শনিবার ২০ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম
শিরোনাম

মৃত্যুপুরী নিউইয়র্ক!

এম আর ফারজানা :   শুক্রবার, ০৩ এপ্রিল ২০২০ 821
মৃত্যুপুরী নিউইয়র্ক!

এ যেন রূপকথার গল্পকেও হার মানায়। মানুষ মরছে প্রতি ঘণ্টায়। হাসপাতালগুলোতে তিলধারণের ঠাই নেই। হাসপাতালের বেডে, ফ্লোরে আর জায়গা হচ্ছে না। করোনায় আক্রান্ত হয়ে একেকজন আসছে আর লাশ হয়ে যাচ্ছে। কাঁদছে ডাক্তার, নার্স, তাদের চোখের সামনে এমন মৃত্যু দেখে।

বুকে শত বেদনার পাথর চাপা দিয়ে তারা সাধ্যমত চেষ্টা করে যাচ্ছে, চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছে তারপরও মৃত্যু থামানো যাচ্ছে না। রোগী অনুযায়ী পর্যাপ্ত ভেন্টিলেটর নেই। যেখানে দুই হাজার দরকার সেখানে আছে মাত্র দুইশত ভেন্টিলেটর। কে জানত এমনভাবে হানা দেবে করোনা?

হাসপাতালের স্টাফরাও শবদেহ টানতে টানতে ক্লান্ত। একেকটা হাসপাতালে এখন লাশের স্তূপ। করোনা ভাইরাস সব লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে। গত এক শতাব্দীতেও নিউইয়র্কের মানুষ এতটা কঠিন সময় পার করেনি। কারো পরিবারে বাবা মারা গেছে, কারো মা, কারো ভাই-বোন। শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছে পরিবারের অন্য মানুষেরা।

বাচ্চারা শুধু ফেলফেল করে তাকিয়ে দেখে। কিছু বলতে পারে না। তবে বুঝতে পারে করোনা নামের এই ভয়ংকর কিছু হানা দিয়ে তাদের পরিবারের মানুষগুলোকে তাদের থেকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছে। তারা এখনো বুঝতে পারছে না কি নিদারুণ এক ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে তাদের জন্য!

এ লেখা যখন লিখছি তখন নিউইয়র্কে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৬৬,৪৯৭ জন। মারা গেছেন ১,২৫০ জন। প্রতি মুহূর্তেই এ সংখ্যা বাড়ছে। নিউইয়র্কে বারোরকম দেশের মানুষের বসবাস। শুধু গত চব্বিশ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন দু’শতাধিক। এর মধ্যে আমাদের বাংলাদেশী আছেন ৯ জনের মত। এ পর্যন্ত বাংলাদেশী মোট ৩১ জন মারা গেছেন। কি অসহায় ভাবেই না মারা যাচ্ছে তারা।

আপনজন কাউকে কাছে পাচ্ছে না। ডাক্তাররা যা বলে তাই শুনতে হচ্ছে পরিবারকে। আর ভাইরাসে আক্রান্ত হবার ভয়েও কাউকে কাছে যেতে দিচ্ছে না। ফলে একজন রোগী কি অসহায়ভাবে না মারা যাচ্ছে। জীবনের শেষ চাওয়া বা কিছু না পাওয়ার কথা যে বলবে সে সুযোগও নেই।

পরিবারের মানুষগুলো শুধু ফোন করতে পারে এটুকুই। অনেক সময় তাও হয়ে উঠে না। মারা যাওয়ার পর বাড়ীতে ফোন আসে। আর লাশরাখা ঘরে ভরে গেছে শবদেহে। সারি সারি লাশ। এখন আর পর্যাপ্ত জায়গাও নেই। কেউ মারা গেলে বাসায় ফোন করে বলে লাশ নিয়ে যাও।

হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত রোগী জায়গা দিতে না পারায় এখন নিউইয়র্ক সেন্ট্রাল পার্কে খোলা হয়েছে অস্থায়ী হাসপাতাল। সেখানেও ভিড়। মৃত্যু যেন সবাইকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। করোনাভাইরাস এতটাই ভাইরাল হয়েছে মানুষের মাঝে এখন আর সামাল দেয়া যাচ্ছে না।

ক্রমশ পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। ফলে নিউইয়র্কে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় নৌবাহিনীর জাহাজ হসপিটাল কমপোট মোতায়েন করেছে। গবেষকরা ধারনা করছে ভাইরাসে কারণে আমেরিকা সংক্রমিত হতে পারে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ, মারা যেতে পারে প্রায় এক লাখের মত। এদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অন্যদের সঙ্গে সম্মত হয়েছে এপ্রিলের শেষ পর্যন্ত সবাই যেন বাসায় থাকে। এ মুহূর্তে এটাই হবে সবচেয়ে ভালো পদক্ষেপ।

তিনি বলেন, এতে আমরা অনেক মৃত্যু ঠেকাতে পারবো। করোনাভাইরাসের ভেকসিন এখনোও বাজারে আসেনি। ট্রায়াল চলছে। বাজারে আসতে আরও ছয়মাস লাগতে পারে। যার ফলে এই মহামারি ঠেকানো যাচ্ছে না। নিউইয়র্কের লং আইল্যান্ডের ওয়াশিংটন মেমোরিয়াল কবরস্থানে কবর দেয়া হচ্ছে একে একে।

অনেকের আগে থেকে ঠিক করা ছিল না বলে যাচ্ছে অন্য জায়গায়। ধারনা করা হচ্ছে আগামী দুই সপ্তাহ পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। বলা হচ্ছে বাসায় থাকার জন্য। এ মুহূর্তে এটাই করতে হবে বাঁচতে চাইলে। যে নিউইয়র্ক জেগে থাকত দিনরাত, বলা হতো এ শহর ঘুমায় না। যে শহরে হাজারো মানুষের ছুটে চলা ভোর হতেই, সে শহর এখন হাজারো মানুষের লাশ। এ যেন এক মৃত্যুপুরী।
-নিউজার্সি থেকে

Facebook Comments Box

Comments

comments

Posted ৯:১৩ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ০৩ এপ্রিল ২০২০

America News Agency (ANA) |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

 

President/Editor-in-chief :

Sayeed-Ur-Rabb

 

Corporate Headquarter :

 44-70 21st.# 3O1, LIC. New York-11101. USA, Phone : +6463215067.

Dhaka Office :

70/B, Green Road, 1st Floor, Panthapath, Dhaka-1205, Phone : + 88-02-9665090.

E-mail : americanewsagency@gmail.com

Copyright © 2019-2024Inc. America News Agency (ANA), All rights reserved.ESTD-1997