
এনা অনলাইন : | বৃহস্পতিবার, ২৭ অক্টোবর ২০২২ | প্রিন্ট | 12765 বার পঠিত
এয়ার টিকেটের দাম যত দিন যাচ্ছে, ততই বাড়ছে। এ বছর সামারে টিকেটের দাম তুলনামূলক বেশী ছিল। বৈশ্বিক মহামারী করোনার পর একদিকে আর্থিক সঙ্কট, অন্যদিকে টিকেটের মূল্যবৃদ্ধির কারণে গেল সামারে বহু পরিবার বাংলাদেশে যাননি।
তাদের বড় একটি অংশ এবার উইন্টারে দেশে বেড়াতে যাচ্ছেন। তারা ভিড় করছেন নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ত ট্রাভেল এজেন্সির কাছে। বেশকিছু এয়ারলাইন্সের টিকেটে সেল চলছে। তবে দেশে যাবার উদ্যোগ নিলেও গ্রামে পরিবারের নিরাপত্তাহীনতা ও বিমানবন্দরে অব্যবস্থাপনা ও হয়রানি নিয়ে শঙ্কিত প্রবাসীরা।
জানা গেছে, ঢাকার শাহজালাল (র,) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রী হয়রানি বন্ধে সরকার ব্যাপক চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু তাতে আশানূরূপ কোনো ফল আসছে না। প্রায়ই প্রবাসীরা নানান অজুহাতে কাস্টমস ও ইমিগ্রেশনে হয়রানি হচ্ছেন। বিষয়টি অনেকটা ‘এক বালতি দুধের মধ্যে এক ফোটা চোনা’ ঢেলে দেবার মত। অর্থাৎ সরকার সর্বোত্তম সেবা দেওয়ার চেষ্টা করলেও কিছু কিছু ঘটনা প্রবাসীদের মনে বেশ দাগ কাটছে।
নিউইয়র্কের নির্ভরযোগ্য ট্রাভেল এজেন্ট বাংলা ট্রাভেলের একজন কর্মকর্তা জানান, গেল সামারে এয়ার টিকেটের দাম বেশী ছিল। তারপরও তুলনামূলক কম দামে টিকেট বিক্রি করেছেন তারা। কিন্তু অনেক পরিবার সামারে দেশে যাননি। এবার উইন্টারে টিকেটের দাম কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। ফলে অনেক পরিবার উইন্টারে দেশে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। উইন্টার সেল ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে, যা চলবে নভেম্বর পর্যন্ত। ২৫ ডিসেম্বর বড় দিনকে সামরে রেখে টিকেটের দাম সবচেয়ে বেশী থাকে। তবে ১০ জানুয়ারির পর দাম আবার কমে আসবে, যা চলবে এপ্রিল পর্যন্ত। তবে বিগত বছরগুলোতে যেভাবে কম দামে টিকেট বিক্রি হয়েছে, জ্বালানির দাম বৃদ্ধিতে সে সুযোগ আবার কবে ফিরে আসবে বলা কঠিন।
তিনি বলেন, বাংলা ট্রাভেল প্রবাসীদের বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান। এ কারণে এয়ার টিকেট নিতে তাদের ট্রাভেলে ভিড় করছেন। কেউ ফোনে বুকিং দিচ্ছেন। ওই কর্মকর্তা আরো জানান, বাংলা ট্রাভেল সরকারের প্রয়োজনীয় অনুমতি নিয়ে বিমানবন্দরে প্রবাসীদের সেবা দিচ্ছে। ফলে প্রবাসীরা খুব সহজেই বিমানবন্দর থেকে বাসায় চলে যাচ্ছেন।
ওয়ার্ল্ড ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলের একজন কর্মকর্তা জানান, যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন টিকেটের দাম তুলনামূলক কম। তবে আগামী সামারে টিকেটের দাম বাড়বে। তিনি বলেন, এখন থেকে এয়ার টিকেটের দাম বাড়বে। তবে উইন্টারে সেল চলছে। বিভিন্ন এয়ারলাইন্স সেল দিচ্ছে। এ কারণে অনেকে উইন্টারে সপরিবারে দেশে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বরং সামারের চেয়ে এবারের উইন্টারে দেশে যাবার হিড়িক পড়েছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
সম্প্রতি কুয়েত এয়ারলাইন্সে সপরিবারে দেশে গেছেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের এক নেতা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নেতা জানান, বিমানবন্দরে তিনি কাস্টমস কর্মকর্তাদের কাছে হয়রানির শিকার হয়েছেন। গ্রিন চ্যানেল দিয়ে বের হবার সময় তার হ্যান্ড লাগেজ স্ক্যানিংয়ে দেওয়া হয়। লাগেজে দুটি নতুন আইফোন ছিল। এটা দেখে এক কাস্টমস কর্মকর্তার চক্ষু চড়কগাছ হয়। তিনি এরপর সবকটি লাগেজ স্ক্যানিংয়ে দেন। দুটি আইফোন ছাড়া তার কাছে আর কিছু পাওয়া যায়নি। অথচ যে কোনো প্রবাসী বিনা শুল্কে দুটি নতুন ফোন সঙ্গে নিতে পারেন। এরপরও কেন তার সব লাগেজ স্ক্যান করে সময় নষ্ট করা হলো তার সদুত্তর পাননি ওই কাস্টমস কর্মকর্তার কাছ থেকে।
