মিয়ানমারে সেনাশাসন অবসানের দাবিতে চলমান বিক্ষোভে ফের গুলি চালিয়েছে দাঙ্গা পুলিশ ও সেনাসদস্যরা। গুলিতে ছয়জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। মঙ্গলবার দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর কালেতে এই গুলির ঘটনা ঘটে। তবে ইয়াঙ্গুনে এদিন সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ হয়েছে। সেখানেও কয়েকজন আহত হয়েছেন।
এদিকে সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কাউন্সিলকে ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠী’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে অং সান সু চির দল এলএনডির সংসদীয় কমিটি। খবর এএফপি, বিবিসি ও রয়টার্সের।
কালে শহরে মঙ্গলবার গুলি চালানোর বিষয়ে এক শিক্ষক জানান, ব্যারিকেড ভেঙে পুলিশের দিকে এগিয়ে আসা বিক্ষোভকারীরা ইটপাটকেলসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র ছুড়তে শুরু করেন। তখন তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায় দাঙ্গা পুলিশ।
তিনি বলেন, ‘পুলিশ ও সেনারা এমন ভাব করছে, যেন তারা যুদ্ধক্ষেত্রে আছে। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।’ তবে গুলি চালানোর বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্ররা। গুলি করার পর বিক্ষোভকারীরা আরও ফুঁসে ওঠেন। তারা সেনাশাসনের অবসানের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন।
অন্যদিকে মঙ্গলবার মিয়ানমারের বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুন মূলত রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। হাজারো বিক্ষোভকারীর মুহুর্মুহু স্লোগানে প্রকম্পিত হয় আশপাশ। থেমে থেমে পুলিশের সঙ্গে প্রতিবাদকারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। বিক্ষোভ দমনে জলকামান, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে পুলিশ। এসব উপেক্ষা করে সামনে এগোনের চেষ্টা করেন তারা।
এএফপির ছবিতে দেখা যায়, বিক্ষোভকারীরা নিজেদের বানানো ঢাল, টিয়ার গ্যাসের শেল থেকে আত্মরক্ষার জন্য বিশেষ ধরনের মাস্ক নিয়ে রাস্তায় নামেন। সড়কে পুলিশের দেওয়া ব্যারিকেডের কাছে অবস্থান নিয়ে পিকেটিং করতে থাকেন বিক্ষোভকারীরা। এ সময় তারা স্লোগান দেন- ‘আমাদের নির্যাতন করা হলে বিস্ফোরণ ঘটবে। আমাদের আঘাত করা হলে পাল্টা আঘাত হানা হবে।’ বিক্ষোভের সময় ইয়াঙ্গুনের চারটি পৃথক স্থানে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ স্টান গ্রেনেড ছোড়ে। রোববার পুলিশের গুলিতে নিহত বিক্ষোভকারী নাই নাই হতেত নাইংয়ের কফিন নিয়ে ইয়াঙ্গুনে মিছিল করেন সেনাবিরোধী প্রতিবাদকারীরা। এ সময় সেনাশাসনের অবসান চেয়ে তারা স্লোগান দেন।
নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে অং সান সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) বড় জয় পেলেও তার স্বীকৃতি না দিয়ে সেনাবাহিনী নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তোলে। ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বেসামরিক সরকারকে হটিয়ে সেনাবাহিনী মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে। নির্বাচিত নেত্রী সু চি ও এনএলডির অধিকাংশ নেতাকে হয় কারাগারে না হয় বাড়িতে বন্দি করে রেখেছে।
এরপর থেকেই মিয়ানমারজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। অভ্যুত্থানের পর থেকে এ পর্যন্ত সেনা সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে অন্তত ২১ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এক পুলিশ সদস্যও নিহত হয়েছেন।
Posted ১১:৩০ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০২ মার্চ ২০২১
America News Agency (ANA) | Payel