
মুশরাত শাহীন অনুভা : | শুক্রবার, ২৮ অক্টোবর ২০২২ | প্রিন্ট | 12757 বার পঠিত
নিউইয়র্ক সিটির ব্রুকলিনে প্রবাসী বাংলাদেশি অধ্যুষিত ম্যাকডোনাল্ড অ্যাভিনিউর নতুন নামকরণ হয়েছে ‘লিটল বাংলাদেশ।’ নিউইয়র্ক সিটি কম্পট্রোলার ব্র্যাড ল্যান্ডার, অ্যাসেম্বলি মেম্বার ববি ক্যারোল, নিউজার্সির ফ্রাঙ্কলিন টাউনশিপ এলাকার কাউন্সিলওম্যান সেপা উদ্দীন কয়েকশ’ বাংলাদেশিকে সঙ্গে নিয়ে গত ১৬ অক্টোবর দুপুরে ঐতিহাসিক এই নামফলকটি উন্মাচন করেন নিউইয়র্কের প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মুসলিম নারী কাউন্সিলও মেম্বার শাহানা হানিফ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কাউন্সিল মেম্বার শাহানা হানিফ বলেন, আমার বাবার ‘লিটল বাংলাদেশ’ রেস্টুরেন্ট দেখে ছোটবেলা থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম এবং ভেবেছিলাম যদি কখনো সুযোগ পাই, এই চার্জ ম্যাকডোনাল্ড অ্যাভিনিউর নাম ‘লিটল বাংলাদেশ’ হিসাবে নামকরণ করব। কেংসিনটন এলাকার মানুষ আমাকে ভালবেসে ভোট দিয়ে কাউন্সিলর নির্বাচিত করেছেন বলেই আমি আমার এবং নিউইয়র্কে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পেরেছি।
তিনি বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমরা একটা ইতিহাস তৈরি করে রেখে যেতে পেরেছি। তাই বাংলাদেশিদের জন্য আজকের দিনটি খুব আনন্দের এবং গর্বেরও।
নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল ড. মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘লিটল বাংলাদেশ’ নামফলক স্থাপনের মাধ্যমে নতুন এক ইতিহাস সৃষ্টি হলো নিউইয়র্কে। এজন্য কাউন্সিল মেম্বার শাহানা হানিফকে অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, তার নেতৃত্বের কারণে এটা সম্ভব হয়েছে। তার বাবা যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশকে প্রমোট করার যে স্বপ্ন নিয়ে এসেছিলেন, আজ তার কন্যার মাধ্যমে সেই স্বপ্ন সত্যি হলো। এজন্য তার বাবাকেও ধন্যবাদ জানান।
‘লিটল বাংলাদেশ’-এর মাধ্যমে বোঝা যায় যে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশিরা একটা সুদৃঢ় অবস্থান তৈরি করছে এবং বিশ্ব মঞ্চে বাংলাদেশের গুরুত্ব বাড়ছে। সততা, পরিশ্রম এবং মেধার স্বাক্ষর রেখে বাংলদেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রবাসীদের ধন্যবাদ জানান কনসাল জেনারেল।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রব মিয়া বলেন, ম্যাকডোনাল্ড এভিনিউটি ‘লিটল বাংলাদেশ’ নামকরণ হওয়াটা বাঙালি কমিউনিটির জন্য অনেক বড় বিজয়। আর বিজয়ের জন্য বাংলাদেশি কাউন্সিল মেম্বার শাহানা হানিফকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন এ্যানি ফেরদৌস, শিহাব চৌধুরী, খালেদা আক্তার রুবি, ফারুক ওয়াদুদ, ডা. লোটাস আহমেদ, মোহাম্মাদ হাসেম, সাবেরা চৌধুরী, জাহিদ মিন্টু এবং আলী বৈভব।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে শোনান ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী নওরিন সামাহা।
নামফলক উন্মোচন শেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন বাংলাদেশি ইনস্টিটিউট অফ পারফর্মিং আর্টসের (বিপা) শিল্পীরা।
উল্লেখ্য, নিউইয়র্ক সিটির প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মুসলিম নারী কাউন্সিল মেম্বার শাহানা হানিফ। ব্রুকলিনের কেনসিংটনে জন্ম এই জনপ্রিয় রাজনীতিবিদের। সিটি কাউন্সিল নির্বাচনে ডিসট্রিক্ট-৩৯ থেকে ৮৯ শতাংশ ভোট পেয়ে ইতিহাস গড়েন তিনি। নির্বাচিত হবার পর থেকেই বাংলাদেশি কমিউনিটির মুখোজ্জ্বল করে চলেছেন নিউইয়র্ক সিটির অভিবাসন বিষয়ক কমিটির সভাপতি শাহানা হানিফ।
বাংলাদেশি অধ্যুষিত এই এলাকায় ‘বাংলাদেশ’ নাম যুক্ত করার প্রচেষ্টা চলছিল দীর্ঘদিন ধরে। কিন্তু যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে তা এতোকাল সম্ভব হয়ে ওঠেনি। কাউন্সিল মেম্বার নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই জোর প্রচেষ্টা চালাতে থাকেন তিনি। সিটি কাউন্সিলে রেজ্যুলেশন উত্থাপনের পর সম্প্রতি সেটা পাশ হয়। গত ১৬ অক্টোবর তার হাত ধরেই ‘লিটল বাংলাদেশ’ নামফলকটি যুক্ত হলো নিউইয়র্কের রাস্তায়। রচিত হলো বাঙালির আরেকটি ঠিকানার ইতিহাস।
উল্লেখ্য, গত ২১ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কে প্রবাসী বাংলাদেশি অধ্যুষিত জ্যামাইকায় একটি সড়কের নামকরণ করা হয় ‘লিটল বাংলাদেশ’ অ্যাভিনিউ। স্থানীয় কাউন্সিলম্যান জেমস এফ জেনারো বিপুল প্রবাসী বাংলাদেশিকে সঙ্গে নিয়ে নামফলক উন্মোচন করেন।
এছাড়া ২০১৯ সালে নিউজার্সি রাজ্যের প্যাটারসন সিটির ইউনিয়ন অ্যাভিনিউ সড়কের নাম পরিবর্তন করে ‘বাংলাদেশ বুলোভার্ড’ রাখা হয়। ২০১৯ সালের ২২ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে ওই সড়কে নামফলক লাগিয়ে ‘বাংলাদেশ-বুলোভার্ড’ করা হয়।
এর আগে ২০১০ সালে ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলস শহর কর্তৃপক্ষ শহরের থার্ড স্ট্রিট ও আলেকজান্দ্রিয়া অ্যাভিনিউয়ের মা’তে একটি এলাকাকে ‘লিটল বাংলাদেশ’ হিসাবে স্বীকৃতি দেয়। সেখানেও সড়কে নামফলক স্থাপন করা হয়েছে।
এদিকে নিউইয়র্কের বাংলাদেশি অধুষ্যিত জ্যাকসন হাইটসে ‘বাংলাদেশ’ নামে একটি সড়ক করার উদ্যোগ নিয়েছে জ্যাকসন হাইটস বাংলাদেশি বিজনেস অ্যাসোসিয়েশন (জেবিবিএ)। সংগঠনের কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে নিউইয়র্ক নগর কর্মকর্তাদের কাছে এ বিষয়ে একটি প্রস্তাবনা পাঠিয়েছেন।
Posted ১১:৫৩ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ২৮ অক্টোবর ২০২২
America News Agency (ANA) | ANA