বুধবার ১৬ জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১ শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাঙালি ও বাংলা সাহিত্যের জন্য একটি বিশেষ দিন পঁচিশে বৈশাখ

কবিগুরুর ১৫৬তম জন্মবার্ষিকী পালিত

অনলাইন ডেস্ক :   |   মঙ্গলবার, ০৯ মে ২০১৭   |   প্রিন্ট   |   718 বার পঠিত

আর দশটা দিনের মতো একটি দিন পঁচিশে বৈশাখ। তবে বাঙালি ও বাংলা সাহিত্যের জন্য এটি একটি বিশেষ দিন। ১৫৬ বছর আগে এই দিনেই সবুজ-শ্যামল বাংলার মাটিতে আবির্ভূত হয়েছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। গতকাল সোমবার বাঙালির অস্তিত্বের চিরন্তন প্রতীক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জয়ন্তী উদ্্যাপিত হয়েছে আড়ম্বরের সঙ্গে। বিভিন্ন সংগঠন-প্রতিষ্ঠানের নানা আয়োজন ও আলোচনায় উঠে এসেছে রবীন্দ্রনাথের জাতীয়তাবাদ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা।
কবিগুরুর স্মৃতিবিজড়িত নওগাঁর পতিসরে এবার জাতীয়ভাবে উদ্যাপিত হয়েছে তার জন্মদিন। পতিসরের রবীন্দ্র কাচারিবাড়ির দেবেন্দ্র মঞ্চে আয়োজিত রবীন্দ্রজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। এ আয়োজনে ‘মানুষের ধর্ম :রবীন্দ্রনাথ ও সমকালীন প্রাসঙ্গিকতা’ বিষয়ে স্মারক বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক ড. হায়াৎ মামুদ। ছিল নৃত্য-গীতে সাজানো সাংস্কৃতিক পর্ব। এ ছাড়াও কবিগুরুর স্মৃতিধন্য কুষ্টিয়ার শিলাইদহ, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর এবং খুলনার দক্ষিণডিহিতে কবির জন্মদিনে ছিল নানা আনুষ্ঠানিকতা। রবীন্দ্র মেলা, রবীন্দ্র বিষয়ক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
পঁচিশে বৈশাখ কবির জন্মদিনে সকাল থেকেই সরব ছিল রাজধানীর সংস্কৃতি ভুবন। এদিন নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ছায়ানট, শিল্পকলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সংস্থাসহ বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান। কবির জন্মদিনে দৈনিক পত্রিকাগুলো প্রকাশ করে বিশেষ ক্রোড়পত্র। সরকারি-বেসরকারি চ্যানেলগুলো প্রচার করে রবীন্দ্র সৃষ্টিস্নাত গান-কবিতা ও নাটকে সজ্জিত অনুষ্ঠানমালা।
রবীন্দ্রজয়ন্তীর সকাল থেকেই সচল হয়েছিল শিল্পীর রঙ-তুলির আঁচড়।
রাজধানীর শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী প্রদর্শনালয়ে দিনভর ছবি এঁকেছেন নবীন-প্রবীণ ও বরেণ্য চিত্রশিল্পীরা। কবিগুরুর ১৫৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এই আর্ট ক্যাম্পের আয়োজন করে জাদুঘর কর্তৃপক্ষ। এর উদ্বোধন করেন বরেণ্য শিল্পী হাশেম খান। তার সঙ্গে চিত্রকর্ম সৃষ্টির প্রয়াসে অংশ নেন আরও ২২ জন চিত্রশিল্পী। তাদের মধ্যে ছিলেন- রোকেয়া সুলতানা, অলকেশ ঘোষ, শামীম সুব্রানা, সামিনা নাফিজ, সোহাগ পারভেজ, আনিসুজ্জামান, দুলাল চন্দ্র গাইন, শামসুদ্দোহা প্রমুখ।
সন্ধ্যায় আলোচনা এবং নৃত্য-গীত ও আবৃত্তিতে সজ্জিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন লেখক, গবেষক ও ছায়ানটের সভাপতি ড. সন্জীদা খাতুন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর।
সন্্জীদা খাতুন বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ ব্যক্তিসত্তাকে অহম ও অন্তর্গত সত্তাকে আত্মা বলেছেন। যার উদাহরণস্বরূপ তিনি বলেছেন ব্যক্তিসত্তা প্রদীপ ও অন্তর্গত সত্তা শিখা। সমসাময়িক সময়ে মানুষের অসহিষ্ণুতা হানাহানির সৃষ্টি করছে। তুচ্ছ বিষয়, তথাকথির ধর্মের নামে, ব্যক্তিস্বার্থে, অকারণ আনন্দের জন্য মানুষ মানুষকে হত্যা করছে। মানুষের জৈব প্রবৃত্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
