
*দুর্নীতি রোধ, সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও আধুনিক রাষ্ট্র গঠনের ঘোষণা * খালেদা জিয়ার ‘ভিশন-২০৩০’ উপস্থাপন * প্রধানমন্ত্রীর ‘একক ক্ষমতা’য় ভারসাম্য আনা হবে। *গণভোট ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন, সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা। * দ্বিতীয় পদ্মা ও দ্বিতীয় যমুনা সেতু নির্মাণ করা হবে। | বৃহস্পতিবার, ১১ মে ২০১৭ | প্রিন্ট | 617 বার পঠিত
দুর্নীতি রোধ এবং সুনীতি, সুশাসন ও সু-সরকার প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়ে বাংলাদেশকে একটি সুখী, সমৃদ্ধ, আধুনিক ও আত্মমর্যাদাশীল রাষ্ট্রে পরিণত করার লক্ষ্যে দেশবাসীর সামনে ‘ভিশন-২০৩০’ উপস্থাপন করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। গতকাল বুধবার রাজধানীর ওয়েষ্টিন হোটেলে দলের পক্ষে উপস্থাপিত এই ‘ভিশন-২০৩০’-এ পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে তিনি বলেছেন ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখতে বিএনপি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। বিএনপি অন্য কোনো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ এবং অন্য কোনো রাষ্ট্রের জন্য নিরাপত্তা সমস্যা সৃষ্টি করবে না। একইভাবে বিএনপি দৃঢ় অঙ্গীকার করছে যে, অন্য কোনো রাষ্ট্রও বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তায় হুমকি সৃষ্টি করলে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। বিএনপি বিশ্বাস করে, আমাদের সীমান্তের বাইরে বাংলাদেশের বন্ধু রয়েছে, কোনো প্রভু নেই। বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেয়া হবে। বিএনপি মুসলিম উম্মাহ ও প্রতিবেশি দেশসমূহের সাথে বিশেষ সম্পর্ক গড়ে তুলবে।’
৪১ পৃষ্ঠার ‘ভিশন-২০৩০’ বই আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। এতে গণতন্ত্র, জাতি গঠন, সুশাসন, প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্রনীতি, নৈতিকতার শক্তি পুনঃরুদ্ধার, পরিষেবা, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা, সন্ত্রাসবাদ, অর্থনীতি, গবেষণা ও উন্নয়ন, জনমিতিক লভ্যাংশ, শিক্ষা মানব সম্পদ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি), ক্রীড়া, সংস্কৃতি, বিদেশে কর্মসংস্থান ও প্রবাসী কল্যাণ, মিডিয়া ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা, স্থানীয় সরকার, কৃষি ও কৃষক, শ্রমিক কল্যাণ, নগরায়ন ও আবাসন, নিরাপদ খাদ্য ও ওষুধ, স্বাস্থ্যসেবা, যুব নারী ও শিশু, জলবায়ু পরিবর্তন; পানি সম্পদ, সামুদ্রিক অর্থনীতি (ব্লু ইকোনমি) ও পরিবেশ সংরক্ষণ; বিদ্যুত্ ও জ্বালানি, শিল্প, যোগাযোগ (সড়ক, রেল ও নৌ-পথ), পর্যটন, সম্পদ সংরক্ষণ, সামাজিক ব্যাধির সমস্যা, ভূমিকম্প, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও অনগ্রসর অঞ্চল এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিসহ মোট ৩৭টি বিষয়ে বিএনপির লক্ষ্য ও চিন্তা-ভাবনা তুলে ধরেন খালেদা জিয়া।
‘ভিশন-২০৩০’ উপস্থাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতারা, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক এবং সিনিয়র সাংবাদিকসহ গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। বক্তব্যের শুরুতে বিএনপি চেয়ারপারসন শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে দেশের বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী সকল নারী-পুরুষ ও শিশুকে শুভেচ্ছা জানান। ভিশন-২০৩০’র মাধ্যমে কার্যত বিএনপি আগামীতে ক্ষমতায় যেতে পারলে কি কি করবে তা তুলে ধরা হয়েছে, এছাড়া এটি দলটির নির্বাচনি ইশতেহারের মতো করেই প্রণয়ন করা হয়েছে।
