শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম
শিরোনাম

আইসিপিসি-২০২২ চ্যাম্পিয়ন এমআইটি

এনা অনলাইন :   মঙ্গলবার, ১৫ নভেম্বর ২০২২ 12817
আইসিপিসি-২০২২ চ্যাম্পিয়ন এমআইটি

দেশে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো প্রোগ্রামিংয়ের বিশ্বকাপখ্যাত আন্তর্জাতিক কলেজিয়েট প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় (আইসিপিসি ২০২২) ওয়ার্ল্ড ফাইনালস। গত ৬-১১ নভেম্বর রাজধানীর আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টার, বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) অনুষ্ঠিত হয় এবারের প্রতিযোগিতা। আইসিপিসির ৪৫তম এ আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি)। লিখেছেন হাসান জাকির-

বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের সেরা কম্পিউটার প্রোগ্রামারদের দেশে প্রথমবারের মতো আয়োজিত হলো আন্তর্জাতিক কলেজিয়েট প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় (আইসিপিসি ২০২২) ওয়ার্ল্ড ফাইনালস। গত ৬-১১ নভেম্বর রাজধানীর আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টার, বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) অনুষ্ঠিত এবারের প্রতিযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, রাশিয়া, চীন, জাপান, কোরিয়া, ভারত, পাকিস্তান এবং স্বাগতিক বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৭০টি দেশের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩৭টি দল অংশ নেয়। প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় এমআইটি, অক্সফোর্ড, ইয়েল, আইআইটির মতো বিশ্বখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের একঝাঁক তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থী; যাঁরা আগামী দিনে বিশ্বের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করবেন। প্রতিযোগী, বিচারক, শিক্ষক এবং অতিথি মিলিয়ে প্রায় দেড় হাজার মানুষের সমাগমে বিশ্বসেরা তরুণ প্রোগ্রামারদের মিলনমেলায় পরিণত হয় আইসিসিবি। ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের (ইউএপি) উদ্যোগে আইসিপিসি ঢাকা আয়োজন সহযোগী ছিল সরকারের আইসিটি বিভাগ। বিশ্বজুড়ে এ আয়োজনের ডায়মন্ড পৃষ্ঠপোষক হুয়াওয়ে।

ঢাকায় প্রোগ্রামারদের মিলনমেলা

আইসিপিসির চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণে প্রতিটি দেশেই স্থানীয়ভাবে আয়োজিত হয় প্রতিযোগিতা। এ প্রতিযোগিতা থেকে নির্বাচিত সেরা কয়েকটি দল ওয়ার্ল্ড ফাইনালসে অংশগ্রহণের সুযোগ পায়। স্বাগতিক দেশ হিসেবে এবার বাংলাদেশ থেকে অংশ নেয় ৮টি দল। এবারের প্রতিযোগিতায় আফ্রিকা-আরব অঞ্চল থেকে ১৬টি, এশিয়া-প্যাসিফিক থেকে ৩৫টি, ইউরোপ থেকে ১৬টি, চীন থেকে ১৬টি, রাশিয়া অঞ্চল থেকে ১৬টি এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১৪টি দল অংশগ্রহণ করে। গত ৬ নভেম্বর থেকে বিভিন্ন দেশের নির্বাচিত প্রতিযোগীরা ঢাকায় আসতে শুরু করেন। ৭ নভেম্বর ছিল অংশগ্রহণকারী দলের নিবন্ধন, সাবেক প্রতিযোগীদের অংশগ্রহণে অ্যালামনাই টক, কনসার্ট। তৃতীয় দিনে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করা হয়। এ দিন উৎসবে আগত প্রতিযোগী, বিচারকসহ অন্যান্য অংশগ্রহণকারীর জন্য বিশেষ প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করে পৃষ্ঠপোষক হুয়াওয়ে। এতে হুয়াওয়ে তার বিভিন্ন প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন তুলে ধরে। এ সময় হুয়াওয়ের করপোরেট কমিউনিকেশন্স বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট ভিকি ঝ্যাং উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া ছিল আইসিপিসি চ্যালেঞ্জ নামক বিশেষ আয়োজন।

চতুর্থ দিন ৯ নভেম্বর মূলত প্রতিযোগিতা সম্পর্কে হাতেকলমে ধারণা দিতে মক কনটেস্ট (পরীক্ষামূলক প্রতিযোগিতা) আয়োজন করা হয়। এ সময় প্রতিযোগীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিচারক প্যানেল ও আয়োজকরা। ১০ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয় মূল প্রতিযোগিতা।

প্রতিযোগীদের বিনোদনে ছিল গেমিং সুবিধাসহ বিশেষ জোন, মুজিব কর্নার, আইসিটি বিভাগের একটি প্যাভিলিয়নসহ স্পন্সর শোকেস জোন। এখানে প্রতিযোগীদের সাম্প্রতিক প্রযুক্তি সম্পর্কে জানাতে হুয়াওয়ে নিজেদের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও সেবাগুলো তুলে ধরে। ছয় দিনের এ আয়োজনের বিভিন্ন পর্বে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, আইসিটিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, আইসিপিসি ফাউন্ডেশনের সভাপতি এবং আইসিপিসি নির্বাহী পরিচালক ড. উইলিয়াম বি. পাউচার, আইসিপিসির উপনির্বাহী পরিচালক ও আইসিপিসি ওয়ার্ল্ড ফাইনালস প্রতিযোগিতার পরিচালক ড. মাইকেল জে. ডোনাহু, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের উপাচার্য, আইসিপিসি ওয়ার্ল্ড ফাইনালস ঢাকার পরিচালক অধ্যাপক কামরুল আহসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। আইসিপিসি ফাউন্ডেশনের সভাপতি ড. উইলিয়াম বি. পাউচার বলেন, আইসিপিসি একটি জনপ্রিয় আয়োজনে পরিণত হয়েছে। প্রতিবছর সারাবিশ্ব থেকে অংশগ্রহণকারী অংশ নেয়, যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি ঢাকায় চূড়ান্ত প্রতিযোগিতার সফল ও বর্ণাঢ্য আয়োজনের জন্য বাংলাদেশকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

