শুক্রবার ২৬ জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১১ শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম
শিরোনাম

ঈদের পোশাকে ডিজিটাল ছোঁয়া

এনা অনলাইন :   শনিবার, ০৩ আগস্ট ২০১৯ 1136
ঈদের পোশাকে ডিজিটাল ছোঁয়া

প্রযুক্তির উন্নয়নে ডিজিটাল হচ্ছে সব কিছুই। ডিজিটালের এই ছোঁয়া পোশাকেও লেগে গেছে বেশ কিছুদিন আগেই। আর ফ্যাশন জগতে যুক্ত হচ্ছে পোশাকের নতুন নতুন ফিউশন। ফিউশনের পাশাপাশি ডিজাইনাররা কাজ করছেন ব্যতিক্রম কিছু প্রিন্ট নিয়ে। যার মধ্যে ডিজিটাল প্রিন্ট অন্যতম। বেশ কয়েক বছর ধরেই ডিজিটাল প্রিন্ট নিয়ে ফ্যাশন ডিজাইনাররা পোশাকের জমিনে বৈচিত্র্যময় নকশা করছেন। এর কারণ হলো অন্যান্য প্রিন্টের তুলনায় ডিজিটাল প্রিন্টে সব থেকে বেশি নকশা ফুটিয়ে তোলা যায়। মূলত এই প্রিন্ট এসেছে মেক্সিকান আদিবাসীদের কাছ থেকে।

ডিজিটাল প্রিন্ট

মনে প্রশ্ন জাগতে পারে ডিজিটাল প্রিন্ট কেমন। এই প্রিন্টের নকশার কাজ, বলতে গেলে সবকিছুই করা হয় কম্পিউটারাইজড। ফলে এই প্রিন্টে আপনি যত খুশি রং বা নকশার খেলায় মেতে উঠতে পারেন। যেখানে শুধুমাত্র কয়েকটি রং ও নকশা নিয়ে কাজ করা যেত। যা ছিল বেশ ঝামেলাপূর্ণ ও কষ্টসাধ্য। কম্পিউটারের মাধ্যমে করা হয় বলে এর ফিনিশিং একেবারে নিখুঁত হয়। এই প্রিন্টের গভীরতা বেশি থাকায়, পোশাকে উজ্জ্বলতা বেড়ে যায়।

পোশাকের ধরন

যমুনা ফিউচার পার্ক, বসুন্ধরা, পিংক সিটি ও অন্যান্য শপিংমল ঘুরে দেখা গেল  পোশাকে ডিজিটাল প্রিন্টের ছড়াছড়ি। সালোয়ার-কামিজ, ফতুয়া, টপস, ওয়ান পিস, কুর্তি, জাম্পস্যুট থেকে শুরু করে জিন্স, জেগিংস ও স্কার্টেও দেখা মিলছে এই প্রিন্টের। বাচ্চাদের পোশাকে বিশেষ করে ফ্রকে এই প্রিন্টের ব্যবহার বেশি লক্ষ করা যায়। ডিজিটাল প্রিন্টে সব থেকে বেশি দেখা যায় ফ্লোরাল প্যাটার্ন। ডিজাইনাররা কিছু প্রিন্টে বাহারি ফুলের ছাপ দিয়েছেন আবার কিছু প্রিন্টে যেকোনো একটি বা দুটো ফুলের বড় নকশার ছাপ দিয়েছেন। তবে ডিজিটাল প্রিন্টে নকশা বা রঙের বাহার থাকলেও অনেক পোশাকে পুরো জমিনজুড়ে এই প্রিন্ট থাকে না। আপনি যদি রংচঙে পোশাক পছন্দ না করেন তাহলে এই প্রিন্টে এমন কিছু পোশাক আছে যা সম্পূর্ণ একরঙা; কেবল পোশাকের গলা, হাতা, বুকের বা পাশে বা মাঝে থাকছে ডিজিটাল প্রিন্ট যা আপনি বেছে নিতে পারেন।

এছাড়া এই প্রিন্টে কয়েকটি রঙের শেড দিয়েও পোশাক বানানো হয়েছে। দেখা যায় গলা থেকে বুকের অংশ পর্যন্ত এক রঙের আবার বুক থেকে নিচ পর্যন্ত অন্য রঙের। তবে শুধু ফ্লোরাল প্রিন্টেই নয় স্ট্রাইপ, বলপ্রিন্ট, শ্যাভরন প্যাটার্নসহ জিগজ্যাগ প্যাটার্নেও থাকছে এই প্রিন্ট। পোশাকের জমিনে ছোট ছোট কোনা আকারের প্রিন্ট হলো শ্যাভরন প্রিন্ট। ফেব্রিক্সের মধ্যে এই প্রিন্ট ব্যবহার হচ্ছে সুতি, লিলেন, সিল্ক, জর্জেট, লাইক্রা, পলিয়েস্টার, কাতান সিল্কের মধ্যে।

