মঙ্গলবার ১৫ জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩১ আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আমেরিকায় মধ্যবিত্তের নাভিশ্বাস

এনা অনলাইন :   |   মঙ্গলবার, ০১ নভেম্বর ২০২২   |   প্রিন্ট   |   12773 বার পঠিত

আমেরিকায় মধ্যবিত্তের নাভিশ্বাস

৮ নভেম্বর মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ নির্বাচন। এটি মধ্যবর্তী নির্বাচন হিসাবে পরিচিত। ক্ষমতার ভারসাম্যের গুরুত্বপূর্ণ এ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান পার্টির সিনেট, হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভ, স্টেট গভর্নর, স্টেট সিনেট ও অ্যাসেম্বলি সদস্য পদের প্রার্থীরা জোরেশোরে প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন। ডেমোক্রেটরা কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পারবে কী না তা নির্ধারিত হবে এ নির্বাচনের মধ্য দিয়েই। একইসঙ্গে ঠিক হবে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আগামী দুই বছরের ভবিষ্যৎ।

করোনা মহামারী ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে নিত্যপণ্যের উর্ধ্বগতি, মূদ্রাস্ফীতি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে আমেরিকায় মধ্যবিত্তের নাভিশ্বাস উঠেছে। এ কারণে এই নির্বাচনে জনরায় কোন দিকে যাবে তা বলা কঠিন। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে সমতা রয়েছে দুই দলের। একটি আসন হারালেই কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ হারাবে ডেমোক্রেটরা। ফলে আগামী দুই বছর বাইডেনের জন্য হবে অত্যন্ত খারাপ সময়। তাকে হতে হবে বহুমুখী চ্যালেঞ্জের।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন চার বছরের জন্য। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দুই বছর পর যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় সেটাই মধ্যবর্তী নির্বাচন। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান ও সংসদীয় ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ অংশ এই মধ্যবর্তী নির্বাচন। ক্ষমতা ধরে রাখার পাশাপাশি জনপ্রিয়তা যাচাইয়েরও অন্যতম মাধ্যম এটি।

২০২০ সালের নির্বাচনে সাবেক রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারিয়ে ক্ষমতায় আসেন ডেমোক্রেট নেতা জো বাইডেন। তার দায়িত্ব নেয়ার দুই বছর পর আগামী ৮ নভেম্বর মধ্যবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ওই দিন জনগণ আরও একবার ভোট দেবেন।

যুক্তরাষ্ট্র সরকারে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেন ৫৩৫ জন আইনপ্রণেতা, যারা কংগ্রেস সদস্য হিসেবে পরিচিত। মার্কিন কংগ্রেস তথা পার্লামেন্টের দুটি কক্ষ। উচ্চকক্ষ সিনেট ও নিম্নকক্ষ হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভস (প্রতিনিধি পরিষদ)। আইন তৈরির জন্য কংগ্রেসের এই দুটি কক্ষ আলাদাভাবে কাজ করে।

সিনেটের সদস্য সংখ্যা ১০০ জন। আকার যেমনই হোক, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি রাজ্য দুজন করে সিনেট সদস্য নির্বাচিত করে, যারা সিনেটর হিসেবে পরিচিত এবং নির্বাচিত হন ছয় বছরের জন্য। প্রতি দু’বছর পরপর সিনেটের এক-তৃতীয়াংশ আসনে নির্বাচন হয়। অর্থাৎ এবারের মধ্যবর্তী নির্বাচনে ১০০টি আসনের মধ্যে ৩৫টিতে নির্বাচন হবে।

হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভস বা প্রতিনিধি পরিষদে সদস্য ৪৩৫ জন। প্রত্যেক সদস্য তাদের রাজ্যের একটি নির্দিষ্ট জেলার প্রতিনিধিত্ব করেন। তাদের এমপিও বলা হয়। তারা দু’বছর মেয়াদের জন্য নির্বাচিত হন। কাজেই দু’বছর পর পর হাউসের সবগুলো আসনের জন্যই নির্বাচন হয়।

