সিলেটে ভয়াবহ বন্যার পর ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে পানি। সুরমা নদীর সিলেট পয়েন্টে ২৫ সেন্টিমিটার পানি কমেছে। তবে, কুশিয়ারা নদীর পানি বাড়ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, কুশিয়ারার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ এবং হবিগঞ্জের নবীগঞ্জের বেশকিছু এলাকা নতুন করে প্লাবিত হয়েছে।
এদিকে, সিলেটের সর্বোচ্চ চিকিৎসালয় এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পানি উঠে যাওয়ায় কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। আর, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পর এবার ক্যাম্পাসে পানি উঠে যাওয়ায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস ও পরীক্ষা। বন্ধ রয়েছে ট্রেন ও বিমান চলাচল।
এদিকে, সুনামগঞ্জ তৃতীয় দিনের মতো এখনও বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন রয়েছে। সিলেটে গতকাল ছয় ঘণ্টা বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন থাকার পর পানি সরিয়ে পুনরায় বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল করা হয়েছে।
বানভাসি মানুষ উদ্ধারে তৎপর রয়েছে সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিসসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও সামাজিক সংগঠন। তবে, উদ্ধার অভিযানের জন্য পর্যাপ্ত জিনিসপত্র না থাকায় সময় লেগেছে বেশি।
ভয়াবহ বন্যায় বানভাসি মানুষ সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ করছে। তবে, পর্যাপ্ত খাদ্য আছে, কিন্তু খাদ্য পৌঁছে দেওয়া যাচ্ছে না বলে দাবি জনপ্রতিনিধিদের।
মৌলভীবাজারে দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দি, কন্ট্রোল রুম চালু
ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল এবং কুশিয়ারা নদী ও হাকালুকি হাওরের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মৌলভীবাজার জেলার ১০ ইউনিয়নের ২০০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে জেলার এক লাখ ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব তথ্য জানিয়েছেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অর্ণব মালাকার।
জানা গেছে, জেলার বড়লেখা উপজেলার পাশাপাশি পাহাড় ধসে উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের আয়েশাবাগ চা বাগানে একজন নিহত ও সদর ইউনিয়নের কেছরিগুল গ্রামে একজন আহত হয়েছেন। ইতোমধ্যে বিদ্যুতের সাবস্টেশন পানিতে ডুবে গেছে। বন্ধ হয়ে গেছে বিদ্যুৎ সরবরাহ।
কুলাউড়া উপজেলায় অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। নদ-নদীসহ হাকালুকি হাওরের পানি বেড়ে ভূকশিমইল, ভাটেরা, জয়চন্ডী, ব্রাহ্মণবাজার, কাদিপুর ও কুলাউড়া সদর ইউনিয়নের প্রায় সব এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, কর্মধা ইউনিয়নের মহিষমারা গ্রামের ফানাই নদীর বাঁধ ভেঙে মহিষমারা, বাবনিয়া, হাশিমপুর, ভাতাইয়া ও পুরশাই গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রামের দুই হাজার পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় আছে। গ্রামগুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে।
জুড়ী উপজেলায় গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ২৮টি গ্রামের প্রায় ১৬ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব গ্রামের অধিকাংশ রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় চলাচলে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। এ পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ প্রায় ২৪টি পরিবারকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া জায়ফরনগর ইউনিয়নের গৌরীপুর ও সাগরনাল ইউনিয়নের কাশিনগর গোয়ালবাড়ি পশ্চিম শিলুয়া গ্রামে জুড়ী নদীর ভাঙন দেখা দিয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় বাঁধ মেরামত কাজ চলছে।
এদিকে সদর উপজেলায় ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে খলিলপুর, মনুমুখ, আখাইলকুড়া, কনকপুর, কামালপুর, চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এখানে বন্যাদুর্গত মানুষের সংখ্যা সাত হাজার ৫০০ জন।
রাজনগর উপজেলায় ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে চার ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। এখানে বন্যাদুর্গত মানুষের সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। শ্রীমঙ্গলে ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ৫ ইউনিয়নের ১২ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এই ইউনিয়নে বন্যাদুর্গত মানুষের সংখ্যা চার হাজার। কমলগঞ্জে বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ধলাই নদীর পাড় ভেঙে ৯ ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় বন্যা দেখা দিয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, মনু, ধলাই ও কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার খুব কাছাকাছি প্রবাহিত হচ্ছে। বর্তমানে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমন অবস্থায় বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন কর্তৃক কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে। মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুমের ফোন নম্বর ০৮৬১-৫২৭২৫।
মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, বন্যাদুর্গতদের সরকারি সহায়তা দেওয়া হবে। আজ ১৯ জুন (রবিবার) থেকে বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু হবে।
Posted ২:৩৮ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১৯ জুন ২০২২
America News Agency (ANA) | ANA