বর্ণাঢ্য আয়োজনে নিউইয়র্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তি উদযাপন করা হয়েছে। ২৬ নভেম্বর শনিবার নিউইয়র্কে ডিটমার্স বুলেভার্ডের অভিজাত লাগোয়ার্ডিয়া প্লাজা হোটেলে এই উদযাপনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী এবং বাংলাদেশি কমিউনিটির বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
অনুষ্ঠানস্থলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যান্ডমার্ক খ্যাত অপরাজেয় বাংলা, মধুর ক্যান্টিন, লাইব্রেরিসহ বেশকিছু স্থাপনার আদলে বড় বড় ছবি স্থান পেয়েছিল। এসব ছবির সামনে দাঁড়িয়ে অনেকেই ছবি তোলেন এবং স্মৃতি রোমন্থন করেন। অনুষ্ঠানে একে সঙ্গে অন্যের দেখা হয় অনেকদিন পর। আর তখনি প্রত্যেকে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। মেতে ওঠে খোশগল্পে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। বিশেষ অতিথি জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আব্দুল মোহিত, নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল ড. মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম, হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষক অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ শিবলী, ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি আনোয়ারুল আলম পারভেজ চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোল্লা আবু কাওসার।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান উল্লেখ করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা শুধু বাংলাদেশকেই আলোকিত করেনি, প্রবাসের মাটিতেও দেশকে উজ্জ্বল করেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক সংস্কারের কথা ব্যক্ত করে উপাচার্য বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে আর্ন্জাতিক মানে উন্নীত করতে টিচিং ইউনিভার্সিটি থেকে গবেষণাভিত্তিক করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এখন ছাত্র-ছাত্রীদের যে বৃত্তি দিচ্ছে তা এখন বিদেশি যে কোনো বৃত্তির চেয়ে আকর্ষণীয়।
অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য দেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ অরলিন্স ইউনিভার্সিটির এমেরিটাস অধ্যাপক ও সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর ড. মোস্তফা সারওয়ার। অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন যুক্তরাষ্ট্রে সুপ্রিম কোর্টের প্রথম বাংলাদেশি-আমেরিকান অ্যাটর্নি ও ডেমোক্রেটিক পার্টির কুইন্স ডিস্ট্রিক্ট লিডার অ্যাড লার্জ মঈন চৌধুরী।
আরও বক্তব্য দেন যুক্তরাষ্ট্রে ইমিগ্রেশন বিষয়ক অভিজ্ঞ অ্যাটর্নি অশোক কর্মকার, যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে এঅ্যান্ডএম ইউনিভার্সিটির বায়ো মেডিকেল সায়েন্টিস্ট ড. নাসের, আয়োজনের প্রধান সমন্বয়কারী মোল্লা মনিরুজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের যুক্তরাষ্ট্র শাখার সভাপতি সাঈদা আকতার লিলি।
পুরো আয়োজনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ড. চৌধুরী সারোয়ারুল হাসান। অনুষ্ঠানের প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন সৈয়দ টিপু সুলতান। এছাড়া পৃষ্ঠপোষক হিসাবে আরও ছিলেন খলিল ফুড ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও জনপ্রিয় শেফ মো. খলিলুর রহমান এবং রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টর মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন।
প্রাণের সঙ্গে প্রাণ মিশিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি দায়বদ্ধতা মেটানোর সংকল্প ব্যক্ত করার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানমালা শেষ হয়। হোস্ট কমিটির সদস্য সচিব গাজী শামসউদ্দিন, কো-কনভেনর মো. তাজুল ইসলাম, যুগ্ম সম্পাদক গোলাম মোস্তফা, এম এস আলম, বিশ্বজিৎ চৌধুরী অনুষ্ঠান সফল করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন।
