
অনলাইন ডেস্ক : | রবিবার, ০৭ মে ২০১৭ | প্রিন্ট | 660 বার পঠিত
মাদক পাচারের বদনাম থেকে পর্যটন শহর কক্সবাজারকে তুলে আনার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, কক্সবাজারের একটা বদনাম আছে। এখান থেকে নাকি সারাদেশে ইয়াবা পাচার করা হয়। এটা বন্ধ করতে হবে। ইয়াবা পাচারের সঙ্গে জড়িত কাউকে রেহাই দেওয়া হবে না, শাস্তি পেতেই হবে।
কক্সবাজারকে মাদকমুক্ত করতে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, শিক্ষক, অভিভাবক, জনগণ সবার কাছে আমি একটা জিনিসই চাই- সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
শনিবার বিকেলে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে কক্সবাজার আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে কক্সবাজারবাসীর কাছে নৌকায় ভোট দেওয়ারও আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
বোয়িং বিমানে চেপে সকালে কক্সবাজার পৌঁছে পর্যটন শহরটিতে সুপরিসর বিমান চলাচল উদ্বোধনের পর ইনানিতে গিয়ে কক্সবাজার-টেকনাফ ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। বে ওয়াচ রিসোর্টের সামনে সৈকতের বেলাভূমিতে মঞ্চ করে হয় এ অনুষ্ঠান। দুপুরে অনুষ্ঠান শেষ হলে শেখ হাসিনা সোজা সৈকতে নেমে যান। তিনি সেখানে কিছুক্ষণ খালি পায়ে হাঁটেন; নামেন পানিতেও। এরপর বিকেলে কক্সবাজার শহরে ফিরে জনসভাস্থলে গ্যাস সরবরাহ লাইনসহ ছয়টি প্রকল্প উদ্বোধন ও নয়টির ভিত্তি স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী।
জনসভায় শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির চরিত্র হচ্ছে লুটপাট ও দুর্নীতির। তারা মানুষের দুর্দিনেও নেই, উন্নয়নেও নেই। জনগণের কল্যাণে নয়, নিজেদের ভোগ-বিলাসের জন্য তারা ক্ষমতায় আসতে চায়। আওয়ামী লীগ উন্নয়নের রাজনীতি করে। আমরা মানুষের অধিকার আদায় ও উন্নয়নের জন্য রাজনীতি করি।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এ দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার আদায় করেছে। বাংলাদেশের যতটুক উন্নতি তা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই হয়েছে।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে প্রতি রাতে কারফিউ দিয়েছিল। ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত সেই কারফিউ চলেছে। মানুষ স্বাধীনভাবে চলাফেলা করতে পারত না। মানুষের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন হয়েছে। একটার পর একটা ক্যু হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের কোনো ভবিষ্যৎ ছিল না; উন্নত জীবনের কোনো স্বপ্নও দেখতে পায়নি। আওয়ামী লীগ ২১ বছর পর জনগণের ভোটে ফের ক্ষমতায় এসে মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অবৈধভাবে, সংবিধান লঙ্ঘন করে যারা ক্ষমতা দখল করে তারা জনগণের কল্যাণে কোনো কাজ করে না। তারা নিজেদের ভাগ্য গড়তে ব্যস্ত থাকে। তারা নিজেরা অর্থ সম্পদ বানায়, কিছু মানুষকেও দুর্নীতি করার সুযোগ দেয়। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের ভাগ্য নিয়ে তারা ছিনিমিনি খেলে।
শেখ হাসিনা বলেন, ক্ষমতায় এসে আমি ঘোষণা দিয়েছিলাম- শাসক নয়, জনগণের সেবক হিসেবে দেশ পরিচালনা করব। আমার বাবা যে দেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন, আমার কর্তব্য হচ্ছে সেই দেশকে সঠিক পথে পরিচালনা করা। আমি জানি, এটি আমার জন্য কঠিন পথ। তিনি এ সময় প্রিয়জন হারানোর দুঃখের স্মৃতি তুলে ধরেন।
কক্সবাজারের উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালি হাতে আমি আসিনি, উপহারও নিয়ে এসেছি। কক্সবাজারকে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলা হবে ঘোষণা দিয়ে শেখ হাসিনা আরও বলেন, এখানে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও ট্যুরিস্ট জোন গড়ে তোলা হবে। এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেট স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হয়েছে। রেললাইন সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে। আওয়ামী লীগ সরকারই দীর্ঘদিনের এ দাবি পূরণ করছে বলেও উল্লেখ করেন সরকারপ্রধান।
কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দরে উন্নীত করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এরই মধ্যে রানওয়ে সম্প্রসারণ করা হয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত সড়ককে চার লেনে উন্নীত করার জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি। সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপনের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরই মধ্যে মহেশখালী দ্বীপকে জিডিটাল ঘোষণা করা হয়েছে। কক্সবাজারে আমরা সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট করেছি। শেখ হাসিনা বলেন, উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন কাজ শেষ হলে এ এলাকার আমূল পরিবর্তন হবে। এতে সারাদেশের উন্নয়ন হবে।
মাদকের ভয়াবহতা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাদক একটি পরিবারকে ধ্বংস করে। জীবনের চরম ক্ষতি করে। তাই প্রতিটি সন্তানকে মাদকমুক্ত রাখতে হবে। একই সঙ্গে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস রুখে দিতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে মানুষ না খেয়ে গৃহহারা থাকবে না- এমন স্বপ্ন দেখতেন বঙ্গবন্ধু। তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রতিটি মানুষের জন্য ঘর ও তাদের জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করতে সরকার বদ্ধপরিকর। তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকার সময় গঙ্গার পানির বিষয়ে কিছুই করতে পারেননি। তিনি ক্ষমতায় না থাকলে ভারতবিরোধী হয়ে যান, আর ক্ষমতায় গেলে ভারতের সঙ্গে আপস করেন- এটিই তার নীতি। ২০১২ সালে রামু বৌদ্ধবিহারে হামলার জন্য বিএনপি- জামায়াতকে দায়ী করে তিনি। ভিক্ষাবৃত্তিকে অসম্মানকর মাধ্যম উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী দেশ ভিক্ষকমুক্ত করারও ঘোষণা দেন।
Posted ১২:৪০ অপরাহ্ণ | রবিবার, ০৭ মে ২০১৭
America News Agency (ANA) | Payel