টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে ৮ উইকেটে হারিয়ে প্রথমবারের মতো শিরোপা জিতল অস্ট্রেলিয়া। নিউজিল্যান্ডের দেয়া ১৭৩ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ওভারে বোল্টের বলে ভুগেছিলেন ফিঞ্চ। সেই ওভারে অস্ট্রেলিয়া নিতে পেরেছে মাত্র ১ রান। কিন্তু দ্বিতীয় ওভারে টিম সাউদির বলে দারুণ পাল্টা জবাব দিয়েছিলেন ডেভিড ওয়ার্নার। টানা দুই চার মেরেছেন, সেই ওভারে এসেছে ১০ রান।
তৃতীয় ওভারে বোল্টের প্রথম বলে এগিয়ে এসে লং অফে বাউন্ডারি মেরেছিলেন ফিঞ্চ। কিন্তু পরের বলেই আউট। বোল্টের বলে এগিয়ে এসে মারতে চাওয়া ফিঞ্চের ব্যাটে বলে ভালোমতো না হওয়ায় ব্যাটের ওপরের দিকের কানায় লেগে বল উঠে যায় আকাশে। ডিপ স্কয়ার লেগে দারুণ ক্যাচ নেন ড্যারিল মিচেল। ফাইন লেগ থেকে ডিপ স্কয়ার লেগ পর্যন্ত দৌড়ে এসে ক্যাচটা নিয়েছেন মিচেল। ফিঞ্চ ফেরেন ৭ বলে ৫ রান করে। অস্ট্রেলিয়ার উদ্বোধনী জুটি ভাঙল ১৪ রানে।
এরপর মিচেল মার্শকে সাথে নিয়ে ভালোই এগিয়ে যাচ্চিলেন ওয়ার্নার। কিন্তু ট্রেন্ট বোল্টের করা ১৩তম ওভারে বোল্ড আউট হন বিপজ্জনক ডেভিড ওয়ার্নার। ৩৮ বলে ৫৩ রান করে আউট হলেন এ বাঁহাতি ওপেনার। ততক্ষণে দলকে শিরোপার দ্বারপ্রান্তে এনে দিয়ে গেছেন। এরপর দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছাতে বাকি কাজ সারেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও মিশেল মার্শ। মার্শ অপরাজিত থাকেন ৭৭ রানে। ম্যাক্সওয়েল অপরাজিত থাকেন ২৮ রানে।
এর আগে, কেন উইলিয়ামসনের চোখ ধাঁধানো ইনিংসে ভর করে ১৭২ রানের বড় সংগ্রহ দাঁড় কায় নিউজিল্যান্ড। জিততে হলে অজিদের করতে হতো ১৭৩ রান।
টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের দ্বিতীয় বলে মিচেল স্টার্ককে চার মেরে শুরু করা মার্টিন গাপটিল যেন নিজের উপস্থিতির জানান দেন। এরপর তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে ছক্কা হাঁকান ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনালের নায়ক ড্যারেল মিচেল। তিন ওভার শেষে নিউজিল্যান্ডের রান দাঁড়ায় বিনা উইকেটে ২৩। তৃতীয় ওভারে ম্যাক্সওয়েলের বলে গাপটিলের ক্যাচ ছেড়েছিলেন অজি উইকেট কিপার ম্যাথু ওয়েড। তবে পরের ওভারেই জস হ্যাজলউডের বলে যেন শাপমোচন করলেন ওয়েড। তবে এ ক্ষেত্রে শিকার ছিল ড্যারেল মিচেল। ৮ বলে ১ ছক্কায় ১১ রান করে ফিরলেন ড্যারেল মিচেল। নিউজিল্যান্ডের উদ্বোধনী জুটি ভাঙে ২৮ রানে। ড্যারেল মিচেল আউট হওয়ার পর রানের গতি কমে আসে নিউজিল্যান্ডের।
এরপর ৭৬ রানে গাপটিল ফিরে গেলে দলকে বলা যায় একাই টেনে নেন কিউই অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। গ্লেন ফিলিপসকে সাথে নিয়ে বড় সংগ্রহের দিকে এগিয়ে যায় উইলিয়ামসন। এরপর ১৭.২ ওভারে দলীয় ১৪৪ রানের মাথায় ব্যক্তিগত ১৮ রানে ফিরে যান ফিলিপস। একই ওভারে ফিরে যান কেন উইলিয়ামসন। মাত্র ৪৮ বলে তিন ছক্কা ও ১০টি বাউন্ডারির মাধ্যমে ৮৫ রানের এক চোখ ধাঁধানো ইনিংস খেলে ফিরে যান তিনি। এরপর জিমি নিশাম এবং শেফার্ট মিলে এগিয়ে নেন কিউইদের ইনিংস। ২০ ওভার শেষে ১৭২ রানের বড় সংগ্রহ দাঁড় করায় নিউজিল্যান্ড। অজিদের হয়ে হ্যাজলউড নেন ৩টি এবং এডাম জাম্পা নেন একটি করে উইকেট।
এর আগে, হাইভোল্টেজ ফাইনালে টস জিতে প্রথমে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেয় অস্ট্রেলিয়া।
২০১৯ সালে লর্ডসে ওয়ানডে বিশ্বকাপেরও ফাইনালে উঠেছিল নিউজিল্যান্ড। কিন্তু পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকা ম্যাচটিতে দুর্ভাগ্যক্রমে হেরে যায় তারা। আইসিসির ইভেন্টে তাদের বড় সাফল্য বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে। প্রথমবারের মতো আয়োজিত হওয়া টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের চ্যাম্পিয়ন হয় কিউইরা।
এবার বিশ্বকাপ জয়ের আরেকটি নতুন সুযোগ নিউজল্যান্ডের সামনে এলেও পারল না তারা। লর্ডসের হৃদয়ভাঙা ফাইনালের দুই বছরের মাথায়ই সেই দুঃখ ভোলার সুযোগ মিলরেও আবারও সেই দুঃখই থেকে গেল কিউইদের। অন্যদিকে, বড় মঞ্চে শিরোপা জেতার অভিজ্ঞতা অবশ্য অস্ট্রেলিয়ার ভালো। ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপা মুকুট আগেই পেয়েছে তারা। এবার টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের দ্বিতীয় ফাইনালে শিরোপা নিয়েই বাড়ি ফিরছে অ্যারন ফিঞ্চের দল।
নিউজিল্যান্ড একাদশ : মার্টিন গাপটিল, ডেরিল মিশেল, কেন উইলিয়ামসন (অধিনায়ক), টিম শেফার্ট (উইকেট কিপার), গ্লেন ফিলিপস, জিমি নিশাম, মিচেল স্যান্টনার, ইশ সোধি, টিম সাউদি, ট্রেন্ট বোল্ট, এডাম মিলনে।
অস্ট্রেলিয়া একাদশ: অ্যারন ফিঞ্চ (অধিনায়ক), ডেভিড ওয়ার্নার, স্টিভেন স্মিথ, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, মিচেল মার্শ, ম্যাথিউ ওয়েড, প্যাট কামিন্স, মিচেল স্টার্ক, অ্যাডাম জাম্পা, জশ হ্যাজেলউড, মার্কাস স্টোইনিস।
Posted ১২:১৩ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ১৫ নভেম্বর ২০২১
America News Agency (ANA) | ANA