২০১৫ সালে বিশ্বব্যাপী পূর্বের অর্থবছরের একই সময়ের চাইতে ৩ হাজার ৮২৪ কোটি মার্কিন ডলার বা ৭ দশমিক ৮ শতাংশ গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি কমেছে । এর আগে বিশ্বব্যাপী মন্দার সময় ২০০৯ সালে রপ্তানি কমেছিল। এর পর গত কয়েক বছরে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি থাকলেও ধাক্কা গেল গত বছর। আলোচ্য সময়ে বড় রপ্তানিকারক দেশ চীনের গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি কমে যাওয়ায় পুরো রপ্তানি চিত্রে এর প্রভাব পড়েছে। অবশ্য একই সময়ে বাংলাদেশের রপ্তানি কমেনি। বরং বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৬ শতাংশ।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিওটিও) প্রকাশিত সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে এ তথ্য পাওয়া গেছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৪ সালে বিশ্বব্যাপী গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি হয়েছিল ৪৮ হাজার ৩২৮ কোটি মার্কিন ডলার সমমূল্যের। ২০১৫ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৪৪ হাজার ৫শ’ ডলারে।
২০১৪ সালে প্রধান রপ্তানিকারক দেশ চীন ১৮ হাজার ৬৬১ কোটি ডলারের গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি করলেও ২০১৫ সালে তা নেমে এসেছে ১৭ হাজার ৪৭১ কোটি ডলারে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৮টি দেশের রপ্তানিও কমেছে। রপ্তানি কমার তালিকায় আরো রয়েছে হংকং, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র। তবে একই সময়ে বাংলাদেশ ছাড়াও রপ্তানি বেড়েছে ভিয়েতনাম, ভারত, কম্বোডিয়া ও পাকিস্তানের।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আলোচ্য সময়ে বিশ্বব্যাপী অর্থনীতিতে কিছুটা ধীর গতি ছিল। অন্যদিকে কিছু ব্যতিক্রম বাদে ডলারের মূল্য বৃদ্ধিও একটি কারণ। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ইত্তেফাককে বলেন, গত বছর বিশ্ব অর্থনীতি কিছুটা ধীর গতির ছিল। এর ফলে ভোগ-ব্যয়ে কিছুটা কম হয়েছে। এর প্রভাবে গার্মেন্টস পণ্যের রপ্তানি কিছুটা কমেছে। অনদিকে আলোচ্য সময়ে রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ বাদে বেশিরভাগ দেশেরই ডলারের বিপরীতে মুদ্রার অবমূল্যায়ন হয়েছে। ফলে রপ্তানি পরিমাণে বাড়লেও তুলনামূলক অর্থ পাওয়া গেছে কম।
তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু ইত্তেফাককে বলেন, গত বছর বিশ্বব্যাপী গার্মেন্টস খাতে ভোক্তার ব্যয় কমেছে। অন্যদিকে গার্মেন্টস কাঁচামাল তুলার দর কম ছিল। ফলে তৈরি পণ্যের দাম কমায় রপ্তানি মূল্যও কমেছে। এসব কারনে বিশ্বব্যাপী রপ্তানি মূল্য কমেছে বলে মনে করেন তিনি।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৫ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৮টি দেশ মিলিয়ে সম্মিলিতভাবে রপ্তানি করেছে ১৭ হাজার ৪৭১ কোটি ডলারের গার্মেন্টস পণ্য। পূর্বের ২০১৪ সালে ইইউ’র রপ্তানি ছিল ১৮ হাজার ৬৬১ কোটি ডলার। বাংলাদেশ ২০১৪ সালে ২ হাজার ৪৫৮ কোটি ডলারের গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি করলেও গত বছর রপ্তানি ছিল ২ হাজার ৬১৬ কোটি ডলারের। ২০১৪ সালে হংকংয়ের রপ্তানি ২ হাজার ৫১ কোটি ডলার হলেও ২০১৫ সালে তা ১ হাজার ৮শ’তে নেমে আসে। ২০১৪ সালে ভিয়েতনামের রপ্তানি ছিল ১ হাজার ৯৫৪ ডলার। ২০১৫ সালে তা বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ১৫০ ডলার। ২০১৪ সালে তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের গার্মেন্টস রপ্তানি ছিল যথাক্রমে ১ হাজার ৬৬৮ ডলার, ৭৬৭ ডলার ও ৬১১ ডলার। ২০১৫ সালে নেমে এসেছে যথাক্রমে ১ হাজার ৫১৯ ডলার, ৬৮৮ ও ৬০৯ ডলার।
ডব্লিওটিও’র হিসাব অনুযায়ী, গার্মেন্টস রপ্তানিতে চীন যথারীতি প্রথম অবস্থানে রয়েছে। একক দেশ হিসেবে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। অবশ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৮টি দেশ সম্মিলিতভাবে রয়েছে ২য় স্থানে। এর পরের অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে হংকং, ভিয়েতনাম, ভারত, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, কম্বোডিয়া ও পাকিস্তান।
Posted ৯:৩৩ অপরাহ্ণ | বুধবার, ০৫ অক্টোবর ২০১৬
America News Agency (ANA) | Payel