
অনলাইন ডেস্ক : | বৃহস্পতিবার, ১১ মে ২০১৭ | প্রিন্ট | 678 বার পঠিত
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ‘ভিশন-২০৩০’ কে মেধাহীন, অন্তঃসারশূন্য ও দ্বিচারিতাপূর্ণ আখ্যা দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
অন্য রাজনৈতিক দলের নেতারা ‘ভিশন-২০৩০’-এর বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন।
বুধবার বিকেলে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমণ্ডিস্থ রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার এ ভিশন-২০৩০ একটি ফাঁকা প্রতিশ্রুতির ফাঁপানো রঙিন বেলুন। এই বেলুন অচিরেই চুপসে যাবে। এটি জাতির সঙ্গে একটি তামাশা ও প্রতারণা এবং জনবিচ্ছিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রলাপ ছাড়া আর কিছুই নয়। প্রকৃতপক্ষে বিএনপির ভিশন হচ্ছে হাওয়া ভবন বানিয়ে লুটপাট, দুর্নীতি আর এতিমের টাকা মেরে খাওয়ার ভিশন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ‘ভিশন-২০২১’ তথা ‘রূপকল্প-২০২১’- এর অনুসরণেই খালেদা জিয়া ‘ভিশন-২০৩০’ দিয়েছেন দাবি করে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, খালেদা জিয়া ‘ভিশন-২০৩০’ বলে যে কর্মপরিকল্পনার কথা বলেছেন, এসবের অনেক কিছুই আওয়ামী লীগ আগেই তাদের দেয়া ‘ভিশন-২০২১’-এ রয়েছে। বিএনপির ভিশন যেমনই হোক, এতে কোনো নতুনত্ব নেই।
তিনি বলেন, পরের মেধাসত্ব চুরি করা একটি নৈতিক অপরাধ। এটি এক ধরনের রাজনৈতিক অসততা। একটি রাজনৈতিক দল কতটুকু দেউলিয়া হলে আরেকটি রাজনৈতিক দলের দেওয়া আইডিয়া এবং চিন্তাভাবনা নির্লজ্জভাবে চুরি করতে পারে।
২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ ঘোষিত রূপকল্প-২০২১ এর মাধ্যমে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে- দাবি করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা আশাবাদী, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অগ্রসরমান অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে দেশ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যমআয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে উন্নত ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত হব।
ওবায়দুল কাদের বলেন, মূলত বিএনপি ও তার প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যার সহযোগী ও বেনিফিশারি হিসেবে অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল না করলে গণতন্ত্র, সংবিধান ও আইনের শাসনকে হত্যা না করলে বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই বিশ্বদরবারে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতো। খালেদা জিয়াকেও আওয়ামী লীগের আইডিয়া চুরি করে জাতিকে ছবক দিতে হতো না।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার বক্তব্য তার দলের অজ্ঞতাকে নগ্নভাবে প্রকাশ করেছে। তিনি অনেক বিষয় উপস্থাপন করেছেন, যেগুলি ইতোমধ্যেই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাস্তবায়িত হয়েছে এবং চলমান রয়েছে। তাদের কাছে সততার বুলি, বিচারহীনতার সংস্কৃতি, মানবাধিকার ও মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার কথা শ্রবণ জাতির জন্য খুবই অপমানজনক। আজ তারা একই কায়দায় সংবিধানের মৌলিক কাঠামো পরিবর্তন করে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট ব্যবস্থা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে চায়। তাকে প্রশ্ন করতে চাই, বাংলাদেশের ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় তিনি এ ধরনের ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে কাদের খুশি করতে চান?
প্রধানমন্ত্রীর একক ক্ষমতায় ভারসাম্য এনে রাষ্ট্রপতিকে সম্মান দেওয়া সংক্রান্ত খালেদা জিয়ার বক্তব্য প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, তিনি কী করে রাষ্ট্রপতিকে সম্মান দেবেন? ক্ষমতায় থাকতে তো তিনি তার দলের রাষ্ট্রপতিকে বিনা কারণে অপসারণ করেছিলেন। দেশবাসী ভুলে যায়নি, বিএনপির সন্ত্রাসীদের হামলায় রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী জীবন বাঁচাতে মহাখালির রেললাইন ধরে পালিয়ে ছিলেন। তার কথায় মনে হয় তিনি রাষ্ট্রপতি আর তার দুর্নীতিবাজ ছেলে তারেককে প্রধানমন্ত্রী বানাতে চান!
