
এনা : | বৃহস্পতিবার, ২০ জুন ২০২৪ | প্রিন্ট | 12729 বার পঠিত
ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য, যথাযোগ্য মর্যাদা ও ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ১৬ জুন রোববার যুক্তরাষ্ট্রে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়েছে। ঈদ উদযাপনের জন্য নিউইয়র্কসহ বিভিন্ন স্টেটে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়। ঈদ জামাতের জন্য এবার এক দিনের ইন্স্যুরেন্স নিতে হয়েছে। ঈদ জামাতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ ও সিটির পক্ষ থেকে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার জামাতের অনুমতি দেওয়া হয় সতর্কতার সঙ্গে। ফিলিস্তিনের সমর্থনে যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সেই বিষয়টিও সতর্কতার সঙ্গে দেখা হয়। মসজিদে ও খোলা ময়দানে ঈদ জামাতে যারা আসেন, তাদের নিরাপত্তা বিধানের লক্ষ্যে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। মসজিদ পরিচালনা কমিটিগুলোও এ ব্যাপারে সতর্ক ছিল। আয়োজকেরা শান্তিপূর্ণভাবে নিরাপদে সবার জন্য ঈদ জামাতের ব্যবস্থা করেন। ঈদের দিন আবহাওয়া ভালো থাকায় শান্তিপূর্ণভাবে ঈদ উদযাপিত হয়েছে।
নিউইয়র্কের বিভিন্ন মসজিদের পক্ষ থেকে ঈদ জামাতের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়। তবে যেসব স্থানে মসজিদের বাইরে নামাজের ব্যবস্থা করা হয়, সেখানে বৃষ্টি হলে মসজিদের ভেতরে ঈদের নামাজের ব্যবস্থা রাখা হয়। যদিও বৃষ্টি না হওয়ায় এর প্রয়োজন হয়নি। ঈদের আগের দিন রাতে জ্যামাইকার হিলসাইড, জ্যাকসন হাইটসসহ বিভিন্ন এলাকায় বাংলাদেশিরা দলে দলে সেখানে আসেন। ফুটপাতগুলোতে দোকান বসে। বেচাকেনা হয় বিভিন্ন পণ্য। মেহেদি লাগান অনেকেই। অন্যান্য বার জ্যামাইকায় কনসার্টের আয়োজন করা হলেও এবার তা সম্ভব হয়নি। তবে আতশবাজি ফোটানো হয়। রাত ১২টার পর থেকে মানুষ আস্তে আস্তে নিজ নিজ বাসায় ফিরতে থাকেন।
ঈদের আগের রাতে গ্রোসারিগুলোতে ছিল প্রচণ্ড ভিড়। শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন নিউইয়র্কাররা। অনেকে শেষ সময়েও গ্রোসারিতে কোরবানির অর্ডার দেন। অর্ডার আগেভাগে দিলেও দাম নির্ধারণ করা হয় ঈদের দিনে। ৫০০-৬০০ ডলার পর্যন্ত একেক ভাগের দাম পড়েছে। গ্রোসারি মালিকরা বলেছেন, গত বছরের তুলনায় মাংসের দাম কিছুটা বাড়ে। এবার প্রবাসীরা
ঈদ করার জন্য পরিবার নিয়ে দেশে যেতে পারেননি। কারণ স্কুল খোলা। ফলে সামারের ছুটিতে অনেকেই দেশে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন।
নিউইয়র্কে বিভিন্ন মসজিদের পরিচালনা পরিষদের পক্ষ থেকে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। নামাজ শেষে মুসলমানরা একে অপরের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। বিভিন্ন ঈদের জামাতে নিউইয়র্কের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত হয়ে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। জ্যামাইকা, জ্যাকসন হাইটস, কুইন্স ভিলেজ, হলিস, সাউথ জ্যামাইকা, ওজন পার্ক, রিচমন্ড হিল, পারসন্স, উডসাইড, এস্টোরিয়া, ব্রঙ্কস, ব্রুকলিন, ম্যানহাটনের বিভিন্ন মসজিদ এবং নিউইয়র্ক স্টেটের বিভিন্ন এলাকায় যেখানে মুসলিম কমিউনিটি ও মসজিদ আছে, সেখানে ঈদের জামাতের ব্যবস্থা করা