সোমবার ১২ মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৯ বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গ্রেনেড হামলার ১৩তম বার্ষিকী পালিত : বিচার দ্রুত সম্পন্ন করার দাবি

অনলাইন ডেস্ক :   |   সোমবার, ২১ আগস্ট ২০১৭   |   প্রিন্ট   |   644 বার পঠিত

গ্রেনেড হামলার ১৩তম বার্ষিকী পালিত : বিচার দ্রুত সম্পন্ন করার দাবি

অভিযুক্তদের বিচার দ্রুত সম্পন্ন করার দাবি পুনর্ব্যক্ত করার মধ্যদিয়ে জাতি আজ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে ইতিহাসের ভয়াবহতম গ্রেনেড হামলার ১৩তম বার্ষিকী পালন করেছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং এর অংগ ও সহযোগি সংগঠন, ১৪ দলভুক্ত অন্যান্য রাজনৈতিক দল এবং বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের উদ্যোগে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে সারাদেশে এ দিবস পালিত হয়।
রোববার দিবাগত মধ্যরাত ১২টা ১ মিনিটে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে মোমবাতি প্রজ্জোলন করে গ্রেনেড হামলা দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়। এ সময় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা গ্রেনেড হামলায় নিহত ২৪ জনের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে ২৪ মিনিট নিরবতা পালন করেন।
২০০৪ সালের এইদিনে (২১আগস্ট) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস বিরোধী শান্তি সমাবেশে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তৃতার শেষ পর্যায়ে তাঁকে হত্যার উদ্দেশে ওই সমাবেশে নারকীয় গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এই হামলায় শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ স্থানীয় কয়েকজন নেতা সেদিন অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেলেও অপর ২৪ জন নিহত হন।
একুশে আগস্টের সমাবেশে বিকেলে যখন শেখ হাসিনা বক্তৃতা দিচ্ছিলেন তখন আকস্মিক এই হামলায় প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্ল¬ুর রহমানের সহধর্মিনী ও আওয়ামী লীগের তৎকালিন মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ ২৪ জন নেতা-কর্মী নিহত হন। এছাড়াও আহত হন আরো ৪শ’ জন। আহতদের অনেকেই চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছেন। তাদের কেউ কেউ আর স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাননি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন,শেখ হাসিনার বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে আকস্মিক গ্রেনেড বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলে নজীরবিহীন বিশৃংখলা সৃষ্টি হয়। গ্রেনেডের স্প্রিন্টারবিদ্ধ হয়ে যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু ও সন্ধ্যা বেলার ধোয়াচ্ছন্ন পরিবেশে বঙ্গবন্ধু এভিনিউসহ আশপাশের এলাকা হয়ে উঠে বিভিষিকাময়। শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশে এই গ্রেনেড হামলা চালানো হলেও তৎকালিন ঢাকার মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ হানিফ এবং শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত দেহরক্ষীরা তাৎক্ষণিক এক মানব বলয় তৈরির মাধ্যমে নিজেরা আঘাত সহ্য করে শেখ হাসিনাকে গ্রেনেডের হাত থেকে রক্ষা করেন। মেয়র হানিফের মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত অস্ত্রোপাচার করার কথা থাকলেও গ্রেনেডের স্প্রি¬ন্টার শরীরে থাকার কারণে তার অস্ত্রোপাচার করা সম্ভব হয়নি। পরে তিনি ব্যাংকক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এই হামলায় শেখ হাসিনা প্রাণ বাঁচলেও তাঁর শ্রবণ শক্তি নষ্ট হয়ে যায়।
