বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম
শিরোনাম

আধুনিক শিল্প সম্পর্কে জানার আছে অনেক কিছু

এনা অনলাইন :   সোমবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ 1022
আধুনিক শিল্প সম্পর্কে জানার আছে অনেক কিছু

এশিয়ার আকাশ এক সময় এশিয়ার দখলে ছিল। সে কোনো দূর ইতিহাসের কথা। আলেকজান্ডারের ঘোড়ার খুরের আঘাতে তখনও তছনছ হয়নি এশিয়ার সবুজ সার্ব, সোনালি ফসলের ক্ষেত। তারপর এশিয়া আবারও জয়ী হলো। অনেক রাজসিক আয়োজনে এশিয়ার বিভিন্ন দেশ নিজস্ব পরিচর্যায় সভ্যতার কুসুম ফোটাল। তা-ও টিকল না। আবারও ইউরোপীয় শক্তিধর জলদস্যু নামের আবিস্কারকরা শেকল পরাল এশিয়ার পায়ে। শুধু এশিয়ার কেন, জিঞ্জির পরানো হলো আফ্রিকা আর লাতিন আমেরিকার পায়েও। ইতালীয় রেনেসাঁর প্রদীপের আলোয় ইউরোপ উজ্জ্বল হলো। সেই প্রদীপের সলতে পাকাল ও তেল জোগাল ওই তিন মহাদেশের স্ব-সভ্যতামগ্ন মানুষ। ইউরোপীয় লুটেরা বণিকের আক্রমণে পিদিম নিভে গেল এই গোল পৃথিবীর দক্ষিণাবর্তের তিন মহাদেশের মানুষের ঘরে।

তারপর কেটে গেল অনেক সময়। মানুষের মনের আকাশে মুক্তির স্পৃহা সকালের সূর্যের মতো প্রদীপ্ত হলো। অনেক রক্তনদী, অশ্রুনদী পেরিয়ে স্বাধীনতা পাওয়া গেল। ততদিনে দূষিত হয়ে গেছে ইউরোপের শক্তির কাছে অবনত মানুষের মন, যা কিছু পশ্চিমে তা-ই মহান, বিজ্ঞানসম্মত, অতএব আজও তার দাসত্ব মেনে নাও। পশ্চিমের ঔপনিবেশিক শক্তির সার্বিক আয়োজন আমাদের আজও প্রলুব্ধ করে। গ্রেকো-রোমান সভ্যতার বিদ্যায় বলীয়ান হয়ে ইতালীয় রেনেসাঁয় জ্ঞানে ও লুটপাটে যুগপৎ দুর্ধর্ষ হয়ে পশ্চিমের যে শক্তিগুলোর কুগ্রহে রাহুগ্রস্ত ছিল আমাদের মনোলোক, তা বদলে যায় বিশ শতকের ষাটের দশকের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে। আমরা আবার আমাদের মতো খনন শুরু করি। প্রত্ননিদর্শন আবিস্কার করে মহান পূর্বপুরুষদের দর্পণে মুখ দেখে দর্পিত হয়ে উঠি। আমরা অনুভব করি, ওই মহাশক্তিধর পশ্চিমের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হলে, নিজেদের ঐতিহ্যের মহিমা প্রকাশ করতে হলে, নিজেদের বলয় তৈরি করতে হবে।
42236162_1828665287246539_4867198261431107584_n
‘সাম্রাজ্যবাদ নিপাত যাক’- এই স্লোগানে কলরব করে ওঠে দক্ষিণাবর্তের তিন মহাদেশের কোটি কোটি মানুষ। ক্রমে আমরা বুঝে যাই কেন্দ্র পরিবর্তিত হয় বটে, তবে তা পশ্চিমেই রয়ে যায়। প্যারিস, লন্ডন, নিউইয়র্কই শেষাবধি সর্বশিল্পের গুণ-মানের বিচারক। নিজের কথা নিজে না বুঝলে অন্যে তা বুঝবে না। তাই আফ্রো-এশিয়া-লাতিন আমেরিকার মানুষ পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বলয়ের বিপরীত রচনা করল নিজের বলয়। এই ভাবনার সূত্রে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে চারুশিল্পের বিকাশ পরিমাপ করার জন্য জন্ম নিল দ্বিবার্ষিক চারুশিল্প প্রদর্শনীর। এ দেশেও শুরু হয় সেই আয়োজন। ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে আয়োজিত হয় ‘প্রথম এশীয় দ্বিবার্ষিক চারুকলা প্রদর্শনী, বাংলাদেশ’। প্রদর্শনীর নামেই এর নীতিমালার প্রধান শর্ত পরিস্ম্ফুট। এ আয়োজনে শুধু এশিয়া মহাদেশের শিল্পীদের শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হবে। কারণ পশ্চিমাকেন্দ্রিক আয়োজনে জাপান ছাড়া আর কোনো দেশের আমন্ত্রণ বা প্রবেশাধিকার ছিল না।

