এনা অনলাইন : | মঙ্গলবার, ১২ জানুয়ারি ২০২১ | সর্বাধিক পঠিত
আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে তামাকমুক্ত করার লক্ষ্যে ১২ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) ঢাকার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট, দি ইউনিয়ন এবং ডাব্লিউবিবি ট্রস্টের উদ্যোগে দিনব্যাপী ‘Conference on Sustainable Tobacco Control in Bangladesh’ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সারাদেশ থেকে শতাধিক সরকারি-বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি, পরিবেশবিদ, গণমাধ্যম প্রতিনিধি, কৃষিবিদ, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সরাসরি ও ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হন।
সম্মেলনে তামাক নিয়ন্ত্রণে আর্থিক যোগান, ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইনের দূর্বল দিক ও সংশোধন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়ন, তামাকের উপর কর বৃদ্ধি, তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ ও তামাক কোম্পানির প্রভাব থেকে জনস্বাস্থ্য বিষয়ক সব নীতি সুরক্ষার ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন ও আলোচনা করা হয়।
সম্মেলনে সরাসরি ও ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখেন, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ব স্বাস্থ্য অণুবিভাগ) কাজী জেবুন্নেছা বেগম, জাতীয় যক্ষা নিরোধ সমিতি সভাপতি মোজ্জাফ্ফর হোসেন পল্টু, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি ব্রিগেডিয়ার (অব.) আব্দুল মালেক, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রাণ গোপাল দত্ত, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য্য আ.আ.ম.স আরেফিন সিদ্দিক, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপি, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক স.ম. গোলাম কিবরিয়া, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সমন্বয়কারী (যুগ্মসচিব) মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী, বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের সমন্বয়কারী সাইফুদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।
আ.আ.ম.স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, অধূমপায়ীদের তুলনায় ধূমপায়ীদের মধ্যে কোভিড অর্থাৎ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি ১৪ গুণ বেশি। ক্রমবর্ধমান রোগের জন্য জনসাধারণকে মানসম্মত চিকিৎসা প্রদান রাষ্ট্র ও সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এমতাবস্থায় স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সুরক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী করে তোলা অত্যন্ত জরুরি। তাই রাজস্ব আয়ের দোহাই দিয়ে তামাকের প্রসারের সুযোগ বন্ধ করতে হবে।
ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, পৃথিবীতে সবচেয়ে কম তামাকের কর বাংলাদেশে। এ কর কাঠামো দিয়ে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়া সম্ভব নয়। তামাক নিয়ন্ত্রণে তামাকের কর বাড়ানোর বিকল্প নেই। ই-সিগারেট বন্ধে পাশ্ববর্তী দেশগুলো কার্যকর ব্যবস্থা নিয়েছে। ই-সিগারেটের ক্ষেত্রে আমরা ব্যর্থ হচ্ছি। তামাক কোম্পানিগুলো নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে প্রভাব বিস্তারের কারণে সরকারের তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।
সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম গতিশীল রাখতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতেও অর্থের জোগান নিশ্চিত করতে হবে। তামাক থেকে প্রাপ্ত সারচার্জ আমরা তামাক নিয়ন্ত্রণের কাজে ব্যবহার করতে পারছি না। এজন্য আমাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুসারে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। রাজস্বেও চেয়ে জনস্বাস্থ্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাই তামাক কোম্পানিগুলোকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
এড. সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, তামাক কোম্পানির প্রভাব থেকে নীতি সুরক্ষা, প্যাকেটে স্বাস্থ্য সর্তকবাণীর আকার বৃদ্ধিসহ বিদ্যমান আইনটি সংশোধন করে দ্রুত যুগোপযোগী করা প্রয়োজন।
ফরিদা আখতার বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বে তামাক চাষে জমি ব্যবহারে ১৪তম এবং উৎপাদনে ১২তম। শুধু স্বাস্থ্যখাতই নয়, দেশের কৃষি, পরিবেশ ও প্রাণ বৈচিত্র্যের জন্যও হুমকি এ তামাক। তামাক নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের খাদ্যের উৎপাদন বাড়াতে হবে।
ড. রুমানা হক বলেন, প্রকল্প নির্ভর তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম দিয়ে তামাক মুক্ত বাংলাদেশ গড়া সম্ভব নয়। তামাক নিয়ন্ত্রণে সরকারি-বেসরকারিভাবে মাত্র ৪০ কোটি টাকার ব্যয় হয়। আমাদের স্থায়ীত্বশীল তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের অর্থের জোগান নিশ্চয়তা প্রয়োজন। তামাকের ক্ষেত্রে অর্জিত করের একটি অংশ তামাক নিয়ন্ত্রণে ব্যয় করা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগে মৃত্যুহার ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শুধুমাত্র চিকিৎসা দিয়ে সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। সম্মেলনে সারাদেশ থেকে ১২০ টি সংগঠনের ১৫০ জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। চারটি অধিবেশনে ৬ প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়।