এছাড়া যেকোনো ফ্রেবিকে এই প্রিন্ট পাওয়া যায় এমনকি লেদার পোশাকেও। এছাড়া পার্টি পোশাক যেমন গাউন, ট্রাউজার, লং ড্রেস, জ্যাকেট বা ট্র্যাডিশনাল শাড়িতে। এই প্রিন্ট ক্লাসিক ও মডার্ন দুটো প্যাটার্নেই পাওয়া যায়। তবে এই প্রিন্টের পোশাক শারীরিক গঠনের ওপর অনেকটা নির্ভর করছে। সাধারণত ভারী শারীরিক গঠনের ক্ষেত্রে বড় প্রিন্ট না পরাই ভালো। এতে আরও মোটা দেখায়। যারা একটু সিøম তারা বড় প্রিন্ট বেছে নিতে পারেন। এছাড়া আবহাওয়া যেমনই হোক না কেন যেকোনো পরিবেশেই এই পোশাক মানানসই সেই সঙ্গে স্বাচ্ছন্দ্যময়।

কাস্টোমাইজড পোশাক

সমসাময়িক ট্রেন্ডে কাস্টোমাইজড পোশাকের কদর বেশ। জন্মদিন, ফ্রেন্ডশিপ ডে, ভ্যালেন্টাইন্স ডে কিংবা বিবাহ বার্ষিকীর মতো বিশেষ দিনগুলোতে উপহার হিসেবে কাস্টোমাইজড গিফটের ট্রেন্ড চলছে। আর ডিজিটাল প্রিন্টই এই গিফটের একমাত্র ভরসা। প্রিয় কবির কবিতা, চিত্রকর্ম, প্রিয় কোনো চরিত্র, গানের লাইন, প্রিয়জনের ছবি কিংবা নিজের মনের অনুভূতি প্রকাশ করতে পারেন পোশাকের জমিনে ডিজিটাল প্রিন্টের কল্যাণে। এছাড়া সঙ্গী যদি প্রকৃতি প্রেমিক হয় সেক্ষেত্রে সবুজে ঘেরা পাহাড়, উত্তাল সমুদ্র, নীলাময় আকাশ বা অভয়ারণ্যসহ পোশাকে যেকোনো কিছু ছাপিয়ে দিতে পারেন। এই প্রিন্ট কম্পিউটারের মাধ্যমে করা হয় তাই যেকোনো কিছু সহজেই ছাপাতে পারেন।

রঙের বাহার

ডিজিটাল প্রিন্টে আপনি সব ধরনের রঙের ছোঁয়া লাগাতে পারেন পোশাকে। এ ধরনের প্রিন্টে গাঢ় রঙের আধিক্য দেখা দেয় বেশি। নীল, কমলা, বেগুনি, হলুদ, সবুজ এ ধরনের উজ্জ্বল রং বেশি ব্যবহার করা হয়। এই প্রিন্ট বেশ নিখুঁত ও ত্রুটিহীন হওয়ায় এর ফিনিশিং বেশ ফটোজেনিক হয় এবং পোশাকে এই রংগুলো বেশ উজ্জ্বলভাবে ফুটে ওঠে। এছাড়া এ ধরনের পোশাকে আপনাকে বেশ প্রাণবন্ত দেখাবে। পোশাকে বিশেষ করে যারা উজ্জ্বল রং পছন্দ করেন তাদের জন্য ডিজিটাল প্রিন্ট খুব উপযোগী। বেশ কয়েক বছর আগেও এই প্রিন্ট দেখা গিয়েছে তবে তা সমসাময়িক ডিজিটাল প্রিন্টের মতো ঝকঝকে হতো না।

নির্বিশেষে সবাই

পোশাকের ট্রেন্ড কিংবা ফ্যাশন নিয়ে যখনই কোনো কিছু ভাবা বা লেখা হয় তা বিশেষ করে নারীদের নিয়ে করা। কিন্তু যুগ এখন পাল্টেছে। নারীর পাশাপাশি পুরুষের  ফ্যাশন সচেতনতা বদলেছে এমনকি শিশুরাও পিছিয়ে নেই। ডিজিটাল প্রিন্টে ছেলেদের পোশাক হিসেবে দেখা যায় জ্যাকেট, ট্রাউজার, শার্ট,  টি-শার্ট এমনকি পাঞ্জাবিতেও। তবে এই প্রিন্টের জ্যাকেট তরুণ ছেলেদের মাঝে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

এছাড়া পার্টি কিংবা জমকালো যেকোনো অনুষ্ঠানে প্রিন্স কোটের আবেদন চিরকালই। আর তাতেই এখন যোগ হয়েছে ডিজিটাল প্রিন্ট। যা ভিন্ন সৌন্দর্য নিয়ে এসেছে। ফলে এর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। ফ্যাশনপ্রিয়রা বরাবরই নিজেদের গর্জিয়াস লুকে উপস্থাপন করতে চান। আর তাদের লুকে স্টাইলিশ, আভিজাত্য ও গর্জিয়াসের ছোঁয়া আনতে লেহেঙ্গাতেও যুক্ত হয়েছে ডিজিটাল প্রিন্ট। এছাড়া পোশাকের জমিন যত ছোটই হোক না কেন ডিজিটাল প্রিন্ট সহজেই যেকোনো নকশা ফুটিয়ে তুলতে পারে। তাই এর আলাদা কদর রয়েছে। শুধু নারী-পুরুষই নন, বাচ্চাদের পোশাকেও এই প্রিন্টের উপস্থিতি বেশ গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। বাহারি রঙের ছটা থাকায় শিশুদের জন্য এই পোশাক বেশ মানানসই। ফ্লোরাল প্রিন্টের শার্ট, ফ্রক, বিভিন্ন কার্টুন প্রিন্টের টি-শার্ট। অর্থাৎ ছোট্ট শিশুদের নানা কিছু নিয়ে পোশাকে এসেছে ডিজিটাল প্রিন্ট। বাজার ঘুরে দেখা যায় নারী, পুরুষ, শিশু নির্বিশেষে সবার পছন্দের প্রিন্ট ডিজিটাল প্রিন্ট।

