শুক্রবার ২৯ মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম
শিরোনাম

বৈশাখী প্যারেডে বাঙালির ঐতিহ্য ব্রঙ্কসে বাফার ইতিহাস রচনা

এনা :   শনিবার, ০৬ মে ২০১৭ 1009
বৈশাখী প্যারেডে বাঙালির ঐতিহ্য ব্রঙ্কসে বাফার ইতিহাস রচনা

বাংলাদেশ একাডেমি অব ফাইন আর্টস (বাফা) বাংলাদেশী অধ্যুষিত এলাকা ব্রঙ্কসে অবস্থিত। প্রবাসে জন্ম নেয়া এবং বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মের আমেরিকান বাংলাদেশী শিশু- কিশোরদের বাংলা ভাষা, বাংলা সংস্কৃতির বীজ বুনার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত কয়েক বছরে খুবই অল্প সময়ের মধ্যে এই সংগঠন প্রবাস বাংলাদেশীদের নজর কেড়েছে। চমৎকার সব অনুষ্ঠান করে সবার প্রশংসা অর্জন করেছে। বাফার সুখ্যাতি নিউইয়র্কে ছড়িয়ে পড়েছে। ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত বাফাতে শিক্ষা দেয়া হয়েছে নাচ, গান, বাংলা শেখা ও আবৃত্তি। সেই বিষয়ের উপর প্রতি বছরই বাফা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে এবং কৃতি ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সনদ পত্র বিতরণ করে। অন্যান্য বছরের মত এবারো বাফা ’মাটি আমার প্রাণ’ নামে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে কিন্তু এর পাশাপাশি বাফা ব্রঙ্কসে নতুন ইতিহাস রচনা করেছে। বাংলাদেশী অধ্যুষিত এলাকাগুলোর মধ্যে জ্যাকসন হাইটস, এস্টোরিয়া এবং জ্যামাইকায় বৈশাখকে কেন্দ্র করে বৈশাখী প্যারেডের আয়োজন করে থাকে কিন্তু ব্রঙ্কসে এই দিক দিয়ে পিছিয়ে ছিলো। ব্রঙ্কসবাসীর সেই প্রত্যাশা পূরণ করেছে বাফা। বাঙালিয়ানায়, বাঙালি সাজে, বাঙালি পোশাকে, বৈশাখের ঐতিহ্য ঢাক- ঢোল, ব্যানার- পোস্টার নিয়ে সবাই প্যারেডে অংশগ্রহণ করেন। বৈশাখী প্যারেডে বাংলা সংস্কৃতি ও বাংলাদেশের জয়ধ্বনি হয়েছে। সবাই নেচে গেয়ে বৈশাখকে বরণ করে নিয়েছেন। প্যারেড শেষে ছিলো বাফার অন্যান্য পরিবেশনা ’মাটি মোদের প্রাণ’ এই প্রতিপাদ্যে। মাটি যে তাদের প্রাণ সেটা বুঝা গেল বাফার প্রত্যেকটি গান এবং নৃত্যে। বিশেষ করে অনুপ কুমারের পরিকল্পনা এবং নির্দেশনায় পরিবেশিত নৃত্য ছিলো চোখ ধাঁধানো। অনেকেই বলেছেন, এত সুন্দর নাচ কী করে হতে পারে? অপূর্ব, অনন্য, অসাধারণ। বাফা বাংলাদেশের যে কোন প্রতিষ্ঠানকে এখন চ্যালেঞ্জ করার ক্ষমতা রাখে। প্রতিটি নাচের সাথে কোড়িওগ্রাফ, নাচের পোশাক এবং আনুসঙ্গিক জিনিসগুলো সংগ্রহ করা প্রবাসে কষ্ট সাধ্য হলেও চাহিদার কাছে পরাজিত হননি বাফার কর্মকর্তা ফরিদা ইয়াসমীন, শামীম আরা, বাফার শিক্ষক এবং অন্যান্য কর্মকতারা।

