সুরের মূর্ছণা ছড়িয়ে শেষ হলো ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক লোকসংগীত উৎসব- ২০১৯’। ঢাকার বাংলাদেশ আর্মি স্টেডিয়ামে ১৪ নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে তিন দিনের আন্তর্জাতিক লোকসংগীত উৎসব শেষ হয় ১৬ নভেম্বর রাতে। সান ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে পঞ্চমবারের মতো এ উৎসবের আয়োজন করেছে সান কমিউনিকেশনস লিমিটেড। উদ্বোধনী দিনে সন্ধ্যা ৭টায় উৎসবের শুরুটা হয় নৃত্যশিল্পী প্রেমা ও ভাবনা নৃত্যদলের লোকজনৃত্যের পরিবেশনা দিয়ে। তারা ধামাইল, লাঠিখেলা ও পুতুলনাচের আঙিকে নাচ পরিবেশন করেন। নৃত্য পরিচালনা করেন সামিনা হোসেন প্রেমা। এরপর মঞ্চে আসেন জর্জিয়ার শেভেনেবুরেবি। তাদের পরিবেশনা শেষে হয় উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সান ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অঞ্জন চৌধুরী। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন উৎসবের অন্যতম সহযোগী ঢাকা ব্যাংকের ফাউন্ডার চেয়ারম্যান আবদুল হাই সরকার। প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। এছাড়া উৎসব উদ্বোধন করেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। উদ্বোধনী পর্ব শেষে মঞ্চে আসেন শাহ আলম সরকার ও তার দল। এরপর প্রথম দিনে সর্বশেষ পরিবেশনা করেন ভারতের দালের মেহেন্দি।
দিত্বীয় দিন বাংলাদেশের শফিকুল ইসলামের পরিবেশনার মধ্য দিয়ে উৎসবের শুরু হয়। এরপর একে একে মঞ্চে আসেন বাংলাদেশের কাজল দেওয়ান, ম্যাজিক বাউলিয়ানার কামরুজ্জামান রাব্বি, শিল্পী ফকির শাহাবুদ্দিন, পাকিস্তানের হিনা নাসরুল্লাহ ও মালির হাবিব কইটে এবং বামাদা। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়াতে লোকে- লোকারণ্য ছিল গোটা আর্মি স্টেডিয়াম। পাকিস্তানের হিনা নাসরুল্লাহ তার সুরেলা কণ্ঠের জন্য পরিচিত। কোক স্টুডিওর মাধ্যমে পেয়েছেন ব্যাপক পরিচিতি। মূলত সুফি ঘরানার গান করেন হিনা। উর্দুর পাশাপাশি সিন্ধি ও সারাইকি ভাষায়ও গান করেন তিনি।
অন্য দিকে মালির লোকসঙ্গীতের জীবন্ত কিংবদন্তি বলা হয় হাবিব কইটেকে। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে তার প্রথম অ্যালবাম মুসো কো বিশ্বব্যাপী সঙ্গীতপ্রেমীদের দৃষ্টি কাড়ে। দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি সঙ্গীতাঙ্গন মাতিয়ে রেখেছেন।
উৎসবের শেষ দিনে মঞ্চ মাতান বাংলা লোকসঙ্গীতের অন্যতম মালেক কাওয়াল, রাশিয়ান সাত্তুমা, কুষ্টিয়ার চন্দনা মজুমদার ও পাকিস্তানি সুফি রক ব্যান্ড জুনুন।
প্রথমে মঞ্চে আসেন মালেক কাওয়াল। চার দশকের বেশি সময় ধরে কাওয়ালি গান পরিবেশন করছেন তিনি। তারপর ‘সাত্তুমা’ ম্যান্ডোলিন, বাঁশি, ভায়োলিনের সংযোগে ‘নিওফোক’ ধরনের গান পরিবেশন করে রাশিয়ার এই ব্যান্ড দলটি। রাশিয়ার পর ইউরোপের বিভিন্ন দেশের লোকসংগীতও পরিবেশন করে দলটি। এরপর মঞ্চে আসেন বাংলাদেশের চন্দনা মজুমদার। সবশেষে মঞ্চে আসেন রাতের প্রধান আকর্ষণ পাকিস্তানের ব্যান্ড ‘জুনুন’। সুফি ও রক ঘরানার ফিউশন ঘটিয়ে সংগীতের এই মিলনমেলায় মুগ্ধতা ছড়িয়ে দেয় ব্যান্ডটি। ১৯৯৭ সালে ‘আজাদী’ অ্যালবামটি দিয়ে উপমহাদেশের সংগীতের ভুবনে রেকর্ড তৈরি করেছিল পাকিস্তানের এই ব্যান্ড। জুনুনের পরিবেশনা মধ্য দিয়ে মধ্যরাতে শেষ হয় তিন রাতের ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক লোকসংগীত উৎসব’।
প্রত্যেক শিল্পী তাদের সুরে দর্শকস্রোতাদের মাতিয়ে রাখেন। এরই মাঝে দর্শক সারিতে কেউ গেয়েছেন, কেউ নেচেছেন। আবার কখনো শিল্পীর সাথে সবাই একসাথে সুর তুলে উৎসবে উষ্ণতা বাড়িয়েছেন। সবার দৃষ্টি ছিল মঞ্চের দিকে। এবারের উৎসবে বাংলাদেশসহ ৬টি দেশের ২০০ জনেরও বেশি লোকশিল্পী ও কলাকুশলী সংগীত পরিবেশন করেন। সান ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এবারের উৎসবের স্পন্সর ছিল মেরিল। তিন রাতের এই আসরটি সরাসরি সম্প্রচার করেছে মাছরাঙা টেলিভিশন। বিনামূল্যে অনলাইনে নিবন্ধন মাধ্যমে অনুষ্টানের প্রবেশ টিকেট দেওয়া হয়েছিল ।
Posted ৭:০৮ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০১৯
America News Agency (ANA) | Payel