বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম
শিরোনাম

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসী হামলার ১৯ বছর

এনা অনলাইন :   শুক্রবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০ 276
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসী হামলার ১৯ বছর

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের টুইন টাওয়ারে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ১৯ বছর আজ। ২০০১ সালের এই দিনে জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার সঙ্গে জড়িত ১৯ জঙ্গি চারটি উড়োজাহাজ ছিনতাই করে যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি জায়গায় আত্মঘাতী হামলা চালায়।
এর মধ্যে দুটি উড়োজাহাজ আঘাত হানে নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার বা টুইন টাওয়ারে। দুটি বিমানের লক্ষ্য ছিল ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের উত্তর ও দক্ষিণ টাওয়ার। ওই হামলার ৫০ মিনিট না যেতেই তৃতীয় উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয় ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দফতর পেন্টাগনে। আর চতুর্থ বিমানটি আক্রমণ করে পেনসিলভানিয়ায়।

এই ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় প্রায় তিন হাজার মানুষ প্রাণ হারান। আহত হন ৬ হাজারের বেশি মানুষ। ‘নাইন-ইলেভেন’ নামে পরিচিত এই সন্ত্রাসী হামলার পর থেকেই সন্ত্রাসবাদ দমনে আরও কঠোর হয় যুক্তরাষ্ট্র, আর সেই সঙ্গে বদলে যায় বিশ্ব রাজনীতির গতিপ্রকৃতি।

হামলা চালানোর আগে সকাল ৮টা ১৯ মিনিটে একজন ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট সতর্ক করেন, তাদের উড়োজাহাজ ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েছে। ককপিট থেকে কোনো উত্তর আসছে না এবং ছিনতাইকারীদের কাছে বিস্ফোরক রয়েছে। এছাড়া জানানো হয়, এক যাত্রীসহ দুজন অ্যাটেনডেন্টকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে।

পরে জানা যায়, হামলার শিকার হওয়া ওই যাত্রীর নাম ড্যানিয়েল লেউইন। তিনি ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। ধারণা করা হয়, ছিনতাইকারীদের কাছ থেকে উড়োজাহাজের নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছিলেন তিনি এবং নাইন-ইলেভেনের হামলায় তিনিই প্রথম ভুক্তভোগী।

হামলার বিষয়টি ঠিকমতো বুঝে না উঠতেই ১৭ মিনিট পর ৯টা ৩ মিনিটে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের দক্ষিণ ভবনে আছড়ে পড়ে ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট-১৭৫। সেটিও বোস্টন থেকে উড়ে এসে হামলা চালায়। পরে জানা যায়, উড়োজাহাজটি ছিনতাইয়ের পরই একজন অ্যাটেনডেন্ট ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, উড়োজাহাজ ছিনতাই হয়েছে এবং দুজন পাইলটই নিহত হয়েছেন। তবে যোগাযোগের চেষ্টা চালিয়েও শেষরক্ষা হয়নি।

এছাড়া একটি বিমান পেনসিলভেনিয়া স্টেট ও অপরটি ভার্জিনিয়া স্টেটে বিধ্বস্ত হয়। বলা হয়, হোয়াইট হাউসে একটি বিমান বিধ্বস্ত করতে চেয়েছিল ষড়যন্ত্রকারীরা, কিন্তু তা পেনসিলভেনিয়ায় ভেঙে পড়ে। টুইন টাওয়ারের ঘটনায় ২ হাজার ৯৯৭ জন প্রাণ হারান, যাদের মধ্যে ২ হাজার ৭৫৩ জনের ডেথ সার্টিফিকেট ইস্যু করা হয়েছিল, বাকিদের পরিচয় মেলেনি।

নাইন-ইলেভেনের প্রধান পরিকল্পনাকারী ছিলেন আল-কায়েদার সদস্য খালিদ শেখ মোহাম্মদ। তিনি পাকিস্তানে জন্মগ্রহণ করেন। ২০০৩ সালের মার্চে রাওয়ালপিন্ডি থেকে সিআইএ ও আইএসআইয়ের যৌথ অভিযানের সময় গ্রেফতার হন তিনি।

