মঙ্গলবার ১৫ জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩১ আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নৌকায় ভোট দিয়ে আবারও জনসেবার সুযোগ দিন: শেখ হাসিনা

অনলাইন ডেস্ক:   |   মঙ্গলবার, ১৪ মার্চ ২০১৭   |   প্রিন্ট   |   801 বার পঠিত

নৌকায় ভোট দিয়ে আবারও জনসেবার সুযোগ দিন: শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনেও নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আবারও জনগণের সেবা করার সুযোগ দিতে লক্ষ্মীপুরসহ দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, নৌকায় ভোট দিয়ে মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে, ভাষার মর্যাদা পেয়েছে। জনগণ নৌকায় ভোট দিয়েছে বলেই দেশের এত উন্নয়ন হচ্ছে। তাই আগামী নির্বাচনেও নৌকায় ভোট দিয়ে জনসেবা করার সুযোগ দিন।
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, প্রতিটি ছেলেমেয়েকে লেখাপড়া শিখে উন্নত জীবন গড়ে তুলতে হবে। একটি ছেলেমেয়েও যেন জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসে না জড়ায়, মাদকাসক্ত না হয়- সেদিকে অভিভাবক ও পিতামাতাসহ সবাইকে লক্ষ্য রাখতে হবে। বাংলাদেশ যেন শান্তির দেশে পরিণত হয়- সেটাই আমরা চাই।
মঙ্গলবার লক্ষ্মীপুর জেলা শহরের লক্ষ্মীপুর জেলা স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, অতীতে অনেকেই ক্ষমতায় এলেও জনগণের জন্য কিছুই করতে পারেনি। তারা দেশকে কিছু দিতেও পারেনি। বিএনপি ক্ষমতায় আসা মানেই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করা। তারা মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে। আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই কেবল মানুষ কিছু পায়, দেশের উন্নয়ন হয়। জনগণের কল্যাণ করতে চাইলে যে তা করা যায়- আওয়ামী লীগ সেটাই প্রমাণ করেছে। কাজেই আওয়ামী লীগের ওপর ভরসা রাখতে হবে। গত নির্বাচনে ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে যেভাবে ক্ষমতায় এনেছেন, সেভাবেই আগামী নির্বাচনেও নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আবারও ক্ষতায় আনতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নৌকা নূহ নবীর সৃষ্টি। এই নৌকাই মানুষের জীবন রক্ষা করে। ৭০ সালের নির্বাচনে এদেশের মানুষ নৌকায় ভোট দিয়েছিল বলেই আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। আওয়ামী লীগই ভাষার মর্যাদা রক্ষা করেছে। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে একশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি পেয়েছে।
আবেগাপ্লুত কণ্ঠে শেখ হাসিনা দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আসুন সবাই মিলে দেশকে গড়ে তুলি। আমি বাবা-মা-ভাইসহ সবাইকে হারিয়েছি। এদেশে ফিরে এসে আপনাদের মাঝেই আমার হারিয়ে যাওয়া মা-বাবা-ভাইদের ভালোবাসা ও স্নেহ ফিরে পেয়েছিলাম। আপনাদের জন্যই আমার জীবন উৎসর্গ করেছি। আপনাদের উন্নয়ন ও কল্যাণে প্রয়োজনে বাবার মতো নিজের জীবন দিয়ে হলেও আপনাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাবো। এটাই আমার প্রতিজ্ঞা।’
প্রধানমন্ত্রী তার ৩২ মিনিটের বক্তব্যে পঁচাত্তরের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার পর সামরিক স্বৈরশাসকদের দুঃশাসনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, পঁচাত্তরের পর বাংলাদেশে হত্যা-ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু হয়। মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হত্যা ও অত্যাচার-নির্যাতন করা হয়েছে। দেশ পিছিয়ে গেছে। ২১টি বছর এদেশের মানুষ কষ্ট ভোগ করেছে, শোষিত বঞ্চিত ছিল। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরই মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হতে শুরু করে।
এ প্রসঙ্গে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও লুটপাটের বিবরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, তারা যখনই ক্ষমতায় এসেছে, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করেছে। মানুষের জীবনে ত্রাস সৃষ্টি করেছে। মানুষকে হত্যা করা, অত্যাচার-নির্যাতন করা এটাই বিএনপির চরিত্র। ক্ষমতায় গেলে বিএনপি-জামায়াত লুটপাট ও দুর্নীতি করে। এতিমের টাকা চুরি করে খেয়েছে। এটাই হচ্ছে দুর্ভাগ্য। এই বিএনপি-জামায়াত যখন ক্ষমতায় ছিল, লক্ষ্মীপুরেও ১৩ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষও হত্যা থেকে রেহাই পায়নি।