কালচারাল প্রোগ্রামের বিভিন্ন পর্বে পারফর্ম করেছেন রথীন্দ্রনাথ রায়, ফেরদৌস আরা, চন্দন চৌধুরী, শশী এবং তামি জাকারিয়া। দলগত পারফর্ম করেছেন বিপা, চন্দ্র ব্যানার্জি ডান্স গ্রুপ এবং আড্ডা ডান্স একাডেমি। প্রামাণ্যচিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরা হয় ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক সব ভূমিকা।
অংশগ্রহণকারী অ্যালামনাইরা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের আবেগ, অনুভূতি ও ভালোবাসার জায়গা। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০০ বছর উদযাপনের অংশ হওয়া, বিশেষ করে বিদেশের মাটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে উপস্থাপন করার এই আনন্দ সত্যিই অন্যরকম। যারা এই আয়োজন করেছেন, তাদের জন্য অফুরন্ত ভালোবাসা।
অনুষ্ঠানের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানকে ফুলের তোড়া উপহার দিয়ে বরণ করে নেন তার একাডেমিক বিভাগ অর্থাৎ ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থীরা। এসময় উপস্থিত ছিলেন ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী, ফৌজিয়া করিম, রোকেয়া সাখাওয়াত মুন্নি, মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, ইউসুফ হোসেন, শবনম শেহনাজ দীপাসহ আরও অনেকে।
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত নিজ বিভাগের শিক্ষার্থীদের কাছে পেয়ে দারুণ খুশি হন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। তার প্রিয় ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন এবং প্রবাসে তাদের সমৃদ্ধি কামনা করেন।
অ্যাথলেটিকসে একসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অনেক গৌরব বয়ে এনেছেন বাংলাদেশের জাতীয় ক্রীড়াবিদ, লেখক ও সাংবাদিক সাঈদ-উর-রব। অনুষ্ঠানে তাঁর হাতে সম্মাননা তুলে দেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।
নিউইয়র্কে বাংলাদেশি কমিউনিটির জনপ্রিয় শেফ মো. খলিলুর রহমান। রেস্টুরেন্ট ব্যবসাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই শিক্ষার্থী। এছাড়া দেশে-বিদেশে নানা মানবিক কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন তিনি। শতবর্ষ পূর্তি উদযাপনের এই অনুষ্ঠানে তাকে সার্টিফিকেট অব অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড তুলে দেওয়া হয়।
সাংস্কৃতিক পর্ব : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের দৃষ্টি কেড়েছে ঢাবির সাংস্কৃতিক পর্ব। এতে সঙ্গীত পরিবেশন করেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় শিল্পী ফেরদৌস আরা, তামি জাকারিয়া, চন্দন চৌধুরী ও শশী।
পুর্ণেন্দু পত্রীর বিখ্যাত কথপোকথন কবিতা আবৃত্তি করে শোনান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী খাইরুল ইসলাম পাখি ও শুক্লা রায়।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ভালোবাসি ভালোবাসি’ গানের সঙ্গে অভিনয় করেন বিশিষ্ট অভিনেত্রী শিরিন বকুল। এছাড়া সাংস্কৃতিক পর্বে দলগত পারফর্ম করেছেন বিপা, চন্দ্র ব্যানার্জি ডান্স গ্রুপ এবং আড্ডা ডান্স একাডেমি।
অনুষ্ঠানে আগত প্রত্যেক অ্যালামনাইকে তাদের পরিচয় দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। এছাড়া অডিটরিয়ামে উপস্থিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে প্রবীণ এবং সবচেয়ে নবীন শিক্ষার্থী তাদের অনুভূতি তুলে ধরার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের স্মৃতিচারণ করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তি উদযাপনের শুরু এবং শেষটা ছিল চমকপ্রদ। অনুষ্ঠান শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী তামি জাকারিয়ার কণ্ঠে ‘ও আমার দেশের মাটি’ গানের মাধ্যমে। অনুষ্ঠান শেষ হয় বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী ফেরদৌস আরার গান দিয়ে।
এর আগে ২৬ নভেম্বর শুক্রবার আমন্ত্রিত অতিথিদের নিয়ে একই স্থানে নৈশভোজ অনুষ্ঠিত হয়।
Posted ১১:০৩ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৯ নভেম্বর ২০২২
America News Agency (ANA) | ANA