আলোাচনা শেষে শুরু হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। বেলায়েত হোসেনের পরিচালনায় ‘ধ্বনিল আহ্বান’ ও ‘নীল- অঞ্জনঘন’ গানের সুরে পরিবেশিত হয় সমবেত নৃত্য। ‘মম চিত্তে’ ও ‘আমার বেলা যে যায় সাঁঝ-বেলাতে’ গানের সুরে এমআর ওয়াসেকের পরিচালনায় পরিবেশিত হয় আরও দুটি বৃন্দ নৃত্য। ‘আনন্দধ্বনি জাগাও গগনে’ গানের সুরে একক নৃত্য পরিবেশন করেন র‌্যাচেল প্রিয়াংকা প্যারিস। একক কণ্ঠে গান শোনান রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, মিতা হক, শামা রহমান, রোকাইয়া হাসিনা, স্বাতী সরকার, ছায়া কর্মকার ও মহীউজ্জামান চৌধুরী ময়না। রবীন্দ্রনাথের কবিতা থেকে আবৃত্তি করেন জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় ও ডালিয়া আহমেদ।
এ ছাড়াও শিল্পকলা একাডেমি তিন দিনব্যাপী কবির চিত্রশিল্প প্রদর্শনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। বাংলা একাডেমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সহযোগিতায় পতিসরের আলোকে কবিগুরুর জন্মবার্ষিকীর স্মরণিকা ও পোস্টার মুদ্রণ করে।
‘ভুবনজোড়া আসনখানি/ আমার হৃদয়-মাঝে বিছাও আনি’ গানের মধ্য দিয়ে গতকাল সন্ধ্যায় শুরু হয় ছায়ানটের দুই দিনের রবীন্দ্র উৎসব। ছায়ানট মিলনায়তনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে স্বাগত কথনে অংশ নেন ছায়ানটের কার্যনির্বাহী সভাপতি ডা. সারওয়ার আলী ও কবি আবুল হাসনাত। এর পর ‘ওগো পথের সাথী’ গানের সঙ্গে বিশেষ গীতি-নৃত্য পরিবেশন করেন শিল্পীরা। অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন শামীমা নাজনীন। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী ফাহমিদা খাতুন, ইফফাত আরা দেওয়ান, আবদুুল ওয়াদুদ, কাঞ্চন মোস্তফা, সৈকত মুখার্জি, মাকছুরা আখতার, সুদীপ সরকার, মোস্তাফিজুর রহমান তূর্য, সেঁজুতি বড়ূয়া, জয়ন্ত রায় প্রমুখ। এর পাশাপাশি শিশু শিল্পী ও বড়দের দলীয় পরিবেশনা ছিল অনুষ্ঠানে।
শিশু একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাছিমা বেগম ও কবি আসাদ চৌধুরী। একাডেমির চেয়ারম্যান কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন একাডেমির পরিচালক আনজীর লিটন। সব শেষে রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী পাপিয়া সরোয়ারের সঙ্গীতসহ শিশু একাডেমির শিশুদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।
প্রতি বছরের মতো এবারও রবীন্দ্রজয়ন্তীতে তেজগাঁওয়ের চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘রবি-চ্যানেল আই রবীন্দ্র মেলা। এ মেলায় রবীন্দ্রসঙ্গীতে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয় প্রখ্যাত রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী মিতা হককে।

Facebook Comments Box

Comments

comments

Posted ১:৩৬ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৯ মে ২০১৭

America News Agency (ANA) |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

Dhaka University Centennial & New Beginnings
(13216 বার পঠিত)
‘শুভ বড়দিন’ আজ
(13037 বার পঠিত)
RAFONA Organize Armed Forces Day
(13022 বার পঠিত)
[abm_bangladesh_map]
Editor-in-chief :
Sayeed-Ur-Rabb
Corporate Headquarter :

44-70 21st.# 3O1, LIC. New York-11101. USA,

06463215067

americanewsagency@gmail.com

Copyright © 2019-2025Inc. America News Agency (ANA), All rights reserved.ESTD-1997