দ্বিবার্ষিক চারুকলা প্রদর্শনীর ভাবনায় গুরুত্ব পায় চিন্তাগর্ভ শিল্পীদের কাজ। এ শিল্পীরা সাধারণত নবীন বা অনতিপ্রবীণ। প্রতিষ্ঠিত গুরুশিল্পীদের কাজ বিবেচনা দ্বিবার্ষিক আয়োজনের উদ্দেশ্য নয়। সাম্প্রতিক চর্চায় এশিয়ার নবীন শিল্পীরা কতটা অভিনব শিল্পফসল ফলাতে সক্ষম হয়েছেন, তারই পরিমাপক এশীয় দ্বিবার্ষিক প্রদর্শনী। এ আয়োজনের আরও একটা উদ্দেশ্য আছে। কারণ ইউরোপকেন্দ্রিক দ্বিবার্ষিকগুলো মনে করে যে, এশিয়া আজও প্রাচীন ঐতিহ্যের নিগড়ে বন্দি। আধুনিকতা, অগ্রগামিতার কোনো স্পর্শ নেই এদের চর্চায়।

ওই আয়োজনের ১৮তম অধ্যায় উপস্থাপিত হয়েছে শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালায়। স্বাগতিক বাংলাদেশসহ মোট ৬৮টি দেশের শিল্পীরা এতে অংশ নিয়েছেন। শিল্পের এই মহোৎসবে অংশগ্রহণকারী পঞ্চাশ ভাগ অর্থাৎ ৬৪টি দেশ এশিয়া মহাদেশের নয়- উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ/লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকার শিল্পীরাও এতে অংশ নিয়েছেন। এশিয়া মহাদেশের সীমানায় যদি না রাখা হয়, তবে একে এশীয় প্রদর্শনী বলে কেন আখ্যা দেওয়া হবে। একদিন তাৎপর্যবহ মনে হলেও আজ আর মহাদৈশিক চারিত্র্য-বৈশিষ্ট্যের লক্ষণের আলোকে আন্তর্জাতিক আয়োজন সঙ্গত নয়। এ কথা হয়তো অযৌক্তিক নয় যে, ভূমণ্ডলায়নের এই উন্মুক্ত প্রহরে এশিয়ার বা অন্য মহাদেশেরও আর মহাদেশীয় ভৌগোলিক লক্ষণ সুচিহ্নিত হয়ে নেই। ষাটের দশকের গণজাগরণের আক্রমণে ইউরোপের ধ্রুপদি চিন্তার ভিত নড়বড়ে হয়ে গেছে। উত্তর-আধুনিক চিন্তা স্রোতে ফাটল ধরেছে গ্রেকো-রোমান দর্শনের কঠিন শিলায়। রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্কেরও ব্যাপক পালাবদল ঘটেছে। তাই এই পরিবর্তিত সময়ে এশীয় শিল্পকলাকে যদি এশিয়া মহাদেশের ঘেরে না রাখা যায়, তবে এই আয়োজনের নাম বদলাতে হবে। একে ‘ঢাকা বিয়েনাল’ নামে ডাকা যেতে পারে। তা না হলে প্রদর্শনীকে এশিয়ার দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে এবং তবেই ‘এশীয় দ্বিবার্ষিক চারুকলা প্রদর্শনী’ শিরোনাম যথার্থ্যের দাবি রাখবে।

