শনিবার ২০ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম
শিরোনাম

কাউন্সিলওম্যান প্রার্থী শাহানা হানিফ

চূড়ান্ত ভোটে জয়ী হয়ে সিটি কাউন্সিলে যেতে চাই

নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী :   শনিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২১ 12842
চূড়ান্ত ভোটে জয়ী হয়ে সিটি কাউন্সিলে যেতে চাই

নিউইয়র্কের সিটি কাউন্সিলের চূড়ান্ত নির্বাচনে ডিস্ট্রিক্ট-৩৯ থেকে ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রার্থী হিসেবে কাউন্সিলওম্যান পদে ভোটে অংশ নিচ্ছেন বাংলাদেশি শাহানা হানিফ। চলতি বছরের জুন মাসে অনুষ্ঠিত প্রাইমারি নির্বাচনে জয়ী হয়ে তিনি ইতিহাস রচনা করেন। আগামী ২ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় সিটি কাউন্সিলের চূড়ান্ত নির্বাচনে জয়ী হলে তিনিই হবেন প্রথম সাউথ এশিয়ান মুসলিম নারী এবং প্রথম বাংলাদেশি কাউন্সিলওম্যান। ডিস্ট্রিক্ট-৩৯ আসনটি ডেমোক্র্যাট অধ্যুষিত হওয়ায় ধারণা করা হচ্ছে, চূড়ান্ত ভোটে বিজয়ী হয়ে শাহানা হানিফই প্রবেশ করতে চলেছেন নিউইয়র্কের সিটি হলে। ইতিমধ্যে তিনি নির্বাচনী প্রচারণার পাশাপাশি সিটি হলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতেও শুরু করেছেন। নিজস্ব অফিস করারও প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অফিসের জন্য আটজন স্টাফও নিয়োগ দিতে চলেছেন। এই অফিসে বাংলাদেশিসহ তার নির্বাচনী এলাকার মানুষকে সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। নারীসমাজকেও আইনি সহায়তাসহ বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
গত ১৮ অক্টোবর সোমবার সকালে একান্ত সাক্ষাৎকারে শাহানা হানিফ অপকটে বলে যান, নির্বাচিত হলে তিনি বাংলাদেশিসহ তার ডিস্ট্রিক্টের মানুষের জন্য কী করতে চান।
নির্বাচনে অংশ নেওয়া, প্রচারণা, জয়ী হওয়া-সবকিছু মিলিয়ে একজন নারী হিসেবে কতটা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হচ্ছেন, জানতে চাইলে শাহানা হানিফ বলেন, একজন মেয়ে হিসেবে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া অনেক কঠিন। সেখানে আমি প্রাইমারিতে প্রার্থী হয়েছি এবং জয়ী হয়েছি। প্রত্যাশা করছি, ২ নভেম্বরের চূড়ান্ত ভোটেও জয়ী হয়ে সিটি কাউন্সিলে যাব।
বর্তমান নির্বাচনী প্রচারণার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। মানুষের সঙ্গে কথা বলছি, ভোটারদের কাছে ভোট চাইছি। ডোর টু ডোর নক করছি। অনেকেই আমার সাথে কথা বলতে আসছেন, তাদের সাথে কথা বলছি।
আপনার কি মনে হচ্ছে, প্রাইমারি নির্বাচনের চেয়ে ২ নভেম্বরের নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বেশি হবে? এ প্রসঙ্গে শাহানা হানিফ বলেন, আমার মনে হচ্ছে, ২ নভেম্বরের নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি প্রাইমারি নির্বাচনের চেয়ে কিছুটা কম হবে। প্রাইমারি নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি অনেক বেশি ছিল। সাধারণ নির্বাচনে অত ভোটার হবে না। তার পরও আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আনার এবং ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করতে। তিনি বলেন, প্রাইমারি নির্বাচনে আমরা চেষ্টা করেছি বেশি ভোটারকে আনার। কারণ তখন ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থিতা পাওয়ার জন্য চেষ্টা করা হয়েছে। ডেমোক্র্যাটিক ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আনা জরুরি ছিল। তিনি বলেন, ২ নভেম্বরের নির্বাচনে জয়ী হলেও সিটি হলে যেতে হবে জানুয়ারিতে। আমাদের টার্ম শুরু হবে জানুয়ারি ২০২২ থেকে। সেই হিসেবে আমরা কাজ শুরু করব।
