শুক্রবার ২৯ মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম
শিরোনাম

৬ দফার মাধ্যমেই বাঙালির স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিল: প্রধানমন্ত্রী

এনা অনলাইন :   সোমবার, ০৭ জুন ২০২১ 375
৬ দফার মাধ্যমেই বাঙালির স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিল: প্রধানমন্ত্রী

ঐতিহাসিক ৬ দফাকে বাঙালির মুক্তির সনদ আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এই ৬ দফার মাধ্যমেই বাঙালির স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিল।

তিনি এ সময় জাতির পিতার আদর্শকে ধারণ করেই বাংলাদেশকে তার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গীকারও পুনর্ব্যক্ত করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ৬ দফার ভিত্তিতেই ৭০ এর নির্বাচনে আমরা বিজয়ী হই এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন করি। এই ৬ দফার ভেতরেই এক দফা নিহিত ছিল। সেটা অন্তত আমরা পরিবারের সদস্যরা জানতাম। জাতির পিতা সব সময় বলতেন, ৬ দফা মানেই এক দফা। অর্থাৎ স্বাধীনতা। আজকে আমরা সেই স্বাধীন জাতি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার সন্ধ্যায় ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস উপলক্ষে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফা’ শীর্ষক বিশেষ অনুষ্ঠানে পূর্বে ধারণকৃত ভাষণে এ কথা বলেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মশতবার্ষিকী উদ্‌যাপন বাস্তবায়ন কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠান বাংলাদেশ টেলিভিশন, বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ৬ দফার ভিত্তিতেই ৭০ এর নির্বাচন হয়। সেই নির্বাচন হওয়ার পর আওয়ামী লীগ সমগ্র পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পায়। যেটা পাকিস্তানিরা কোনো দিনই আশা করেনি।

জাতির পিতা মে মাসে গ্রেপ্তার হওয়ার পর ৬ দফা বাস্তবায়ন এবং জাতির পিতার মুক্তির দাবিতে ৭ জুন আহুত হরতালে তার মা বেগম ফজিলাতুন্নেছার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাও তুলে ধরেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।

তিনি বলেন, এই হরতাল সফল করার জন্য আমার মা বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিলেন।

তিনি ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চের চোখ বাঁচিয়ে আমাদের ছাত্রদের সঙ্গে, সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে একটা হরতাল সফল করার জন্য অনেক কাজ করেছেন।

মনু মিয়া, আবুল হোসেন, সবুজ, শামসুল হক সহ ১১জন সেই হরতালে আত্মাহুতি দেন এবং রক্তের অক্ষরে ৬ দফার নাম তারা লিখে যান, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, এরপর জাতির পিতা অসহযোগ আন্দোলন দেন। তারপর সেই ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ- এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম। যে ভাষণ আজ বিশ্ব ঐতিহ্যে স্থান পেয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ভাষণ বাঙালি জাতিকে মুক্তির চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছিল। অসহযোগ আন্দোলন থেকে সশস্ত্র বিপ্লব এবং এর মধ্য দিয়ে বিজয় অর্জন আমরা করেছি।

শেখ হাসিনা বলেন, কাজেই আজকের এই দিনটা আমাদের জন্য এই জন্যই তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি এই দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি এবং জাতীয় চার নেতা, মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ এবং সম্ভ্রমহারা ২ লাখ মা-বোনের প্রতিও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৬ দফার দাবি আদায়ের এই ৭ জুনই আত্মাহুতি দানকারীরা রক্তের অক্ষরে এই দাবির কথা লিখে গিয়েছিল বলেই ৬ দফার ভিত্তিতেই নির্বাচন, আমাদের যুদ্ধে বিজয় এবং আমরা স্বাধীনতা অর্জন করি।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য এবং বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ আমির হোসেন আমু এবং তোফায়েল আহমেদ এবং অধ্যাপক নাজমা শাহিন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ডা. নুজহাত চৌধুরী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই যে চিন্তা চেতনাগুলো তার (জাতির পিতা) মধ্যে লালিত ছিল তার পুরোটাই প্রতিফলিত হয়েছিল ৬ দফা প্রণয়নের মাধ্যমে। আরও সুযোগ এসে গেল ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের মধ্য দিয়ে যখন দেখা গেল এই অঞ্চলের মানুষ সম্পূর্ণ নিরাপত্তাহীন। সেই সময় তিনি এই ৬ দফার দাবিটা উত্থাপন করেন।