42151250_1828665107246557_6879196319970230272_n

বাংলাদেশের শিল্পীদের মাত্রাতিরিক্ত অংশগ্রহণ এ প্রদর্শনীর নৈতিক ভিত্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। বাংলাদেশ ছাড়া অন্য দেশ থেকে গুটিকয়েক শিল্পীর কাজ উপস্থাপিত হয়েছে। এবং এটাই সঙ্গত। কিন্তু স্বাগতিক বাংলাদেশ থেকে দেড় শতাধিক শিল্পীর প্রায় দুইশ’ কাজ গ্যালারির দেয়াল, মেঝে ও একাডেমির প্রাঙ্গণ দখলে নিয়েছে। স্বাগতিক দেশ বলে আমরা স্বেচ্ছাচারী হতে পারি না। বরং আমাদের অংশগ্রহণ সুসঙ্গত হওয়া বাঞ্ছনীয়। কারণ আমরা আয়োজক; দ্বিবার্ষিক প্রদর্শনীর মান-মর্যাদা ও সঙ্গত রূপ নিশ্চিহ্ন করা আমাদের দায়িত্ব। কিন্তু এ আমরা কী করলাম। সারা পৃথিবীকে আমন্ত্রণ জানিয়ে নিজেরাই বেশিরভাগ স্পেস অধিকারে রেখে দিলাম। তা ছাড়া আরও একটি প্রশ্ন আমাদের কাছে উত্তর জানতে চায়। প্রশ্নটা হলো, আন্তর্জাতিক মানের একটা প্ল্যাটফর্মে পঙ্‌ক্তিভুক্ত হওয়ার মতো দেড়শ’ প্রতিভাবান শিল্পী কি বাংলাদেশে আছেন? শুধু চারুশিল্প বিষয়ে এ প্রশ্ন নয়; যদি কবিতার, কথাসাহিত্যের, নাটকের এ-রকম মহোৎসব হয় এবং তাতে সারা বিশ্ব থেকে যদি ষাট-সত্তরটি দেশের প্রতিভা অংশ নেয়, তখন কবি, কথাসাহিত্যিক, নাট্যকারদের অংশগ্রহণের সংখ্যা কি এদেশ থেকে দেড়শ’ অবধি গণনা করা যাবে। এবার বলে নয় শুধু, প্রতিবারই দ্বিবার্ষিক আন্তর্জাতিক আয়োজনের সিংহভাগ স্পেসে আমরা নিজেরাই নিজেদের জাহির করি এবং কাজের মান যে আদৌ আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে ঠাঁই পাওয়ার যোগ্য নয়, চারুশিল্পে অভিজ্ঞ দর্শকের চোখ তা দৃষ্টিপাত মাত্র বুঝতে পারেন।

প্রতিবারই গ্রান্ড প্রাইজ ও সম্মানসূচক পুরস্কারের বেশিরভাগ লাভ করেন বাংলাদেশের শিল্পীরা। পুরস্কারপ্রাপ্ত কাজের মান প্রশংসার দাবি রাখে। বাংলাদেশের শিল্পীদের বিপুল সংখ্যায় অংশগ্রহণের জন্য নির্বাচকমণ্ডলীকে দায়ী করা গেলেও পুরস্কারের জন্য গঠিত জুরি বোর্ডের সদস্যদের বিবেচনাকে সমালোচনা করার খুব একটা যৌক্তিক কারণ আছে বলে আমি মনে করি না। যদিও এবার যারা পুরস্কৃত হয়েছেন, তাদের সবাই পুরস্কৃত হবেন না, যদি অন্য শিল্পী ও শিল্পীতাত্ত্বিক সমালোচকদের নিয়ে আরেকটি কমিটি গঠিত হয়।