সিনেট ও হাউজের পাশাপাশি গভর্নর, সারাদেশে রাজ্যের আইনপ্রণেতা, স্থানীয় কাউন্সিল ও স্কুল বোর্ডগুলোর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

অতীত ইতিহাস বলছে, সাধারণত যে দল হোয়াইট হাউজে থাকে, তারা মধ্যবর্তী নির্বাচনে খারাপ ফল করে। কাজেই রিপাবলিকানরা তাদের আসন সংখ্যা বাড়াতে পারে-এমন ইঙ্গিত আছে। তাছাড়া এই মুহূর্তে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের জনপ্রিয়তাও কম। তার প্রতি সমর্থন গত আগস্ট মাস থেকেই ৫০ শতাংশের নিচে আটকে আছে। ফলে ডেমোক্রেট প্রার্থীদের সমর্থনে ভাটা পড়তে পারে।

এ নির্বাচন ঘিরে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের হোয়াইট হাউজ খুব একটা আশাবাদী হতে পারছে না। ডেমোক্রেট শিবিরে পরাজয়ের ভয়-আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে জোর প্রচারণা চালালেও নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে তেমন আশা দেখছে না বাইডেন শিবির। ডেমোক্রেটদের উদ্বেগ, মধ্যবর্তী নির্বাচনে কংগ্রেস তথা পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের নিয়ন্ত্রণ হারাতে পারেন তারা।

অন্তত সাম্প্রতিক জনমত জরিপ সে কথাই বলছে। কিছুদিন আগেও যেসব ডেমোক্রেট জরিপে সন্তোষজনকভাবে এগিয়ে ছিলেন, তারাই বর্তমানে তলানিতে। সিনেট নির্বাচনে উভয় দলের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলেই মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু ভোটের পাল্লা এ মুহূর্তে রিপাবলিকানদের দিকেই।

সিনেটের যেসব আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, সেগুলোতে কয়েক মাস আগেকার জনমত জরিপেও ডেমোক্রেটদের ভালো ব্যবধানেই এগিয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছিল। কিন্তু উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে অতিষ্ঠ ভোটারদের বড় অংশ রিপাবলিকানদের দিকে হেলে পড়ায় এখনকার জরিপগুলো গণেশ উল্টে দেওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিডিয়া।

কংগ্রেসের কোনো একটি কিংবা উভয় কক্ষের নিয়ন্ত্রণ হাতছাড়া হওয়ার মানে হচ্ছে বাইডেনকে তার মেয়াদের শেষ দুই বছর ব্যাপক চাপে থাকতে হবে। তখন রিপাবলিকানরা পারিবারিক ছুটি, গর্ভপাত, পুলিশে সংস্কারসহ যেসব ইস্যুতে বাইডেন অগ্রাধিকারভিত্তিতে আইন প্রণয়ন করতে চান সেগুলো আটকে দিতে পারবে; পাশাপাশি তারা অভিবাসন ও ব্যয় কমানোর মতো আইন প্রণয়নে চাপ বাড়াতে পারবে।

রিপাবলিকানরা কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠলে তারা ডেমোক্রেট প্রশাসনের বিভিন্ন খাতে ব্যয় এবং প্রেসিডেন্টের ছেলে হান্টারের ব্যবসায়িক লেনদেন ও ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে তদন্তে নামবে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। রিপাবলিকান অনেক আইনপ্রণেতা বাইডেন, তার মন্ত্রিসভার সদস্য এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে অভিশংসিত করার আশায়ও বসে আছেন।

হোয়াইট হাউজের ভেতর এখন মধ্যবর্তী নির্বাচন নিয়ে যে যে হিসাবনিকাশ চলছে, সে সম্বন্ধে জ্ঞাত এক ব্যক্তি রয়টার্সকে বলেছেন, বাইডেন প্রশাসন এখনও সেনেট ডেমোক্র্যাটদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে, তার ৫০-৫০ সম্ভাবনা দেখছে।