তিনি বলেন, পাকিস্তানের সব বিরোধীদল মিলে লাহোরে একটা সম্মেলন ডেকেছিল। সেই সম্মেলনে জাতির পিতা এই ৬ দফা দাবিটা উত্থাপন করতে চেষ্টা করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় এই দাবিটা তাকে তুলতে দেওয়া হয়নি। এমনকি জাতির পিতা দাবিটি এজেন্ডাভুক্ত করার চেষ্টা করেন। সেটাও তারা করেনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সে সময় আমাদের বঙ্গসন্তান কয়েকজন রাজনীতিবিদও এটা গ্রহণ করেনি। তখন জাতির পিতা লাহোরেই এটা প্রেসে দিয়ে দেন এবং প্রেস কনফারেন্সও করেন। এরপর জাতির পিতা ঢাকায় ফিরে এসে প্রেস কনফারেন্স করেন এবং ৬ দফা দাবি উত্থাপন করেন। তখন ছিল ফেব্রুয়ারি মাস।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা ৬ দফা দাবি তোলার সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বলে উঠে দেশকে পুরো বিচ্ছিন্ন করার জন্যই তিনি এই দাবিটা করেছেন। কিন্তু সেটা বাস্তব নয়, তিনি মানুষের অধিকারের কথা বলেছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ৬ দফা দাবিকে জাতির পিতা নাম দিয়েছিলেন বাংলাদেশের জনগণের বাঁচার দাবি হিসেবে।

১০ বছর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর ১৯ মার্চ আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে জাতির পিতাকে সভাপতি নির্বাচিত করা হয় এবং ৬ দফা গৃহীত হয়। সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর জাতির পিতা প্রদত্ত নীতি নির্ধারণী ভাষণের চুম্বক অংশ উদ্ধৃত করে প্রধানমন্ত্রী আরও উল্লেখ করেন যে, জাতির পিতা বলেন, ‘৬ দফা প্রশ্নে কোনো আপস নাই। রাজনীতিতেও কোনো সংক্ষিপ্ত পথ নাই। নির্দিষ্ট আদর্শ এবং সেই আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য নিবেদিত প্রাণ কর্মীদের ঐক্যেই আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে।’

জাতির পিতা আরও বলেছিলেন, এ দেশে আওয়ামী লীগ সব সংগ্রামেরই বাণী প্রথম বহন করেছে। সংগ্রামের পথে তারা নির্যাতন ভোগ করেছে সত্য, কিন্তু সংগ্রাম ব্যর্থ হয় নাই। ৬ দফার সংগ্রামও ব্যর্থ হবে না। ত্যাগ-তিতিক্ষার দ্বারা এ সংগ্রামকেও আমরা সার্থক করে তুলব, ইনশা আল্লাহ বিজয় আমাদেরই।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা ৩৫ দিনে দেশের আনাচে-কানাচে সব জায়গায় সফর করেন এই ৬ দফাকে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। জাতির পিতা একদিকে যেমন দলকে সংগঠিত করেন, তেমনি ৬ দফা দাবির প্রতি জনগণের সমর্থন আদায় করেন এবং একই সাথে ৬ দফার জন্য আন্দোলন গড়ে তোলেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সরকার প্রধান বলেন, এই আন্দোলনের জন্য জনগণকে তৈরি করতে আওয়ামী লীগের পক্ষে ব্যাপক হারে ৬ দফার ব্যাখ্যা সংবলিত প্রচার পত্র তৈরি, লিফলেট, বুকলেট তৈরি করা এবং বিলি করা হয়। যে কারণে জনগণ এই ৬ দফাকে খুব দ্রুত মেনে নেয়।

প্রধানমন্ত্রী ৬ দফার প্রচারকালে জাতির পিতার বিভিন্ন স্থানে দেওয়া ভাষণের উল্লেখযোগ্য অংশের উদ্ধৃতি তুলে ধরেন তার ভাষণে।