হয়। নিউইয়র্ক ছাড়াও ওয়াশিংটন ডিসি, লস অ্যাঞ্জেলেস, ফ্লোরিডা, মিশিগান, নিউজার্সি, কানেক্টিকাটসহ মুসলিম অধ্যুষিত স্টেট ও সিটিসমূহে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টার : প্রতি বছরের মতো এ বছরও নিউইয়র্কে পবিত্র ঈদুল আজহার সবচেয়ে বড় জামাত অনুষ্ঠিত হয় জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের (জেএমসি) আয়োজনে আয়োজিত স্থানীয় থমাস এডিসন হাইস্কুলের প্লে গ্রাউন্ডে। গত ১৬ জুন রোববার সকাল পৌণে ৯টায় বিপুলসংখ্যক মুসল্লি ঈদের জামাতে অংশ নেন।
ঈদের নামাজ আদায়ের আগে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মো. নাজমুল হুদা, ঠিকানার সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি ও সাবেক এমপি এম এম শাহীন, নিউইয়র্ক সিটি কম্পট্রোলার ব্র্যাড ল্যান্ডার, স্টেট অ্যাসেম্বলি মেম্বার জোহরান মামদানি, নয়া দিল্লীর বাংলাদেশ হাইকমিশনের মিনিস্টার (প্রেস) সাংবাদিক শাবান মাহমুদ, জেএমসি’র ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ডা. নাজমুল খান, পরিচালনা কমিটির সভাপতি ডা. মোহাম্মদ রহমান, নিউইয়র্ক সিটির আসন্ন নির্বাচনে কুইন্সের সিভিল কোর্ট জাজ পদপ্রার্থী অমিস আর ডোসি প্রমুখ। এই পর্ব পরিচালনা করেন সেক্রেটারি আফতাব মান্নান।
জেএমসি’র ঈদের জামাতে ইমামতি করেন মওলানা মির্জা আবু জাফর বেগ। খুতবা পাঠ করেন ইমাম শামসে আলী। খুতবা শেষে তিনি মোনাজাত করেন। এছাড়া ঈদের জামাত শেষে বিশেষ মোনাজাত করেন মওলানা মির্জা আবু জাফর বেগ। মোনাজাতে মুসলিম উম্মার ঐক্য, সৌহার্দ্য-সমৃদ্ধি ছাড়াও ফিলিস্তিনীদের ওপর ইসরাইলের নিপীড়ন-নির্যাতন এবং যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানানো হয়।
এস্টোরিয়ার আল আমিন জামে মসজিদে ঈদের একটি জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল আটটায়। এস্টোরিয়ার ৩৬ স্ট্রিটে (৩৬ ও ৩৭ এভিনিউর মাঝে) জামাত হয়। মহিলাদের জন্যও নামাজের ব্যবস্থা করা হয়। নামাজে ইমামতি করেন মসজিদের ইমাম ও খতিব হাফেজ মাওলানা লুৎফুর রহমান চৌধুরী। এই আয়োজনে সার্বিক দায়িত্ব পালন করেন মসজিদ কমিটির নেতৃবৃন্দ। বিপুলসংখ্যক মুসল্লি এই জামাতে অংশ নেন।
আল আরাফা ইসলামিক সেন্টারের উদ্যোগে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। পরিচালনা পরিষদের সেক্রেটারি খন্দকার তরিকুল ইসলাম জানান, ৮৮-৪৯ ১৭৯ প্লেসে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম জামাত হয় সকাল সাড়ে ছয়টায়। দ্বিতীয় জামাত সকাল আটটায় এবং তৃতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল নয়টায়। বিপুলসংখ্যক মানুষ সেখানে ঈদ জামাতে অংশ নেন।
জ্যাকসন হাইটসের ডাইভারসিটি প্লাজায় নিউইয়র্ক ঈদগাহর উদ্যোগে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় পাঁচটি। সকাল ছয়টা থেকে জামাত শুরু হয়। এরপর প্রতি এক ঘণ্টা পরপর ঈদের জামাত হয়। জ্যাকসন হাইটসের মোহাম্মদী সেন্টারের উদ্যোগে ঈদের পরদিন স্বল্প আয়ের মানুষের মধ্যে এবং যারা কোরবানি দিতে পারেননি তাদের মধ্যে কোরবানির মাংস বিতরণ করা হয়। এ বিষয়ে মাওলানা কাজী কাইয়ূম বলেন, অনেকেই কোরবানি দিতে পারেন না। তাই দূরদূরান্ত থেকে মাংস নেওয়ার জন্য মানুষ আসেন। তারা খুশিমনে মাংস নিয়ে যান।
