নিউইয়র্কে হোমলেস বা গৃহহীনদের কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। তাদের বড় একটি অংশ বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। নিউইয়র্ক সিটি কর্তৃপক্ষ হোমলেসদের পরিষেবায় মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ করলেও কোনো কুলকিনারা করতে পারছে না। একশ্রেণির হোমলেস নিরাপদ আশ্রয়ের চেয়ে নগরীর বাস ও পাতাল ট্রেনে থাকতে স্বাচ্ছন্দবোধ করছে। কিন্তু তাদের এই অস্বাভাবিক অবস্থান এবং বেপরোয়া আচরণ নগরবাসীর কাছে অসহনীয় হয়ে উঠেছে।
নিউইয়র্ক সিটির অধিকাংশ সাবওয়ে এখন হোমলেসদের দখলে থাকে। এমনকী তারা বাস ও ট্রেনে চেপে বসছে। আসন দখল করে ঘুমাচ্ছে। তাদের শারীরিক শক্তি এবং পারিপার্শ্বিক কারণে কেউ কিছু বলতে পারছে না। ফলে যাত্রীরা অসহায়ের মত বাস ও ট্রেনে চলাচল করছে। কোনো যাত্রী আসন দখল করার প্রতিবাদ করলে হোমলেসদের হামলার শিকার হতে হয়েছে, এমন ঘটনাও অনেক ঘটছে। সাবওয়েতে সন্ত্রাসী ঘটনার পর পুলিশ মোতায়েন করা হলে কিছুদিন হোমলেসদের বিচরণও কমে যায়। কিন্তু পরে অবস্থা যে তিমিরে ছিল, সেই তিমিরেই ফিরে যায়।
এদিকে সাবওয়েকেন্দ্রিক অপরাধ কোনোভাবেই কমছে না। অপরাধ কমেছে পুলিশ বিভাগ এমন দাবি করলেও নগরবাসীর মন থেকে আতঙ্ক দূর হচ্ছে না। নগরীতে অপরাধ বাড়লেও নগরবাসীর বেশী আতঙ্ক এখন সাবওয়েতে ওঠা দিয়ে। সকাল হলেই কর্মস্থলে যেতে অধিকাংশ নগরবাসীকে ভরসা করতে হয় সাবওয়ে ট্রেনের ওপর। কিন্তু সেই সাবওয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা একেবারেই ভেঙে পড়েছে। যদিও সিটি প্রশাসন সাবওয়ের পরিষেবা বাড়াতে নানান প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে। পুরো সাবওয়ে সিস্টেম ঢেলে সাজানোর কাজ চলছে। কিন্তু হোমলেসদের বেপরোয়া অবস্থানের কারণে নগরবাসীর আস্থায় আসছে না এসব উন্নয়ন।
ভুক্তভোগীদের মতে- নিউইয়র্কের সাবওয়ে এখন হোমলেস ও দুর্বৃত্তদের দখলে চলে গেছে। ট্রেনের বগিতে তারা যাত্রীদের নানাভাবে উত্যক্ত করছে। যাত্রীরা ট্রেনে ওঠার পর আতঙ্কগ্রস্ত থাকেন। এসব হোমলেস প্রকাশ্যে ট্রেনের বগিতে মদ্যপান করছে। অনেকে গাঁজা টানছে। আবার অনেকে নানা ধরনের ড্রিংকস পান করে এবং নিচে ফেলে সাবওয়ে বগি ও আসন নোংরা করছে। আগে বগিগুলোতে ট্রানজিট পুলিশকে সক্রিয় দেখা গেলেও এখন তা আর চোখে পড়ে না। জানা গেছে, অধিকাংশ হোমলেস কৃষ্ণাঙ্গ হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে চায় না পুলিশ।
এদিকে সাবওয়েকেন্দ্রিক সন্ত্রাসী ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন নগরবাসী। তারা এখন আর আস্থা রাখতে পারছেন না এই গণপরিবহনের ওপর। বিকল্প উপায় না থাকার পরও যাত্রীরা সাবওয়ে থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন দিনদিন। তারা ব্যবহার শুরু করেছেন প্রাইভেট কার, উবার, লিফট কিংবা ইয়েলো ক্যাব। কিন্তু গ্যাসের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় অ্যাপভিত্তিক সেবার খরচও বাড়ছে। ফলে নাভিশ্বাস উঠছে নগর জীবনে।
নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী- নিউইয়র্ক সিটিতে অপরাধ প্রবণতা কমেছে বলে দাবি করা হয়েছে। তবে সাবওয়েকেন্দ্রিক অপরাধ বেড়েছে বলে পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে।
পুলিশ বিভাগের দাবি- অধিকাংশ অপরাধ হেইট ক্রাইম। গত বছরের তুলনায় হেইট ক্রাইম বেড়েছে প্রায় দেড় গুণ, যাদের বেশিরভাগই এশিয়ান।
এদিকে হোমলেস বা গৃহহীন সমস্যা নিউইয়র্ক সিটিকে ব্যাপক সমস্যায় ফেলেছে। তাই হাজার চেষ্টাতেও সিঁড়ির সড়ক, পার্ক ও সাবওয়েকে বাস্তুহারার উপদ্রব থেকে রক্ষা করা যাচ্ছে না। তাই হোমলেসদের উপদ্রব থেকে সমগ্র নিউইয়র্ক স্টেট এবং সিটিগুলোকে মুক্ত করার লক্ষে অ্যাসেম্বলি ডেমোক্র্যাটরা পরবর্তী ৫ বছরের জন্য ৪৫০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়সাপেক্ষ একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছেন। কিন্তু ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও পরিস্থিতির কতটা উন্নতি হয়েছে, তা প্রশ্নবিদ্ধ।
Posted ৯:১১ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ১০ নভেম্বর ২০২৩
America News Agency (ANA) | ANA