১৯৬৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ৬ দফার প্রচারে চট্টগ্রামে দেওয়া ভাষণে জাতির পিতা বলেছিলেন, যাওয়ার বেলা বলে যাই যারা দেশের জন্য মরে গেছে তারা কি স্বাধীনতা ভোগ করেছে, আপনারা সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হোন। মৃত্যু আমার হতে পারে কিন্তু ভবিষ্যৎ বংশধরেরা সুখে থাকবে। ত্যাগ ও সাধনা ছাড়া কোনো দিন কোন জাতির মুক্তি আসে না। ত্যাগ যদি করেন দাবি আদায় হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা তুলে ধরার আমার উদ্দেশ্য হচ্ছে, কত আগে থেকে জাতির পিতা প্রস্তুতি নিয়েছিলেন সেটা তুলে ধরা।

জাতির পিতা ২৬ তারিখ নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে সভা করেন। সেখানকার ভাষণে জাতির পিতা বলেছিলেন- এই বাংলা সোনার দেশ কিন্তু এখানে পরগাছা বেশি হয়। জঙ্গল সাফ না করলে ভালো ফসল হয় না। বাংলা যেমন শস্য-শ্যামলা তেমনি পরগাছায় ভরে যায়। যাতে বাংলাদেশে পরগাছা হতে না পারে তার চেষ্টা করুন। বাংলাদেশ মুক্ত হবেই।

জাতির পিতা এভাবেই সারা দেশে জনসভা চালাতে থাকেন এবং ৮ মে নারায়ণগঞ্জে বিশাল জনসভা শেষে ফেরার পর গ্রেপ্তার হন, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

পাবনা, যশোর, খুলনা, ময়মনসিংহ, সিলেট- যেখানেই বড় বড় জেলায় জনসভা করেছেন সেখানেই জাতির পিতাকে বক্তৃতার জন্য মামলা খেতে হয়েছে, তাকে জেলে নিয়েছে, আবার সেখান থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে তিনি আরেক জায়গায় গিয়ে জনসভা করেছেন। এভাবেই সারা দেশ তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন এবং মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বাঙালি জাতিকে যেভাবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন, যে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন, আর্থসামাজিক উন্নয়নের যে কর্মসূচি তিনি হাতে নিয়েছিলেন তার দুর্ভাগ্য তিনি সম্পন্ন করে যেতে পারেননি। কেননা ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট তাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

জাতির পিতা হত্যাকাণ্ডের পর ৬ বছর প্রবাস জীবন কাটাতে বাধ্য হয়ে যখন আওয়ামী লীগ তাকে সভাপতি নির্বাচিত করে তখন একরকম জোরকরেই দেশে ফিরে এসেছিলেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তখন থেকে আমাদের একরকম প্রচেষ্টা ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলব।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বাংলাদেশকে তার সাড়ে ৩ বছরের শাসনেই স্বল্পোন্নত দেশে পরিণত করে যেতে পেরেছিলেন। সেখান থেকে তার সরকারের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ আজকে উন্নয়নশীল দেশ।

তিনি বলেন, ৭৫ এর পর মুক্তিযুদ্ধের যে আদর্শ আমরা হারিয়ে ফেলেছিলাম আজকে সেই আদর্শ আবার ফিরে এসেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে, রক্ত কখনো বৃথা যায় না। এটাই প্রমাণিত সত্য। আজ জাতির পিতা আমাদের মাঝে নেই কিন্তু তার আদর্শ রয়েছে। সেই আদর্শ নিয়েই বাংলাদেশ আজ মর্যাদা নিয়ে সারা বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে।

Facebook Comments Box

Comments

comments

Posted ১১:৫০ অপরাহ্ণ | সোমবার, ০৭ জুন ২০২১

America News Agency (ANA) |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

 

President/Editor-in-chief :

Sayeed-Ur-Rabb

 

Corporate Headquarter :

 44-70 21st.# 3O1, LIC. New York-11101. USA, Phone : +6463215067.

Dhaka Office :

70/B, Green Road, 1st Floor, Panthapath, Dhaka-1205, Phone : + 88-02-9665090.

E-mail : americanewsagency@gmail.com

Copyright © 2019-2024Inc. America News Agency (ANA), All rights reserved.ESTD-1997