18199517_1413907372022997_4314695223998014395_n

একের মধ্যে অনেকের এই অনুষ্ঠানটি গত ২৯ এপ্রিল ব্রঙ্কসে অনুষ্ঠিত হয়। ২৯ এপ্রিল পড়ন্ত বিকেলে ব্রঙ্কসের বাঙালী অধ্যুষিত পার্কচেস্টারের বাংলাবাজার এলাকা থেকে প্যারেডটি শুরু হয়। প্যারেডে কোন গ্র্যান্ড মার্শাল, মার্শাল না থাকলেও ছিলেন সম্মানীত অতিথি। বিনিময়ের মানদন্ডে বাফা কাউকে গ্র্যান্ড মার্শাল এবং মার্শাল বানায়নি। বৈশাখী প্যারেডটি ব্রঙ্কসের পার্কচেস্টারের কয়েকটি ব্লক অতিক্রম করে অনুষ্ঠানস্থলে এসে প্যারেড শেষ হয়। বাহারি পোশাক এবং নাচে- গানে ও বাংলার জয়গানে অনেকেরই দৃষ্টি কাড়ে। সবাইকে জানিয়ে দেয়া হয় আজ বাঙালিদের নতুন বছর। প্যারেডে সকল ঐতিহ্যকে ছাড়িয়ে গেছে, পালকি দেখে। সেই সাথে জামাই এবং বউ। বর- কনের এই পোশাক এবং পালকি মনে হয় অনুষ্ঠানেই শোভা পাচ্ছে। কারণ এখন কেউ পালকিতে বিয়ে করতে যায় না। মানুষের রুচির পরিবর্তন হয়েছে। তারা এখন হেলিকপ্টার, ঘোড়ার গাড়ি এবং প্রাইভেট কারে বিয়ে করতে যায়। বাঙালির রুচির পরিবর্তন হলেও ঐতিহ্যের পরিবর্তন হয়নি। এই জন্য বলা যায়, বাঙালি তার ঐতিহ্য দেশে বা প্রবাসে ধরে রাখবেই। বাফার সভাপতি ফরিদা ইয়াসমীনের সভাপতিত্বে এবং কম্যুনিটি লীডার সিরাজউদ্দিন আহমেদ সোহাগ ও বিশিষ্ট আবৃত্তিকার গোলাম মোস্তফার পরিচালনায় প্যারেডে অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন, নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল শামীম আহসান, বিশিষ্ট লেখক, সাংবাদিক হাসান ফেরদৌস, ব্যান্ডস-এর প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট ও টাস্ট্রি বোর্ড চেয়ারম্যান আব্দুস শহীদ, বাংলা পত্রিকা ও টাইম টিভির সিইও আবু তাহের, কম্যুনিটি এক্টিভিস্ট মাহবুবুল আলম, জুনায়েদ আহমেদ চৌধুরী প্রমুখ। প্যারেডে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রানু ফেরদৌস, তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী, রফিকুল ইসলাম, আব্দুল বাছির খান, বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন, নূরে আলম জিকো, বিশিষ্ট লেখিকা নাসরিন চৌধুরী, কবি সোনিয়া কাদের, শামীম আরা, অনুপ কুমার দাস, রনজিত কুমার দাস, কৗারা রোজারিও, হারুণ আলী, মাসুদ আহমেদ, বাফার সাধারণ সম্পাদিকা ফারজানা ইয়াসমিন প্রমুখ। মাসুদ বিন মোমেন সবাইকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, জাতিসংঘ মঙ্গল শোভা যাত্রাকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে- এটা আমাদের জন্য গর্বের। তিনি বলেন, এই প্রবাসে আমাদের প্রধান কাজ হবে নতুন প্রজন্মের কাছে বাংলা ঐতিহ্য তুলে ধরা। সেই সাথে নতুন বছরে আমাদের শপথ হোক অস্প্রাদায়িকতা ও সকল বাধাকে উপেক্ষা করে এগিয়ে যাওয়া। শামীম আহসান বলেন, একদিন নতুন প্রজন্মই ভিন দেশে আমাদের ইতিহাস- ঐতিহ্যকে তুলে ধরবে। হাসান ফেরদৌস বলেন, আমার কাছে খুবই ভাল লাগছে ব্রঙ্কসে প্রথমবারের মত এসে এই ধরনের একটি সুন্দর অনুষ্ঠান দেখতে পেরে। আমার কাছে মনে হয়েছে ব্রঙ্কসেও একটি বাংলাদেশ আছে। বৈশাখী প্যারেড শেষে সবাইকে স্কুল অডিটোরিয়ামে আপ্যায়ন করা হয়। সন্ধ্যে সাড়ে ৬টায় পিএস ১০৬ মিলনায়তনে বাফার শিক্ষার্থীদের সনদপত্র প্রদান ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। শামিম আরা বেগম ও ক্লারা রোজারিওর উপস্থাপনায় এবং বাফা ও ব্রঙ্কস বাংলাদেশ উইমেন’স এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ফরিদা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সনদপত্র