স্বাগতিক দেশের শিল্পীরা প্রায় সব পুরস্কার পাবেন অথচ প্রায় একই মানসম্পন্ন কাজ করে অন্য দেশের শিল্পীরা পুরস্কৃত হবেন না, এটা সমীচীন নয়। পুরস্কার প্রদানের নীতিমালা ও পুরস্কারের জন্য যে জুরি বোর্ড রয়েছে তার সংস্কার দরকার। নীতিমালায় এমন শর্ত যুক্ত করতে হবে, যাতে স্বাগতিক বাংলাদেশকে একটির বেশি গ্রান্ডপ্রাইজ এবং দুটির বেশি সম্মানসূচক পুরস্কারে ভূষিত করা না হয়। কেন না, প্রতি বছরই অন্য দেশের এমন শিল্পমানসম্পন্ন কাজ থাকে, যা পুরস্কৃত হয় না বলে সচেতন মহল কুণ্ঠা ও লজ্জাবোধ করে। এবারও তিনটি গ্র্যান্ডপ্রাইজের দুটি বাংলাদেশ না পেলে অসঙ্গত কিছু হতো বলে মনে হয় না। আর ৬টি সম্মানসূচক পুরস্কারের মধ্যে তিনটিই কি বাংলাদেশের শিল্পকর্ম লাভ করার যোগ্য? নীতিমালা পরিবর্তন করে অন্য দেশের মানসম্পন্ন কাজকে যদি পুরস্কৃত করা না হয়, তবে এই আন্তর্জাতিক আয়োজন সম্পর্কে শিল্পীদের আগ্রহের প্রদীপ নিভে যাবে এবং আয়োজন কেবলই মান হারাতে থাকবে। এশীয় দ্বিবার্ষিক চারুকলা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হচ্ছে না কেন- এ প্রশ্ন করলে শিল্পকলা একাডেমি অতি সহজে উত্তর দিয়ে বলেন, ছবির নির্বাচন ও পুরস্কারের জুরি কমিটি তো আমরা শিল্পীদের হাতে ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু এ প্রশ্নে আমরা সন্তুষ্ট হতে পারি না। কারণ ছবির নির্বাচকমণ্ডলী সদস্যদের বেশিরভাগ শিল্পী। শিল্পীর চেয়ে শিল্পসমালোচক ও গবেষকরা বিভিন্ন শিল্পীর ছবি সম্পর্কে বেশি খোঁজ-খবর রাখেন এবং শিল্পের গুণাগুণ নিয়ে ভাবেন। তাই নির্বাচকমণ্ডলীর সদস্যদের বেশিরভাগ হওয়া উচিত শিল্প-সমালোচক বা শিল্প-গবেষক, শিল্পী নয়। জুরি বোর্ডে বাংলাদেশের দু’জন সদস্য না রেখে একজনকে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। হিংসা, পীড়ন, আধিপত্যের প্রতাপ-প্রতিষ্ঠা আর আমিষাশী লোভের খাঁচায় বন্দি আজ মানবতা। পীড়িতের করুণ আর্তনাদ কোনো কালেই সৃজনশীল মানুষের আগে কেউ শুনতে পায়নি। এ এক অদ্ভুত আঁধার। চিরকালই কি মানবতা বিশ্বময় এমন দুঃশাসনবেষ্টিত ছিল! আজ আর মানুষের জন্য সবুজ দেশ নেই। রাষ্ট্র আছে দুষ্পাঠ্য শৃঙ্খলের। কারা যেন এই পৃথিবীর মানুষকে নিয়ে পাশা খেলছে। ঘুঁটির মতো চাল দিচ্ছে মানুষের মুণ্ডু ধরে। কে জানে কবে থামবে এই নিষ্ঠুর সার্কাস। যুদ্ধাস্ত্র কেন বেসামরিক সন্ত্রাসীর হস্তগত হলো! কে দেবে এর জবাব উপরিতলে সবই স্বাভাবিক। বরং যতই দিন যাচ্ছে বাড়ছে জমক-জেল্লা। মানুষ নভোচারী হয়ে কোন দূর আকাশে চলে গেছে। কোটি মুদ্রা ব্যয় করে মহাকাশের শূন্যতা পরিমাপ করা হচ্ছে, কিন্তু দুরারোগ্য ব্যাধির প্রতিষেধক আবিস্কৃত হচ্ছে না। সময়ের এই উষ্ফ্মার্গ নিষ্ঠুরতা চিহ্নিত হয়েছে পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পী বাংলাদেশের আতিয়া ইসলাম এ্যানি ও সালমা জাকিয়া বৃষ্টি এবং ভারতের জি. কানদানের কাজে। বিশাল আকৃতির হাতির শরীর তালি-তাপ্পিতে সেলাই করার মধ্য দিয়ে কামরুজ্জামান স্বাধীনের কাজে লোককলা শৈল্পিকে বিশালত্বের মাত্রায় অনুভব করা যায়। প্যালেস্টাইনের শিল্পী মন্দের আল জাবেরির ডিজিটাল পারফরম্যান্স কাজটিতে প্রমিথিউসপ্রতিম সাধে ও সাহসে মানুষ সুউচ্চ টাওয়ার বেয়ে উঠছে। এতে যেন সেই দেশটির মানুষের অপরিমেয় সাহস ও সুদৃঢ় সংকল্পের ব্যঞ্জনা আছে।