নির্বাচিত হলে এলাকার মানুষের জন্য কী করতে চান, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার ডিস্ট্রিক্টের ভোটারদের জন্য আরো বড় পরিসরে কাজ করব। একটি অফিস করব। অফিসটি কোন এলাকায় করব, সেটি এখনো ঠিক হয়নি। আমি চাচ্ছি অ্যাফোর্ডেবল অফিস নেব। এ ছাড়া আমার ডিস্ট্রিক্টের সাউথ সাইডে একটি অফিস করব। সেই অফিসে বাংলাদেশিদের জন্য সেবা চালু থাকবে। আমার ডিস্ট্রিক্টের সাউথ সাইডে অনেক বাংলাদেশি আছেন। ডিস্ট্রিক্টের মানুষের পাশাপাশি আমাদের কমিউনিটির জন্য কাজও করব।
নির্বাচিত হতে পারলে সিটি হলে গিয়ে কী কী কাজ করতে চান, জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেসব বিষয়ে বিল পাস হওয়া দরকার কিন্তু হয়নি, সেই বিলগুলো পাস করাতে হবে। এডুকেশন, অ্যাফোর্ডেবল হাউজিং, ক্লাইমেট জাস্টিস, ইমিগ্র্যান্ট রাইটস, শ্রমজীবীদের অধিকার রক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয়ে কাজ করব। আমার পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেব। পাশাপাশি সময়োপযোগী আরো বিভিন্ন বিষয় পরিকল্পনায় সম্পৃক্ত করতে হবে। অনেক মানুষ কাজ করেও ন্যায্য মজুরি পায় না। তাদের ন্যায্য মজুরি পাওয়ার ব্যাপারে কাজ করব। আমি শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আমার এখানে অনেক কনস্ট্রাকশন ওয়ার্কার আছে। বিভিন্ন পেশার ওয়ার্কার রয়েছে। এসব শ্রমজীবী মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। আমি একজন সাউথ এশিয়ান, আমার মাতৃভূমি বাংলাদেশ। তাই বাংলাদেশিসহ সাউথ এশিয়ানদের প্রতি আমার দায়বদ্ধতা রয়েছে। তাদের কল্যাণে কাজ করতে চাই।
তিনি আরো বলেন, আমাদের এখানে অনেক মানুষ আছেন, যারা মূলধারার অনেক কিছুতে সম্পৃক্ত হতে পারেন। কিন্তু সবকিছু হয়তো জানা নেই তাদের। যেমন অভিভাবকদের অনেক সুযোগ আছে। বিশেষ করে, এডুকেশন খাতে যেসব নীতি নির্ধারণ করা হয়, সেগুলোতে বাবা-মায়েরা লিডারশিপে আসতে চান না কিন্তু তারা চাইলে লিডারশিপে আসতে পারেন। তাদের অংশগ্রহণ এসব ক্ষেত্রে জরুরি। তারা শিক্ষাক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারলে আরো সুবিধা বাড়বে, পরিবর্তনও আসবে। আমাদের সোসাইটিতে এখন ডমেস্টিক ভায়োলেন্স অনেক বেড়ে গেছে। এই ভায়োলেন্স বন্ধ করতে হবে। মানুষকে জানতে হবে তার কী কী রাইটস আছে। রাইটসগুলো জানতে পারলে সুযোগগুলো নিতে পারবে। ভোগান্তি থেকেও রেহাই পাবে।
অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজের কথা জানতে চাইলে শাহানা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন এখন একটি বড় সমস্যা। আমরা মেয়রকে অ্যাকাউন্টিবিলিটির মধ্যে রাখি। এখন সিটি কাউন্সিলে গেলে আরো বেশি সুযোগ সৃষ্টি হবে। সাম্প্রতিককালের ঘূর্ণিঝড়ে নিউইয়র্ক সিটির স্যুয়ারেজ লাইনে যে সমস্যা হলো, পানি উঠল, এসব সমস্যার ভুক্তভোগী সবাই। ফলে মানুষ দেখেছে দুর্ভোগগুলো কেমন। তাই আমরা চাইলেই দুই বছরের মধ্যে সব সমস্যার সমাধান করতে পারব, বিষয়টি এমন নয়। তবে আমরা চেষ্টা করব। আমরা শুরু করছি, আগামীতে শেষ হবে। এখানে রিসার্চের বিষয় আছে। রিসার্চ করে এটাও বের করতে হবে, কোন কোন কাজ আগে করতে হবে এবং আগামী দিনে কী কী করতে হবে। নিউইয়র্কের স্যুয়ারেজ ব্যবস্থাপনা ঠিক করা জরুরি হয়ে পড়েছে। একে প্রায়োরিটি দিয়ে এর সমাধান করতে হবে।