আওয়ামী লীগ নেতা আরো জানান, কাস্টমসের গ্রিন চ্যানেল অতিক্রম করার সময় কোনো যাত্রীর লাগেজ তল্লাশীর নিয়ম নেই। তবে যদি কোনো আগাম তথ্য থাকে তাহলে তাকে আটক করে তল্লাশীর নিয়ম রয়েছে। অথচ ঢাকার একশ্রেণির কাস্টমস কর্মকর্তা কোনো নিয়মই মানতে চান না। তিনি জানান, কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা আমেরিকা, ব্রিটেন ও ইউরোপ প্রবাসীদের কিছুটা সমীহ করেন। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্য থেকে যারা যান, তাদের নানাভাবে হয়রানি করেন। অনেক সময় তাদের ‘অমানুষ’ ভেবে আচরণ করা হয়। কবে যে বিমানবন্দরে যাত্রী হয়রানি বন্ধ হবে, প্রশ্ন রাখেন ওই নেতা।
একাধিক সূত্র জানায়, ঢাকার শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসা-যাওয়ার পথে প্রতিনিয়ত হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন প্রবাসীরা। বর্তমানে প্রায় ১ কোটি ২৬ লাখ ৭৩ হাজার ৮৬১ জন প্রবাসী বাংলাদেশি বিশ্বের আনাচে-কানাচে বসবাস করছেন। প্রবাসীরা দেশে ফেরত আসার সময় প্রতিনিয়ত বিমানবন্দরে কর্মরত কতিপয় কর্মকর্তার অসদাচরণ এবং হয়রানির শিকার হচ্ছেন। অসংখ্য অভিযোগ, বছরের পর বছর সংবাদ প্রকাশ, মন্ত্রীপর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, সিভিল এভিয়েশনের কড়া তদারকি, প্রশাসনিক নজরদারিসহ গোয়েন্দা বিভাগগুলোর নানামুখী তৎপরতার পরও বন্ধ হচ্ছে না বিমানবন্দরে প্রবাসী হয়রানি। এর প্রভাব পড়ছে রেমিট্যান্সের ওপর।
সম্প্রতি বিমানবন্দরে হয়রানির খবর লিড নিউজ হওয়ার পর সরকারে নজরে আসে বিষয়টি। সরকারের পক্ষ থেকে বিমানবন্দরে গণশুনানির আয়োজন করা হয়। সেখানে প্রবাসীরা এন্তার অভিযোগ করেন ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। কিন্তু সেই গণশুনানির ফল কী তা আজো প্রকাশ করেনি সরকার।
প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকেও বিমানবন্দরে যাত্রী হয়রানি বন্ধের ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা থাকলেও কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। কোনোভাবেই বন্ধ হচ্ছে না এ হয়রানি। নিরাপত্তা তল্লাশির নামে যাত্রীদের এ ভোগান্তির মুখে পড়তে হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, যাত্রীদের লাগেজ সংগ্রহে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। অনেক সময় সংঘবদ্ধ চক্র লাগেজ গায়েব করে ফেলে। প্রবাসীদের পাশাপাশি ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে বিদেশিরাও বিমানবন্দরে এসে রক্ষা পাচ্ছেন না এই হেনস্তার শিকার থেকে। মূলত ইমিগ্রেশন পুলিশের হয়রানির শিকার হয়ে বহির্গামী যাত্রীদের নাভিশ্বাস উঠেছে।
এদিকে বিগত বছরগুলোতে দেশে বেড়াতে গিয়ে গ্রামের বাড়িতে অনেক পরিবার নিরাপত্তাজনিত সমস্যায় ভুগছেন। বিশেষ করে নানান অজুহাতে তাদের কাছে চাঁদা বা ডোনেশন দাবি করা হচ্ছে। না দিলে হুমকি আসছে। সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় একজন ইউরোপ প্রবাসীকে চাঁদাবাজরা হুমকি দিয়েছে। প্রতিবছর মোটা অংকের ডোনেশন না দিলে সম্পত্তির ওপর তাদের নজর পড়বে বলে হুমকি দিয়েছে চাঁদাবাজরা। বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। কিন্তু নিরাপত্তার যথেষ্ট আশ্বাস পাননি ওই প্রবাসী।
নিউইয়র্কে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রবাসী জানান, তিনি রাজনীতি করেন। গত বছর সামারে তিনি সপরিবারে দেশে বেড়াতে গিয়েছিলেন। কিন্তু রাজনৈতিক লেবাসধারীদের অত্যাচারে তিনি ছুটি শেষের আগেই পরিবার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত এসেছেন। আর দেশে যাবেন কী না জানতে চাইলে ওই প্রবাসী জানান, আগামী বছর নির্বাচনের মওসুম। দেশে গেলে নিরাপত্তাহীনতা দেখা দিতে পারে। এ কারণে আপাতত দেশে যাবার পরিকল্পনা নেই বলে জানালেন ওই নেতা।
—ঠিকানা
Posted ১২:০০ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৭ অক্টোবর ২০২২
America News Agency (ANA) | ANA