বহুত্ববাদিতা সাম্প্রতিককালের শিল্পচর্চার প্রধান লক্ষণ। প্রথাগত দ্বিতল পরিসরের তেল, জল, অ্যাক্রিলিকের পাশে নিরীক্ষাধর্মী ভাস্কর্য, স্থাপনাশিল্প, পারফরম্যান্স, ভিডিও আর্ট, ফটোগ্রাফির উপস্থাপনে দ্বিবার্ষিক চারুকলা প্রদর্শনী নয়ন জুড়ানো ও মন ভোলানো হয়েছে। তবে প্রচুর প্রথাগত নিম্ন-মাঝারি মানের কাজের ভিড়ে বুদ্ধিদীপ্ত ও অভিনবত্বের মাত্রাযুক্ত কাজকে খুঁজে পেতে দর্শকের চোখ বিড়ম্বিত হয়ে পড়ে। শত শত কাজে বিরামহীন দৃষ্টিপাতের পর মনে সঞ্চিত হয় এই ভাবনা যে, ইউরোপ ও আমেরিকার কাজে আছে গণিতের হিসাব ও জ্যামিতির মাপে বস্তু পৃথিবীকে নব-উপলব্ধিতে আবিস্কারের প্রয়াস। লাতিন আমেরিকা পশ্চিমের সঙ্গে অপেক্ষাকৃত ঘনিষ্ঠ বলে তারা একই সঙ্গে পশ্চিমমুখিতা ও স্বাদেশিক চেতনা পরস্পরিত করে বুনেছে তাদের শিল্পে। আফ্রিকা আজও ঐতিহ্যনিষ্ঠ। তবে কালের রাক্ষসের বিষাক্ত কামড়ে ইথিওপিয়ার রঙিন লোককলার চিরকালীন, রুপোস রূপ চূর্ণ-বিচূর্ণ। তবে মিসরের শিল্পী মোহাম্মদ ইব্রাহিম আবদুল্লাহ এলমাসরির কাজে মানুষ, মারণাস্ত্র ও গোলাপ ফুলের উপস্থাপনে যুদ্ধবিধ্বস্ত ও সন্ত্রাসী কালের বিরোধাভাস যেভাবে ব্যাপ্ত করা হয়েছে, তা দ্বিবার্ষিকের মান বাড়িয়েছে। পাঠক বিস্মিত হবেন, কেন এ কাজ পুরস্কৃত হলো না। মঙ্গোলিয়া ও ভিয়েতনামের কাজও কমপক্ষে সম্মানসূচক পুরস্কারের দাবি রাখে। জাপান, চীন ও রাশিয়ার অনেক নিরীক্ষানিষ্ঠ তরুণ শিল্পী রয়েছেন। কিন্তু এসব দেশ থেকে যে শিল্পীদের কাজ এসেছে, তা দ্বিবার্ষিক উপস্থাপনের যোগ্য কি-না তা নিয়ে প্রশ্ন করা যায়। আর চীনের যে শিল্পকর্মটি সম্মানসূচক পুরস্কার লাভ করেছে, তার চেয়ে সৃজন গুণসংবলিত কাজ অন্য দেশের অনেক আছে এ আয়োজনে। তুরস্কের কাজও সুবিবেচনা পেয়েছে কি-না আমার সন্দেহ আছে। অপর পক্ষে লাতিন আমেরিকার দেশ পেরুর কাজ ও এশিয়ার সিঙ্গাপুরের কাজ ইউরোপ-আমেরিকার আধুনিক শিল্পের দুর্বল অনুকরণ মাত্র। জাপানের কাজে পরিপাটি সুশ্রী অভিব্যক্তি ও গ্রাফিক্সের স্নিগ্ধতা বরাবরের মতোই মুদ্রিত রয়েছে। এ দেশের কাজও সম্মানসূচক পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পের চেয়ে মানে উন্নততর। শিল্পের মান বিচার যতই দুরূহ হোক না কেন, কোনটি বুদ্ধির প্রভায় আর হৃদয়ের তাপে অন্যটির চেয়ে অগ্রগামী তা বিবেচনা করা চলে। আর আয়োজন যখন প্রতিযোগিতামূলক, তখন আলোকিত ও অপেক্ষাকৃত কম আলোকিত কাজের ফারাক তো নির্ণয় করতেই হবে।

 

Facebook Comments Box

Comments

comments

Posted ৯:১৫ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

America News Agency (ANA) |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

 

President/Editor-in-chief :

Sayeed-Ur-Rabb

 

Corporate Headquarter :

 44-70 21st.# 3O1, LIC. New York-11101. USA, Phone : +6463215067.

Dhaka Office :

70/B, Green Road, 1st Floor, Panthapath, Dhaka-1205, Phone : + 88-02-9665090.

E-mail : americanewsagency@gmail.com

Copyright © 2019-2024Inc. America News Agency (ANA), All rights reserved.ESTD-1997