অনলাইন ডেস্ক : | শুক্রবার, ১১ নভেম্বর ২০১৬ | প্রিন্ট | 1041 বার পঠিত
লোকসঙ্গীত দেশে দেশে, যুগে যুগে মাটি থেকে, জীবন থেকে উত্সারিত উপলব্ধিতে সুর চড়িয়েছে। তা গান হয়ে মুখে মুখে ফিরতে থাকে মানুষের। হবিগঞ্জের আবদুর রহমান বাউল ধরলেন সিলেটের কিংবদন্তি তুল্য শিল্পী শাহ আবদুল করিমের গান। ‘কি জাদু করিয়া বন্ধে মায়া লাগাইছে। বসে ভাবি নিরালায়…’। হেমন্তের সন্ধ্যায় বাউল ফকিরের গান উষ্ণতা ছড়িয়ে দিল। মাতিয়ে দিল উত্সব মঞ্চ। অনেক দর্শক খোলা মাঠের কোনে গানের সুরে নেচে উঠলেন। এভাবেই গতকাল ঢাকায় দ্বিতীয়বারের মত পর্দা উঠলো আন্তজার্তিক লোকসঙ্গীত উত্সবের। আর্মি স্টেডিয়ামে হেমন্তের কুয়াশার মাঝে লোক সঙ্গীতের আসরে মানুষ যেন নিজের শেকড়ের গানের টানে ছুটে এসেছিল। মেরিল নিবেদিত এই উত্সবের আয়োজক সান ইভেন্টস।
বাংলা লোকগানে যেমন সহজিয়া জীবন-দর্শন মিশে রয়েছে তেমনি ইংল্যান্ডের দল সাইমন থ্যাকার্স সাভারা কান্তির গানও সেদেশের মাটি থেকে উত্সারিত। শুধু বাংলা কেন পৃথিবীর সব দেশেই লোক সঙ্গীত মাটি থেকে উত্সারিত।
শিল্পীদের নৃত্যের ছন্দে শুরু হয় লোকসঙ্গীত উত্সবের। পল্লবী ড্যান্স গ্রুপের শিল্পীরা পরিবেশন করেন ‘হেইয়া রে হেইয়া জোরে মারো টান’ ও ‘বকুল ফুল বকুল ফুল সোনা দিয়া হাত কেন বান্ধাইলি’। এরপরে মঞ্চে আসেন আবদুর রহমান বাউল। আবদুর রহমান বাউল মূলত বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের প্রধান শিষ্য। দোতারা, হারমোনিয়াম আর বায়ার মনোমুগ্ধ সুরে তিনি গান ধরলেন ‘আমি তোমার হইতে পারলাম না’ এবং আরও কয়েকটি গান।
এরপর ছিল উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা। প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। অতিথি ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক, গ্রামীণফোনের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা ইয়াসির আযমান, ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান এবং মাইক্রোসফটের বাংলাদেশ প্রধান সোনিয়া বশির কবির। স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্কয়ার টয়লেট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী।
অর্থমন্ত্রী বলেন, সংস্কৃতিচর্চা আমাদের স্বভাবজাত। প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষের মাঝে সংস্কৃতিচর্চার সংস্কৃতি রয়েছে। সে কারণেই বাঙালি জাতির রুচি অত্যন্ত পরিশীলিত। নভেম্বর মাস আমাদের উত্সবের মাস, যার সূচনা এ উত্সব দিয়ে।
আনিসুল হক বলেন, আজকের এ আয়োজনে আমি ‘কাবাব মে হাড্ডি’। কারণ সকাল থেকে পাবলিক টয়লেট উদ্বোধন, জমি দখল, রাস্তা দখল করে এখানে এসে নিজেকে গর্বিত মনে হচ্ছে। এ ধরনের আয়োজন তরুণদের সুন্দরের পথে উদ্বুদ্ধ করবে।
অঞ্জন চৌধুরী বলেন, এ উত্সব শুধু ভেন্যুতে নয়, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সারাবিশ্বের মানুষ দেখতে পারছেন; এটা বাংলাদেশের জন্য গর্বের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উত্সবের সাফল্য কামনা করেছেন, তাকে ধন্যবাদ জানাই। সে সঙ্গে সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনীকে ধন্যবাদ জানাই, তাদের সহযোগিতা ছাড়া এ উত্সব করতে পারতাম না।
উদ্বোধনী পর্ব শেষে মঞ্চে আসেন কুষ্টিয়ার শিল্পী টুনটুন বাউল। লালনের অনুসারী এ শিল্পীর কণ্ঠে শোনা যায় লালনের বিখ্যাত সব গান। তিনি গেয়ে শোনান ‘বল স্বরূপ কোথায় আমার সাধের পেয়ারি’, ‘লণ্ঠনে রূপের বাতি জ্বলছে রে সদাই’ প্রভৃতি। যুক্তরাজ্যের সাইমন থ্যাকার্স সাভারা কান্তির সঙ্গে ভারতের রাজু দাস বাউল ও বাংলাদেশের ফরিদা ইয়াসমিনের পরিবশেনাটি ছিল এক কথায় অনন্য। একেবারে পাশ্চাত্যের লোকসঙ্গীতের সঙ্গে প্রাচ্যের খাঁটি লোকসঙ্গীতের অপূূর্ব সংমিশ্রণ বলা যায়।
এরপর মঞ্চে আসেন পাকিস্তানের শিল্পী জাভেদ বশির। হিন্দি সিনেমার গানে কণ্ঠ দিয়ে তারকা বনে যাওয়া এ শিল্পী মূলত হিন্দুস্তানি ক্ল্যাসিকাল ঘরানার। মুম্বাইয়ের ‘ওয়ান্স আপন এ টাইম ইন মুম্বাই দোবারা’ চলচ্চিত্রে ‘ইয়ে তুনে ক্যায়া কিয়া’ গানে কণ্ঠ দিয়ে জনপ্রিয়তা পান তিনি। এছাড়া ইউটিউবে ‘কোক স্টুডিও পাকিস্তান’ দেখেও বাংলাদেশে তার ভক্তকুল কম নয়।
সবশেষে মঞ্চে আসের ফোকসম্রাজ্ঞী মমতাজ বেগম। তিনি ‘মরার কোকিলে’, ‘আগে যদি জানতাম রে বন্ধুসহ তার জনপ্রিয় সব গান গেয়ে শোনান।
এ উত্সবে সহযোগিতা করছে জিপি মিউজিক, ঢাকা ব্যাংক ও মাইক্রোসফট। উত্সবে বাংলাদেশসহ সাত দেশের শতাধিক শিল্পী অংশ নিচ্ছেন।
দ্বিতীয় দিনের আয়োজন
আজ শুক্রবার ঢাকা আন্তর্জাতিক লোকসঙ্গীত উত্সবের দ্বিতীয় দিন। এদিনের মূল আর্কষণ ভারতের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী কৈলাশ খের। বাংলাদেশের শিল্পীদের মধ্যে গাইবেন জালাল ও লতিফ সরকার। আরও থাকছে বাউল শফি মণ্ডল আর লাবিক কামাল গৌরবের যুগলবন্দি। নিজেদের গান নিয়ে আসবেন ভারতের লোকব্যান্ডদল ইন্ডিয়ান ওশেন। লোকজ সুরের সঙ্গে ফ্লামেঙ্কো নাচের যুথবদ্ধ পরিবেশনা থাকছে স্পেনের কারেন লুগো ও রিকার্ডো মোরোর।
এনা/অন/ইতে
Posted ৩:০৩ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ১১ নভেম্বর ২০১৬
America News Agency (ANA) | Payel