
এনা অনলাইন : | সোমবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৩ | প্রিন্ট | 12782 বার পঠিত
নিউইয়র্কের বাজারে বাড়ির সংকট চলছে। এ কারণে কোয়ালিফাইং বায়াররা চাইলেও বাসাবাড়ি কিনতে পারছেন না। সাধ ও সাধ্যের মধ্যে বাসাবাড়ি মিলছে না। কিছুদিন মানুষ আস্কিং প্রাইসে বাসাবাড়ি না কিনে এর চেয়ে কিছু কমে কিনতে পারলেও এখন অবস্থার আবার পরিবর্তন হচ্ছে। আস্কিং প্রাইস কিংবা এর বেশি দামে বাসাবাড়ি কিনছেন। আর পছন্দ অনুযায়ী কেউ বাড়ি কিনতে না পেরে মন খারাপ করছেন। এমনও আছে, একজন ক্রেতা বাড়ি কেনার জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করতে যাবেন, এমন সময় তাকে ফোন করে জানানো হয়, তার চুক্তি করতে যাওয়ার দরকার নেই। এতে তিনি খুব মন খারাপ করেন। ওই বাড়ির দাম ছিল ৭ লাখ ৯০ হাজার ডলার। তিনি কিনতে চেয়েছিলেন ৭ লাখ ৬০ হাজার ডলার দিয়ে। এরই মধ্যে একজন ওই বাড়ি আস্কিং প্রাইসে কেনার জন্য অফার দেন। বাড়ির মালিক সেটি গ্রহণ করেন এবং সেই অফারেই বাড়ি বিক্রির চুক্তি করেন।
মর্টগেজ বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ ফাহিম জান বলেন, আমার এক ক্লায়েন্টের সঙ্গেই এই অবস্থা হয়েছে। তিনি ৭ লাখ ৯০ হাজার ডলারের একটি বাড়ি দরাদরি করে ৭ লাখ ৬০ হাজার ডলারে কেনার জন্য কথাবার্তা চূড়ান্ত করেন। সবকিছু ঠিকঠাক। চুক্তি হবে কিন্তু বিক্রেতা জানান, তিনি তার সঙ্গে চুক্তি করবেন না। তিনি আস্কিং প্রাইসেই বিক্রি করবেন। এতে আমার ওই ক্লায়েন্ট খুব কষ্ট পান।
তিনি বলেন, সিটিতে এখন তুলনামূলক বাড়ির সংখ্যা কম। কাঙ্খিত ইনভেন্টরি নেই। এ কারণে ক্রেতারা আস্কিং প্রাইস কিংবা এর বেশি দামে বিক্রি করছেন। আগামীতে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। কারণ চাহিদা অনুযায়ী বাজারে বাড়ি আসছে না।
ইন্টারেস্ট রেট অনেক বেশি। এখন ৭.২৫-৭.৫০। কেউ চাইলে এক থেকে দুই পয়েন্ট কিনতে পারেন। পয়েন্ট কেনার জন্য লোন অ্যামাউন্টের ১ শতাংশ অর্থ দিতে হয়। লোনের ইন্টারেস্ট রেট কমানোর জন্য পয়েন্ট কেনা যেতে পারে। তবে এখানে বলে রাখা প্রয়োজন, লোনের ইন্টারেস্ট কমার কোনো লক্ষণ নেই। বরং আরও বাড়তে পারে। তবে আগামী এক-দুই বছরের মধ্যে এটি ৪ শতাংশে কিংবা ৫ শতাংশে আসবে, এমন কথা বলা যাচ্ছে না। কিছুটা কমবে আবার বাড়বে।
ফাহিম জান বলেন, বাজারে বাড়ি বিক্রি আগের চেয়ে কমেছে। কারণ ক্রেতা তার বাজেটের মধ্যে পছন্দসই বাড়ি পাচ্ছেন না। কারণ লোনের ইন্টারেস্ট অনেক বেশি। এ কারণে অনেকের ভালো ইনকাম থাকার পরও আগে তিনি কম ইন্টারেস্টের কারণে যে পরিমাণ অর্থ ঋণ পেতেন, এখন সেটি পাচ্ছেন না। তার লোন পাওয়ার যোগ্যতায় অর্থের পরিমাণ কমেছে। ফলে তিনি চাইলেও আগের ইনকাম দিয়ে কম