২০১৪ সালের নির্বাচন বানচাল ও সরকার পতন আন্দোলনের নামে ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে বিএনপি-জামায়াত জোটের সন্ত্রাস-নৈরাজ্য ও মানুষ পুড়িয়ে হত্যার বিবরণও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, বিরোধী দলে থাকতেও বিএনপি মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে। খালেদা জিয়া তার গুলশানের অফিসে বসে হুকুম দিয়েছেন। আর তার কুলাঙ্গার ছেলেও বিদেশে বসে হুকুম দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছেন। আগুন দিয়ে ও পেট্রোল বোমা মেওে ২৩১ জন মানুষকে হত্যা ও ১০৩৮ জনকে আহত করা হয়েছে। ৭০টি সরকারি অফিস, ৬টি ভূমি অফিস ও হাজার হাজার যানবাহন পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। জনগণের জীবনে চরম ভোগান্তি সৃষ্টি করা হয়েছে। পরে জনগণই এদের নির্যাতন ও হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে।
তিনি বলেন, বিএনপি ধর্মে বিশ্বাস করে না। তারা শত শত কোরআন শরীফ পুড়িয়েছে, মসজিদে আগুন দিয়েছে। যারা এভাবে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করে, কোরআন পোড়ায় এবং মসজিদে আগুন দেয়-তারা কীভাবে ধর্মে বিশ্বাস করে। বিএনপি নেত্রী হুকুম দিয়ে এগুলোই করিয়েছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে দেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিটি পিতা-মাতা ও অভিভাবককে বলবো নিজ নিজ ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করাতে হবে। মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এই ছেলেমেয়েরা কেন জঙ্গিবাদে লিপ্ত হবে? সন্ত্রাসে জড়িয়ে পড়বে, মাদকাসক্ত হবে? ইসলাম শান্তির ধর্ম, পবিত্র ধর্ম। ইসলামে জঙ্গিবাদ ও মানুষ হত্যা করার কথা বলা হয়নি। নিরীহ মানুষকে হত্যা করে কেউ বেহেশতেও যেতে পারেনি। তাই ধর্মের নামে কোনো ছেলেমেয়ে যাতে জঙ্গিবাদে না জড়ায়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি বলেন, জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকলেও কেউই ভারতের কাছ থেকে এক লিটার পানিও আনতে পারেনি। স্থলসীমান্ত ও সমুদ্রসীমার অধিকার আদায় করতে পারেনি। আওয়ামী লীগই ক্ষমতায় এসে গঙ্গা পানি চুক্তি করেছে। স্থলসীমা চুক্তির বাস্তবায়ন ও সমুদ্রসীমার অধিকার আদায় করেছে।
লক্ষ্মীপুরের উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ লক্ষ্মীপুরবাসীর জন্য উপহার নিয়ে এসেছি। যেসব উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলাম, সেগুলোর কাজ যাতে দ্রুত ও ভালোভাবে শেষ হয়- সেদিকে আপনারাই খেয়াল রাখবেন।
টানা দুই মেয়াদে দেশ ও জনগণের কল্যাণে তার সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলো তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পদক্ষেপের ফলে ৫ কোটি মানুষ দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেয়েছে। আগামীতে একটি মানুষও আর দরিদ্র থাকবে না। গৃহহারা থাকবে না। একটি মানুষও যেন কষ্ট না পায়- সেটিই আমাদের লক্ষ্য। আজ দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। মানুষের জীবনে শান্তি ফিরে এসেছে। ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করবো ইনশাল্লাহ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারযোগে দুপুর ১টা ২৫ মিনিটে লক্ষ্মীপুর জেলা সদরে পৌঁছান। স্থানীয় সার্কিট হাউসে মধ্যাহ্ন ভোজ ও বিশ্রাম শেষে বিকেল পৌনে ৩টায় জনসভাস্থলে এসে পৌঁছলে জনতা বাধভাঙা উচ্ছ্বাস ও তুমুল স্লোগানের মাধ্যমে স্বাগত জানান তাকে। এ সময় প্রধানমন্ত্রীও হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান তাকে। প্রথমেই প্রধানমন্ত্রী ১০টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ২০টি উন্নয়নমূলক প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরে জনসভায় বক্তব্য শেষে বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে হেলিকপটারযোগে ঢাকায় রওয়ানা হন।
লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিঙ্কুর সভাপতিত্বে জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, ত্বরীকত ফেডারেশনের মহাসচিব এমএ আউয়াল এমপি, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীম, কৃষি ও সমবায় সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, ক্রীড়া সম্পাদক হারুনুর রশীদ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথ এমপি, লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শামসুল ইসলাম, স্থানীয় এমপি একেএম শাহজাহান কামাল, অ্যাডভোকেট নূরজাহান মুক্তা ও মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন, লক্ষ্মীপুর পৌরসভার মেয়র আবু তাহের প্রমুখ।

Facebook Comments Box

Comments

comments

Posted ৭:১১ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৪ মার্চ ২০১৭

America News Agency (ANA) |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

[abm_bangladesh_map]
Editor-in-chief :
Sayeed-Ur-Rabb
Corporate Headquarter :

44-70 21st.# 3O1, LIC. New York-11101. USA,

06463215067

americanewsagency@gmail.com

Copyright © 2019-2025Inc. America News Agency (ANA), All rights reserved.ESTD-1997