এ হামলা চালানোয় আল-কায়েদার অন্যতম ভরসা ছিলেন মোহাম্মদ আতা নামের এক মিসরীয়। ধারণা করা হয়, নাইন-ইলেভেনের হামলার অন্যতম নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। মোহাম্মদ আতা নাইন-ইলেভেনের হামলায় ব্যবহৃত আমেরিকান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট-১১-এর চালকের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিলেন বলে ধারণা করা হয়। পরে জানা যায়, উড়োজাহাজ ছিনতাইয়ের পরই ৮টা ২৪ মিনিটে আতা ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘আমাদের কাছে কয়েকটি বিমান রয়েছে। আপনারা চুপ থাকুন, তাহলে আপনাদের কোনো সমস্যা হবে না। আমরা আবারও বিমানবন্দরে ফিরে যাব।’ পরে এও বলা হয়, ‘কেউই নড়াচড়া করবেন না। সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। আপনারা যদি চলাচলের চেষ্টা করেন, তাহলে নিজেদের এবং বিমানের জন্য বিপদ ডেকে আনবেন। শুধু চুপচাপ থাকুন।’

এদিকে হামলার দিন ফ্লোরিডার একটি স্কুল পরিদর্শনে গিয়েছিলেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ। তিনি ৮টা ৫৫ মিনিটে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে বিমান হামলার ঘটনা জানতে পারেন। এরপর ৯টা ৫ মিনিটে বুশের চিফ অব স্টাফ জানান, ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে আবারও বিমান হামলা হয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্র আক্রমণের মুখে রয়েছে।

এরপর সন্ধ্যা ৬টা ৫৪ মিনিটে হোয়াইট হাউসে আসেন বুশ। রাত সাড়ে ৮টার দিকে ওভাল থেকে জাতির উদ্দেশে দেয়া এক ভাষণে তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসী হামলা আমাদের উঁচু ভবনের ভিত নাড়িয়ে দিতে পারে, কিন্তু তারা যুক্তরাষ্ট্রের ভিত স্পর্শও করতে পারবে না। যারা এ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছে এবং যারা তাদের আশ্রয়দাতা, তাদের দুই দলের মধ্যে কোনো পার্থক্য আমরা করব না।’

নাইন-ইলেভেন হামলার পর ২০ সেপ্টেম্বর কংগ্রেসে এক ভাষণে জর্জ ডব্লিউ বুশ বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ‘আল-কায়েদার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মাধ্যমে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধ শুরু হয়েছে, কিন্তু এখানেই তা শেষ হবে না। সব সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর পতনের আগে এ লড়াই শেষ হবে না।’

টুইন টাওয়ারে হামলার নেপথ্যে আল কায়েদার প্রতিষ্ঠাতা ওসামা বিন লাদেন ছিলেন বলে ধারণা করা হয়। প্রথমদিকে তিনি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার ব্যাপারে অস্বীকৃতি জানান।

২০০১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বিন লাদেনের এক বক্তব্য প্রচার করে। সেখানে তিনি বলেন, ‘আমি জোর দিয়ে বলছি, আমি এই কাজ করিনি। মনে হয় কেউ তার ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য হাসিলের লক্ষ্যে এই হামলা চালিয়েছে।’

২০০১ সালের নভেম্বরে মার্কিন সেনাবাহিনী আফগানিস্তানের জালালাবাদ থেকে একটি ভিডিও রেকর্ডার উদ্ধার করেন। ভিডিওতে দেখা যায়, লাদেন খালেদ আল-হারবির সাথে কথা বলছেন এবং এই হামলার সম্পর্কে তার জানার বিষয়টি স্বীকার করছেন।’

সাম্প্রতিককালে যেসব ঘটনা নিয়ে ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’ ছড়িয়েছে তার মধ্যে অন্যতম যুক্তরাষ্ট্রে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা। এই ঘটনা নিয়ে বিচিত্র সব ষড়যন্ত্র তত্ত্ব আছে। যেমন- মার্কিন সরকার বা ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা এ হামলার পেছনে ছিল, ওই আক্রমণে কোনো ইহুদি মারা যায়নি, আসলে কোনো বিমান টুইন টাওয়ারে বা পেন্টাগনে আঘাত করেনি, এই রকম নানান কিছু।

আরেকটি বড় তত্ত্ব হচ্ছে, ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের দুটি টাওয়ার ধসে পড়েছিল বিমানের আঘাতে নয়, বরং ভবনটির ভেতরে বিস্ফোরক বসিয়ে তা উড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। আজ এত বছর পরও এসব তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা-বিতর্ক শেষ হয়নি।

Facebook Comments Box

Comments

comments

Posted ১১:৫৫ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০

America News Agency (ANA) |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

 

President/Editor-in-chief :

Sayeed-Ur-Rabb

 

Corporate Headquarter :

 44-70 21st.# 3O1, LIC. New York-11101. USA, Phone : +6463215067.

Dhaka Office :

70/B, Green Road, 1st Floor, Panthapath, Dhaka-1205, Phone : + 88-02-9665090.

E-mail : americanewsagency@gmail.com

Copyright © 2019-2024Inc. America News Agency (ANA), All rights reserved.ESTD-1997