দেশে অস্বাভাবিক হারে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাড়ছে। বিগত ২০১৫-১৬ অর্থবছরের মূল বাজেটে সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্য ছিল ১৫ হাজার কোটি টাকা। বিক্রি বাড়ায় সংশোধিত বাজেটে তা প্রায় দ্বিগুণ বাড়িয়ে ২৮ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু অর্থবছর শেষে নীট সঞ্চয়পত্র বিক্রি তারচেয়েও ৫ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা বেড়ে ৩৩ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা দাঁড়ায়। আর গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের সুদ-আসল পরিশোধেই সরকারের প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। যদিও সঞ্চয়পত্রের অস্বাভাবিক বিক্রিতে সরকার ঋণের বোঝা কমাতে ২০১৫ সালের এপ্রিলে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদের ২ শতাংশ কমায়। কিন্তু তারপরও সঞ্চয়পত্রের বিক্রি বেড়েই চলেছে। জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদফতর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে দেশে ৪ ধরনের সঞ্চয়পত্র চালু আছে। তার মধ্যে ৫ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ, ৩ বছর মেয়াদী ৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ০৪ শতাংশ, ৫ বছর মেয়াদী পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ ও ৫ বছর মেয়াদী পেনশনার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। সর্বশেষ গত বছরের মে মাসে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ২ শতাংশ কমানো হয়। মূলত ব্যাংকের সুদের হার আরো কম এবং পুঁজিবাজার নিরাপদ না হওয়ায় বিনিয়োগের জায়গার অভাবে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি বাড়ছে। সূত্র জানায়, সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাড়ার অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে মধ্যবিত্ত নারীরা। অনেক গৃহিনীই সঞ্চয়পত্রকে নিরাপদ মনে করছেন। প্রতিদিনই বহুসংখ্যক নারী আসছেন সঞ্চয়পত্র কিনতে। মূলত তাদের ওপর ভর করেই প্রতিমাসেই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি। সর্বশেষ আগস্ট মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা। যা আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে দেড় হাজার কোটি টাকারও বেশি।
সূত্র আরো জানায়, গত দুই মাসে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে পরিবার সঞ্চয়পত্র। তারপরেই রয়েছে তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক ও পাঁচ বছর মেয়াদী সঞ্চয়পত্র। মূলত ওই তিন ধরনের সঞ্চয়পত্রের বিক্রিই বেশি হয়ে থাকে। ব্যাংকগুলোতে আমানতের সুদের হার হ্রাস এবং পুঁজিবাজারে দীর্ঘ মন্দার কারণে একটু বেশি লাভের আশায় সবাই নিরাপদ বিনিয়োগ সঞ্চয়পত্রে আগ্রহী হচ্ছে। কারণ সুদের হার কমানোর পরও সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ এখনো অন্য যে কোনো স্কিম থেকে বেশি মুনাফা পাওয়া যায়। ওই কারণেই বিক্রি বাড়ছে।
এদিকে জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদফতরের প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের দুই মাসে এই খাতে নীট বিক্রি হয়েছে ৭ হাজার ৭৯৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। আর আগস্ট মাসে নীট বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ২৯৭ কোটি ২০ লাখ টাকা। একক মাস হিসেবে আগস্টে সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়। যা গত অর্থবছরের তুলনায়ও প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকারও বেশি। গত অর্থবছরের একই সময়ে সঞ্চয়পত্রে নীট বিক্রি আসে ২ হাজার ৬৫০ কোটি ৫১ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরের জুলাই মাসে এই খাতে নীট বিক্রি আসে ৩ হাজার ৪৯৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। গত অর্থবছরের জুলাই মাসে সঞ্চয়পত্রে নিট বিক্রি আসে ১ হাজার ৯৭৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা।
অন্যদিকে অস্বাভাবিক হারে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, দরিদ্র মানুষের সঞ্চয়ের কথা বিবেচনা করেই সরকার সঞ্চয়পত্রে ঋণের সুদ বাড়িয়েছে। কিন্তু সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়ে যাওয়া মানে সরকারের ঋণের বোঝা বেড়ে যাওয়া।
Posted ৬:৪৭ অপরাহ্ণ | রবিবার, ০৯ অক্টোবর ২০১৬
America News Agency (ANA) | Payel