‘ভিশন-২০৩০’ প্রণয়নের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে সূচনা বক্তব্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জনগণ স্বপ্ন দেখেছিল। সেই স্বপ্ন ছিল ন্যায়বিচার, মানবিক মর্যাদা ও সাম্যের। জনগণের এই স্বপ্ন আজও সফল হয়নি। স্বৈরশাসন ও দুঃশাসনের যাঁতাকলে স্বপ্নগুলো চুরমার হয়ে গেছে। আজ আমাদের সকলকে সম্মিলিতভাবে সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য নতুন করে শপথ নিতে হবে। বাংলাদেশের সকল ধর্ম বিশ্বাসের মানুষ, ক্ষুদ্র জাতি-গোষ্ঠীসহ সকল জাতি-গোষ্ঠী ও মানুষের চিন্তা চেতনা ও আশা আকাঙ্খাকে ধারণ করে একটি অংশীদারিত্বমূলক সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার সম্পন্ন, জনকল্যাণমূলক, সহিষ্ণু, মানবিক, শান্তিকামী, সমৃদ্ধ গণতান্ত্রিক সমাজ গঠন বিএনপির লক্ষ্য।
তিনি বলেন, ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ বিএনপির কাউন্সিল অধিবেশনে আমি যে ভাষণ দিয়েছিলাম-তাতে বিএনপির ভিশন টুয়েন্টি-থার্টি’র একটি সংক্ষিপ্ত রূপরেখা তুলে ধরেছিলাম। গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বিশেষজ্ঞ ও দলীয় পর্যায়ে ব্যাপক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এর একটি পূর্ণাঙ্গ রূপ আমরা প্রস্তুত করেছি। বিএনপি বিশ্বাস করে জনগণই হবে সকল উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু। যেসব বাধা জনগণের মেধা, শ্রম, উদ্যোগ এবং উত্সাহকে দমিয়ে দেয় সেগুলোকে দূর করে বিএনপি বাংলাদেশকে একটি সুখী, সমৃদ্ধ, আধুনিক ও আত্মমর্যাদাশীল রাষ্ট্রে পরিণত করার লক্ষ্য নিয়ে ‘ভিশন- ২০৩০’ প্রণয়ন করেছে।
জনগণের হাতে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে চাই
খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপি মনে করে বাংলাদেশের জনগণ মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে রাষ্ট্র গড়ে তুলেছিল আজ সে রাষ্ট্রের মালিকানা তাদের হাতে নেই। তাই দেশের জনগণের হাতেই দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে চায় বিএনপি।
‘ওয়ান ডে ডেমোক্রেসিতে’ বিশ্বাসী নই
বিএনপি প্রধান বলেন, বিএনপি এমন এক উদার গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণে বিশ্বাস করে যেখানে জাতীয় স্বার্থ সমুন্নত রেখে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকার সুরক্ষিত হবে। যত সংখ্যালঘিষ্ঠই হোক না কেন, কোনো মত ও বিশ্বাসকে অমর্যাদা না করার নীতিতে বিএনপি বিশ্বাসী। আমরা ‘ওয়ান ডে ডেমোক্রেসিতে’ বিশ্বাসী নই। কর্তৃত্ববাদী শাসন এবং ‘গণতন্ত্রের চাইতে উন্নয়ন শ্রেয়’-এ অজুহাতে গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠানোর অপচেষ্টা জনগণকে সাথে নিয়ে বিএনপি প্রতিহত করবে।
প্রধানমন্ত্রীর ‘একক ক্ষমতা’য় ভারসাম্য আনা হবে
খালেদা জিয়া বলেন, বিদ্যমান সাংবিধানিক কাঠামোয় প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতা এককভাবে প্রধানমন্ত্রীর উপর ন্যস্ত। এরূপ ব্যবস্থা সংসদীয় সরকার পদ্ধতির স্বীকৃত রীতির পরিপন্থী। বিশেষ করে সামপ্রতিক বছরগুলোর অভিজ্ঞতায় দেশবাসী গভীরভাবে উপলব্ধি করছে যে, প্রধানমন্ত্রীর একক নির্বাহী ক্ষমতা সংসদীয় সরকারের আবরণে একটি স্বৈরাচারী একনায়কতান্ত্রিক শাসনের জন্ম দিয়েছে। বিদ্যমান অবস্থার অবসানকল্পে সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধনীর মাধ্যমে প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতার ক্ষেত্রে ভারসাম্য আনা হবে।
সংসদের উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠার ভাবনা
তিনি বলেন, সংবিধানের এক-কেন্দ্রিক চরিত্র অক্ষুন্ন রেখে বিদ্যমান সংসদীয় ব্যবস্থা সংস্কারের অংশ হিসেবে জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা করার বিষয়ে পরিক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হবে।
তত্ত্বাবধায়ক বাতিলসহ আওয়ামী লীগ সরকারের সংবিধান সংশোধন সংস্কার হবে
খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর সংবিধানের পঞ্চদশ ও ষষ্ঠদশ সংশোধনীর মাধ্যমে গণভোট ব্যবস্থা বাতিল, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল, সংসদ বহাল রেখে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান প্রবর্তন, সংবিধানের কিছু বিষয় সংযোজন, পরিবর্তন, প্রতিস্থাপন, রহিতকরণ এবং সংবিধানের কতিপয় ধারা-উপধারা সংশোধনের অযোগ্য করার বিধান প্রবর্তন, উচ্চ আদালতের বিচারকদের অভিশংসনের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের উপর ন্যস্তকরণের বিধানসহ কয়েকটি অগণতান্ত্রিক বিধান প্রণয়ন করেছে। বিএনপি এসব বিতর্কিত ও অগণতান্ত্রিক বিধানাবলী পর্যালোচনা ও পুনঃপরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক সংস্কার করবে।
গণভোট ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন হবে
তিনি বলেন, বিএনপি সংবিধানে গণভোট ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃস্থাপন করবে। পাবলিক একাউন্টস কমিটি এবং পাবলিক আন্ডারটেকিংস কমিটির সভাপতিত্ব বিরোধী দলের সদস্যদের উপর অর্পন করা হবে।
থ্রি-জি’র সমন্বয়
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র-বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে জাতিকে পৌঁছাতে দৃঢ়-প্রতিজ্ঞ। এজন্য সুনীতি, সুশাসন এবং সু-সরকারের (থ্রি-জি) সমন্বয় ঘটাবে বিএনপি।
দুর্নীতির সঙ্গে আপস হবে না
বিএনপি প্রধান বলেন, বিএনপি দুর্নীতির সাথে কোনো আপস করবে না। সমাজের সর্বস্তরে দুষ্টক্ষতের মত ছড়িয়ে পড়া দুর্নীতির রাশ টেনে ধরার জন্য পদ্ধতিগত ও আইনের সংস্কারের পাশাপাশি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে। প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য সংবিধান অনুযায়ী ‘ন্যায়পাল’ এর অফিস কার্যকর করা হবে। তিনি বলেন, সকল প্রকার কালা-কানুন বাতিল করা হবে। সকল প্রকার নিষ্ঠুর আচরণ থেকে মানুষকে মুক্ত রাখার লক্ষ্যে বিচার বহির্ভূত হত্যাকা্ল, গুম, খুন এবং অমানবিক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অবসান ঘটানো হবে।
বিশেষ ক্ষমতা আইন ও আইসিটি’র ৫৭ ধারা বাতিল হবে
খালেদা জিয়া বলেন, বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪ বাতিল করা হবে। মানবাধিকার সমপর্কিত জাতিসংঘের সার্বজনীন ঘোষণা বাস্তবায়ন করা হবে। বাছাই কমিটি ও সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগের ব্যবস্থা করা হবে। বর্তমান বিচারব্যবস্থার সংস্কারের জন্য একটি উচ্চপর্যায়ের জুডিশিয়াল কমিশন গঠন করা হবে। তিনি বলেন, তথ্য প্রযুক্তি আইনের বিতর্কিত ৫৭ ধারা বাতিল করা হবে।
আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর উপর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ হবে
খালেদা জিয়া বলেন, পুলিশ বাহিনীকে একটি স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক সমাজের উপযোগী করে গড়ে তোলা হবে। জনগণের সেবক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে পুলিশের মোটিভেশন, ট্রেইনিং ও নৈতিক উন্নয়নের কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। সিআরপিসি, পিআরবি, পুলিশ আইন এবং সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধি অনুযায়ী পুলিশের উপর বিচার বিভাগীয় তদারকি নিশ্চিত করে জবাবদিহি ও কল্যাণমূলক জনপ্রশাসন গড়ে তোলা হবে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর উপর অনাকাঙ্খিত রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করা হবে।
প্রতিরক্ষা
তিনি বলেন, একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও অখ্লতা সুরক্ষার লক্ষ্যে প্রতিরক্ষা বাহিনীকে আধুনিক প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি ও সমর-সম্ভারে সুসজ্জিত, সুসংগঠিত, যুগোপযোগী এবং সর্বোচ্চ দেশপ্রেমের মন্ত্রে উজ্জীবিত করে গড়ে তোলা হবে। গণতান্ত্রিক সমাজের উপযোগী সামরিক-বেসামরিক সম্পর্কের ভিত্তি ও বিন্যাস প্রতিষ্ঠা করা হবে।
মুক্তিযোদ্ধারা রাষ্ট্রের ‘সম্মানিত নাগরিক’ হবেন
খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপি মুক্তিযোদ্ধাদের ‘রাষ্ট্রের সম্মানিত নাগরিক’ হিসাবে ঘোষণা করবে। মুক্তিযোদ্ধা তালিকা প্রণয়নের নামে দুর্নীতির অবসান ঘটানো হবে।
সন্ত্রাসবাদ-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান
‘ভিশন-২০৩০’-তে বলা হয়, বর্তমানে সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদ জাতির জন্য একটি অত্যন্ত বিপজ্জনক সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। গনতন্ত্রের অনুপস্থিতি, আইনের শাসনের অভাব ও মানবাধিকার লঙ্ঘন এদেশে সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদ বিস্তারে অন্যতম কারণ। এই সমস্যার সমাধান না করতে পারলে জাতীয় উন্নয়নে সকল প্রয়াসই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। এজন্য বিএনপি সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
মাথাপিছু আয় ৫ হাজার মার্কিন ডলারে উন্নীত
বিএনপি প্রধান বলেন, বাংলাদেশে অর্থনৈতিক বৈষম্য তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি আধুনিক, গণতান্ত্রিক উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে চাই। এসময়ের মধ্যে মাথাপিছু আয় ৫০০০ মার্কিন ডলারে উন্নীত করা হবে। এর জন্য বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ডাবল ডিজিটে উন্নীত করার সৃজনশীল ও বুদ্ধিদীপ্ত উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
মিডিয়া
তিনি বলেন, বিএনপি বস্তুনিষ্ঠ সমালোচনাকে সব সময় স্বাগত জানায়। কমিশনের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট ও অন-লাইন মিডিয়ার জন্য সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে রুজুকৃত সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা হবে।
দ্বিতীয় পদ্মা ও দ্বিতীয যমুনা সেতু হবে
সাবেক প্রধানমন্ত্রী জানান, সড়ক যোগাযোগ উন্নয়নকল্পে দ্বিতীয় যমুনা সেতু, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া প্রান্তে দ্বিতীয় পদ্মাসেতু ও ব্রহ্মপুত্র সেতু নির্মাণ করা হবে। বুড়িগঙ্গা, মেঘনা, গোমতী ও কর্ণফুলী নদীর উপর আরও সেতু নির্মাণ করা হবে। বিভিন্ন ছোট বড় নদীর উপর প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেতু নির্মাণ করা হবে। তিনি বলেন, ঢাকার সাথে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের দ্রুত যোগাযোগের জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেস হাইওয়ে নির্মাণ করা হবে। সারাদেশে বিভিন্ন মহাসড়ক পর্যায়ক্রমে চার লেনে উন্নীত করা হবে। গণচীনের ‘ওয়ান বেল্ট-ওয়ান রোড’ উদ্যোগে সংযুক্ত হওয়ার ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সামপ্রদায়িক সম্প্রীতি
খালেদা জিয়া বলেন, দল-মত ও জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ক্ষুদ্র-বৃহত্ সকল জাতি গোষ্ঠীর সংবিধান প্রদত্ত সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মকর্মের অধিকার এবং জীবন, সম্ভ্রম ও সম্পদের পূর্ণ নিরাপত্তা বিধান করা হবে। প্রত্যেক ধর্মাবলম্বী নিজ নিজ ধর্ম পালনের পূর্ন অধিকার ভোগ করবেন। কাউকে কোন নাগরিকের ধর্মবিশ্বাসকে আঘাত করতে দেয়া হবে না। ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার। সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি বিনষ্টের সকল অপচেষ্টা কঠোরভাবে দমন করা হবে।
পরিশেষে খালেদা জিয়া বলেন, আমরা যে ভিশন উপস্থাপন করলাম তা অর্জন কঠিন কিন্তু অসম্ভব নয়। আশা করি, এই ভিশন বাস্তবায়নে আমরা দেশবাসীর সক্রিয় সমর্থনের পাশাপাশি উন্নয়ন সহযোগী রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠানসমূহেরও সহযোগিতা পাবো। দলমত নির্বিশেষে দেশের সকল নাগরিক এই ভিশন বাস্তবায়নে আমাদের সক্রিয় সমর্থন জানাবেন বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।
নিউজ: ইত্তেফাক
Posted ১:৫৩ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১১ মে ২০১৭
America News Agency (ANA) | Payel