কোথায় পরবেন ও পাবেন, সেই সঙ্গে কেমন দাম

ডিজিটাল প্রিন্ট যেকোনো ফেব্রিকসের হতে পারে। তাই আপনি যে ফেব্রিকসে আরামবোধ করবেন সেই পোশাকই বেছে নিতে পারেন। এছাড়া এই প্রিন্ট সব পরিবেশেই মানানসই। ক্লাস, বন্ধুদের আড্ডায়, খেলার মাঠে, গেট টুগেদার পার্টি, বার্থডে পার্টি, কর্মক্ষেত্রে, বিশেষ সাক্ষাতে কিংবা বিয়ের অনুষ্ঠানে আপনি বেছে নিতে পারেন এই পোশাক। এই ধরনের পোশাক পাবেন সেইলর, আড়ং, ইয়েলো, ক্যাটস আই, ইস্টাসি, ক্লাব হাউসসহ দেশের নামকরা সব ফ্যাশন হাউজে।

এছাড়া একটু কম দামে এই পোশাক পাবেন নিউ মার্কেট, গাউছিয়া, মৌচাক মার্কেট, চাঁদনী চক সেই সঙ্গে নুরজাহানে। টপস, ফতুয়া বা কুর্তি টাইপ পোশাকের দাম পড়বে সর্বনিম্ন ১০০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩০০০ টাকায়, এছাড়া সেলোয়ার-কামিজ পাবেন ১৫০০ টাকা থেকে ৩৫০০ টাকায়, ক্রেপ পাবেন ১৫০০ টাকা থেকে ৩৫০০ টাকায়, জাম্পস্যুট পাবেন ২০০০ টাকা থেকে ৪৫০০ টাকায়, জিন্স বা জেগিংস পাবেন ১২০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকায়।

অন্যান্য

ডিজিটাল প্রিন্টের কারুকাজ শুধু পোশাকেই নয়, এখনকার সময়ে এই প্রিন্ট পোশাকের পাশাপাশি দেখা যাচ্ছে জুতা, ব্যাগ ও টুপিতেও। যা তরুণ-তরুণীদের মাঝে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। পোশাকের সঙ্গে ম্যাচিং করে জুতা পরতে এই ধরনের প্রিন্টে। এই প্রিন্ট বেশি দেখা যায় লোফার ও সিøপার জুতায়। এছাড়া কিছু কিছু হাইহিল শু-তেও দেখা যাচ্ছে এই প্রিন্ট। শিক্ষার্থীদের নিত্যদিনের সঙ্গী ব্যাকপ্যাকে দেখা যায় ডিজিটাল প্রিন্ট।  অর্থাৎ পোশাকের পাশাপাশি অনুষঙ্গ হিসেবে জুতা, ব্যাগ ও টুপিতেও থাকছে এই ডিজিটাল প্রিন্ট।

সুবিধা

এই প্রিন্টের সব থেকে বড় সুবিধা হলো কম্পিউটারে প্রিন্ট হওয়ায় খরচটা বেশ কম পড়ে। তাই একে পকেট সাশ্রয়ী বলা যেতে পারে। এছাড়া যেকোনো নকশা নিয়ে কাজ করা যায়। সেই সঙ্গে আপনার পছন্দসই হাজারো রং ব্যবহার করতে পারেন। এই ডিজাইন কম্পিউটার বেইজড হওয়ায় পরিশ্রমটা তুলনামূলক কম হয় এবং খুব দ্রুত পোশাক তৈরি করা যায়। সবদিক বিবেচনা করে দেখা যায় অন্যান্য প্রিন্টের তুলনায় ডিজিটাল প্রিন্ট সব থেকে সহজ ও সুবিধাজনক।

Facebook Comments Box

Comments

comments

Posted ১১:২৮ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০৩ আগস্ট ২০১৯

America News Agency (ANA) |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

 

President/Editor-in-chief :

Sayeed-Ur-Rabb

 

Corporate Headquarter :

 44-70 21st.# 3O1, LIC. New York-11101. USA, Phone : +6463215067.

Dhaka Office :

70/B, Green Road, 5th Floor, Panthapath, Dhaka-1205, Phone : + 88-02-9665090.

E-mail : americanewsagency@gmail.com

Copyright © 2019-2024Inc. America News Agency (ANA), All rights reserved.ESTD-1997