মর্টগেজ পেমেন্ট দিয়ে বাসা বাড়ি পাচ্ছেন না। আগে তিনি যে পরিমাণ মর্টগেজ দিতেন এখন বাড়ি কিনলে দিতে হবে প্রায় এর দ্বিগুণ। তার ওপর ৩০ বছরের লোন। সবার ইনকাম সব সময় একই রকম থাকে না। ফলে বেশি ইন্টারেস্টে বাড়ি নিয়ে সেভাবে বাড়ি ভাড়া দিয়ে বেশি অর্থ ওঠাতে না পারলে এবং মর্টগেজের অর্থ নিয়মিত পরিশোধ করতে না পারলে তখন ব্যাংক বাড়ি নিয়ে যাবে। বাড়ি ফোর ক্লোজারে দেবে। তখন তিনি বিপদে পড়বেন। মনে রাখতে হবে, বাড়ির দাম বাড়লে যে ব্যাংক থেকে তিনি লোন নিয়েছেন ওই লোন নেওয়ার সময় তার বাড়ির যে অ্যাপ্রাইজাল করা হয়েছে বা হবে, সে অনুযায়ী তিনি তার অর্থ পাবেন। এখানে অ্যাপ্রাইজাল ভেল্যুর চেয়ে বেশি দামে বাড়ি কিনলেও ব্যাংক বাড়ি নিয়ে নিলে তখন ওই দামের ওপর তিনি দাম পাবেন। বাড়ির দাম বাড়লেও বাড়ির মালিকের লাভ হবে না। লাভ হবে ব্যাংকের। তাই এই সময়ে অনেকেই মনে করেন, তারা কি বাড়ি কিনবেন না? আমি বলব, অবশ্যই বাড়ি কিনবেন। কারণ ক্রেতা যখন বাড়ি কেনার জন্য উপযুক্ত, তখন তিনি বাড়ি কিনবেন। এখন বেশি ইন্টারেস্টে বাড়ি কিনলেও পরে যখন লোনের ইন্টারেস্ট কমবে, তখন তিনি রিফাইন্যান্স করতে পারবেন।
তিনি বলেন, বাড়ির বেলায় দাম বেশি হলেও কন্ডোর দামও বেশি। কোঅপের দাম একটু কম। কিন্তু কোঅপে দাম কম হলেও অনেক ঝামেলা। বিশেষ করে, অনেক নথিপত্র জোগাড় করতে হয়। তাই কোঅপের চেয়ে বাড়ি কেনা অনেক সহজ। এখানে লোনের ব্যাপারটি মুখ্য। কোঅপের বেলায় বিক্রি করার সময়ও অনেক ঝামেলা আছে। সেখানে কেনাবেচা যা-ই করবেন, সবকিছু বোর্ডের অনুমতি নিয়ে করতে হবে। এ ছাড়া বাসা ও বাড়ি অ্যাপ্রাইজাল প্রাইসের চেয়ে বেশি দামে কিনলেও কোঅপ অ্যাপ্রাইজাল প্রাইসের চেয়ে বেশি দামে না কেনাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। কারণ কোআপের দাম তেমন বাড়ে না। এ কারণে আমার সাজেশন হচ্ছে, কেউ যদি মনে করেন তিনি কোঅপ কিনবেন, তাহলে তিনি অ্যাপ্রাইজাল প্রাইসেই যেন কেনেন। বেশি দামে কিনতে যাবেন না। কারণ এটির দাম তেমন বাড়ে না। আবার কোনো কারণে লোনের অর্থ শোধ করতে না পারলে ব্যাংক সেটি নিয়ে নিলে তারা কেবল ওই অ্যাপ্রাইজাল প্রাইসের দাম ধরেই ক্রেতার মালিকানা ধরবে এবং অর্থ পরিশোধ করবে। সুতরাং এটি কেনার আগে অন্তত কয়েকবার ভাবতে হবে। আমরা সাজেস্ট করি বাড়ি কেনার জন্য। নিউইয়র্কে বাড়ির দাম বাড়ে। অনেক বেশি কমেছে এমন নজির সেভাবে দেখি না।
তিনি বলেন, লোনের ইন্টারেস্ট এখন যা আছে তার চেয়ে আগামী দিনে বেশি কমবে বলে মনে হচ্ছে না। তাই যারা বাসাবাড়ি কেনার চিন্তাভাবনা করছেন, তারা এখনই কিনতে পারেন।
Posted ১১:২০ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৩
America News Agency (ANA) | ANA