মঙ্গলবার ১৫ জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩১ আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শতবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

এনা অনলাইন :   |   বৃহস্পতিবার, ০১ জুলাই ২০২১   |   প্রিন্ট   |   540 বার পঠিত

শতবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শত বছর পূর্ণ করে আজ ১ জুলাই (বৃহস্পতিবার) ১০১ বছরে পা দিয়েছে। প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়টি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক দিক থেকে অবদান রেখে চলছে। সেই সঙ্গে অবদান রাখছে শিক্ষা ও গবেষণায়।

ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসনামলে জ্ঞানর্জনে পিছিয়ে ছিল পূর্ব বাংলা। এই অঞ্চলের অধিকাংশই ছিল মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ। বাংলাভাষী এই অঞ্চলের মুসলমানদেরকে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে প্রতিষ্ঠা করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। যেটি পরবর্তীতে বাঙালির অধিকার আদায়ে বৃটিশবিরোধী আন্দোলন, বাংলা ভাষা আন্দোলন, ’৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান এবং সর্বোপরি ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখে। বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামের সূতিকাগার হিসেবে পরিচিত এই বিশ্ববিদ্যালয় আজ পূর্ণ করেছে একশ বছর।

মহামারি করোনার কারণে শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষ্যে সশরীরে কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন রাখেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে বিকেল ৪টায় ভার্চুয়ালি একটি আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়েছে। এতে মূলবক্তা হিসেবে সংযুক্ত থাকবেন বিশিষ্ট ভাষাসৈনিক, কলামিস্ট ও বুদ্ধিজীবী সর্বজন শ্রদ্ধেয় আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। তিনি ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ : ফিরে দেখা’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন।

উপাচার্য আরও বলেন, শতবর্ষের বর্ণাঢ্য ও জাঁকজমকপূর্ণ মূল অনুষ্ঠান আগামী ১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় চ্যান্সেলর আবদুল হামিদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে শতবর্ষের মূল অনুষ্ঠান উদ্বোধন করতে সানুগ্রহ সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন।

দিবসটি উপলক্ষে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান কার্জন হল প্রাঙ্গণে একটি বুদ্ধ নারিকেল গাছের চারা রোপণের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষে শত বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিরও উদ্বোধন করেন।

১৯১১ সালে ব্রিটিশ ভারতে বঙ্গভঙ্গ রদের পর পূর্ববঙ্গের মানুষের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ প্রশমিত করতে ব্রিটিশ সরকার ঘোষণা দেয় পূর্ববঙ্গের তৎকালীন রাজধানী ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার। তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর একটি মহল বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠায় বিরোধিতা করলেও নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ১৯২১ সালের ১ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। একেবারে শূন্য থেকে শুরু করে জাতি বিনির্মাণে ভূমিকা রাখে পূর্ববঙ্গের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক বিশ্ববিদ্যালয়টি। শুধু জাতি গঠনই নয়, গণতন্ত্রের জন্য আপসহীন সংগ্রামেও নেতৃত্ব দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

ব্রিটিশ এবং পরে পাকিস্তান আমলে এই অঞ্চলের মানুষ যে পিছিয়ে ছিল, সেই অসামঞ্জস্য দূর করার ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা ছিল ঐতিহাসিক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়েছে ঔপনিবেশিক শাসনের শেষ দিকে। এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ২৭ বছর পর এদেশে ব্রিটিশ শাসনের অবসান হয়েছে। তখন এই অঞ্চল পশ্চাৎপদ ছিল। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার প্রতিষ্ঠার অল্প সময়ের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে। ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রাম, যেটা পরে ঢাকায় পাকিস্তানবিরোধী আন্দোলনে পরিণত হয়। তারপর ২৫ বছরের আন্দোলন বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামে পরিণত হলো। এই ঐতিহাসিক পরিস্থিতির জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যে ভূমিকা রেখেছে সেটা হলো, একদল উচ্চশিক্ষিত মানুষ তৈরি করেছে, যারা ঐতিহাসিক পরিস্থিতিতে ভূমিকা রেখেছেন।

শতবর্ষ আগে বিশ্ববিদ্যালয় যখন গঠন হয় তখন ৮৪৬ ছাত্রের সঙ্গে ছাত্রী ছিলেন মাত্র এক জন। তার নাম লীলা নাগ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রী হিসেবে ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নেন তিনি। শুরুর দিককার এসব ছাত্রীরা সমাজে একেকজন নারী শিক্ষার রোল মডেল হিসেবে কাজ করেছেন। তাদের দেখে আরো মানুষ উৎসাহিত হয়েছেন, তারা নিজেরাও সমাজে নারী শিক্ষা বিস্তারে কাজ করেছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, এই জাতির যা কিছু মহৎ, যা কিছু উত্তম তার সবকিছুর পেছনের যে ভূমিকা তা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের। একটি জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, একটি অসাম্প্রদায়িক, মানবিক, বুদ্ধিভিত্তিক আন্দোলনে, জাতীয়তাবাদী, গণতান্ত্রিক মূলবোধের বিকাশে সর্বোপরি একটি জাতির সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক গণতান্ত্রিক এই সব মূল্যবোধের লালনকেন্দ্রের উৎপত্তিস্থল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এটিকে আবর্তন করেই জাতির সব বৃহত্তর অর্জনসমূহ, সব উন্নয়নের একটি শক্তিশালী নিয়মক ও অনুঘটক ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ের। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশের সবই ইতিহাস এবং একসূত্রে গাঁথা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই দেশের, এই ভূখণ্ডের মানুষের উচ্চশিক্ষার পথটিকে সুগম করে। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা ইতিহাসে স্বর্ণোজ্জ্বল থাকবে সবসময়। আর একই সঙ্গে উচ্চশিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে এই দেশের মানুষের সচেতন করার ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তারই ফলশ্রুতিতে আমরা দেখেছি, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, মহান মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন, গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রাম সর্বক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। এগুলো ভবিষ্যতে যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসবেন বা শিক্ষকতায় আসবেন তাদের জন্য সবসময় অনুপ্রেরণার অংশ হয়ে থাকবে।

Facebook Comments Box

Comments

comments

Posted ৬:৫২ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০১ জুলাই ২০২১

America News Agency (ANA) |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

[abm_bangladesh_map]
Editor-in-chief :
Sayeed-Ur-Rabb
Corporate Headquarter :

44-70 21st.# 3O1, LIC. New York-11101. USA,

06463215067

americanewsagency@gmail.com

Copyright © 2019-2025Inc. America News Agency (ANA), All rights reserved.ESTD-1997