বর্বরোচিত এই গ্রেনেড হামলায় নিহতরা হলেন আইভি রহমান, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী ল্যান্স করপোরাল (অব:) মাহবুবুর রশীদ, আবুল কালাম আজাদ, রেজিনা বেগম, নাসির উদ্দিন সরদার, আতিক সরকার, আবদুল কুদ্দুস পাটোয়ারি, আমিনুল ইসলাম মোয়াজ্ঝেম, বেলাল হোসেন, মামুন মৃধা, রতন শিকদার, লিটন মুনশী, হাসিনা মমতাজ রিনা, সুফিয়া বেগম, রফিকুল ইসলাম (আদা চাচা). মোশতাক আহমেদ সেন্টু, মোহাম্মদ হানিফ, আবুল কাশেম, জাহেদ আলী, মোমেন আলী, এম শামসুদ্দিন এবং ইসাহাক মিয়া। আর আহতরা হলেন : শেখ হাসিনা, আমির হোসেন আমু, আব্দুর রাজ্জাক, সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত, ওবায়দুল কাদের, এডভোকেট সাহারা খাতুন, মোহাম্মদ হানিফ, এএফএম বাহাউদ্দিন নাসিম, নজরুল ইসলাম বাবু, আওলাদ হোসেন, সাঈদ খোকন, মাহবুবা আখতার, এডভোকেট উম্মে রাজিয়া কাজল, নাসিমা ফেরদৌস, শাহিদা তারেক দিপ্তী, রাশেদা আখতার রুমা, হামিদা খানম মনি, ইঞ্জিনিয়ার সেলিম, রুমা ইসলাম, কাজী মোয়াজ্জেম হোসেইন এবং মামুন মলি¬ক।
২০০৪ সালের পর থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিত জনগণ প্রতিবছর ২১ আগস্টকে গ্রেনেড হামলা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। আওয়ামী লীগও প্রতি বছর এদিনটি যথাযথ মর্যাদায় পালন করে থাকে। প্রতিবারের মত এবারও আওয়ামী লীগ দিবসটি স্মরণে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কর্মসূচি হিসেবে আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর ফার্মগেটে খামারবাড়ি এলাকাস্থ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন। দেশের বরেণ্য বুদ্ধিজীবী ও জাতীয় নেতৃবৃন্দ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সাথে সামঞ্জস্য রেখে আওয়ামী লীগের সকল জেলা, মহানগর, উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড শাখা কর্মসূচি পালন করে।
অভিযোগ আছে, ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের এই হত্যাকান্ডের প্রতিকারের ব্যাপারে তৎকালীন বিএনপি সরকার নির্লিপ্ত ভূমিকা পালন করেছিল। শুধু তাই নয় এ হামলার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের রক্ষা করতে তৎকালিন সময়ে সরকারী কর্মকর্তারাও ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেন। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধারকৃত পাঁচটি গ্রেনেড ধ্বংস করে দিয়ে প্রমাণ নষ্ট করার চেষ্টাও করা হয়েছিল।
হামলার পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের তত্ত্বাবধানে একটি তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় এবং এতে জজ মিয়া নামে এক ভবঘুরে, একজন ছাত্র, একজন আওয়ামী লীগের কর্মীসহ ২০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে পরিচালিত তদন্তে তাদের কারো বিরুদ্ধেই অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।
এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বাসসকে বলেন, আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী শান্তি সমাবেশ চলাকালে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এ হামলায় দায়েরকৃত মামলার পলাতক আসামিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকার আইনি এবং কুটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আওয়ামীলীগকে নেতৃত্বশূন্য করতে তৎকালীন বিরোধী দলের নেতা, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দলের প্রথম সারির নেতাদের হত্যার উদ্দেশে এ জঘন্য হামলা চালানো হয়েছিল।
বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস বিরোধী শান্তি সমাবেসে গ্রেনেড হামলার ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দু’টি পৃথক মামলায় আদালতে দাখিলকৃত চার্জশিটে মোট ৫২ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। মামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত সরকারি কৌসুলি এডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল বাসসকে জানান,২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিচার এখন শেষ পর্যায়ে। দীর্ঘ প্রত্যাশিত এই মামলার রায় চলতি বছরের মধ্যেই হবে বলে তিনি আশাবাদী। এডভোকেট কাজল বলেন, বর্তমানে এ মামলায় আসামি পক্ষের ১৩ জনের সাফাই সাক্ষ্য গ্রহন করা হয়েছে। আসামি পক্ষের আরো ৮ থেকে ১০ জনের সাফাই সাক্ষী নেয়া হবে। এ মামলায় উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে আদালত রায় ঘোষণা করবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এর আগে ‘দু’জন তদন্ত কর্মকর্তাসহ (আইও) ২২৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তাদের জেরা সম্পন করেন। এ মামলায় ৪শ’ ৯১ জনের মধ্যে ২২৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। কাজল বলেন, অভিযুক্তদের মধ্যে ১৯ জন এখনো পলাতক রয়েছে।
