বন্ধু, আত্মীয়-স্বজন সকলে দল বেঁধে মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে বেড়ানোর মধ্যে গতকাল দিন কাটিয়েছে হিন্দু সমপ্রদায়ের মানুষ। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত রাজধানীর মণ্ডপগুলোতে মানুষের ভিড় লেগেই ছিল। গতকাল সোমবার ছিল শারদীয় দুর্গোত্সবের মহানবমী। দেবী দুর্গাকে বিদায় আয়োজনের আগে শেষবারের মত উত্সব-আনন্দে মেতেছিল হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষ। তবে এত আনন্দের মাঝেও পূজা মণ্ডপের বাতাসে বিরাজ করছিল বিষাদের সুর। কারণ দেবী দুর্গাকে আজ বিসর্জন দিতে হবে। ঢাক-কাঁসরের বাদ্যি বাজনা, রাত উজ্জ্বল করা আরতি এবং পূজারি-ভক্তদের পূজা অর্চনার মাঝে তাই লুকিয়ে ছিল একদিন পরেই দেবী দুর্গাকে বিদায় জানানোর কষ্ট।
আজ মঙ্গলবার বিজয়া দশমীর দিনে মর্ত্যলোক ছেড়ে বিদায় নেবেন মা। অশ্রুসজল চোখে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ বিসর্জন দেবেন প্রতিমা। শেষ হবে হিন্দু সমপ্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উত্সব শারদীয় দুর্গোত্সব। পাঁচদিনের সর্বজনীন মিলন মেলা ভাঙবে আজ। দশমীর দিন আজ মঙ্গলবার পূজা আরম্ভ সকাল ৮টা ৫২ মিনিটে এবং পূজা সমাপন ও দর্পন বিসর্জন সকাল ৯ টা ৪৯ মিনিটে। পর বিকালে শোভাযাত্রাসহকারে দেবী দুর্গা ও অন্যান্য দেব-দেবীর বিসর্জন দেওয়া হবে। বিজয়া দশমী উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটির দিন। ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের পক্ষ থেকে আজ বিজয়া দশমীর বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হবে।
শাস্ত্র মতে, ষষ্ঠী থেকে নবমী পর্যন্ত প্রতিমার পূজা করা হলেও বিজয়া দশমীর দিন বিসর্জনের মধ্য দিয়ে প্রতিমাকে নিরাকার করা হয়। দেবী তখন আবার ভক্তদের হূদয়ে আসন নেন। এদিন সকলের অন্তরে মা স্থান করে নেন এবং বিশ্ব চরাচর আসুরিক শক্তিমুক্ত হয় বলে সবাই আনন্দে কোলাকুলি করে। হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে পরস্পরের এই কোলাকুলি এবং আনন্দ হচ্ছে বিজয়ার আনন্দ। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা মনে করেন, বিজয়া দশমীর বিসর্জনের মধ্য দিয়ে মা দুর্গা তার সন্তান কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতীসহ কৈলাশে স্বামীর গৃহে প্রত্যাবর্তন করেন। এর আগে মহালয়া অমাবস্যায় তিনি মর্ত্যে পিতৃগৃহে আগমন করেন।
গতকাল সোমবার সারাদেশের পূজা মণ্ডপে দেবী দুর্গার মহানবমী পূজা অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকেশ্বরী মন্দিরে নৈবেদ্য ধূপ, ফুল, পানসহ ১৬টি উপাচার দিয়ে সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে শুরু হয় মহানবমী পূজা। পূজা শেষে ভক্তদের মাঝে মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হয়। তবে দিনের প্রধান আকর্ষণ ছিল মণ্ডপে মণ্ডপে আরতি প্রতিযোগিতা। রাতকে উজ্জ্বল করে ভক্তরা মেতে উঠেছিলেন নানা ঢঙে আরতি নিবেদনে। সেই সঙ্গে ছিল দিনভর পুরোহিতদের চণ্ডিপাঠ আর ভক্তদের কীর্তন-বন্দনা। অনুষ্ঠিত হয় দেবীর মহানবমীর বিহিত পূজা। পূজা শেষে যথারীতি অঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ এবং সন্ধ্যায় ভোগ-আরতির আয়োজন।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের হিসেব অনুযায়ী, এবার সারাদেশে ২৯ হাজার ৩৯৫টি স্থায়ী, অস্থায়ী মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যা গত বছরের তুলনায় ৩২৪টি বেশি। আর রাজধানী ঢাকায় পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে ২২৯টি মণ্ডপে। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন, বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও রেডিও বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সমপ্রচার করবে। জাতীয় দৈনিকগুলো এ উপলক্ষে বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ করবে।
Comments
comments