মে মাসে বাইডেন ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, তার দলের প্রার্থীরাই কংগ্রেসের উভয় কক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেটে ভালো করবেন। কিন্তু লড়াই যে আসলে তার ধারণার চেয়েও বেশি হাড্ডাহাড্ডি হতে যাচ্ছে, তা গত সপ্তাহে তিনি স্বীকারও করে নিয়েছেন।

‘রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রণ কেমন হবে, সে বিষয়ে হোয়াইট হাউজের সুস্পষ্ট ধারণা আছে। হাতুড়ি হাতে পেলে তারা যে কী করবে সেটা মোটেও রহস্যপূর্ণ নয়,’ বলেছেন হোয়াইট হাউজের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সংযোগ থাকা ডেমোক্র্যাট কৌশলবিদ এরিক শুলজ।

যে কোনো তদন্ত মোকাবেলার জন্য হোয়াইট হাউজের খ্যাতনামা আইনজীবী রিচার্ড সৌবারকে নিয়োগ দিয়ে রেখেছে; আরও নিয়োগের বিষয়টি মধ্যবর্তী নির্বাচনের ফলের উপর নির্ভর করছে বলে জানিয়েছেন বিষয়টি সম্বন্ধে অবগত এক ব্যক্তি।

যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে উচ্চ মূল্যস্ফীতি ভোটারদের অনেকের কাছেই ডেমোক্রেটদের অবস্থান দুর্বল করেছে। ক্ষমতাসীনরা বিচারব্যবস্থা ও পুলিশে সংস্কারের যে কথা বলছে অনেক এলাকাতেই রিপাবলিকানরা একে অপরাধ দমনে ডেমোক্র্যাটদের নমনীয়তা হিসেবেও দেখাচ্ছে।

জুনে ও আগস্টে বেশকিছু নির্বাচনে ডেমোক্রেটদের ভালো ফলে মনে হচ্ছিল, ভোটাররা সম্ভবত গর্ভপাত বিরোধিতাসহ রিপাবলিকানদের অগ্রাধিকার তালিকায় থাকা বেশিরভাগ নীতিই প্রত্যাখ্যান করতে যাচ্ছে। কিন্তু ধারণার চেয়েও বেশি মূল্যস্ফীতি সেই ধারণা বদলে দিচ্ছে; সাম্প্রতিক প্রায় সব জরিপই বলছে, অন্য সবকিছুর চেয়েও মূল্যস্ফীতিটাই ভোটারদের বেশি ভাবাচ্ছে।

রিপাবলিকানদের দিকে দোদুল্যমান এই ভোটারদের হেলে পড়ার বিষয়টি হোয়াইট হাউজের কর্মকর্তা ও ডেমোক্রেট কৌশলবিদরা স্বীকারও করে নিয়েছেন, তবে তারা এখনি হাল ছাড়তে নারাজ।

সাধারণত, মধ্যবর্তী নির্বাচনে ভোটাররা ক্ষমতাসীনদের বিপক্ষেই থাকে, কিন্তু এবার অনেক রাজ্যে নারী ভোটারদের বেশি নিবন্ধন ডেমোক্রেট নেতৃত্বকে আশা দিচ্ছে।

‘কয়েকটি ব্যাটলগ্রাউন্ডে নারী ভোটারদের নিবন্ধনের উচ্চ হার দেখা যাচ্ছে। নতুন এই ভোটারদেরকে নভেম্বরের ভোটে বুথে নিয়ে আসাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, বলেছেন হোয়াইট হাউজের এক কর্মকর্তা।

গর্ভপাতের বিষয়টি এবারের মধ্যবর্তী নির্বাচনে ‘গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা’ পালন করবে বলে আশাবাদী হোয়াইট হাউজের আরেক কর্মকর্তাও। তবে মূল্যস্ফীতির পরিসংখ্যান এবং অপরাধ দমনে ডেমোক্রেটদের ‘অনীহা’ নিয়ে রিপাবলিকানদের প্রচার ডেমোক্রেট নেতৃত্বকে সত্যিকার অর্থেই দুশ্চিন্তায় ফেলেছে।