মূল প্রতিযোগিতা
কম্পিউটার প্রোগ্রামিং সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে নিজেদের প্রমাণ দিতে সারাবিশ্ব থেকে ঢাকায় জড়ো হয় একঝাঁক মেধাবী শিক্ষার্থী। আইসিসিবির ৪ নম্বর হলে ১০ নভেম্বর সকাল ১১টায় শুরু হয় মূল প্রতিযোগিতা। প্রতিটি দলে ছিলেন তিনজন করে প্রতিযোগী। প্রতিটি দলের জন্য বিশেষভাবে খোপ তৈরি করা হয়, যেখানে বসে তাঁরা একটি কম্পিউটারে প্রোগ্রামিং সমস্যার সমাধান করেন। কোনো দল একটি সমস্যা সমাধান করলেই সফলতার স্বীকৃতিস্বরূপ তাদের দেওয়া হয় একটি করে বেলুন। পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী এ প্রতিযোগিতা শেষ হতে হতে পুরো ভেন্যুজুড়ে বিভিন্ন রঙের বেলুন উড়তে থাকে। প্রতিযোগিতাটি হয় দুই স্তরে। প্রথম স্তরে শিক্ষার্থীরা ছয়টি অঞ্চলে বিভক্ত হয়ে অংশ নেওয়ার সুযোগ পান। আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়ন ও প্রথম রানারআপ দল চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পায়। ফলাফল ঘোষণার সময়ও নাটকীয় মুহূর্তের অবতারণা করেন আইসিপিসির কর্মকর্তা ও বিচারকরা।

বিজয়ী যারা
৪৫তম আইসিপিসির আসরের চূড়ান্ত পর্বে এবার শ্রেষ্ঠত্ব দেখিয়ে প্রথম স্থান দখল করে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি)। ১২টি প্রোগ্রামিং সমস্যার মধ্যে ৫ ঘণ্টায় ১১টি সমাধান করে ৪৫তম আইসিপিসির চূড়ান্ত পর্বে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে এমআইটি। আইসিপিসির নিয়ম অনুযায়ী, অনুষ্ঠানে সেরা চারটি দল স্বর্ণপদক পায়। এরপর পঞ্চম থেকে অষ্টম স্থানকারী রুপা এবং নবম থেকে দ্বাদশ স্থান অর্জনকারী দল ব্রোঞ্জপদক অ্যাওয়ার্ড পায়।

১০টি সমস্যা সমাধান করে এশিয়া ইস্ট অঞ্চল থেকে চীনের পিকিং ইউনিভার্সিটি দ্বিতীয় স্থান এবং ৯টি সমস্যা সমাধান করে এশিয়া প্যাসিফিক থেকে জাপানের দি ইউনিভার্সিটি অব টোকিও তৃতীয় স্থান দখল করে স্বর্ণজয়ী হয়। দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ৯টি সমস্যা সমাধান করে সেরা ৩ দলের পর স্বর্ণজয়ী হয়েছে। দলটি ১১ মিনিটে সবার আগে একটি সমস্যার সমাধান করে। সুইজারল্যান্ডের ইটিএইচ জুরিখ, ফ্রান্সের ইকোল নরমাল সুপিরিয়র ডি প্যারিস, যুক্তরাষ্ট্রের কার্নিগিও মিলন ইউনিভার্সিটি ও পোল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব ওয়ারশ, অর্থাৎ মোট চারটি দল রৌপ্যপদক বিজয়ী হয়েছে।

ব্রোঞ্জ পেয়েছে রাশিয়ার ন্যাশনাল রিসার্চ ইউনিভার্সিটি হায়ার স্কুল অব ইকোনমিকস, সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেট ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও ভিয়েতনামের ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (ভিএনইউ)। আইসিপিসি ওয়ার্ল্ড ফাইনালস বিজয়ী শীর্ষ চারটি দলকে গোল্ড মেডেল, পরবর্তী চারটি দলকে সিলভার মেডেল এবং পরের চারটি দলকে ব্রোঞ্জ মেডেল দেওয়া হয়।

প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ

স্বাগতিক বাংলাদেশের ৮টি বিশ্ববিদ্যালয় চূড়ান্ত পর্বে অংশ নিয়েছিল। এর মধ্যে চারটি করে সমস্যার সমাধান করে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ৫১তম এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ৫৬তম স্থান অর্জন করে। এ ছাড়া বাকি ছয়টি দল বিশেষ সম্মাননা (অনারেবল মেনশন) পায়। এই দলগুলো হলো- ৮২তম স্থান পেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ৯৮তম স্থান পেয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ১০৭তম স্থান পেয়ে নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটি, ১১৩তম স্থান পেয়ে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ১১৯তম স্থান পেয়ে ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক (ইউএপি) এবং ১২২তম স্থান পেয়ে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।—সমকাল

Facebook Comments Box

Comments

comments

Posted ৮:৪৭ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৫ নভেম্বর ২০২২

America News Agency (ANA) |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

 

Editor-in-chief :

Sayeed-Ur-Rabb

 

Corporate Headquarter :

44-70 21st.# 3O1, LIC. New York-11101. USA,

Phone : +6463215067

E-mail : americanewsagency@gmail.com

Copyright © 2019-2024Inc. America News Agency (ANA), All rights reserved.ESTD-1997