আল কুবা ইসলামিক সেন্টার অব জ্যামাইকার উদ্যোগে সাউথ জ্যামাইকার পিএস ৫০ স্কুলের মাঠে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয় সকাল আটটায়। মসজিদের পরিচালনা পরিষদের সঙ্গে সম্পৃক্ত মোহাম্মদ আলী বলেন, প্রায় দুই হাজার মানুষ ঈদের জামাতে শরিক হন। এলাকার অনেক মানুষ এসেছেন। পাশাপাশি এলাকার বাইরে থেকেও অনেকেই জামাতে অংশ নেন।
জ্যামাইকার দারুস সালাম মসজিদে ৪টি ঈদের জামাতের আয়োজন করা হয়। ১ম জামাতে ইমামতি করেন মাওলানা আবদুল মুকিত, ২য় জামাতে হাফেজ আশরাফ আহমেদ, ৩য় জামাতে মাওলানা মোহাম্মদ আলী এবং ৪র্থ জামাতে ইমামতি করেন হাফেজ মাওলানা মুইনুল ইসলাম।
ইস্ট এলমহার্স্ট জামে মসজিদ অ্যান্ড মুসলিম সেন্টারের উদ্যোগে সকাল সাড়ে আটটায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
জ্যামাইকার আমেরিকান মুসলিম সেন্টারের উদ্যোগে একাধিক ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। জ্যামাইকার মসজিদ মিশনের উদ্যোগেও একাধিক জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
ওজনপার্কে আল ফুরকান মসজিদে খোলা আকাশের নিচে মসজিদের সামনে ৭৬ অ্যান্ড গ্লেনমোর অ্যাভিনিউতে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয় সকাল আটটায় একটি আর সকাল নয়টায় দ্বিতীয়টি। ওজনপার্কের বড় জামাত অনুষ্ঠিত হয় আল আমান মসজিদে। সেখানেও বিপুলসংখ্যক মানুষ জামাতে অংশ নেন। এ ছাড়া ওজনপার্কের ফুলতলী জামে মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
ব্রুকলিনে বায়তুল জান্না জামে মসজিদ অ্যান্ড মুসলিম কমিউনিটি সেন্টারের উদ্যোগে ব্রুকলিনের ৫৬৯ ম্যাকডোনাল্ড অ্যাভিনিউতে খোলা রাস্তায় ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।
জ্যামাইকায় ইকনা মসজিদের উদ্যোগে ঈদের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল সাড়ে সাতটায় আর দ্বিতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল সাড়ে আটটায়। সেখানেও বিপুল সংখ্যক মানুষ নামাজে অংশ নেন।
বায়তুল ইসলাম মসজিদ অ্যান্ড কমিউনিটি সেন্টারের উদ্যোগে ব্রঙ্কসে ঈদের জামাত শুরু হয় সকাল সাড়ে আটটায়।
ব্রঙ্কসে বাংলাবাজার জামে মসজিদের উদ্যোগে খোলা আকাশের নিচে ঈদের বিশাল জামাত অনুষ্ঠিত হয়। রিয়াজুল জান্নাহ ইসলামিক সেন্টার ইনকের উদ্যোগে জ্যামাইকায় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
নর্থ ব্রঙ্কস ইসলামিক সেন্টার অ্যান্ড জামে মসজিদের উদ্যোগে মসজিদের নিকটবর্তী ওভাল পার্কের খোলা মাঠে ঈদুল আজহার বিশাল ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। সকাল সাড়ে আটটায় অনুষ্ঠিত এই ঈদ জামাতে বিপুলসংখ্যক মুসল্লি অংশ নেন।
ক্যাসেলহিল আইডিয়াল ইসলামিক সেন্টারের উদ্যোগে ব্রঙ্কসের ২১০০-২১৪৬ টার্নবুল অ্যাভিনিউতে (প্লে গ্রাউন্ড) সকাল আটটায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
এ ছাড়া জ্যাকসন হাইটসে আল নূর ইসলামিক সেন্টার, আল নূর ইসলামিক সেন্টার শরিয়া বোর্ড নিউইয়র্ক, নর্থ ব্রঙ্কস ইসলামিক সেন্টার, পার্কচেস্টার জামে মসজিদ, বাংলা বাজার জামে মসজিদ, বাংলাদেশ মুসলিম সেন্টার, মোহাম্মদী সেন্টার, দারুল উলমের উদ্যোগে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
Posted ৯:১৩ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২০ জুন ২০২৪
America News Agency (ANA) | ANA