন আজ। সে অবহেলায় আর অনাদরে থাকলে তার প্রতি হাত বাড়িয়ে দিন। মনের কাছ থেকে অটো সাজেশন নিয়ে বন্ধুর দিকে হাত বাড়ান, দেখবেন, সে আগে থেকেই হাত বাড়িয়ে রেখেছে আপনার দিকে।
স্পর্ধার পারদ
ক্লাসমেট, ইয়ারমেট, এরিয়ামেট বা রুমমেট ছাড়াও বন্ধু হতে পারেন বাবা-মা। হয়তো আপনার প্রিয় বন্ধু বড় বোন। যে আপনার সব সময়ের শুভাকাঙ্ক্ষী। হয়তো প্রেমিক বা স্বামীই আপনার প্রকৃত বন্ধু, যার কাছে মনের সব সুখ-দুঃখ অনায়াসে বলতে পারেন। কিংবা আপনার শিক্ষক, যার কাছে পড়াশোনা করেছেন; আপনাকে বোঝেন, জানেন- তিনিও তো আপনার বন্ধু হতে পারেন।
বন্ধু হতে পারেন রাস্তার অজানা ব্যক্তি। হতে পারেন বাউণ্ডুলে কেউ। সবার ভেতরই মনুষত্ব কাজ করে। এই মনুষত্ব সুষ্ঠু লালন-পালনে বিকশিত হয়। আপনার স্পর্শ যেমন অন্য একজনকে সুস্থ করে তুলতে পারে, তেমনি অন্য একজন ভালো মানুষের ছোঁয়ায় আপনিও হয়ে উঠতে পারেন প্রকৃত বন্ধু থেকে একজন ভালো মানুষ।
যা করতে পারেন
অবশ্যই সবার আগে চেষ্টা করবেন প্রিয় বন্ধুটির সঙ্গে দেখা করে তাকে নিয়ে সময় কাটাতে। সম্ভব না হলে যতটা পারা যায় তাকে নিয়েই ব্যস্ত থাকুন আজ। বন্ধুকে মনে ধরে রাখার জন্য দিতে পারেন তারই পছন্দের কিছু। উপহারের মধ্যে কার্ডও রাখতে পারেন। দিতে পারেন চকোলেট, স্যুভেনির, বই, ব্যান্ডসহ রাজ্যের উপহার। তবে গুরুত্ব দিন বন্ধুর রুচিকে। চেষ্টা করুন আপনার বন্ধুর একান্ত প্রিয় বা খুবই পছন্দের কোনো সামগ্রী উপহার দিতে।
পথে পড়ে থাকা বন্ধু ওগো
ভুলে যাবেন না তাদের কথা, যারা বন্ধু মানেই কী বোঝে না। যাদের এসব ভাববার সময় নেই। সম্ভব হলে তাদের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটাতে পারেন কোনো পার্কে বা কোনো গলিতে বসে। তাদের শুধু উপহার না দিয়ে বরং উপহারের সঙ্গে সম্ভব হলে কিছু খেতে দিন। এটাই ওদের সবচেয়ে বড় পাওয়া। আরও ভালো হয় যদি কয়েকজন বন্ধু মিলে ওদের সঙ্গে সময় কাটান। দেখবেন, আপনাদের বন্ধুত্বের মাঝেও হৃদ্যতা বাড়ছে এ কাজের মাধ্যমে। কত কাজই তো করেছেন বন্ধুর কাঁধে হাত রেখে। ক্লাস ফাঁকি থেকে শুরু করে কেউ কেউ এয়ার ড্রপও দিয়েছেন; কেবলই বন্ধুর জন্য।
এই বন্ধুত্ব টিকে থাক আজন্ম!
Posted ১১:১৩ অপরাহ্ণ | রবিবার, ০৬ আগস্ট ২০১৭
America News Agency (ANA) | Payel