
অনলাইন ডেস্ক : | বুধবার, ১৯ এপ্রিল ২০১৭ | প্রিন্ট | 883 বার পঠিত
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ আশংকা প্রকাশ করে বলেছেন যে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণের বর্তমান প্রবণতার ফলে এর মান ক্ষতিগ্রস্ত এবং জাতীয় অগ্রগতির জন্য বিশ্বমানের শ্রমশক্তি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নির্ধারিত লক্ষ্য বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
আজ ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় (জেকেকেএনআইইউ) ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে চ্যান্সেলর হিসেবে বক্তৃতাকালে তিনি বলেন, ‘শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণের শিক্ষার মান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এটা শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশেও বাধা সৃষ্টি করছে এবং আমাদেরকে অবশ্যই এটা বন্ধ করতে হবে।’
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, ‘ভিশন ২০২১’ ও ‘ভিশন ২০৪১’ অনুযায়ী বাংলাদেশ একটি উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার পথে অগ্রসর হচ্ছে। এজন্য ‘এই চলমান উন্নয়ন প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে বিশ্বমানের শিক্ষা নিশ্চিত করে আমাদের জনগণকে শিক্ষিত ও দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে।’ তিনি বলেন, দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে চমৎকার জায়গা হলো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। ‘বিশ্ব এখন অনেক প্রতিযোগিতাপূর্ণ হওয়ায় এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
তিনি বলেন, সরকারি-বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রেই দেশে ও বিদেশে উচ্চতর শিক্ষার প্রসার ঘটেছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার মান ও পরিবেশ এখনো প্রত্যাশিত পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেনি।
আবদুল হামিদ বলেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয় বহুমুখী জ্ঞান চর্চার স্থান এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে যাতে তারা দৈনন্দিন শিক্ষা সূচির পাশাপাশি সাম্প্রতিক বিষয়েও জ্ঞানার্জন করতে পারে।
বক্তব্যের শুরুতেই রাষ্ট্রপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ১৯৭১ সালের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা, বীর ভাষা সৈনিক ও অন্যান্য গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।
রাষ্ট্রপতি জাতীয় কবি নজরুল বিশেষ করে তার বিশ্বের সকল ধর্ম বর্ণ ও পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রচেষ্টার কথা স্মরণ করে তার স্মৃতির প্রতিও গভীর শ্রদ্ধা জানান।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ জাতীয় কবি নজরুলকে এক মহান মানবতাবাদী হিসেবে অভিহিত করে বলেন, তিনি তার লেখনীর মাধ্যমে মানবসৃষ্ট বিভেদের কৃত্রিম দেয়াল ভেঙ্গে ফেলার চেষ্টা করেছেন। রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করেন, নজরুলের নামে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয় কেবল নতুন প্রজন্মের কাছে তার সৃষ্টিশীল কর্মই তুলে ধরবে না, ভবিষ্যতে বাংলা সাহিত্যের এই মহান বিদ্রোহী কবির প্রতি প্রকৃত সম্মান জানানোর একটা পথও রচনা করবে।
আবদুল হামিদ বিদ্রোহী কবির মানবিক দিক সম্পর্কে বলেন, নজরুল সা¤্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ, সামন্তবাদ, ধর্মান্ধতা, সাম্যবাদ ও দমন নীতির বিরুদ্ধে অত্যন্ত সোচ্চার ছিলেন।
তিনি শিক্ষার দরজা উন্মোচন এবং শিক্ষক, গবেষক ও শিক্ষার্থীদের গবেষণা কার্যক্রমের জন্য জাতীয় কবি কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় ও ভারতের আসানসোলস্থ কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরের পরামর্শ দেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বৃটিশ নাট্যকার শেক্সপিয়ার এবং পারস্যের কবি হাফিজ ও শেখ সাদীর জন্মস্থান ক্রমান্বয়ে জনগণের আকর্ষণের স্থানে পরিণত হয়েছে এবং তিনি আশা প্রকাশ করেন, নজরুলের স্মৃতি বিজড়িত ত্রিশালও বিশ্বের আকর্ষণীয় স্থানে পরিণত হবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, সাম্য ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার কবি নজরুল তার লেখনীর মাধ্যমে বৃটিশ শাসকদের ভিত্তি নাড়িয়ে দিয়েছিলেন। তেমনি তার কবিতা ও গান ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও এদেশের অন্যান্য গণতান্ত্রিক আন্দোলনে দেশের মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে।
রাষ্ট্রপতি নতুন গ্রাজুয়েটদেরকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সুখী ও সমৃদ্ধ সোনার বাংলা বিনির্মাণে জাতীয় কবির চেতনা অনুসরণ করা এবং নজরুলের কর্ম ও চেতনায় উদ্বুদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তনে মোট এক হাজার ৮৪৫ জন শিক্ষার্থী স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন এবং এদের মধ্যে ২৮ জন তাদের কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের জন্য স্বর্ণপদক লাভ করেন। অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা ছিলেন ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউসিজি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহিত উল আলম।
—বাসস
Posted ১১:১১ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১৯ এপ্রিল ২০১৭
America News Agency (ANA) | Payel