এ পর্যন্ত আসার পেছনে কার অনুপ্রেরণা বেশি কাজ করেছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে এ পর্যন্ত আসার পেছনে সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা আমারই এবং আমি। নিজের ইচ্ছা ও ডেডিকেশন না থাকলে এ পর্যন্ত আসতে পারতাম না। নিজের ইচ্ছার বিষয়টি ইউনিক। এ ছাড়া আমার বাবা-মা ও পরিবারের সদস্যদের অবদান অনেক বেশি। তারা আমাকে উৎসাহ দিচ্ছেন এবং ছোটবেলা থেকেই অনুপ্রাণিত করছেন। আমাদের বাংলাদেশি পরিবারগুলো অনেকটাই কনজারভেটিভ। এ কারণে সফলতা পাওয়া অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে। তবু এগিয়ে যেতে হবে।
এদিকে শাহানা হানিফ নিউইয়র্ক সিটি অ্যান্ড স্টেটের ‘ফোরটি আন্ডার ফোরটি’ সম্মাননা লাভ করেছেন। প্রতিবছর রাজনৈতিক, সামাজিকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল ব্যক্তিদের এই সম্মাননা দেওয়া হয়। ৪০ বছরের কম বয়সী ৪০ জন তরুণ-তরুণী এই সম্মাননা পান। নিউইয়র্ক সিটি অ্যান্ড স্টেট গত ১১ অক্টোবর ‘ফোরটি আন্ডার ফোরটি’ তালিকা প্রকাশ করে। শাহানা হানিফ একমাত্র বাংলাদেশি, যিনি এই তালিকায় জায়গা করে নেন। ৪০ জনকে নির্বাচিত করার জন্য ৫০০ জনেরও বেশি তরুণ-তরুণী মনোনয়ন পেয়েছিলেন। সেখান থেকে ৪০ জনকে বাছাই করা হয়। এর আগে শাহানা হানিফ ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায়ও স্থান পেয়েছিলেন।
ফোরটি আন্ডার ফোরটি পুরস্কার পাওয়ার অনুভূতি জানতে চাইলে শাহানা হানিফ বলেন, আমি ভীষণ এক্সাইটিং। আমার নাম ৪০ জনের মধ্যে আসা ভীষণ গৌরবের। আমার বয়স এখন ৩০ বছর। আমি প্রথম বাংলাদেশি, মুসলিম নারী, সাউথ এশিয়ান। এর আগে আমার মতো এ ধরনের সম্মান আর কেউ পাননি। এই সম্মান কেবল আমার একার নয়, এটি সবার জন্য সম্মান। আমাদের কমিউনিটির জন্য, আমার ডিস্ট্রিক্টের জন্যও বড় সম্মান।
আপনাকে কেন এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের ক্রাইটেরিয়া আমার জানা নেই। তবে আমি ১৫ বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছি। এই ১৫ বছরে আমার অনেক অভিজ্ঞতাও হয়েছে। আমি রাজনীতি করছি। সামাজিক কাজকর্ম করছি। ওয়ার্কার রাইটস নিয়ে কাজ করছি। ট্যাক্সি ওয়ার্কাররা র‌্যালি করছে, হাঙ্গার স্ট্রাইক করছে, তাদের অধিকার আদায়ে আমি কাজ করছি। বাইক ফুড ডেলিভারির লোকদের জন্যও কাজ করছি। নির্বাচনে জয়ী হচ্ছি। নভেম্বরের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। সব মিলিয়েই হয়তো আমাকে সম্মানিত করা হয়েছে।–ঠিকানা

Facebook Comments Box

Comments

comments

Posted ১২:৫৩ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২১

America News Agency (ANA) |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

 

President/Editor-in-chief :

Sayeed-Ur-Rabb

 

Corporate Headquarter :

 44-70 21st.# 3O1, LIC. New York-11101. USA, Phone : +6463215067.

Dhaka Office :

70/B, Green Road, 1st Floor, Panthapath, Dhaka-1205, Phone : + 88-02-9665090.

E-mail : americanewsagency@gmail.com

Copyright © 2019-2024Inc. America News Agency (ANA), All rights reserved.ESTD-1997