অপরাধজনিত সমস্যার সমাধানে ভোটাররা যে ডেমোক্র্যাটদের তুলনায় রিপাবলিকানদের বেশি পছন্দ করছেন, তা ইপসসের চলতি মাসের জরিপে উঠেও এসেছে।

ভোটারদের মন জয় করতে বাইডেন এখন ব্যাটলগ্রাউন্ড রাজ্যগুলোতে তার প্রচার সমাবেশ বাড়াচ্ছেন। শিক্ষা ঋণ মওকুফ করা, অর্থনীতি-অবকাঠামো ও গর্ভপাতের অধিকার নিয়ে তার ভিশনের কথা বারবার বলছেন।

এর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও কয়েকদিনের মধ্যেই ডেমোক্র্যাট প্রার্থীদের হয়ে প্রচারে নামতে যাচ্ছেন, জানিয়েছে দলীয় সূত্রগুলো।

সহিংসতার আশঙ্কা : যুক্তরাষ্ট্রের আগাম নির্বাচনের আর এক সপ্তাহ বাকী। এর আগেই দেশটির প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির স্বামীর ওপর হিংসাত্মক হামলার ঘটনা ঘটেছে গত ২৮ অক্টোবর শুক্রবার। এই হামলা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং নির্বাচনের আগে দেশটিতে রাজনৈতিক উত্তেজনার বহিঃপ্রকাশ বলে সতর্ক করেছেন বিশ্লেষকেরা।

শুক্রবার পল পেলোসির ওপর হামলার খবরের কয়েক ঘন্টা পরে, যুক্তরাষ্ট্র সরকার সারা দেশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর কাছে সতর্কবার্তা পাঠিয়েছে। এতে ‘আদর্শগত পার্থক্যের কারণে নির্বাচনের প্রার্থী ও কর্মীদের বাড়িঘরে হামলার ঘটনা ঘটতে পারে’ বলে সতর্ক করা হয়েছে।

ভরসা যখন ওবামা : যুক্তরাষ্ট্রে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দুই সপ্তাহ আগে কংগ্রেসে নিজেদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর দ্বারপ্রান্তে ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাটরা। ফলে নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে দলটি এখন ঝুঁকছে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার দিকে। তাঁদের ধারণা, ওবামাই পারবেন তাঁদের নিশ্চিত পরাজয় ঠেকাতে। এজন্য আগামী ৮ নভেম্বরের মধ্যবর্তী নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনী প্রচারণায় নামবেন ওবামা।

আগাম ভোট দিলেন বাইডেন : প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দেশটির মধ্যবর্তী নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন। নির্বাচন শুরুর বাকি আর এক সপ্তাহ। এর আগেই ২৯ অক্টোবর শনিবার পূর্বাঞ্চলীয় ডেলাওয়্যার রাজ্যের নিজ শহর উইলমিংটনে ভোট দিলেন বাইডেন। এসময়ে নাতনী নাতালি তার সঙ্গে ছিলেন। নাতালি এই প্রথমবারের মতো ভোট দেন।

উল্লেখ্য, মধ্যবর্তী নির্বাচনে আগাম ভোট শুরু হয়েছে ২৯ অক্টোবর থেকে, যা চলবে ৬ নভেম্বর রোববার পর্যন্ত।

Facebook Comments Box

Comments

comments

Posted ৭:২৬ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০১ নভেম্বর ২০২২

America News Agency (ANA) |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

[abm_bangladesh_map]
Editor-in-chief :
Sayeed-Ur-Rabb
Corporate Headquarter :

44-70 21st.# 3O1, LIC. New York-11101. USA,

06463215067

americanewsagency@gmail.com

Copyright © 2019-2025Inc. America News Agency (ANA), All rights reserved.ESTD-1997