অভিযুক্তদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামী সেক্রেটারী জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় ও অপর এক মামলায় হরকাতুল জিহাদ প্রধান মুফতি আবদুল হান্নানের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। এছাড়া ৮ জন জামিনে রয়েছে।
অপর ১৯ জন আসামী বিভিন্ন দেশে পলাতক রয়েছে, তাদের গ্রেফতারে ইন্টারপোলের সহায়তা চাওয়া হয়েছে।
পলাতক ১৯ জন আসামীর মধ্যে তারেক রহমান লন্ডনে, শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ সৌদি আরবে , হানিফ এন্টারপ্রাইজের মালিক হানিফ কলকাতায়, ব্রিগেডিয়রি জেনারেল (অব.) এ টি এম আমিন আমেরিকায়, লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ারদার কানাডায়, বাবু ওরফে রাতুল বাবু ভারতে, আনিসুল মোর্সালীন এবং তার ভাই মুহিবুল মুক্তাকীন ভারতের কারাগারে এবং মাওলানা তাজুল ইসলাম দক্ষিণ আফ্রিকায় রয়েছে।
জঙ্গি নেতা শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই, মাওলানা আবু বকর, ইকবাল, খলিলুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে বদর, মাওলানা লিটন ওরফে জোবায়ের ওরফে দেলোয়ার, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপ-কমিশনার (পূর্ব) এবং উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) ওবায়দুর রহমান এবং খান সাঈদ হাসান বিদেশে অবস্থান করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে উল্লেখ করে একটি সূত্র জানায়, তাদের বেশির ভাগই পাকিস্তানে রয়েছে। তবে এ মামলায় অভিযুক্ত পলাতক আসামি হারিস চৌধুরীর অবস্থান জানা যায়নি। পলাতকদের মধ্যে মাওলানা তাজউদ্দিন ও বাবু ওরফে রাতুল বাবু এরা দু’জন বিএনপি সরকারের সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই। পিন্টুও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় অভিযুক্ত।
অভিযুক্ত ৫২ জনের মধ্যে বিএনপি’র সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু বর্তমানে জেলে রয়েছেন।
মামলার চার্জশীটভুক্ত আসামী পুলিশের সাবেক আইজি আশরাফুল হুদা, শহুদুল হক ও খোদাবক্স চৌধুরী এবং সাবেক তিন তদন্ত কর্মকর্তা- সিআইডি’র সাবেক এসপি রুহুল আমিন, সিআইডি’র সাবেক এএসপি আতিকুর রহমান ও আবদুর রশিদ জামিনে রয়েছেন।
২০০৮ সালের ১১ জুলাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২১ আগস্টের ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে পৃথক দু’টি মামলায় প্রথম চার্জশিট দাখিল করা হয়। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু এবং ২১ জন হুজি নেতাকর্মীসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করা হয়।
নতুন করে তদন্তের পরে ২০১২ সালের ৩ জুলাই অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ৩০ জনকে অভিযুক্ত করে পৃথক দু’টি সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করে। দু’টি মামলায় মোট অভিযুক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫২।—বাসস

Facebook Comments Box

Comments

comments

Posted ১১:১০ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২১ আগস্ট ২০১৭

America News Agency (ANA) |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

[abm_bangladesh_map]
Editor-in-chief :
Sayeed-Ur-Rabb
Corporate Headquarter :

44-70 21st.# 3O1, LIC. New York-11101. USA,

06463215067

americanewsagency@gmail.com

Copyright © 2019-2025Inc. America News Agency (ANA), All rights reserved.ESTD-1997