বিতরণ করেন বিশিষ্ট লেখক-সাংবাদিক হাসান ফেরদৌস। তিনি সনদপ্রাপ্ত প্রতিটি ছাত্রছাত্রীকে বাগানের ফুলের সাথে তুলনা করে বলেন, এই ফুলগুলোই একদিন বাংলা সংস্কৃতির সৌরভ ছড়াবে। তোমরা আমাদের গর্বিত করেছো। সনদ প্রাপ্ত ছাত্রছাত্রীরা হচ্ছে- এবলি, রুচি, স্মরণী, আবৃত্তি, পূজা, জারা, তৃষা, ঋতু, চৈতন্য, শ্রেয়া, অদ্বিতীয়, নির্জা, তুলসি, কথা, মায়া, হৃদি হক, অর্পিতা, ইশা, রিয়া, জয়িতা, অনিকা, স্মৃতি, অন্তরা, নিফা, মৃদুলা, নিশু, ইশান, ফাইজা, মুনা, শোভনো, অদৃতা, হ্যাপি, অন্তরা, রাফা, আফশরা, অর্জুন, তৃণা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সূচনা করা হয় বাফার শিল্পীদের পরিবেশনায় উদ্বোধনী নৃত্যে। যে তিনটি বিষয় শেখানো হয় সেই তিনটি বিষয়ই পরিবেশন করা হয়। বিভিন্ন বয়সী শিক্ষাত্রীরা পৃথক পৃথকভাবে অংশগ্রহণ করেন। মাটি মোদের প্রাণ শিরোনামে পরিবেশিত হয় বাফার ইতিহাস সৃষ্টিকারী সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। বাফা শিল্পীরা মনোমুগ্ধকর নাচে গানে মাতিয়ে রাখেন উপচেপড়া হলভর্তি দর্শক-শ্রোতাদের। এ পর্বে অংশগ্রহণকারী শিল্পী ও কলাকুশলীরা হলেন : মারজিয়া স্মৃতি, অন্তরা সাহা, মৃদুলা আলম, নিরমা গোলদার, মিথুন দেব, আনিকা সাহা, আনিকা কায়সার, সানজিদা ইসলাম, ইশানী চৌধুরী, নুজহাত কাইজা, ফাতিহা নূর, অর্পিতা পাল, পূজা চন্দ্র, জয়িতা রয়, কৃষণা প্রিয়া, ইশা রয়, তিশা রয়, মায়া এঞ্জেলিনা, রিয়া, শ্রেয়া, কথা, নিরজা, অদিতি, তুলসি, চৈতন্য, দিবা, হৃদিতা, জারা, আবৃতি, পূজা, রুচি, নোরা, সারুনি, এভেলিন, দীপু, মোনা, ফাহিম, মাইশা, শান্ত, অন্তরা, সোহানা, তাসনিয়া, ববি, কিংশুক, হ্যাপি, আরিয়া, সেজুতি, রাফা, অর্জুন, অল্পরা, আদ্রিতা, ত্রির্পনা, হৈমন্তি, ছবি ও শম্পা। অতিথি শিল্পী আফজাল হোসেন। নৃত্যানুষ্ঠান পরিকল্পনা ও পরিচালনায় ছিলেন অনুপ কুমার দাশ। সঙ্গীত পরিচালনায় ছিলেন রনজিৎ কুমার দাস। সদ্য প্রয়াত শিল্পী লাকি আখন্দের স্মরণে সঙ্গীত পরিবেশন করেন অতিথি শিল্পী আফজাল। সঙ্গীত পর্বটি উৎসর্গ করা হয় কালিকা প্রসাদ ভট্টাচার্যকে। পোষাক পরিকল্পনায় অনুপ কুমার দাশ ও ফরিদা ইয়াসমিন। গ্রন্থনায় শামীম আরা বেগম এবং তবলায় ছিলেন তপন মোদক। শব্দে মুনির-শিমুল। লাইটে শামীম লিটন এবং ব্যবস্থাপনায় ছিলেন ফারজানা ইয়াসমিন। সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিল ব্রঙ্কস বাংলাদেশ উইমেন’স এসোসিয়েশন। বাঙালী নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে মাসুম আহমেদের সম্পাদনায় বাফা ঐকতান নামে একটি স্মরণিকা প্রকাশ করা হয়। ফরিদা ইয়াসমিন নতুন প্রজন্মের সন্তানদের বাংলা সংস্কৃতির কাছাকাছি রাখার আহ্বান জানান। তিনি এ আয়োজনে যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

Facebook Comments Box

Comments

comments

Posted ১২:৪৮ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০৬ মে ২০১৭

America News Agency (ANA) |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

 

President/Editor-in-chief :

Sayeed-Ur-Rabb

 

Corporate Headquarter :

 44-70 21st.# 3O1, LIC. New York-11101. USA, Phone : +6463215067.

Dhaka Office :

70/B, Green Road, 1st Floor, Panthapath, Dhaka-1205, Phone : + 88-02-9665090.

E-mail : americanewsagency@gmail.com

Copyright © 2019-2024Inc. America News Agency (ANA), All rights reserved.ESTD-1997