আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, করোনা মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ে চাকরিচ্যুত দুই হাজার সাংবাদিক ১০ হাজার টাকা করে পাবেন। রবিবার (২৫ এপ্রিল) দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের জরুরী বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি একথা জানান। করোনা মহামারীর মধ্যে অকুতোভয়ে কর্মরত সাংবাদিকদের ধন্যবাদ এবং মৃত্যুবরণকারী সাংবাদিকদের আত্মার শান্তি, অসুস্থদের সুস্থতা এবং পৃথিবী করোনামুক্তি কামনা করে মন্ত্রী বলেন, করোনা মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ে যখন লকডাউন চলছে, সরকারী ছুটিতে মন্ত্রণালয়গুলো বন্ধ, এর মধ্যেই আমরা সরকারের পক্ষ থেকে কিভাবে সাংবাদিকদের সহায়তা করতে পারি, সেজন্যই এই জরুরী বৈঠক ডাকা হয়েছে। ট্রাস্টি বোর্ডের সভায় আপাতত ২ হাজার সাংবাদিককে জনপ্রতি ১০ হাজার টাকা করে এককালীন সহায়তা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়া এই অর্থবছরে কল্যাণ ট্রাস্টের নিয়মিত সহায়তার আওতায় আরও প্রায় দুই শতাধিক সাংবাদিককে সহায়তা দেয়া হবে বলে জানান তিনি।
ড. হাছান বলেন, করোনা মহামারীর মধ্যে সাংবাদিকদের ভূমিকা এবং অসচ্ছল, নানা কারণে চাকরিচ্যুত বা চাকরি থাকা সত্ত্বেও বেতন না পাওয়া সাংবাদিকদের সহায়তার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাক্রমে করোনা মহামারীর প্রথম দফায় সারাদেশে দলমত নির্বিশেষে ৩ হাজার ৩শ’ ৫০ সাংবাদিককে সহায়তা দেয়া হয়েছে। যে সমস্ত সাংবাদিক বন্ধু প্রেসক্লাবের সামনে দাঁড়িয়ে সরকারের ওপর বিষোদগার করেন, তাদের মধ্যে অসচ্ছলরাও যেন এই সহায়তা থেকে বাদ না যায়, আমার সেই অনুরোধ সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ রেখেছিলেন, এজন্য তাদের ধন্যবাদ।
বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী করোনাকালে সাংবাদিকদের যে এককালীন সহায়তা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এ ধরনের কোন সহায়তা ভারত-পাকিস্তান-নেপাল-ভুটান-শ্রীলঙ্কা কোথাও দেয়া হচ্ছে না উল্লেখ করে ড. হাছান জানান, করোনায় কেউ যদি মৃত্যুবরণ করে শুধুমাত্র সেই ক্ষেত্রে ভারতে সহায়তা দেয়া হচ্ছে, কিন্তু করোনাকালে অসচ্ছল বা চাকরিচ্যুত হয়েছে এমন কাউকে সেখানে সহায়তা দেয়া হচ্ছে না।
করোনাকালে সাংবাদিকদের চাকরিচ্যুতি বিষয় প্রশ্নের জবাবে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, এসময় এটি অত্যন্ত দুঃখজনক, অনভিপ্রেত ও আমার কাছে অগ্রহণযোগ্য। আমি জানি, সংবাদমাধ্যমগুলো করোনাকালে অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মতোই নানা সমস্যার সম্মুখীন। তবে এও মনে রাখতে হবে এগুলো কোন সরকারী প্রতিষ্ঠান নয়, এর সবগুলো প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান।
ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধের জন্য বিএনপি মহাসচিবের প্রস্তাবের বিষয়ে প্রশ্ন করলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান বলেন, ভারতের সঙ্গে কার্যত সীমান্ত স্বাভাবিক অবস্থায় যেভাবে চালু থাকে সেভাবে চালু নেই। বাংলাদেশের কোন মানুষ সেখানে যেতে পারছে না। সেখান থেকে বাংলাদেশেও কেউ আসতে পারছে না। কিন্তু পণ্য পরিবহন চালু আছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পণ্য পরিবহন বন্ধ করে দিতে বলেছেন, যাতে বাংলাদেশে পণ্যের সঙ্কট হয়। উনি তো বুদ্ধিমান মানুষ, খুব বুদ্ধি করেই বলেছেন, যাতে দেশে একটি সঙ্কট তৈরি হয়। কার্যত সীমান্ত চালু নেই, শুধু পণ্য পরিবহন চালু আছে।
লকডাউন শিথিল করা বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান বলেন, সরকার লকডাউন দেয়ার পর লকডাউন না দেয়ার জন্য, দোকান খোলার জন্য বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। মানুষের জীবন এবং জীবিকা উভয়ই রক্ষাকল্পে সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এবং এ দু’য়ের সমন্বয় করে অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে কাজ করার কারণে বাংলাদেশ প্রথম দফা করোনা মহামারীর ঢেউ যেমন সফলভাবে মোকাবেলায় সক্ষম হয়েছে একইসঙ্গে অর্থনীতিকে রক্ষা করতেও সক্ষম হয়েছে। মাত্র ২০টি দেশে পজেটিভ জিডিপি গ্রোথ হয়েছে যার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান তিন নম্বরে।
খেটেখাওয়া মানুষের কষ্ট হচ্ছে এবং দেশে কয়েক কোটি মানুষ দোকানের ওপর নির্ভরশীল, সামনে ঈদ, এগুলো সরকারকে বিবেচনায় রাখতে হয়। সে কারণে সরকার সীমিত আকারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এগুলো খোলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। আমি মনে করি, যদি সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করে, তাহলে আমাদের পক্ষে করোনা মোকাবেলা করা সম্ভবপর হবে।
সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট বোর্ডের সদস্যদের মধ্যে প্রধান তথ্য অফিসার সুরথ কুমার সরকার, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক-৭ মোহাম্মদ ফিজনূর রহমান, অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. গোলাম মোস্তফা, ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রেস ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এস এম মাহফুজুল হক, বিএফইউজে সভাপতি মোল্লা জালাল, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আব্দুল মজিদ, ডিইউজে সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ, দৈনিক সংবাদের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক কাশেম হুমায়ুন সভায় উপস্থিত ছিলেন।
Posted ৫:০৪ অপরাহ্ণ | রবিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২১
America News Agency (ANA) | ANA