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, খালেদা জিয়া সংসদকে কার্যকর করার কথা বলেছেন। অথচ তিনি তো বিরোধীদলীয় নেতা থাকতে মাত্র ১০ দিন সংসদে গিয়েছিলেন। তার মুখে সংসদ কার্যকরের কথা মানায় না। তিনি এবারও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গ এড়িয়ে গেছেন। তিনি স্বাধীনতাবিরোধীদের পক্ষে আছেন, থাকবেন। উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তিকে সঙ্গে নিয়েই রাজনীতি করবেন। তাদের ভিশন যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা, সন্ত্রাসবাদ কায়েম ও দেশ বিক্রির ভিশন।
তিনি বলেন, পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য বিএনপি নেত্রী মায়াকান্না করেছেন। তাকে প্রশ্ন করতে চাই- তথাকথিত অবরোধের জন্য তার দলের নেতাকর্মীরা যখন ২৮ জন পুলিশ সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিলেন, তখন তার ভিশন কী ছিল? বিএনপির ইতিহাস নেতিবাচক রাজনীতির ইতিহাস। হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতির শ্রষ্টা বিএনপি। তাদের আন্দোলন করার মত শক্তিমত্তা জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের পদতলে দলিত হয়ে গেছে। ভিশন-২০৩০ সাল পর্যন্ত পৌঁছার পথ তাদের জন্য খোলা নেই। বিএনপির মুখে কোনো ভিশনের কথা বিশ্বাস করার মত বোকামি এদেশের জনগণ আর কোনো দিন করবে না।
নতুনত্ব নেই: তোফায়েল আহমেদ
খালেদা জিয়ার ভিশন-২০৩০-এ নতুনত্ব কিছুই নেই বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, তারা (বিএনপি) কর্মসূচি ঘোষণা করতেই পারে। কিন্তু এর মধ্যে নতুনত্ব কিছুই দেখিনি। খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘ভিশন-২০২১’ ও ‘ভিশন-২০৪১’ কেই অনুসরণ ও অনুকরণ করেছেন মাত্র।
তিনি বলেন, বিএনপির এই ভিশন নিয়ে তাদের নেতাদের মধ্যেই মতভেদ রয়েছে। এ অবস্থায় তা জনগণের আস্থা অর্জন করবে কীভাবে?
বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় বিভিন্ন দলের :এদিকে, বিএনপি চেয়াপারসন খালেদা জিয়ার ‘ভিশন-২০৩০’ পরিকল্পনার বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। সমকালকে দেওয়া তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এসব দলের নেতারা বলেছেন, এই ভিশন-এ অনেক ‘ভালো ভালো’ কথা থাকলেও সেগুলোর বাস্তবায়নই আসল কথা। খালেদা জিয়া আগামী নির্বাচনে যাবেন কী-না সেটিই এখন নিশ্চিত নয়। তিনি নির্বাচনে যাবেন, ক্ষমতায় আসবেন, তারপরই না বাস্তবায়নের প্রশ্ন আসবে।
জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির কো চেয়ারম্যান জিএম কাদের সমকালকে বলেন, খালেদা জিয়ার ভিশন-২০৩০ সময়োচিত ও বাস্তবসম্মত নয়। কারণ আগামী নির্বাচনে তারা অংশ নেবে কী-না-সেটিও এখনও ঠিক নেই। মানুষ এখন জানতে চায় আগামী নির্বাচন কোন প্রক্রিয়ায় হবে। মানুষের মধ্যে এই মুহূর্তে ১০ বছর পরের দূরবর্তী ভিশন নিয়ে কোনো আগ্রহই নেই।
প্রধানমন্ত্রীর একক ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা সংক্রান্ত খালেদা জিয়ার ঘোষণার জবাবে তিনি বলেন, খালেদা জিয়া আগামী নির্বাচনে অংশ নেবেন, তারপর ক্ষমতায় যাবেন, তারপরই তো এটি বাস্তবায়ন করবেন? তাই এটি নিয়ে আলোচনা করার এখন কোনো সময় নেই।
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, খালেদা জিয়ার ভিশন-২০৩০ তিনি শোনেননি, শোনার প্রয়োজনও মনে করেননি। তবে এটি ভিশন নয়, ‘দুর্ভিশন’।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) উপদেষ্টা মনজুরুল আহসান খান বলেন, খালেদা জিয়া তার ভিশন-২০৩০ এ অনেক কথাই বলেছেন। কিন্তু সেগুলোর কতটুকু বাস্তবায়ন হবে, সেটিই হচ্ছে আসল কথা। তবে এটি একদিক দিয়ে ভালো হয়েছে, এই ভিশন দেওয়ার ফলে রাজনীতিতে চলমান কূটতর্ক ও গালাগালির সংস্কৃতির কিছুটা হলেও বন্ধ হবে। বিএনপি ভিশন দিলো। আওয়ামী লীগও ভিশন দিয়েছে, সামনে হয়তো আরও দিবে। বামপন্থিদেরও ভিশন আছে। এখন এসব ভিশন নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা-সমালোচনা কিংবা তর্কবিতর্ক হবে। জনগণই যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে- কাদের ভিশন ভালো এবং কাদের ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনবে।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়া তার ভিশনে প্রধানমন্ত্রীর একক ক্ষমতার ভারসাম্য আনার কথা বলেছেন। এটাতো বহুদিন ধরে অনেকেই বলে আসছেন। কিন্তু খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকতে এটি বলেননি কিংবা করেননি কেন? তিনি সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়ানোর কথা বলেছেন। কিছুদিন আগেই তো সরকারি কর্মচারীদের বেতন দ্বিগুণ বেড়েছে, মন্ত্রী-এমপিদের বেতনও বেড়েছে। কিন্তু অনেক আন্দোলন সত্ত্বেও শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বাড়ছে না। খালেদা জিয়া এটি নিয়ে তো কোনো কথা বলেননি। তিনি কৃষকদের ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত, সংখ্যালঘুদের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলা বন্ধ, পরিবেশ রক্ষা, কৃষি-শিল্প উন্নয়ন ইত্যাদি বিষয়েও কিছুই বলেননি। আমাদের দেশে যে উন্নয়ন হচ্ছে, সেটি পুঁজিবাদী উন্নয়ন। এই উন্নয়নের ধারা বন্ধ করতে হবে। এটি নিয়েও খালেদা জিয়া কিছু বলেননি।
নিউজ-সমকাল
Posted ২:০২ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১১ মে ২০১৭
America News Agency (ANA) | Payel